মৌসুনি দ্বীপ – কি ভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন, কত খরচ, সমস্ত তথ্য

মৌসুনি দ্বীপ

মৌসুনি দ্বীপ বা মৌসুনি আইল্যান্ড হল সেই জায়গা যেখানে সপ্তাহান্তের দুটো দিন শহরের কোলাহল, ব্যস্ততা আর ইট-কাঠ-পাথরের চার দেওয়াল থেকে মুক্তি পেতে চাইলে দূষণহীন এই দ্বীপে চলে আসতেই পারেন জায়গায়। যেখানে নির্জনতা আর এডভেঞ্চারও দুটোই একসাথে আছে। সমুদ্রের সম্পূর্ণ স্বাদ নিতে চাইলে কলকাতার এত কাছে এর চেয়ে ভাল জায়গা মনে হয় নেই। ২দিন ১রাত্রি কাটানোর একেবারে আদর্শ জায়গা। এখানে পর্যটকদের ভিড় বা হূড়োহুড়ি কোনোটাই নেই, এখানে সৈকতের নির্জনতা ও দ্বীপের গাছ-গাছালির সতেজতার গন্ধ প্রান ভরে উপভোগ করতে পারেন। এখানকার বালিও খুব মিহি। তাই বিচে কোনও রকম দুর্ঘটনার ভয় নেই। সারাদিন সুমদ্র সৈকতের প্রাকৃতিক শোভা ও তার সাথে অসাধারন সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত উপভোগ উপরি পাওনা।

মৌসুনি দ্বীপ কোথায়? (Where is Mousuni island?)

মৌসুনি দ্বীপ কোথায়

কোলকাতা থেকে প্রায় ১২০ কিমি দুরে গঙ্গা ও হুগলি নদী ঠিক যেখানে সাগরে মিশেছে সেখানে বেশ কিছ ছোট ছোট দ্বীপ তৈরি হয়েছে। আমাদের সবার খুব পরিচিত সাগর দ্বীপ, যেখানে গঙ্গাসাগর মেলা হয় প্রতি বছর। এই সাগরদ্বীপের পুর্ব দিকে আমাদের এই ছোট্ট মৌসুনি দ্বীপ। সাগরদ্বীপ আর মৌসুনি দ্বীপের মাঝে ছোট স্রোত বা নদীটার নাম হল ছিনাই নদী। মৌসুনি দ্বীপে পৌছুতে হলে আপনাকে ছিনাই নদী পার করতেই হবে। এখানকার সব থেকে কাছের রেল স্টেশন হল নামখানা রেল স্টেশন । নামখান থেকে এই মৌসুনি দ্বীপের দূরত্ব প্রায় ২৩ কিমি ।

কিভাবে যাবেন মৌসুনি দ্বীপে? (How to reach Mousuni island?)

কলকাতা থেকে মোটামুটি ৪ থেকে ৫ ঘন্টা লেগে যায় মৌসুনি দ্বীপে পৌছুতে। আপনি সড়কপথে বাসে, বাইকে বা নিজস্ব গাড়িতে অথবা ট্রেনে করে যেতে পারেন।

বাসে – যারা বাসে যেতে চান তারা ধর্মতলা থেকে বাস ধরে সোজা নামখানা বাসস্ট্যান্ডে নামবেন। বাস ভাড়া ৮৫ টাকা।

ট্রেনে – শিয়ালদহ সাউথ সেকশন থেকে নামখানা লোকাল ধরুন, মোটামুটি ঘন্টা তিনেক সময় লাগে। নেমে পড়ুন নামখানা স্টেশনে। ট্রেন থেকে নেমে মৌসুনি দ্বীপে দুভাবে যাওয়া যায়। আসলে মৌসুনি দ্বীপে যেতে পারাপার করতে হয় ছোট্ট ছেনাই নদী। এই নদীর দুটো ঘাটে, হুজ্জুতের ঘাট এবং বাগডাঙা ঘাট। এর যেকোনো একটা ব্যবহার করা যায়। হুজ্জুতের খেয়াঘাট হয়ে যেতে চাইলে নামখানা স্টেশন থেকে টোটো করে হুজ্জুতের ঘাট যাবেন। ভাড়া এই ৫০টাকা। আর যদি বাগডাঙা হয়ে যেতে চান তাহলে নামখানা স্টেশনে নেমে টোটোয় করে নামখানা বাসস্ট্যান্ডে যাবেন। টোটো ভাড়া মাত্র ১০টাকা। সেখান থেকে ম্যাজিক গাড়ি করে যেতে হবে বাগডাঙা খেয়াঘাট ভাড়া ২৫টাকা।

গাড়িতে – যারা অবশ্য গাড়িতে আসবেন তারা হুজ্জুত ঘাট হয়ে আসবেন কারণ এখানে গাড়ি পার্কিং এর সুবিধা আছে। গাড়ি পার্কিং-এ ছোট গাড়িতে ভাড়া ১০০টাকা, মাঝারি গাড়িতে ১৫০টাকা এবং বাস হলে ভাড়া লাগে ২০০ টাকা। খেয়া ভাড়া ৭ টাকা। খেয়া পারাপার করে টোটো করে পৌঁছে যান আপনার গন্তব্য মৌসুনি দ্বীপে।

মৌসুনি দ্বীপে যাবার সেরা সময়? (Best time to visit Mousuni island)

মৌসুনি দ্বীপে সুর্যাস্ত

মৌসুনি দ্বীপে যাবার সেরা সময় এক কথায় বলা যায় যখন ঝড় বৃষ্টি নেই তখনই। কারন ঝড়-বৃষ্টির সময় মৌসুনি দ্বীপ থেকে সমুদ্রের মাঝে জম্বু দ্বীপে নৌকা বিহার করতে পারবেন না। আমার মনে হয় সবচেয়ে ভাল সময় হল অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত। সর্বপরি আবহাওয়ার পুর্বাভাস অবশ্যই দেখে নেবেন, যাতে করে আকস্মিক নিম্নচাপ ইত্যাদি আশঙ্কা দেখলে পরিকল্পনা সাময়িক স্থগিত রাখতে বা বাতিল করতে পারেন।

কোথায় থাকবেন মৌসুনি দ্বীপে (Where to stay at Mousuni island?)

কোথায় থাকবেন মৌসুনি দ্বীপে

মৌসুনি দ্বীপে প্রাকৃতিক প্রতিকুলতার জন্য কোন হোটেল তৈরি করা যায় না, তবে কিন্তু বেশকিছু ট্রাভেলার্স ক্যাম্প যাতে প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখা ও তার সাথে রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা পাওয়ার জন্য এখানে টেন্ট বা তাঁবু ছাড়াও মাড-হাউস বা মাটির বাড়িও আছে।

এই সব ক্যাম্পগুলিতে দুই দিন-এক রাতের প্যাকেজ রয়েছে।
প্রতিটি প্যাকেজই তাঁবুতে রাত কাটানো, খাওয়া দাওয়া এবং বন-ফায়ার এই সব সুবিধা সহ। দু-জন থাকার টেন্টে মাথা পিছু ১০০০ টাকা, ফ্যামিলি টেন্টে মাথাপিছু ১১-১২শ টাকা এবং মাটির ঘরে ১৫০০ টাকা মাথাপিছু। আপনাদের সুবিধার্থে দু-একটি লিঙ্ক নিচে দিলাম ( এঁরা কেউই আমাদের স্পনসর নন )
1. seaskydeluxe
2. shankhadip

খাবার দাবারও সবার ( মানে ক্যাম্প প্রোভাইডার্স ) কাছে মোটামুটি একই রকম। যেমন লাঞ্চে ভাত, ডাল, আলূভাজা, তরকারি, মাছ, চাটনি, পাপড় ও মিষ্টি। বিকালে চা বা কফি সাথে মুড়ি চপ। ডিনারে ভাত বা রুটি এবং চিকেন মাস্ট। পরেরদিন সকালে চা বিস্কুট আর ব্রেকফাস্টে লুচি আর তরকারি।

এখানে কি কি করতে পারেন (Things to do at Mousuni island)

মৌসুনি দ্বীপ এ আপনারা যা যা করতে পারেন তা হল –

অলস ভাবে দোলনায় সময় কাটান
  • সুমদ্রে স্নান করে নিতে পারেন ।
  • লাঞ্চ করে বিকেলে বেড়িয়ে পড়তে পারেন মৌসুনি দ্বীপ দেখতে। যেখানে বঙ্গোপসাগর আর গঙ্গার মোহনা দেখা যায়।
  • এছাড়াও নৌকা করে চলে যেতে পারেন জম্বুদীপের উদ্দেশ্যে। সন্ধ্যের সময় এখানকার সমুদ্রের এক অপরূপ সৌন্দর্য। সন্ধ্যে হয়ে গেলে সমুদ্রতটে টর্চ নিয়ে হাটলে দেখা যায় মাটিতে জ্যান্ত শামুক, ঝিনুক চলাফেরা করছে। এছাড়াও ক্যাম্পে বন ফায়ারের ব্যবস্থা করা হয়।
  • পরেরদিন সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে প্রাকৃতিক শোভা দেখে ওখানকার সামাজিক অবস্থা দেখতে বেরোতে পারেন। অনেক অজানা জিনিস জানতে পারবেন। এখানকার মানুষজনের সাথে কথা বলতে পারেন। তাদের একমাত্র জীবিকা এখানে মাছ ধরা।
  • মৌসুনি দ্বীপে সাদা বালির সৈকত, লম্বা ফলন্ত ডাব গাছ, ঘন ঝাউ বন, এই পরিবেশে হামক এর উপর শুয়ে থাকুন আর অলস নিন্তাহীন ভাবে সময়টুকু উপভোগ করুণ।
  • দ্বীপের চারিপাশে কাঠ দিয়ে ঘেরা ছাউনি এবং নারকেল পাতার ছাউনি দেখতে পাবেন এবং তারই তলায় কাঠের রাউন্ড টেবিল এবং তাকে ঘিরেই বেঞ্চে বসে গুছিয়ে আড্ডা দিন বন্ধুদের নিয়ে।
  • পায়ে হেটে ঘুর আসেন সুমদ্রের ধারে ম্যানগ্রোভে জঙ্গলের মাঝে ।
  • আশেপাশের গ্রাম্য পরিবেশ ও সেখান কার স্থানিয়দের কাজকর্ম ঘুরে দেখতে পারেন ।
  • রাতে বার্বিকিউ চিকেন বনফায়ার ও মিউজিক এর সাথে উপভোগ করুন ।

কলকাতার আশেপাশে বেশকিছু সুন্দর জায়গা আছে যেখানে একই দিনে গিয়ে আবার ফিরে আসা যায়। দেখুন একবার আপনার পছন্দ হবেই।

কলকাতা থেকে মৌসুনি দ্বীপের দূরত্ব? (Mousuni island distance from Kolkata)

কলকাতা থেকে মোটামুটি 120 কিলোমিটার দূরে মৌসুনি দ্বীপ অবস্থিত।

মৌসুনি দ্বীপের নিকটতম স্টেশন কি? (Nearest railway station of Mousuni island)

মৌসুনি দ্বীপের কাছাকাছি রেল স্টেশন হল নামখানা। শিয়ালদহ থেকে প্রায় 2 ঘণ্টা 30 মিনিট লাগে।

মৌসুনি দ্বীপে কি সরাসরি গাড়ি যায়? (Can we go Mousuni island by car?)

কলকাতা থেকে ছোট গাড়িতে সোজা মৌসুনি দ্বীপ যাওয়া যায়, মাঝে কেবল একটা ছোট নদী ‘ছিনাই’ পারাপার করতে হবে। হুজ্জুতের ঘাটে পার্কিং বন্দোবস্ত আছে।

Leave a Comment