এক দিনের ট্যুর – চলুন পিয়ালী দ্বীপ

এক দিনের ট্যুর - চলুন পিয়ালী দ্বীপ, বর্ষা বা শীতে যেকোন সময়ে

পিয়ালী দ্বীপ একটা ছোট্ট সুন্দর জায়গা চারিদিক থেকে খাল, বিল ও নদী দিয়ে ঘেরা। যেদিকে চোখ যায় শুধু সবুজের সমারোহ। বেশ একটা সুন্দরবনের ছায়া আছে অথচ কলকাতার বেশ কাছেই আর আসার সময় কোন নৌকা বা ভেসেলে না চড়েই পৌছান যায়। আপনি পিয়ালী দ্বীপ থেকে নৌকো নিয়ে মাতলা নদীতে ঘুরে বেড়াতে পারেন। একটু সময় নিয়ে বেড়িয়ে আসতে পারেন ঝড়খালি। তাই যেকোন সাপ্তাহিক ছুটিতে মন চাইলে প্রিয়জনদের সঙ্গে পিয়ালী দ্বীপে এক দিনের ট্যুর দারুন জমে যাবে।

কেন যাবেন পিয়ালী দ্বীপ

পিয়ালী দ্বীপ
Picture credit: wbtourismdotblog.wordpress.com

পিয়ালী দ্বীপে যাবার আরও একটা অতিরিক্ত ভাললাগার ব্যাপার আছে সেটা হল কলকাতা থেকে বেশ একটা লং ড্রাইভের মজা। কলকাতা থেকে পিয়ালী দ্বীপ ঠিক ৭৫ কিমি। সুন্দরবনের ছায়া এই জন্য বললাম কারণ পিয়ালি দ্বীপকে সুন্দরবনের প্রবেশপথ বলা হয়। পিয়ালী নদী দ্বীপটির বুক চিরে গিয়ে মিশেছে মাতলা নদীতে। সপ্তাহের শেষে কলকাতা থেকে বহু পর্যটক এখন আসেন। চারদিক দিয়ে নদীতে ঘেরা এই দ্বীপ।

পিয়ালী নদী বামনঘাটা থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার নীচে অর্থাৎ দক্ষিনে বিদ্যাধরী নদী ছেড়ে দক্ষিণ-পশ্চিমে প্রবাহিত হয়ে শেষে ক্যানিং থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার নীচে মাতলা নদীর সাথে মিলিত হয়। পিয়ালী নদী মিলেছে সুন্দরবনের মাতলা নদীর বৃহৎ অংশে। বর্ষায় চারিদিকে শুধুই সবুজ। আমাদের মতো শহরবাসীর কাছে যেন এটা অসাধারণ প্রাপ্তি। আরও একটা বিষয় লক্ষ করবেন যে নানা রকমের জানা-অজানা পাখি চারপাশে উড়ে বেড়াচ্ছে। এগুলি কিন্তু শীতের পরিযায়ী পাখি নয়। পিয়ালী আসলে পাখিপ্রেমিকদের মনের মত জায়গা। তাই সপ্তাহের শেষে কলকাতা থেকে বহু পর্যটকের ঠিকানা এই পিয়ালি দ্বীপ।

পিয়ালী দ্বীপ কিভাবে যাবেন

  • ট্রেনে – শিয়ালদহ সাউথ সেকশন থেকে ট্রেনে উঠে নেমে পড়ুন জয়নগর অথবা মজিলপুর স্টেশনে | ২ নং প্লাটফর্ম থেকে নেমে অটো রিকশা বা ট্রেকারে করে চলে আসুন জামতলা ঘাটে | সেখান থেকে বাসে, ট্রেকারে বা অটোতে করে পৌঁছে যাবেন পিয়ালী কেল্লায় | জয়নগর স্টেশন থেকেও গাড়ি ধরে নিয়ে কেল্লা অবধি চলে আসতে পারেন। স্থানীয় লোকজনের কাছে পিয়ালী আজও কেল্লা নামে পরিচিত।

    শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে আপনি ‘দক্ষিণ বারাসত’ স্টেশনেও নামতে পারেন। তারপর অটো বা ট্রেকারে করে যান কেল্লার বাজার। এই বাজারের উল্টো দিকেই পিয়ালী নদীর ওপর রয়েছে কংক্রিটের ড্যাম। ওই ড্যামের উপর দিয়েই ( ওটাই ব্রিজ ) গেলেই পিয়ালী আইল্যান্ড। লোকাল ট্রেনের সময় সূচী এখান থেকে দেখে নিতে পাড়েন।
    .
  • সড়কপথে – যেতে চাইলে কামালগাজি বাইপাসের ওপরে নতুন ফ্লাইওভার ধরে বারুইপুরের দিকে যান। তারপর গোচরণ-ধসা রোড ধরে দক্ষিণ বারাসত পেরিয়ে চলুন মহিষমারি বাজার। সেখান থেকে আরেকটু এগোলেই কুলতালির স্লুইস গেটের ব্রিজ। ব্রিজ পার হলেই আপনি পৌঁছে যাবেন গন্তব্যে।

পিয়ালী দ্বীপ ভ্রমণের ভাল সময়

এক দিনের ট্যুর - চলুন পিয়ালী দ্বীপ
Picture credit: wbtourismdotblog.wordpress.com

এখানে বছরের যে কোনো সময়ই যাওয়া যায়। তবু বিশেষ করে বর্ষা আর শীতের আলাদা আলাদা আমেজ নিতে অনেক পর্যটক ভিড় করেন এখানে। আপনি যদি শীতকালে আসেন তাহলে এখানে প্রচুর পরিযায়ী পাখি দেখতে দেখতে পাবেন | আর বর্ষায় তো কথাই নেই, গ্রামগুলো হয়ে ওঠে আরও সুন্দর। বর্ষাকালে ঝিরি ঝিরি বৃষ্টির মধ্যে হোটেল থেকে অন্যরকম লাগে পিয়ালী | অনেক সময় হোটেলের সামনে পুকুর থাকলে তার জলে শাপলা গুলোর ওপর টুপটাপ বৃষ্টির খেলা দেখতে বেশ লাগে।

কি দেখবেন বা করবেন পিয়ালী দ্বীপে

  • কাছাকাছি রয়েছে কুলতলী স্লাইস গেট
  • পিয়ালী নদী থেকে হেড়োভাঙা নদী ও মাতলা নদীর সন্নিকট অবধি নৌকা ভ্রমণ
  • নদী চরে চড়ুইভাতি করার সুব্যবস্থা রয়েছে
  • বিক্ষিপ্ত জঙ্গল হাইকিং করতে পারেন
  • মাতলা নদীতে নৌকা ভ্রমণ করুণ
  • দ্বীপের তীরে ম্যানগ্রোভ বন এবং গ্রামের জীবন সম্পর্কে জানুন
  • শীতকালে পিয়ালী দ্বীপে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি আসে। দেখুন ও ফটোগ্রাফি করুণ।
  • পিয়ালী দ্বীপের আশেপাশের গ্রামের জীবনও উপভোগ করা যায়।
  • পিয়ালী দ্বীপ শিক্ষামূলক ট্যুর আয়োজনের জন্যও বিখ্যাত।
  • যাবা কাছাকাছি গন্তব্যগুলি অন্বেষণ করতে চান তারা সহজেই পিয়ালি দ্বীপ থেকে ঝড়খালি এবং কাইখালিতে একটি উপভোগা ভ্রমণের আয়োজন করতে পারেন।

পিয়ালী দ্বীপে থাকার ব্যবস্থা

ভ্রমণার্থীদের জন্য সুন্দরবনে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন উন্নয়ন নিগমের নিজস্ব “মাতলা ট্যুরিজম প্রপার্টি”। বন্ধু-বান্ধব-আত্মীয়-স্বজনকে নিয়ে সেখানেই থাকতে পারেন স্বচ্ছন্দে। বিস্তারিত জানতে ফোন করুন ৯৭৩২৫ ০৯৯২৫ নম্বরে।

এখানে থাকার জায়গা হল পিয়ালি আইল্যান্ড ট্যুরিস্ট লজ। এটি পশ্চিমবঙ্গ সরকার ট্যুরিজম লজগুলির অন্তর্গত| এটিকেই স্থানীয়রা পিয়ালী কেল্লা বলে চেনে| এখানে ১৯টি ডবল বেডের রুম রয়েছে। থাকা আর খাওয়ার খরচ আলাদা। থাকা-খাওয়া মিলে মাথাপিছু ১২০০ টাকার আশেপাশে পড়বে। মৎস্যপ্রেমীরা এখানে টাটকা মাছের স্বাদ নিতে পারবেন। এটি ছাড়াও কেল্লার আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে হয়েছে অনেক প্রাইভেট লজ

আরও পড়ুনঃ এখান থেকে কিছু দুরেই হেনরি দ্বীপ সম্পর্কে, কাছেই বকখালি

Leave a Comment