ঝাড়গ্রাম জেলার (বেলপাহাড়ি) সেরা 11 টি দর্শনীয় স্থান

ঝাড়গ্রাম জেলার দর্শনীয় স্থান

কলকাতার অদুরে একটা সুন্দর সপ্তাহান্তের গন্তব্য হিসাবে ঝাড়গ্রাম সবথেকে ভাল জায়গা। আবার ঝাড়গ্রাম জেলার সেরা দর্শনীয় স্থানগুলির অন্যতম একটি এলাকা হল বেলপাহাড়ি। আমার মনে হয় ঝাড়গ্রাম তথা বেলপাহাড়ির দারুন সুন্দর বেড়াবার জায়গাটি হয়তো এখনও অনেক পর্যটকের কাছে অজানা। শরত, হেমন্ত বা বসন্ত যে কোন সময়েই এখানে বেড়াতে আসা যায়। ঝাড়গ্রামের সুন্দর আবহাওয়া, পাহাড়, ঝর্না বা শাল বন ইত্যাদি মিলে মিশে এই অঞ্চলটিকে দুই বা তিন দিনের ভ্রমণের জন্য এক্কেবারে আদর্শ গন্তব্য করে তুলেছে।

ঝাড়গ্রাম জেলা ভাল ভাবে ভ্রমণের জন্য একদিনে সব দর্শনীয় স্থানগুলি ঘুরে দেখা অসম্ভব। আপনাকে অন্তত দুয় রাত্রি থাকতে হবে, তিন রাত্রি হলে বেশ ভাল হয়। এবং সেটা ঝাড়গ্রাম শহর এবং বেলপাহাড়ি এই দুই জায়গার মধ্যে ভাগাভাগি করে বা যেকোন একজায়গায় থাকতে পারেন। দুটি জায়গাতেই থাকার ভাল বন্দোবস্ত আছে। এবার দেখে নেওয়া যাক ঝাড়গ্রাম জেলার দর্শনীয় স্থানগুলি। ঝাড়গ্রাম শহরে একদিন থাকবেন ধরে নিয়ে এখানকার পর্যটন গন্তব্যগুলি আলোচনা করলাম।

ঝাড়গ্রাম জেলার দর্শনীয় স্থান কি কি


ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি

ঝাড়গ্রাম জেলার সেরা দর্শনীয় স্থান

ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি হল ঝাড়গ্রাম পর্যটনের প্রধান আকর্ষন। বলা যেতে পারে, পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত অন্যান্য রাজবাড়িগুলির মধ্যে হয়তো সবচেয়ে ভাল পরিচর্যায় রয়েছে। চারিদিকে সুন্দর ফুলের বাগান সহ মন্দির, রাজকীয় অতিথিশালা ইত্যাদি আপনাকে এই রাজবাড়ির ইতিহাস জানতে উৎসুক করে তুলবে। সংক্ষেপে বলা যায় যে রাজা নরসিংহ মল্লদেব ১৯৩১ সাল নাগাদ বর্তমান প্রাসাদটি নির্মান সম্পন্ন করেন। বর্তমানেও ঐ রাজবংশের উত্তর পুরুষরা প্রাসাদের এক অংশে বসবাস করেন। এই মল্লদেব রাজারা আসলে রাজস্থান থেকে এখানে এসে রাজ্য স্থাপন করেছিলেন।

শোনা যায়, রাজা সর্বেশ্বর সিং ছিলেন মোগল সম্রাট আকবরের আমলে মানসিং ‘এর অধস্থন একজন সেনাপতি। সম্রাট আকবরের আদেশে মান সিং’এর নেতৃত্বে বাংলা জয়ের জন্য যখন আসেন, সেসময় রাজা সর্বেশ্বর সিং রাজপূত সামরিক বাহিনী ও অশ্বারোহী বাহিনীর সহায়তায় ‘জঙ্গলখণ্ড’ আক্রমণ করেছিলেন ও তদানিন্তন এই অঞ্চলের মাল রাজাকে পরাস্ত করে মল্লদেব উপাধি নেন এবং ঝাড়গ্রাম নামে তার রাজধানী স্থাপন করেন। মোঘল সেনাপতি মান সিং ফিরে যাওয়ার সময় এই রাজ্যের দায়িত্ব পান রাজা সর্বেশ্বর সিং । এভাবেই ঝাড়গ্রামের মল্লদেব রাজবংশের সুচনা হয়।

এই রাজবাড়ীর এক অংশ বর্তমানে হোটেলে রুপান্তরিত এবং অনলাইন বুকিং করে থাকা সম্ভব। তবে এটির খরচও বেশ রাজকীয়। হতাস হবার কিছু নেই সঙ্গের ভাল খবর এই যে রাজ্য সরকারের পর্যটন দপ্তর এই রাজবাড়ীর লাগোয়া সামনেই তাদের সুন্দর কটেজ বাগান এবং রেস্টরেন্ট আছে। পর্যটন দফতরের ভাল প্যাকেজ আছে, দেখতেই পারেন।

খোয়াবগাঁ (আলপনা গ্রাম)

খোয়াবগাঁ (আলপনা গ্রাম)

ঝাড়গ্রাম শহর থেকে প্রায় ৫ বা ৬ কিমি দূরে ছোট্ট একটা গ্রাম কম-বেশি ১৫টি আদিবাসী পরিবার নিয়ে এই গ্রামটি। যেতে হলে রাস্তা থেকেই একটা টোটো নিয়ে নিন অথবা আপনার গাড়িওয়ালা কে বললেই হবে। চিত্রকলার কারুকার্যে ঝাড়গ্রামের খোয়াবগাঁ যেনো একটি রূপকথার দেশ মনে হবে। গ্রামের প্রতিটি বাড়ির সমস্ত দেওয়ালগুলি গ্রামবাসীরা সুন্দর সব আলপনা দিয়ে সাজিয়ে রেখেছে। সত্যই মন ভাল হয়ে যায় এখানে এলে। পর্যটকেরা এই মন ভালকরা পরিবেশের টানেই এখানে ছুটে আসেন। আপনি গাড়িতে খোয়াবগাঁ আসবেন, ঢোকার মুখেই দেখবেন নিয়মাবলীর বোর্ডে লেখা আছে যে, গ্রামের ভেতরে ফটো ও ভিডিওগ্রাফি করার জন্য আপনাকে একটা ছোট অর্থ সাহায্য প্রয়োজন (গ্রামের উন্নতিকল্পে)।

এই খোয়াবগাঁ বা আলপনা গ্রাম যাদের অমূল্য অবদানে বাস্তবায়িত হয়েছে তারা হলেন কলকাতার চালচিত্র অ্যাকাডেমি। তাঁরাই এই গ্রামের যুবক যুবতিদের অঙ্কনে প্রশিক্ষন দিয়ে তাদের হাত দিয়েই ফুটিয়ে তুলছেন এইসব সুন্দর চিত্র, গল্প ও কাহিনী। বর্তমানে ঝাড়গ্রাম জেলার দর্শনীয় স্থান সমুহের মধ্যে এই আলপনা গ্রাম তার শৈল্পিক ও পরিচ্ছন্ন গ্রাম, দেখতে আসা পর্যটকদের মুগ্ধ করে। ফলে তাদের তৈরি শিল্পকলা সমৃদ্ধ দ্রব্যাদি বিক্রির মাধ্যমে গ্রামবাসীদের অর্থনৈতিক উন্নতি সাধন হচ্ছে। মনে হয় এই খোয়াবগাঁ ‘এর লোধা সম্প্রদায়ের এবং তাদের ছেলে মেয়েরাও দিন মজুরি না খেটে হাতের কাজ করে অর্থ উপার্জন করছে।

চিল্কিগড় রাজবাড়ি

চিল্কিগড় রাজবাড়ি

চিল্কিগড় রাজবাড়ি ঝাড়গ্রাম জেলার একটি ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান। ঝাড়গ্রাম শহর থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দূরে জামবনী ব্লকে অবস্থিত। জামবনীর রাজা গোপিনাথ সিংহ এই রাজবাড়িটি তৈরি করান। তার মৃত্যুর পর চিল্কিগড়ের রাজা হন তার জামাতা রাজা জগন্নাথ দেও ধবলদেব। প্রায় ৩০০ বছরের পুরান প্রাসাদটি সম্পূর্ণ ধ্বংসপ্রাপ্ত না হলেও সর্বত্র অবহেলা ও অযত্নের ছাপ স্পষ্ট।

বিশাল রাজবাড়িটি বর্গিদের থেকে মানুষদের সুরক্ষিত রাখার জন্য প্রাসাদটি উঁচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরা হয়েছিল। রাজবাড়ী প্রবেশের আগেই চোখে পড়বে বড় তোরণদ্বার, তারপর একটা উন্মুক্ত প্রান্তর, বাঁদিক একটা প্রাচীন বৃহৎ অশ্বত্থ গাছ, তিনটি মন্দির, পরিত্যক্ত সার্ভেন্ট কোয়ার্টার ও আউটহাউস এবং ডাইনে মূল রাজপ্রাসাদ। এই দ্বিতল রাজবাড়িটির গঠনে মুঘল এবং ব্রিটিশ স্থাপত্যশৈলীর প্রভাব স্পষ্ট দেখা যায়। রাজবাড়ির মুল প্রাসাদে এখনো বংশধরেরা বসবাস করেন এবং রাজবাড়ির মন্দিরগুলিতে দীর্ঘকাল ধরে নিত্য পূজা হয়ে চলেছে।

কনকদূর্গা মন্দির

কনকদূর্গা পুরান মন্দির
পুরান কনকদূর্গা মন্দির

ঝাড়গ্রাম শহর থেকে ১২ কিমি দূরে ডুলুঙ নদীর তীরে এই কনকদুর্গা মন্দির। বহু প্রাচীন এই মন্দিরটি নির্মাণ করেন জামবনীর মহারাজা গোপিনাথ সিংহ। মূল মন্দিরটি প্রায় জীর্ণ হয়ে গেলে নতুন মন্দির টি স্থাপিত হয়। ডুলুঙ নদীর ধারে সময় কাটাতেও ভালো লাগবে। পায়ে হেঁটে নদী পারাপার করার মজাই আলাদা। তবে এখানে এলে হনুমান থেকে সাবধান হতে হবে। মন্দিরের চারিপাশের ঘন গাছপালার মধ্যে থেকে নানা রকম পাখির ডাক আপনাকে মুগ্ধ করবে।

38 KanakdurNew
নতুন কনকদূর্গা মন্দির


জঙ্গলমহল জুলজিক্যাল পার্ক

জঙ্গলমহল জুলজিক্যাল পার্ক

সুন্দরী ঝাড়গ্রাম শহরের একটি বড় আকর্ষন হল জঙ্গলমহল জুলজিক্যাল পার্ক। ১৯৮০ সাল নাগাদ এখানে ঝাড়গ্রাম মিনি জু প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। তারপর এই মিনি জু গুনমানে উন্নত হয়ে ২০০৫ সালে পুরদস্তুর জুলজিক্যাল পার্ক হয়ে দাঁড়ায়। এটি বর্তমানে ঝাড়গ্রামের একটি অবশ্য দ্রষ্টব্য।

বেলপাহাড়ি এলাকা (সার্কিট)

বেলপাহাড়ি ঝাড়গ্রামের বিনপুর ব্লকের অন্তর্গত একটা গ্রাম কিন্তু এর আশপাশের এলাকা গুলোকে একসাথে বেলপাহাড়ি সার্কিট বলে। এখানে দেখার মত অনেক গুলো জায়গা আছে যেগুলোকে দেখতে হলে আপনার প্রায় ২ দিন তো লাগবেই। এই সার্কিটে পর্যটক আসার সেরা সময় হল শীতকাল অর্থাৎ ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত। তবে একটা কথা অবশ্যই বলতে হয় যে, এখানকার সুন্দর ঝর্ণাগুলো ও পাহাড় ঢাকা সবুজের সৌন্দর্য বর্ষাকালে পুর্নতা পায় তাই বর্ষাকাল সুন্দরী বেলপাহাড়ি রুপে সেজে ওঠে।

বেলপাহাড়ি এলাকার দর্শনীয় স্থান গুলি দেখে নেওয়া যাকঃ

গদ্রাসিনী পাহাড়

গদ্রাসিনী পাহাড়

গদ্রাসিনী পাহাড় বেলপাহাড়ি থেকে ৪ কিলোমিটার আর ঝাড়গ্রাম থেকে প্রায় ৪৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। একটা দারুন শান্তির নির্জনতা ছেয়ে থাকে এই সুন্দর পাহাড়ে আসলেই আপনি অনুভব করবেন। এই গদ্রাসিনী পাহাড়ের নিচেই রয়েছে একটি আশ্রম যেটি স্বামি যোগানন্দ এবং লাহিড়ী মহারাজের আদর্শে অনুপ্রানিত। এখানে প্রতি বছর অগ্রহায়ন মাসে বহু আধ্যাত্মিক সাধক এই উতসবে সমবেত হন।

গদ্রাসিনী পাহাড় ট্রেকিংয়ের জন্য বেশ উপযুক্ত। পাহাড়ের উপর থেকে চারিদিকের সুন্দর দৃশ্য অপূর্ব লাগে যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না । মাত্র কয়েক বছর আগে একটি সুন্দর জায়গার সন্ধান পাওয়া গেছে ‘রঙ্গিন পাহাড়’। এখানে গোহালবেড়িয়া গ্রামের মধ্য দিয়ে যান এবং মিনিট কয়েক জঙ্গল পথ হাঁটার পর আপনি এক রঙিন পাহাড়ের আভাস পাবেন। পাথরের ওপর লাল, হলুদ এবং সাদা রং সূর্যের আলোতে প্রতিফলিত হয়, যেটিকে অস্ট্রেলিয়ার উলুরু পর্বতমালার সাথে এই সৌন্দৰ্য্যের তুলনা করা যেতে পারে।

খান্দারানি লেক

খান্দারানি লেক
Picture credit: Anirban Mahata

বেলপাহাড়ির খান্দারানি লেক ঝাড়গ্রামের কাছে সবচেয়ে মনোরম স্থানগুলির মধ্যে একটি। বিশাল বাঁধের চারপাশের পর্বত মালা ও বন দেখতে পারবেন যা এখানকার প্রধান আকর্ষণ। আপনি খান্দারানি ড্যামের চারপাশে ট্রেকও করতে পারেন। ঝাড়গ্রাম থেকে প্রায় আড়াই ঘন্টা লাগে এখানে আসতে। এই লেকে আসলে আপনারা নিশ্চিন্তে এক থেকে দুঘন্টা কাটাতে পারবেন। লেকের চারপাশের পরিবেশ শান্ত ও নির্জন আর লেকের চারিদিক ঘিরে আছে সবুজ গাছপালা এবং ছোট ছোট পাহাড়।

তারাফেনি ব্যারেজ

তারাফেনি ব্যারেজ

তারাফেনি ব্যারেজ বেলপাহাড়ি থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। তারাফেনি নদীর উপর ছোট্ট একটা ব্যারেজ কিন্তু এই ব্যারেজ থেকেই এই বেলপাহাড়ি অঞ্চলের সমস্ত পানীয় জলের প্রধান উৎস। পর্যটকদের কাছে এর মুল আকর্ষন হল এই ব্যারেজ এবং এর চারপাশের অবাক করা সৈন্দর্য ।

ঘাঘরা জলপ্রপাত

ঘাঘরা জলপ্রপাত

ঘাঘরা জলপ্রপাত বেলপাহাড়ি থেকে ৭ কিমির মত দূরে রয়েছে। এটি বেলপাহাড়ি বা ঝাড়গ্রামের একটি উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান। ‘ঘাঘরা’ শব্দটি ‘গাগরা’ থেকে এসেছে, যার অর্থ কলসি। আর সত্যই এই প্রপাতের আকৃতি অদ্ভুত, পাথরের মাঝখান থেকে জল আসার সময় মাঝে মাঝেই পাথর ক্ষয়ে গিয়ে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। জল ওই সমস্ত গর্তের মধ্য দিয়ে আসার সময় কলসি থেকে জল ঢালার মত ওই গর্তগুলি থেকে জল বেরতে থাকে। জলপ্রপাতটি সত্যই আপনার মন জয় করে নেবে। জঙ্গল নয় বেশ একটা গ্রাম্য পরিবেশ, ইতস্তত ঝোপঝাড় আরে একেবারে পাথুরে হওয়ায় জলপ্রপাতটি পর্যটকদের কাছে অতন্ত্য প্রিয় করে তুলেছে। বর্ষাকালে, ঘাগরা জলপ্রপাতের সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধি পায় এবং স্থানিয় জনগনের একটা জনপ্রিয় পিকনিক স্পট হয়ে দাঁড়ায়।

কাঁকড়াঝোর

কাঁকড়াঝোর
Picture credit: kakrajhor.com

কাঁকড়াঝোর জায়গাটি গদ্রাসিনী পাহাড় থেকে ৮ – ৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। আপনি যদি জঙ্গল ভালবাসেন তবে কাঁকড়াঝোর আপনার কাছে স্বর্গতুল্য। পাহাড়ের গায়ে শাল, সেগুন, মাহুয়া বা পলাশের সবুজ বন যেখানে আপনি জঙ্গলের ছায়ায় আপনি হারিয়ে যাতে চাইবেন। এই কাঁকড়াঝোর জায়গাটির ঢিলছোঁড়া দুরত্বে রয়েছে উড়িষ্যা ও ঝাড়খন্ড রাজ্য। অর্থাৎ তিনটি রাজ্যের সীমানা একবিন্দুতে। কাঁকড়াঝোর দলমা পাহাড় শৃঙ্খল অন্তরভুক্ত একটা জায়গা সেটি আবার হাতিদের করিডরের মধ্যে পড়ে তাই মাঝে মাঝেই হাতির দলের এরাজ্য থেকে ওরাজ্যে যাতায়াত লেগে থাকে। তাই বেলপাহাড়ি এলে কাঁকড়াঝোর যেন মিস করবেন না।

ডাঙ্গিকুসুম ভিউ পয়েন্ট ও ফলস

ডাঙ্গিকুসুম ফলস

ডাঙ্গিকুসুম ভিউ পয়েন্ট থেকে চারিদিকের অসম্ভব সৌন্দর্য উপভোগ করার শ্রেষ্ঠ সময় ভোর বা খুব সকালবেলা। তাই কাছাকাছি থাকলে দারুন সুবিধা হবে। ডাঙ্গিকুসুমে থাকার মতো বেশ কিছু কটেজ ও হোমস্টে এখন গড়ে উঠেছে। জায়গাটি একটু অফবিট বটে তবে আপনার পয়সা উসুল হয়ে যাবে যদি একটা সকাল এখানে কাটান।

যদি একটু-আধটু অ্যাডভেঞ্চার ভাল লাগে তবে, এখান থেকে সোজা চলুন ডাঙ্গিকুসুম ফলস দেখতে। ডাঙ্গিকুসুম ফলস এখান থেকে সামান্য একটু গাড়িতে যান উড়িষ্যা বর্ডারের কাছে। গাড়িথেকে নেমে জঙ্গলের মধ্যে সরু রাস্তা বরাবর কিছুটা হেঁটে পৌঁছে যান এই লুকানো জলপ্রপাত দেখতে। এই জায়গা গুলোতে আসলে অবশ্যই ঝাড়গ্রাম বা বেলপাহাড়ি থেকে গাড়ি বুক করে আসবেন, আর নিজস্ব গাড়ি নিয়ে আসলে গাইড বা লোকাল মানুষের সাহায্য নিতে ভুলবেন না।

কিভাবে যাবেন ঝাড়গ্রাম

  • সড়কপথে – আপনি যদি সড়কপথে যেতে চাইলে, কলকাতা থেকে ঝাড়গ্রাম পর্যন্ত একটি ক্যাব ভাড়া করতে পারেন। কলকাতা থেকে ঝাড়গ্রামের দূরত্ব সড়কপথে ১৭৮ কিমি। গাড়িতে আনুমানিক ভ্রমণের সময় ৪ ঘন্টা। কলকাতা থেকে NH6 হয়ে ঝাড়গ্রাম পৌঁছাতে পারেন। ক্যাবগুলি বর্তমানে ৩৫০০ থেকে ৪৫০০ টাকার মত নিতে পারে।
  • ট্রেনে – আপনি ট্রেনে করেও যেতে পারেন। আমি আপনাকে রেলপথ দিয়ে ভ্রমণ করার পরামর্শ দেব কারণ এটি আপনার গন্তব্যে পৌঁছানোর সবচেয়ে সস্তা উপায়। আপনি হাওড়া ষ্টেশন থেকে ঝাড়গ্রাম স্টেশন পর্যন্ত যেকোনো লোকাল ট্রেনে যেতে পারেন। হাওড়া থেকে ঝাড়গ্রাম স্টেশনে পৌঁছাতে প্রায় ২.৫ ঘন্টা সময় লাগে এবং এটি সবথেকে কম খরচে ও তাড়াতাড়ি আপনার গন্তব্যে পৌঁছানোর উপায়।
  • বিকল্পে আপনি খড়গপুর জংশন পর্যন্ত একটি ট্রেনে যেতে পারেন এবং তারপরে ঝাড়গ্রাম পর্যন্ত একটি ক্যাব ভাড়া করতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনি প্রায় ঘন্টা চারেকের মধ্যে কলকাতা থেকে ঝাড়গ্রাম পৌঁছে যাবেন।

বেলপাহাড়ি পৌঁছবেন কিভাবে?

বেলপাহাড়ি যেতে হলে আপনাকে প্রথমে কলকাতা থেকে ঝাড়গ্রাম পৌঁছাতে হবে। ঝাড়গ্রাম থেকে বেলপাহাড়ি ৩৫ কিমি। তাই একটা প্রয়োজন মত গাড়ি নিয়ে নিন। ঝাড়গ্রাম শহরে অবশ্যই পেয়ে যাবেন।

ঝাড়গ্রাম বেড়াতে গিয়ে কোথায় থাকবেন

  • ঝাড়গ্রাম শহরে প্রচুর হোটেল এবং রিসর্ট আছে কিন্তু আমার বেক্তিগত পরামর্শ হল ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি সংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গ সরকার পর্যটন বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করুণ দারুন সাজানো গোছানো ভাল রেস্টুরেন্ট সহ। প্রতি রাতে স্থানীয় আদিবাসী কালচারাল অনুষ্ঠান হয়।
  • বেলপাহাড়িতে – অনেক সুন্দর গেস্ট হাউস ও হোমস্টে রয়েছে। বেলপাহাড়ি গেস্ট হাউসটি বেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং অত্যন্ত আরামদায়ক। এগুলিতে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। বেলপাহাড়ি ঝাড়গ্রামের অন্যান্য থাকার জায়গা হল অতিথি নিবাস, ওয়েসিস হোমস্টে এবং অরণ্য সুন্দর গেস্ট হাউস। এখানে সুযোগ-সুবিধা, ভাল খাবার ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ হল কর্মীদের সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ পাবেন।

আরও পড়ুন – পুরুলিয়া অযোধ্যা পাহাড় বেড়ানোর সমস্ত তথ্য

ঝাড়গ্রাম কোন জেলায় অবস্থিত?

ঝাড়গ্রাম শহর ঝাড়গ্রাম জেলার সদর ।

ঝাড়গ্রাম জেলার দুটি নদীর নাম কি?

সুবর্ণরেখা ঝাড়গ্রামের প্রধান নদী তবে ডুলুং ঝাড়গ্রাম শহরের গায়ে ছোট আরেকটি নদী ।

ঝাড়গ্রাম জেলা কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়?

পশ্চিম বাংলার ২২ তম জেলা হিসাবে ২০১৭ সালে ৪ ঠা এপ্রিল আত্মপ্রকাশ করে।

Leave a Comment