বাংরিপোসি ভ্রমণ দুদিনের ছুটিতে পাহাড়, ঝর্না, অরন্য, লং ড্রাইভ

বাংরিপোসি ভ্রমণ দুদিনের ছুটিতে পাহাড়, ঝর্না, অরন্য, লং ড্রাইভ একসাথে

বাংরিপোসি ভ্রমণ, দুদিনের ছুটিতে যাওয়া যায় ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলায় অবস্থিত ছবির মত সুন্দর ও জনপ্রিয় সাপ্তাহান্তিক গন্তব্য যা কলকাতা থেকে ২২০ কিমি। এমনিতে বাতাসে শীতের ছোঁয়া লাগতেই বাঙালি মন একটা পা বাড়িয়েই রাখে একঘেয়ে জীবন থেকে একটু ব্রেক নিতে। আর হ্যাঁ যাদের মনে ঘুরছে বুদ্ধদেব গুহ’র উপন্যাস ‘বাংরিপোসির দু রাত্তির’, বাস্তবে দেখবেন ততোধিক সুন্দর জায়গাটি। প্রকৃতি যেন তার সব সৌন্দর্য্য দিয়ে জায়গাটিকে সাজিয়েছে পর্যটকদের জন্য। এখানে নদী, পাহাড়, অরণ্য, তার সঙ্গে আদিবাসীদের গ্রাম সব মিলিয়ে নগর জীবনের ক্লান্তি ভোলাতে বাংরিপোসি এক আদর্শ জায়গা।

বাংরিপোসি ভ্রমণ কেন করবেন (Why to visit Bangriposi)

বাংরিপোসি ভ্রমণ

যদি লং ড্রাইভ পছন্দ করেন তবে কলকাতা থেকে বাংরিপোসি ২২০ কিমির এই রোড ট্রিপ আপনি সত্যই উপভোগ করবেন। তাছাড়াও

  • ওড়িশার রানী বাংরিপোসিকে ঘিরে আছে বিদ্যাবিহার, পাথরকুসী, অর্ধেশ্বর, বুধবোধী ছাড়াও নাম না জানা অনেক পাহাড় চূড়া যেগুলো সকাল সকাল খাওয়া দাওয়া সেরে অনায়াসে ট্রেকিং করে আসা যায়।
  • বেলাতে বুড়িবালাম নদীতে স্নান সেরে খাওয়া দাওয়া করে বিশ্রাম নিয়ে বিকেলে হেঁটে জঙ্গল – গ্রামে ঘুরে আসা এক অনন্য অভিজ্ঞতা ।
  • সন্ধ্যায় দূরে জঙ্গল থেকে ভেসে আসা মাদলের তান আর পাখিদের ঘরে ফেরার গান আপনাকে পৌছে দেবে এক নতুন দেশে।
  • শাল, মহুয়া, শিমুল,পলাশের পাশাপাশিএখানে রয়েছে আম, জাম, কাঁঠাল সহ নানান গাছ-গাছালি।
  • পথের দুধারে চোখে পড়বে আদিবাসিদের ঘরবাড়ি যার নিকানো উঠোন আর সুদৃশ্য আলপনায় আঁকা চিত্রিত দেওয়াল এককথায় অনবদ্য ।

কিভাবে যাবেন বাংরিপোসি (How to travel Bangriposi)

কলকাতা থেকে বাংরিপোসি যাবার বিভিন্ন উপায় রয়েছে যেমন

  • ট্রেনেঃ কলকাতা থেকে ধৌলি এক্সপ্রেস এ বালেশ্বর নেমে ওখান থেকেই বাংরিপোসি লোকাল ধরে বাংরিপোসি আসা যায়। অথবা বালেশ্বর থেকে গাড়ি বুক করে ৮৫ কিলোমিটার রাস্তা পেরিয়ে বাংরিপোসি।
  • বাসেঃ ধর্মতলা বা বাবুঘাট থেকে থেকে রাতে বাসে বারিপদা হয়েও বাংরিপোসি আসা যায়।
  • গাড়িতেঃ লং ড্রাইভে যেতে চাইলে কলকাতা থেকে গাড়িতে NH৬ ধরে সহজেই পৌঁছে যান বাংরিপোসি (প্রায় ২২০ কিমি)।

বাংরিপোসি ভ্রমণের সেরা সময় (Best time to visit Bangriposi)

মনোরম আবহাওয়ার জন্য অক্টোবর থেকে জুন পর্যন্ত সময়কে বাংরিপোসি ভ্রমণ করার সেরা সময় ধরা হয়। তবে বর্ষার এখানে একেবারে অন্য রূপ থাকে, না ভয়ংকর নয় বরং বলা যায় কাব্যিক, সেটাও দেখার।

সম্ভাব্য ট্যুর প্লান (Probable itinerary for Bangriposi)

ব্রাহ্মণ কুন্ড
ব্রাহ্মণ কুন্ড

বাংরিপোসির দর্শনীয় স্থানগুলি দেখতে, আমার মনে হয়, অন্তত দুদিন লাগবেই। নিচে একটা রুপরেখা দেওয়া হল আপনার সুবিধার্থেঃ

  • প্রথম দিন : পৌছানোর পর একটু বিশ্রামের পরই বেড়িয়ে পড়ুন। দেখে নিন ১) ব্রাহ্মণ কুন্ড , ২) ঠাকুরানী হিল, ৩) বুড়িবালাম নদী, ৪) মা দুয়ারসিনি মন্দির, ৫) বাঁকবল ড্যাম, ৬) সুলাইপাত ড্যাম ও ৭) বাদামপাহাড়
  • দ্বিতীয় দিন : দেখুন ১) শঙ্কর মারা হ্রদ / বাঁধ , ২) বালিডিহা বাঁধ, ৩) সিমলিপাল ফরেস্টের লুলুং নদী, ৪) সীতাকুন্ড জলপ্রপাত ও ৫) কুলিয়ানা গ্রামে ডোকরা শিল্প।

যদি চান তবে বাংরিপোসি ভ্রমণকালে একটা অতিরিক্ত দিন যোগ করে সিমলিপাল ফরেস্ট ঘুরে নেওয়া যেতে পারে। তবে সময় কম থাকলে বা ইচ্ছে করলে সিমলিপাল ফরেস্ট ট্রিপ পরে আলাদা ভাবে করতে পারেন।

কাছাকাছি দেখার জায়গাগুলি (Bangriposi sightseeing)

Bangriposi Kandiadhara falls2

বাংরিপোসি থেকে কাছাকাছি যে জায়গাগুলি ঘুরে আসতে পারেন

  • এখানে কাছাকাছি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে রয়েছে সুলেইপাত ড্যাম, বাঁকবল ড্যাম, বিসোই হাট, দুয়ারসিনির মন্দির
  • বাংরিপোসির কাছেই রয়েছে বহুপ্রাচীন সিমলেশ্বরী শিবমন্দির।
  • সেখান থেকে আবার কয়েক কিলোমিটার পথ হাঁটলে পৌঁছে যাবেন ডোকরা শিল্পের জন্য বিখ্যাত কুলিয়ানা গ্রাম
  • সেখান থেকে ১৩ কিমি দূরে রয়েছে কানচিন্ডা। শাল, সেগুন, মহুয়া, শিমুল, পলাশ গাছে ঘেরা এই জায়গাটিতে গেলে প্রকৃতিকে আরও কাছ থেকে পাওয়ার সুযোগ পেতে পারেন। আর
  • বুড়িবালামের শাখা নদী কালাবাঁধ– যেখান থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের দৃশ্য না দেখলে বাংরিপোসি ঘোরাটা অসম্পূর্ণই রয়ে যায়।

নিচে কয়েকটি জায়গার দুরত্ব সম্পর্কে আভাষ দেওয়া হল যাতে ইচ্ছামত ট্যুর প্লান করতে পারেন।

দেখার জায়গাগুলিবাংরিপোসি থেকে দুরত্ব
ঘাঁটির কাছে কনকদূর্গা বা বনবিবি মন্দির, নাদাম বাঁধ , তালবন , চোরাবন , ব্রহ্মকুন্ড ।১০ – ২০ কিমি
সুলাইপত বাঁধ৪৭ কিমি
করওনজিয়া৮৬ কিমি
কিচকেশ্বরী মন্দির৯০ কিমি
ভীমকুন্ড১২৫ কিমি
জোশীপুর৬০ কিমি
বারিপদা৩৭ কিমি

কোথায় থাকবেন (Where to stay at Bangriposi)

বাংরিপোসির আশেপাশে অনেক হোটেল আছে। মোটামুটিভাবে খরচ পড়ে মাথাপিছু ১২০০ টাকা। তবে বাংরিপোসি ভ্রমণ ভাল লাগবে যদি আগে থেকে বুকিং করে আসা যায়। নিচে কয়েকটির ফোন নম্বর দেওয়া হল-

  • হোটেল বাংরিপোসি (যোগাযোগ: 9831309512)
  • খইরি রিসর্ট (যোগাযোগ: 9437877730 )
  • শিমলিপাল রিসর্ট (যোগাযোগ: 9437612747)

ইতিহাসের বুড়িবালাম নদী (Historical river Buribalam)

বুড়িবালাম
ঐতিহাসিক বুড়িবালাম নদী

বাংরিপোসি ভ্রমণের অন্যতম আকর্ষণ এই বুড়িবালাম নদী। যার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বাঙালির স্বাধীনতার ইতিহাস। এই বুড়িবালামের পাড়েই শহিদ হয়েছিলেন বাংলার বীর বিপ্লবী বাঘাযতীন। ১৯১৫ সালে ৯ সেপ্টেম্বর বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন ৫ বিপ্লবী। তারমধ্যে ছিলেন শহিদ বাঘাযতীনও। ইংরেজদের সঙ্গে লড়াইয়ে প্রান যায় তাঁর। কাজেই এই বুড়িবালামের সঙ্গে বাঙালির মন ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে রয়েছে।

আরও পড়ুনঃ বাংরিপোসি কলকাতা পথেই বালাসোর ভ্রমণ সঙ্গে আরও ৭টি জায়গা দেখুন

Leave a Comment