বিচিত্রপুর ভ্রমণ – ম্যানগ্রোভ, পরিযায়ী পাখি, বোট রাইড, নেচার পার্ক

বিচিত্রপুর ভ্রমণ

বিচিত্রপুর এক আশ্চর্য দ্বীপ যেখানে খাঁড়িপথে মোটর বোটে চড়ে ঘুরে দেখা যায় সেই দ্বীপ ও তার চারপাশের অরণ্য। নামা যায় নদী মোহনায় গড়ে ওঠা ওই দ্বীপে। সেখানে ঝাঁকে ঝাঁকে লাল কাঁকড়া ঘুরে বেড়ায়। দেখা মিলতেও পারে অশ্বক্ষুরাকৃতির কাঁকড়া বা হর্স-শু ক্র্যাব। আবার শীতে দেখা যায় নানা পরিযায়ী পাখি। বিচিত্রপুর ভ্রমণ আপনাকে অবাক করবে কারন এত সুন্দর জায়গা অথচ কত কাছে, দীঘা থেকে মাত্র ১২কিমি। চাইলে দীঘায় থেকে একটা দিনে জায়গাটি ঘুরেও আসা যায়।

কেন বিচিত্রপুর ভ্রমণ?

বিচিত্রপুর ভ্রমণ
ভাঁটার সময় বিচিত্রপুর যেমন দেখায়

সুবর্ণরেখা নদী ঝাড়খণ্ডে উৎপত্তির পর পশ্চিমবঙ্গ হয়ে ওড়িশায় এই নদী মিশেছে বিচিত্রপুরের কাছে বঙ্গোপসাগরে। নদীর মোহনায় বিশাল এলাকা জুড়ে গড়ে উঠেছে ম্যানগ্রোভ অরণ্য, মনে হতে পারে আপনি যেন সুন্দরবনে। তা ছাড়া সমুদ্রসৈকত, ক্যাসুরিনার জঙ্গল, লাল কাঁকড়ার অভিসার তো আছেই। নৌকা চড়ে ঘুরুন ম্যানগ্রোভের জঙ্গলে। ওড়িশা ইকোট্যুরিজমের ব্যবস্থাপনায় নৌকা চলে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত। নৌকার টিকিট পাওয়া যায় বিচিত্রপুরেই। নিরালা, নিরিবিলি বিচিত্রপুরে, সম্ভব হলে, প্রকৃতির মাঝে থেকে উপভোগ করুন পূর্ণিমার রাত। কাছেপিঠে বেশ কিছু ঘোরার জায়গাও আছে। খড়িবিলে ওই অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য বোঝার জন্য রয়েছে ইন্টারপ্রিটেশন সেন্টার।

বিচিত্রপুর সত্যই বিচিত্র

জোয়ারের সময় বিচিত্রপুর
জোয়ারের সময় বিচিত্রপুর যেমন দেখায়

স্পিড বোট যখন আপনাকে নামিয়ে দেবে একটি দ্বীপে ৷ অদ্ভূত জ্যামিতিক নকশায় দাঁড়িয়ে থাকা দ্বীপটিতে পা ফেলার সঙ্গে সঙ্গেই কানে আসবে পাখিদের কিচিরমিচির। তবে মজার ব্যাপার হল জোয়ারের সময় নামতে পারবেন না। বিচিত্রপুর দ্বীপের আসল রহস্য এটিই। কারণ দিনে মাত্র ঘণ্টা ছয়েক জেগে থাকে দ্বীপটি। তাই এর প্রতি পর্যটকদের আকর্ষণও বেশি। দ্বীপটিতে পা দেওয়ার পর পর্যটকদের ফেলে দেওয়া প্যাকেট, বোতল কিছুই চোখে পড়বে না। মনে হবে আপনিই বুঝি প্রথম পা রাখলেন।

কিভাবে যাবেন

খাঁড়িপথে মোটর বোট রাইড
সরু খাঁড়িপথে সুবর্নরেখা মোহনার দিকে মোটর বোট রাইড
  • হাওড়া থেকে সকাল ৬টায় ধৌলি এক্সপ্রেস ধরুন, জলেশ্বর পৌঁছে দেবে সকাল ৮টা ৪৭ মিনিটে। সেখান থেকে বিচিত্রপুর ৪০ কিমি, গাড়িতে।
  • কলকাতা/হাওড়া থেকে বাসে বা ট্রেনে দিঘা চলুন। সেখান থেকে ভ্যান রিকশা, অটো বা গাড়িতে চলুন বিচিত্রপুর, ১৫ কিমি। নিউ দীঘা থেকে চন্দনেশ্বর মন্দিরের গা দিয়ে রাস্তা বরাবর এগিয়ে যেতে হবে৷

আঁকাবাঁকা পথ গ্রামের পথ৷ আর তারপরই রোদ আর ছায়ার মিশেলে ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট৷ শুরু বিচিত্রপুরের বিচিত্র রহস্য৷ এই ম্যানগ্রোভ ফরেস্টে দেখবেন ওড়িশা ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের একটি টিকিট কাউন্টার৷ ৬ সিটের ও ৮ সিটের ফাইবার স্পিড বোট ছাড়ে সেখান থেকে৷ সেগুলির ভাড়া যথাক্রমে ১২০০ ও ১৬০০ টাকা প্রতি ট্রিপ৷ টিকিট কেটে উঠে পড়ুন সেই বোটে ৷

কোথায় থাকবেন

  • আপনি দীঘাতে রাত্রিবাস করে বিচিত্রপুর সকালে গিয়ে সন্ধ্যায় ফিরে আসতে পারেন এবং দীঘায় অসংখ্য থাকার ঠিকানা রয়েছে তাই এখানে নতুন করে দিলাম না।
  • বিচিত্রপুরে থাকার ভাল ব্যবস্থা হল – ওড়িশা ফরেস্ট ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের ইকোট্যুরিজমের ৮ টি এসি কটেজ এবং দ্বিশয্যার ৬টি নন এসি কটেজ রয়েছে। এসি কটেজে দু’ জনের থাকার খরচ ৩৮৯৪ টাকা (কর-সহ সব কিছু নিয়ে। এর মধ্যে দু’জনের প্রাতরাশ, মধ্যাহ্নভোজ এবং রাতের খাবারের খরচ ধরা আছে। মোহনায় এক বার নৌকাবিহারের খরচও ধরা আছে।)

    ঠিকানা – বিচিত্রপুর নেচার ক্যাম্প , বালাসোর , ওড়িশা। ফোন নম্বর : ৭০৬৪৪৪৫৫৮৮, ৬৩৭০৪৬৬৭০১। অনলাইন ঘর বুক করা যাবে ওড়িশা সরকারের বন দফতরের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে।

কখন যাবেন

খুব গরম মানে গ্রীষ্ম এবং বর্ষাকাল বাদ দিয়ে যে কোনও সময় যাওয়া যেতে পারে। অর্থাৎ শরৎ, হেমন্ত বা বসন্তই এর সেরা সময়। আরও একটা দরকারি তথ্য হল আসার আগে অবশ্যই জোয়ারের সময় জেনে নেবেন। সেই সময় ধরেই স্পিডবোট চলাচল করে। রোজ একই সময় জোয়ার আসে না। মানে, প্রতিদিন এক ঘণ্টা করে সময় পিছোয়। মাঝিদের কাছেই জেনে নিতে পারেন এ চরাচরের চরিত্র। মূল খণ্ডের সঙ্গেই জেগে থাকে আশপাশে আরও দুই-চার খণ্ড ভূমি যেগুলি জোয়ারের সময় মাটি সম্পুর্ন দুবে থাকে, কেবল গাছের মাথাগুলোই দেখাযায়। ভাঁটায় আবার সম্পুর্ন ভুখন্ড জেগে ওঠে।

আশেপাশের আরও কি কি দেখবেন

  • তালসারি সৈকত – ১০ কিমি
  • চন্দনেশ্বর মন্দির – ৭ কিমি, তালসারির পথেই।
  • উদয়পুর সৈকত – ওড়িশা-পশ্চিমবঙ্গ সীমানায়।
  • ভূষণ্ডেশ্বর মন্দির – উপমহাদেশের সব চেয়ে বড়ো শিবলিঙ্গ, ১২ কিমি।
  • দিঘা, শংকরপুর, তাজপুর, মন্দারমণি তো আছেই।

কী ভাবে ঘুরবেন

কাছেপিঠের জায়গাগুলো ভ্যানরিকশায় ঘুরে নিতে পারেন। শংকরপুর, তাজপুর, মন্দারমণি এলে গাড়ি ভাড়া করে নেবেন। আপনি যদি দীঘাতে রাত্রিযাপন করে সেখানথেকে বিচিত্রপুর যান তবে গাড়ি বা টোটো যাই ভাড়া করুন বলে রাখবেন আসার সময় উল্লেখিত সমস্ত জায়গাতে আপনাকে দেখিয়ে দেবে, কোন অতিরিক্ত পয়সা ছাড়াই।

আরও পড়ুন – দীঘা ঘোরার জন্য সব দরকারি তথ্য

Leave a Comment