শীতে বেড়ানোর জায়গা খুঁজছেন? ৬টি দারুন গন্তব্য

শীতে বেড়ানোর জায়গা

শীতে বেড়ানোর জায়গা নিয়ে আপনি কি এখনও ভাবছেন ? এখানে কয়েকটি শীতকালে ঘোরার সুন্দর জায়গা নিয়ে আলোচনা করা যাক, যেখানে দুই বা তিন দিনই বেড়াবার জন্য যথেষ্ট । এই জায়গাগুলি বন্ধু বান্ধব বা পরিবারের সাথে ঘোরার জন্য সেরা, এখানকার প্রকৃতি আপনার শরীর ও মন দুই ভাল করে দেবে। গ্রীষ্মকালে এই জায়গাগুলো দেখতে সুন্দর মনে হলেও শীতের সময়ে এখানে ঘুরতে যাওয়ার মজাই আলাদা। শীতে আরও ঠাণ্ডা পাহাড়ি গন্তব্যগুলি অনুল্লেখ করে কেবল দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে ঘুরে আসা যায় এমন ৭ট জায়গার কথা লিখলাম।

শীতে বেড়ানোর জায়গা শীর্ষ ৬টি কি কি?


1. বড়ন্তি

বড়ন্তি

হালকা শীতে একটা শনি-রবি প্রকৃতির কোলে কাটানোর জন্য চলুন ‘লাল-পাহাড়ির দেশে’। পুরুলিয়ার বড়ন্তি শীতে দুটো দিন কাটানোর দারুণ জায়গা। শাল-শিমূল, মহুয়া, পলাশ, পিয়াল, সেগুন ইত্যাদি সব ধরনের গাছের বনের মধ্যিখানে ছোট্ট একটা জায়গা! এই শীতে নিরিবিলিতে নিজের প্রিয়জনদের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটানোর জন্য আদর্শ।

  • কীভাবে যাবেন – নিজের গাড়িতে না গেলে শিয়ালদহ বা হাওড়া থেকে আসানসোলগামী যে-কোনও ট্রেনে চেপে বসুন। আসানসোল থেকে আদ্রা এবং আদ্রা থেকে সামান্য পথ বড়ন্তি।
  • কোথায় থাকবেন – পলাশবাড়ি ইকোলজিক্যাল রিসোর্ট থাকার জন্য বেশ ভালো। এখানে মোটামুটি ১,০০০ টাকা থেকে ২,০০০ টাকা মতো খরচ হতে পারে প্রতি রাতে ঘর ভাড়া হিসেবে। এছাড়া মানভূম হলিডে হোমও থাকার জন্য বেশ ভালো।

বড়ন্তি ভ্রমণ সম্পর্কিত আরও তথ্য জানতে ক্লিক করুন

2. হেনরি আইল্যান্ড

হেনরি আইল্যান্ড

হেনরি আইল্যান্ড ম্যানগ্রোভ ঘেরা শান্ত, নিরিবিলি সমুদ্রসৈকত এবং শীতে বেড়ানোর দারুন জায়গা। বকখালির একেবারেই কাছে, তবে কলরবহীন। কলকাতা থেকে মাত্র ১৩০ কিমি দূরে, লোকাল ট্রেনে করে ৩ ঘন্টায় নামখানা পৌঁছন, সেখান থেকে সড়কপথে হেনরি আইল্যান্ড। সুন্দরবনের পশ্চিমদিকে পশ্চিমবঙ্গের সেরা বিচ রিসর্ট রয়েছে এখানে। হেনরি আইল্যান্ড ঘুরে আসুন প্রিয়জন বা পরিবারকে নিয়েও।

  • কিভাবে যাবেন: শিয়ালদহ থেকে লক্ষ্মীকান্তপুর লোকাল বা নামখানা লোকাল ধরে নামখানা স্টেশনে নেমে গাড়িতে সোজা হেনরি আইল্যান্ড।
  • কী কী দেখবেন: রোজকার ব্যস্ততাকে দূরে রাখতে চাইলে এমন অফবিট জায়গা উইকেন্ডের জন্য পারফেক্ট। সবুজ ম্যানগ্রোভ, পায়ের নিচে সমুদ্রের ছোট্ট ছোট্ট ঢেউ, রাতের বেলায় বনফায়ার- সব মিলিয়ে নতুন বছরের দারুণ প্রাপ্তি।

হেনরি দ্বীপ নিয়ে আরও জানতে এখানে ক্লিক করুন

3. গনগনি

গনগনি

গনগনি বর্তমানে একটি জনপ্রিয় ভ্রমণ গন্তব্য। কলকাতা থেকে মাত্র কয়েক ঘণ্টার দূরত্বে শিলাবতী নদীর ধারে অবস্থিত এই গনগনি’কে ‘বাংলার গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন’ও বলা হয়। এর ভূপ্রকৃতি আপনার ভাল লাগবে, তাছাড়া জঙ্গল যদি আপনার পছন্দের হয়, তা হলেও যেতে পারেন গনগনিতে।

  • কিভাবে যাবেন:
    ট্রেন – হাওড়া, শালিমার বা সাঁতরাগাছি থেকে ট্রেনে করে গড়বেতা স্টেশনে পৌঁছে যাওয়া যায়। গড়বেতার কাছেই গনগনি।
    বাস – বাসে করে হাওড়া এবং ধর্মতলা থেকে গনগনি আসা যায়।
    গাড়ি – ৬ নং জাতীয় সড়ক ধরে পাঁশকুড়া, ঘাটাল, চন্দ্রকোনা হয়ে পৌঁছে যান গনগনি।
  • কোথায় থাকবেন:
    আশেপাশে ১-২ দিন থাকার জন্য রিসর্ট আছে। গড়বেতায় সোনাঝুরি গেস্ট হাউজ এবং আপ্যায়ন লজ ইত্যাদি রয়েছে।

4. বাঁকিপুট

বাঁকিপুট

শহরের কোলাহল থেকে একটু অবসর খুঁজতে চাইলে চলে যেতে পারেন বাঁকিপুট। মন্দারমনি-তাজপুরের ভিড় নেই, অথচ রয়েছে অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য! শীতকালে একটা উইকেন্ড কিন্তু সমুদ্রসৈকতে কাটানো যেতেই পারে। শুধু সমুদ্র নয়, এখানে দেখার মতো রয়েছে একটি শতাব্দীপ্রাচীন মন্দির, যার উল্লেখ রয়েছে কপালকুণ্ডলা উপন্যাসেও।

  • কীভাবে যাবেন: যদি বাসে যান, তা হলে যে-কোনও দিঘাগামী বাসে চেপে পড়ুন এবং কাঁথিতে নেমে সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে নিতে হবে বাঁকিপুটের জন্য। কাঁথি থেকে গাড়িতে প্রায় মিনিট ৪০ সময় লাগে এই উইকএন্ড ডেস্টিনেশনটিতে পৌঁছতে। রিজার্ভ করা গাড়িতে মোটামুটি ১,০০০ টাকা মতো খরচ পড়ে।
  • কোথায় থাকবেন: বাঁকিপুটে খুব বেশি থাকার জায়গা নেই তবে ঝিনুক রেসিডেন্সিতে থাকতে পারেন। এখানে খাওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে। মোটামুটি ১,৬০০ টাকা করে ভাড়া প্রতি রাতের জন্য।

আরও পড়ুন – বাংরিপোসি ওডিশার পাহাড়, ঝর্না সহ রোমান্টিক এক গন্তব্য

5. চুপির চর

চুপির চর

ব্যাস্ত জীবন থেকে এই শীতে কিছুটা সময় শান্ত জলে প্রিয়জনদের সাথে ছোট্ট নৌকায় হাতে বাইনোকুলার নিয়ে পরিযায়ী পাখিদের দেখা বা ছিপ হাতে ছোট মাছ ধরার মজাই আলাদা। চাইলে একটা বা দুটো দিন থাকার বন্দোবস্ত আছে। কলকাতা থেকে ঢিল ছোঁড়া দুরত্বে, নদীয়া-বর্ধমান সীমান্তে রয়েছে পূর্বস্থলি বা চুপির চর যে নামেই ডাকুন।

  • কিভাবে যাবেন:
    ট্রেনে – হাওড়া বা শিয়ালদহ থেকে কাটোয়া লোকাল ধরুন আর আপনি প্রায় আড়াই ঘন্টার মধ্যে পুর্বস্থলী স্টেশন । সেখান থেকে একটি টোটো ভাড়া করে চুপির চর’এ যেতে পারেন।

    বাসে – কলকাতা থেকে নবদ্বীপ বা মায়াপুর যাওয়ার যেকোনো বাস ধরতে পারেন – সেখান থেকে পুর্বস্থলী পৌঁছানো যায়।

    গাড়িতে – কলকাতা থেকে পূর্বস্থলী বা চুপির চর ১২০ কিলোমিটার। ব্যারাকপুর এবং কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে ধরে ঈশ্বর গুপ্ত সেতু পেরিয়ে চলে আসুন ত্রিবেণী। তারপর সপ্তগ্রাম-ত্রিবেণী-কালনা-কাটোয়া রোড ধরে সমুদ্রগড় হয়ে চলে আসুন চুপির চর।
  • কোথায় থাকবেন:
    পূর্বস্থলি ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিস ও স্থানীয় পঞ্চায়েতের তত্ত্বাবধানে গেস্টহাউস, বাংলো রয়েছে। আগে থেকে বুক করতে পারেন।

চুপির চর বা পূর্বস্থলি সম্বন্ধে আরও জানতে ক্লিক করুন

6. গোলপাতা জঙ্গল

গোলপাতা জঙ্গল

গোলপাতার জঙ্গল, কথাটা শুনলেই সুন্দরবনের কথা মনে পড়ে। এটি সুন্দরবন থেকে অনেক দূরে নয় তবে সুন্দরবন না পৌঁছেও সুন্দরবনের অনুভূতি পেতে পাবেন এখানে। কলকাতা থেকে প্রায় ৭৫ কিলোমিটার দূরে উত্তর ২৪ পরগনার টাকী তে ইছামতী নদী বরাবর ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের বন-জঙ্গলের শোভা আপনাকে মুগ্ধ করবে। বিশেষ করে শীতকালে।

ইচ্ছা হলে নৌকাই চড়ে বাংলাদেশের খুব কাছ থেকে ঘুরেও আসতে পারেন। তবে সাথে পরিচয়পত্র রাখতে ভুলবেন না কারন‌ জঙ্গলের কিছু কিছু অঞ্চলে ঢোকার জন্য তা লাগতে পারে। নদীর পাড়ে ১-২ দিনের জন্য ক্যাম্পিংয়ের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন। কাছেই রয়েছে মাছরাঙা দ্বীপ, কুলেশ্বরী মন্দির, জোড়া সাহিব মন্দির ও দুর্গাদালান। একদিন সময় নিয়ে অবশ্যই দেখা যেতে পারে।

  • কিভাবে যাবেন – শিয়ালদাহ থেকে লোকাল ট্রেনে করে টাকি রোড স্টেশন। সেখান থেকে অটো অথবা রিক্সা।
  • কোথায় থাকবেন – টাকি ইছামতির তীরে অজস্র ভালো সরকারি ও বেসরকারি হোটেল ও লজ আছে।

Leave a Comment