কলকাতা থেকে পুরী রোড ট্রিপ: কোন পথে, কোথায় থামবেন, সব তথ্য

কলকাতা থেকে পুরী রোড ট্রিপ

কলকাতা থেকে পুরী রোড ট্রিপ ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য এক অনন্য আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা দেয়। কলকাতা-পুরী এই রোড ট্রিপটি এক রোমাঞ্চকর সফরের অভিজ্ঞতা এনে দেবে। পূর্ব ভারত এমন অনেক সুন্দর রাস্তার জন্য পরিচিত যা একটি মজাদার রোড ট্রিপের জন্য আদর্শ। বাইকার এবং গাড়ি প্রেমীরা সর্বদা নতুন গন্তব্যের সন্ধানে থাকেন, যেখানে গাড়ি চালিয়ে নতুন স্থান অন্বেষণ করা যায়। রোড ট্রিপের রোমাঞ্চ ও উত্তেজনার অনুভূতি অন্য যে কোনও সফরের চেয়ে আলাদা। এই সফরে প্রকৃতি, সুগন্ধ, এবং স্থানীয় সংস্কৃতির সঙ্গে মানুষের সংস্পর্শ এক স্মরণীয় অভিজ্ঞতা তৈরি করে।

কলকাতা থেকে পুরী পর্যন্ত জনপ্রিয় রোড ট্রিপ রুটগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলির পাশাপাশি এই যাত্রাপথে অসংখ্য আকর্ষণীয় দর্শনীয় স্থান রয়েছে। চিলকা হ্রদ, শ্রী জগন্নাথ মন্দির, কোনার্ক সূর্য মন্দির, পুরী সমুদ্র সৈকত, এবং পিপলির হস্তশিল্প এই অঞ্চলের বিখ্যাত আকর্ষণগুলোর মধ্যে অন্যতম।

যাওয়ার সেরা সময়

জুলাই থেকে মার্চ এবং বিশেষ করে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পুরী ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। এই সময় আবহাওয়া মনোরম থাকে এবং প্রকৃতির শোভা উপভোগ করা যায়। তাপমাত্রা কম থাকায় বাইকার এবং গাড়িচালকদের জন্য সফর আরামদায়ক হয়।

কলকাতা থেকে পুরী রোড ট্রিপ – রুট

পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশার মহাসড়কগুলি মসৃণ ও নিরাপদ, যা একটি সুন্দর রোড ট্রিপের অভিজ্ঞতা দেয়। কলকাতা থেকে পুরী পর্যন্ত রোড ট্রিপের দূরত্ব প্রায় ৫০০ কিলোমিটার এবং এটি সম্পূর্ণ করতে ১০-১২ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে, যা নির্ভর করবে আপনার নেওয়া স্টপওভারের ওপর। এই যাত্রা পূর্ব ভারতের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সাক্ষী করে। গ্রামবাংলার অপূর্ব দৃশ্য, দুর্গ, মন্দির এবং স্থানীয় খাবার এক অনন্য অভিজ্ঞতা দেবে।

আপনি কলকাতা হাইওয়ে / বিদ্যাসাগর সেতু ধরে NH-16 রুট অনুসরণ করতে পারেন। পথটি হবে:
কলকাতা → পাঁচলা → বাগনান → কোলাঘাট → পাথরা → খড়গপুরের আগে বাম দিকে মোড় নিয়ে বেলদা → জলেশ্বর → বাস্তা → বালাসোর → ভদ্রক → কটক → সাক্ষিগোপাল → শেষ গন্তব্য পুরী।

2 Road trip to puri
Picture credit: fabhotels.com

পুরী যাত্রাপথে কি কি দেখতে পারেন

কলকাতা থেকে যাত্রা শুরুর পর নন্দকুমার মোড় পৌঁছেই ডানদিকে মোড় না নিয়ে সোজা কয়েক কিমি গেলেই মহিষাদল রাজবাড়ী ঘুরে আশা যেতে পারে, অবশ্য যদি হতে অতিরিক্ত সময় থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পুরী পৌছানোর তাগিদে যাওয়া সম্ভব হয় না। তাই কেবল নামগুলো দেওয়া হল, যাত্রাপথে কোনভাবে সময় পেলে এক-আধটা নিশ্চয়ই দেখতে মন চাইতে পারে।

  • মহিষাদল রাজবাড়ী
  • মন্দারমণি সমুদ্র সৈকত
  • দিঘা সমুদ্র সৈকত
  • উদয়পুর সমুদ্র সৈকত
  • চন্দনেশ্বর শিব মন্দির
  • তালসারি
  • সিমলিপাল টাইগার রিজার্ভ হেড অফিস
  • জগন্নাথ মন্দির, বারিপদ
  • চণ্ডীপুর
  • ক্ষীরাছড়া গোপীনাথ মন্দির
  • পঞ্চলিঙ্গেশ্বর মন্দির
  • কুলদিহা
  • ইসকন ভদ্রক (শ্রী শ্রী রাধাগোবিন্দ ও গৌরগোপাল মন্দির)
  • মা বিরজা মন্দির শক্তিপীঠ, জাজপুর
  • মহাদেব চন্দ্রশেখর মন্দির, কপিলাশ
  • মহানদী ব্যারেজ
  • ওড়িশা স্টেট মেরিটাইম মিউজিয়াম, কটক
  • মা কটক চণ্ডী মন্দির – কটক
  • নন্দনকানন জুলজিক্যাল পার্ক
  • শ্রী রাম মন্দির, ভুবনেশ্বর
  • অনশুপা লেক
  • লিঙ্গরাজ মন্দির
  • উদয়গিরি ও খন্ডগিরি গুহা
  • ধৌলি শান্তি স্তূপ
  • অত্রি

পুরী পৌঁছানোর পর দর্শনীয় স্থান

ঐতিহাসিক ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রাচীন এই পুরী শহরের আশেপাশের কিছু বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান:

  • শ্রী জগন্নাথ মন্দির
  • পুরী সমুদ্র সৈকত
  • স্বর্গদ্বার সৈকত
  • পুরী লাইটহাউস
  • সাক্ষীগোপাল মন্দির
  • অলর্ণাথ মন্দির
  • বালিহরচন্দি সমুদ্র সৈকত
  • লোকনাথ মন্দির
  • সুদর্শন ক্রাফট মিউজিয়াম
  • দয়া নদী

ভ্রমণের আগে অবশ্যই দর্শনীয় স্থানগুলির সময়সূচি ও প্রবেশমূল্য সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করুন।

টোল পরিশোধের স্থান

কলকাতা থেকে পুরী যাওয়ার পথে বিভিন্ন টোল প্লাজায় ফি পরিশোধ করতে হবে। বিদ্যাসাগর সেতু, ধূলাগড়, ডেবরা, রামপুরা, লক্ষ্মণনাথ, সেরাগড়, পানিখোলি, মাঙ্গুলি, পিপলি এবং পুরী শহরে প্রবেশের সময় টার্মিনাল ট্যাক্স দিতে হতে পারে।

থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা

এই রোড ট্রিপে প্রচুর খাওয়ার অপশন পাওয়া যাবে। বাংলা ও বিশেষত ওড়িশা অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী খাবার যেমন পাখালা, খিচুড়ি, বেসারা, আম্বা খাট্টা, দই-বেগুন, মাছা বেসারা, ডালমা, সান্তুলা, কানিকা, ঘণ্ট, কদলি মান্জা রাই, মাছা চড়ছড়ি, ঘুগনি, চকুলি পিঠা, মুড়ি-মাটন এবং ছানাপোড়া ট্রাই করতে পারেন।

স্থানীয় স্ট্রিট ফুড ও ওড়িয়া থালি অত্যন্ত জনপ্রিয়। তবে অতিরিক্ত ঝাল খাবার এড়িয়ে চলা ভালো, যাতে পেটের সমস্যা না হয়। যাত্রার সময় কোনো প্রকার মদ্যপান থেকে বিরত থাকাই বাঞ্ছনীয়।

পুরী যাওয়ার পথে অনেক ভালো মানের রেস্টুরেন্ট আছে, যেখানে স্বাস্থ্যকর ও সুস্বাদু নিরামিষ খাবার পাওয়া যায়। পুরীর প্রবেশ পথের কাছে অনেক মন্দির রয়েছে, যা স্টপওভার হিসেবে রাখা যেতে পারে। এছাড়া সুদাম স্যান্ড আর্ট মিউজিয়াম দর্শন একটি বিশেষ আকর্ষণ, যা একটু ডিটুর করে দেখা যেতে পারে।

অধিকাংশ হোটেলে বিনামূল্যে ব্রেকফাস্টের ব্যবস্থা থাকে। আপনার খাবারের পছন্দ আগে থেকে নিশ্চিত করুন, যাতে সর্বোত্তম পরিষেবা পান। এক রাত বিশ্রাম নিয়ে পরবর্তী দিনের ভ্রমণ আরও প্রাণবন্ত করতে পারেন।

রোড ট্রিপ উত্সাহীদের জন্য সুখবর

রাজ্যে সড়ক পর্যটনকে উৎসাহিত করার জন্য ওড়িশা পর্যটন কলকাতা থেকে তিনটি মনোরম রোড ট্রিপ সার্কিট ঘোষণা করেছে।

  • প্রথম রুট , “ডিপ ইনটু দ্য ম্যানগ্রোভস”, কলকাতা থেকে ভিতরকণিকা পর্যন্ত । চাঁদিপুর সমুদ্র সৈকত, বিচিত্রপুর ম্যানগ্রোভ অভয়ারণ্য, ভিতরকণিকা জাতীয় উদ্যান, তালাসারি সমুদ্র সৈকত এবং আউল প্যালেসের মতো মনোমুগ্ধকর স্থানগুলি এই রুটে পড়বে।
  • দ্বিতীয় রুট “দ্য ট্রেইল অফ ক্যাসকেডস-কেওনঝর”, কলকাতা থেকে কেওনঝড় পর্যন্ত ভীমকুণ্ড জলপ্রপাত, গুন্ডিচাঘাই জলপ্রপাত, সানাঘাগরা জলপ্রপাত, সীতাবিঞ্জি গুহাগুলির ফ্রেস্কো চিত্রকর্ম, একটি টেরাকোটা কারুশিল্প গ্রাম এবং আরও অনেক কিছুকে অন্তর্ভুক্ত করবে।
  • তৃতীয় রুট, “টাইগার ট্রেইল এবং রয়্যালটি”, কলকাতা থেকে সিমিলিপাল পর্যন্ত সিমিলিপাল টাইগার রিজার্ভ, সীতাকুণ্ড জলপ্রপাত, বেরেহিপানি এবং নওয়ানা উপত্যকা, বেলগাদিয়া প্রাসাদ এবং আরও অনেক কিছুকে অন্তর্ভুক্ত করবে।

Leave a Comment