কলকাতা সহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলাতেও অনেক রাজবাড়ী বা প্রাসাদ এখনও সগৌরবে মাথা তুলে তাদের আভিজাত্যের ইতিহাস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের মধ্যে অনেকগুলি রাজবাড়ী বর্তমানে বুটিক হোটেল’এ রূপান্তরিত এবং আপনি চাইলে ওই রাজবাড়ীতে রাজকীয় আতিথেয়তা গ্রহন করতে পারেন। পশ্চিমবঙ্গের এই রাজবাড়ীগুলি সপ্তাহান্তের বা ছুটি কাটানোর গন্তব্য হিসাবে বেশ জনপ্রিয়। এখানে আমরা বাংলার ১২টি জনপ্রিয় রাজবাড়ি নিয়ে আলোচনা করব।
পশ্চিমবঙ্গের রাজবাড়ী – সেরা ১২টি
১. বাওয়ালি রাজবাড়ী
আপনি যদি কলকাতার কাছে রাজকীয় অভিজ্ঞতার সন্ধান করেন তবে পশ্চিমবঙ্গের বাওয়ালি রাজবাড়ি সেই জায়গা। এই মনোমুগ্ধকর প্রাসাদটি, শহর থেকে অল্প দূরত্বে, বাংলার সমৃদ্ধ ইতিহাস এবং অভিজাত জাঁকজমক উপভোগ করার সুযোগ দেয়। আপনি রাত্রি যাপন করুন বা শুধু একটি দিনের ভ্রমণ করুন, আপনার একটি স্মরণীয় অভিজ্ঞতা নিশ্চিত।
- আকর্ষন-ইতিহাসঃ বাওয়ালির মন্ডল রাজবংশের ইতিহাস প্রায় চারশ বছরের। সম্রাট আকবরের প্রধান সেনাপতি সওয়াই মান সিং এখানে কৃষক ও জলদস্যু বিদ্রোহ দমনের বিনিময়ে কয়েক লক্ষ একর জমি দান করেন। সময়ের সাথে সাথে রাজত্ব চলে যাওয়ার পর এই রাজবাড়ী আবার পুনরোদ্ধার করা করে বর্তমানে এটি একটি হেরিটেজ হোটেল।
- কলকাতা থেকে দুরত্বঃ মাত্র ৩৫ কিলোমিটার।
- সেখানে কীভাবে যাবেনঃ গাড়িতে গেলে – ডায়মন্ড হারবার রোডে জোকা থেকে ডান দিকের রাস্তা, বিবিরহাট হয়ে। অন্যথায় বাসে জোকা গিয়ে সেখান থেকে স্থানীয় কোন গাড়িতে ১৭ কিমি।
- সময় এবং প্রবেশঃ সব সময় খোলা তবে যাওয়ার আগে তাদের ওয়েবসাইটে অবশ্যই চেক করে নেবেন।
২. শোভাবাজার রাজবাড়ী
শোভাবাজার রাজবাড়ী কলকাতার ঐতিহ্যবাহী জায়গাগুলির মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয়। শোভাবাজার রাজবাড়ী পশ্চিমবঙ্গের রাজবাড়ীগুলির মধ্যে অন্যতম। রাজা নবকৃষ্ণ দেব এই প্রাসাদটি নির্মান করেন। উত্তর কলকাতায় অবস্থিত শোভাবাজার রাজবাড়ী দুর্গাপূজা উদযাপনের জন্য বিখ্যাত, যা সারাদেশ থেকে দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করে।
- আকর্ষন-ইতিহাসঃ প্রধান আকর্ষন অবশ্যই দূর্গাপূজা তবে বছরের অন্যান্য দিন দেখার জন্য রাজবাড়ীতে একটি ছোট্ট মিউজিয়াম আছে যাতে বেশ কিছু ঐতিহাসিক জিনিষপত্র ও দস্তাবেজ রাখা আছে।
- কলকাতা থেকে দুরত্বঃ উত্তর কলকাতার একেবারে কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত।
- সেখানে কীভাবে যাবেনঃ শোভাবাজার রাজবাড়ী যাওয়ার সবথেকে ভাল উপায় হল কলকাতা মেট্রো রেলে উঠে পড়া আর শোভাবাজার সুতানুটি স্টেশনে নেমে পড়া। মেট্রো ষ্টেশন থেকে কয়েক মিনিটের হাঁটা পথ।
- সময় এবং প্রবেশঃ প্রবেশের জন্য কোন টিকিট লাগে না। দূর্গাপূজার দিনগুলি ছাড়া অন্যান্য দিন শোভাবাজার রাজবাড়ী যাওয়ার জন্য অনুমতি প্রয়োজন।
৩. ইটাচুনা রাজবাড়ী
ইটাচুনা রাজবাড়ির এলাকার এক নাম ‘বর্গিডাঙা’। জনশ্রুতি হল, ‘চৌথ’ কর আদায়ের জন্য ‘বর্গি’ অর্থাৎ মারাঠা যোদ্ধারা যুদ্ধবিগ্রহ থেমে যাওয়ার পর তাদের একটা অংশ এখানেই বসতি স্থাপন করেছিল এবং ব্যবসাপাতি করে প্রচুর সম্পদ উপার্জন করেছিল। তাঁদেরই এক বংশধর হলেন সাফল্য নারায়ণ কুন্ডু । এঁরই পূর্বসূরিরা ১৭৬৬ সালে ইটাচুনা রাজবাড়ি তৈরি করেন। যেটি বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের রাজবাড়ী সূচীতে উপরের দিকেই থাকে।
- আকর্ষন-ইতিহাসঃ রাজকীয় আথিতেয়তার অভিজ্ঞতা পেতে রাজবাড়িতে রাত্রিযাপন করতে পারেন।
রাজবাড়ীতে নিয়মিত সাংস্কৃতিক পরিবেশনা যেমন নাচ এবং সঙ্গীত আবৃত্তির আয়োজন করা হয়।
অতিথিরা রাজবাড়ির ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবার উপভোগ করতে পারেন।
রাজবাড়িতে একটি আয়ুর্বেদিক স্পা রয়েছে, যেখানে অতিথিরা বিশ্রাম নিতে এবং পুনরুজ্জীবিত হতে পারেন।
- কলকাতা থেকে দুরত্বঃ কলকাতা থেকে প্রায় ৩০ কিমি।
- কীভাবে যাবেনঃ
ট্রেনে – হাওড়া থেকে বর্ধমান মেন লাইনে খন্ন্যান লোকাল ট্রেনে দেড় ঘণ্টার পথ। স্টেশন থেকে টোটো, অটো আর ম্যাজিকে ৭ থেকে ১০ মিনিটের পথ ইটাচুনা রাজবাড়ি।
গাড়িতে – কলকাতা থেকে গাড়িতে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ধরে বাঁ দিকে আজাদ হিন্দ ধাবা ও হিন্দুস্থান হোটেল পেরোনোর পর বাঁ দিকের ‘একজিট’ ধরুন। ডান দিকে ঘুরে ব্রিজের তোলা দিয়ে আসুন বসিপুর। এখান থেকে সোজা হালুসাই, ১৯ কিমি। খন্ন্যান রেলস্টেশনের দিকে বাঁ দিক ঘুরুন। হালুসাই থেকে ১০ মিনিটের ড্রাইভে পৌঁছে যান ইটাচুনা রাজবাড়ি। রাস্তার বাঁ দিকে।
- সময় এবং প্রবেশঃ ইটাচুনা রাজবাড়ী সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ঘুরে দেখার জন্য খোলা থেকে।
টিকিট – প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ১০০টাকা ও ছোটদের জন্য ৫০টাকা।
আরও বেশি জানতে ইটাচুনা ওয়েবসাইটে চেক করতে পারেন এখানে।
৪. ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি
ঝাড়গ্রাম হল বেলপাহাড়ি পাহাড় এবং সুবর্ণরেখা ও কংসাবতীর মতো নদী ঘেরা মনোরম শহর। ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি পর্যটকদের কেন্দ্রীয় আকর্ষণ। ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ী এই অঞ্চলের সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহাসিক ঐতিহ্যের কেন্দ্রবিন্দু। ষোড়শ শতাব্দীর শেষ মুঘল আমল থেকে এই মল্লদেব রাজারা শাষন করেছেন। এই রাজবাড়িটির স্থাপত্যে গথিক, ইতালীয় এবং ইসলামিক শৈলীর সংমিশ্রণ দেখা যায়।
- আকর্ষন-ইতিহাসঃ
প্রাসাদ: মূল প্রাসাদ হল একটি দ্বিতল ভবন যার মাঝখানে একটি বড় প্রাঙ্গণ রয়েছে। প্রাঙ্গণের চারিদিকে যে বিশাল আকৃতির ঘরগুলি দ্বারা বেষ্টিত তাতে দারুন ঐতিহ্যবাহী ভারতিয় আসবাবপত্র ও শিল্পকর্ম দিয়ে সজ্জিত।
মিউজিয়াম: জাদুঘরে রাজকীয় যুগের পেইন্টিং, ভাস্কর্য, আসবাবপত্র এবং অন্যান্য শিল্পকর্মের সংগ্রহ রয়েছে।
- কলকাতা থেকে দুরত্বঃ প্রায় ১৭২ কিলোমিটার
- কীভাবে যাবেনঃ
গাড়িতে: কলকাতা থেকে মোটামুটি ৪ঘন্টার মত লাগবে। রাস্তা বেশ ভাল।
ট্রেনে: হাওড়া থেকে ট্রেনে সোজা ঝাড়গ্রাম নামুন। ষ্টেশন থেকে রাজবাড়ি মাত্র ২ কিমি।
- সময় এবং প্রবেশঃ রাজবাড়ির ভিতরের একটা ভাগে রাজবংশের লোকজন বাস করেন তাই সেখানে সাধারনের প্রবেশ নিষেধ। বাকি অংশে প্রবেশ অনুমতি সাপেক্ষ। তবে বাইরের অংশে দিনের বেলা প্রবেশ করা যায়। কোন প্রবেশ মূল্য নেই।
আরও বেশি জানতে তাদের ওয়েবসাইট চেক করতে পারেন।
৫. শ্রীরামপুর রাজবাড়ী
১৭৫৫ সালে ড্যানিশ বা দিনেমাররা শ্রীরামপুর অঞ্চলে বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করেন এবং শ্রীরামপুরের নাম বদলে রাখা হয় ফ্রেডেরিকনগর। ১৮৪৫ সাল পর্যন্ত দিনেমাররা শ্রীরামপুরে ছিল। পরবর্তীকালে এই শহরের উন্নতিতে শ্রীরামপুরে প্রাচীন জমিদার গোস্বামী পরিবার গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা নেন। রঘুরাম গোস্বামী তাঁর নিজের প্রাসাদেও দুর্গাপুজো শুরু করেছিলেন যা বর্তমানে শ্রীরামপুর রাজবাড়ির দুর্গাপুজো নামে পরিচিত।
- আকর্ষন-ইতিহাসঃ
গঙ্গাতীর: সুন্দর গঙ্গার তীরে হাঁটা একটা অতিরিক্ত পাওনা।
স্থাপত্য: রাজবাড়ীর স্থাপত্য বেশ আকর্ষণীয়। এখানে রাজবাড়ীর বিভিন্ন ব্লক ও করিডোর যা একটির সাথে আরেকটি যুক্ত । প্রাসাদের অভ্যন্তরের সবচেয়ে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ জিনিস হল “চাঁদনী” বা “নাটমন্দির”।
সাংস্কৃতিক দিক: এটি ইতিহাসে সমৃদ্ধ স্থান – সেন্ট ওলাভ চার্চ এবং উইলিয়াম কেরি মিউজিয়ামের মতো উল্লেখযোগ্য ল্যান্ডমার্ক রয়েছে।
- কলকাতা থেকে দুরত্বঃ প্রায় ২৬ কিলোমিটার
- কীভাবে যাবেনঃ
গাড়িতেঃ কলকাতা থেকে হাওড়া ব্রিজ বা বালি ব্রিজ পার হয়ে জিটি রোড ধরে শ্রীরামপুর
ট্রেনেঃ হাওড়া থেকে মেইন হয়ে যেকোন লোকাল ট্রেন ধরে ৩০মিনিট লাগবে।
- সময় এবং প্রবেশঃ শ্রীরামপুর রাজবাড়ী রোজ সকাল ১০ থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
৬. ওয়াসিফ মঞ্জিল
মুর্শিদাবাদের নবাব ওয়াসিফ আলী মির্জ্জা এই প্রাসাদটি নির্মাণ করিয়েছিলেন। এটি নতুন প্রাসাদ নামেও পরিচিত। প্রাসাদ বলতে আসলে প্রাসাদ সদৃশ তিনতলা একটি ভবন, আর চারপাশে কিছু নবাবি সৌন্দর্য শোভা। এর দক্ষিণ দরজা থেকে হাজার দুয়ারি প্যালেসে যাওয়া যায়। বর্তমানে এই প্রাসাদটি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পর্যটন দফতরের তত্ত্বাবধানে রয়েছে।
- আকর্ষন-ইতিহাসঃ ওয়াসিফ মঞ্জিল পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে অবস্থিত একটি সুন্দর প্রাসাদ। এটি মুঘল এবং ইউরোপীয় স্থাপত্যের অনন্য মিশ্রণ, সুন্দর উদ্যান এবং একটি যাদুঘরের জন্য পরিচিত যেখানে রাজকীয় নিদর্শনগুলির একটি সংগ্রহ রয়েছে।
- কলকাতা থেকে দুরত্বঃ প্রায় 210 কিলোমিটার
- সেখানে কীভাবে যাবেনঃ নিকটতম বিমানবন্দর হল কলকাতার নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, যা প্রায় ২১০ কিলোমিটার দূরে। নিকটতম রেলওয়ে স্টেশন হল মুর্শিদাবাদ রেলওয়ে স্টেশন, এখান থেকে প্রায় ২ কিমি দূরে এবং কলকাতা থেকে দৈনিক অনেক ট্রেন মুর্শিদাবাদ যাতায়াত করে।
৭ আমাদপুর রাজবাড়ী
আমাদপুর রাজবাড়ী পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের আমাদপুর গ্রামের একটি বিশেষ স্থান। যারা ইতিহাস এবং অ্যাডভেঞ্চার ভালোবাসেন তাদের জন্য এটি একটি গুপ্তধনের মতো। কথিত যে, প্রায় ৪০০ বছর আগে শিলাদিত্য চৌধুরী এই রাজবাড়ী তৈরি করেন। আমাদপুর রাজবাড়ীর মোট চারটি ঘরে পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা করা রয়েছে। হেরিটেজ হোমস্টে হিসেবে এর নাম বৈঠকখানা আমাদপুর। ভ্রমনেচ্ছু হলে যাবার আগে তাদের ওয়েব সাইটে দেখে নিতে পারেন।
- আকর্ষন-ইতিহাসঃ আমাদপুরের অন্যতম আকর্ষণ এই চৌধুরীদের তৈরি টেরাকোটা কাজ সমৃদ্ধ মন্দিরগুলি। আমাদপুর জমিদার বাড়ির লাগোয়া চারটি আটচালার মন্দির, অষ্টভুজাকৃতি মন্দিরের, দোলমঞ্চ, নাটমন্দির।
আমাদপুর রাজবাড়ীর দোতলায় সাজানো রয়েছে মূর্তি ও বেশকিছু দুষ্প্রাপ্য ছবি। এই রাজবাড়ির আসবাবপত্রের কারুকার্য অসাধারণ। ঝাড়বাতি, বেলজিয়াম কাচের আয়না, সূক্ষ্ম কারুকার্যের পালঙ্ক, পালিশ করা শ্বেতপাথরের টেবিল, সব মিলিয়ে অতীতের কথা বলে।
- কলকাতা থেকে দুরত্বঃ প্রায় ৯০ কিলোমিটার
- সেখানে কীভাবে যাবেনঃ
গাড়িতেঃ কলকাতা থেকে ২ থেকে আড়াই ঘন্টা লাগবে।
ট্রেনেঃ ১ ঘন্টা ৪৫ মিনিট লাগে মেমারি ষ্টেশন
- সময় এবং প্রবেশঃ আরও বেশি জানতে তাদের ওয়েবসাইট চেক করতে পারেন।
৮. কাসিমবাজার রাজবাড়ী
কাসিমবাজার রাজবাড়ি পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ শহরে অবস্থিত ১৮ শতকের একটি বিশাল প্রাসাদ যেটি নির্মান করেন রাজা কৃষ্ণকান্ত নন্দী। মুর্শিদাবাদের কাশিমবাজার রাজবাড়ি বর্তমানে ছোট রাজবাড়ি নামে পরিচিত। এই রাজবাড়ির প্রতিটি কোনায় রয়েছে প্রাচীন ইতিহাসের গন্ধ। এছাড়াও এই রাজবাড়ির সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হল প্রায় ৩০০ বছরের বেশি পুরনো দুর্গাপূজো। যারা বাংলার অন্যতম ধনী পরিবার ছিল। রাজবাড়ি তার সুন্দর স্থাপত্য,বাগান এবং রাজকীয় যুগের নিদর্শন সংগ্রহের জন্য পরিচিত।
- আকর্ষন-ইতিহাসঃ মুর্শিদাবাদে অবস্থিত কসিমবাজার প্রাসাদ, তার ইন্দো-ইউরোপীয় স্থাপত্য এবং এর ঐতিহাসিক গুরুত্বের জন্য বিখ্যাত। রাজকীয় কারুকার্য খোচিত অন্দরমহল আর বাহিরমহলের তফাৎ অনেক। রাজবাড়ির অন্দরমহলের নাচমহল, শয়নকক্ষ, পালঙ্ক পুরনো দিনের গন্ধ মাখানো। রাজবাড়িতে অতিথিশালা, পুকুর, দুর্গা মন্ডপ ঐতিহ্যবাহী।
- কলকাতা থেকে দুরত্বঃ কাসিমবাজার প্রাসাদ কলকাতা থেকে প্রায় 203 কিলোমিটার।
- সেখানে কীভাবে যাবেনঃ আপনি কলকাতার হাওড়া স্টেশন থেকে মুর্শিদাবাদের ট্রেনে যেতে পারেন। অথবা গাড়িতে NH12 ধরে সোজা কাশিমবাজার।
- সময় এবং প্রবেশঃ আরও বেশি জানতে বা থাকার জন্য এই ওয়েবসাইট চেক করতে পারেন।
৯. কোচবিহার রাজবাড়ী
কোচবিহার রাজবাড়ি, অপর নাম ভিক্টর জুবিলি প্যালেস, হল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কোচবিহার শহরের একটি দর্শনীয় স্থান। ১৮৮৭ সালে মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণের রাজত্বকালে লন্ডনের বাকিংহাম প্রাসাদের আদলে এই রাজবাড়িটি তৈরি হয়েছিল। কোচবিহার রাজবাড়ি সম্পূর্ণটাই ইট দিয়ে নির্মিত। এটি একটি ক্লাসিক ওয়েস্টার্ন শৈলীতে তৈরি।
- আকর্ষন-ইতিহাসঃ কোচবিহার প্রাসাদটি লন্ডনের বাকিংহাম প্যালেসের আদলে তৈরি একটি দুর্দান্ত দ্বিতল ভবন। এটি তার মার্জিত স্থাপত্য, সুন্দর বাগান এবং একটি যাদুঘরের জন্য পরিচিত যেখানে রাজকীয় নিদর্শনগুলির একটি সংগ্রহ রয়েছে।
- কলকাতা থেকে দুরত্বঃ কোচবিহার প্রাসাদ কলকাতা থেকে প্রায় 600 কিমি দূরে।
- সেখানে কীভাবে যাবেনঃ কোচবিহার প্রাসাদ পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার শহরে অবস্থিত। নিকটতম বিমানবন্দর হল বাগডোগরা বিমানবন্দর, যা প্রায় 170 কিলোমিটার দূরে। নিকটতম রেলওয়ে স্টেশন হল কোচবিহার রেলওয়ে স্টেশন, যা প্রায় 3 কিমি দূরে।
- সময় এবং প্রবেশঃ কোচবিহার প্রাসাদটি জনসাধারণের জন্য 10:00 AM থেকে 5:00 PM পর্যন্ত খোলা থাকে। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রবেশমূল্য ₹২০ এবং শিশুদের জন্য ₹১০
রাজবাড়িতে ঢোকার টিকিট ইত্যাদি বিষয়ে চেক করতে পারেন।
১০. হাজারদুয়ারি প্রাসাদ
হাজারদুয়ারি প্রাসাদটি আগে বড় কোঠি নামে পরিচিত ছিল, এটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুর্শিদাবাদের কিলা নিজামতের ক্যাম্পাসে অবস্থিত। হাজারদুয়ারি প্রাসাদ, বর্তমানে একটি জাদুঘর ঊনবিংশ শতাব্দীতে নবাব নাজিম হুমায়ুন শাহের শাসনামলে স্থপতি ডানকান ম্যাক্লিওড দ্বারা নির্মিত হয়েছিল।
- আকর্ষন-ইতিহাসঃ হাজারদুয়ারি ছাড়াও ইমামবাড়া, ঘড়ি ঘর, মদিনা মসজিদ, চক মসজিদের মতো বেশ কিছু স্থাপত্য রয়েছে কিলা নিজামত এলাকায়।
- কলকাতা থেকে দুরত্বঃ হাজারদুয়ারি প্রাসাদ কলকাতা থেকে প্রায় 210 কিমি দূরে।
- সেখানে কীভাবে যাবেনঃ নিকটতম বিমানবন্দর হল কলকাতার নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, যা প্রায় 210 কিলোমিটার দূরে। নিকটতম রেলওয়ে স্টেশন হল মুর্শিদাবাদ রেলওয়ে স্টেশন, যা প্রায় 2 কিমি দূরে এবং কলকাতা থেকে দৈনিক অনেক ট্রেন মুর্শিদাবাদ যাতায়াত করে।
- সময় এবং প্রবেশঃ হাজারদুয়ারি ঢোকার অনলাইন টিকিট এখান থেকে (মাথাপিছু ২০টাকা) দেখতে পারেন।
১১. মহিষাদল রাজবাড়ি
মহিষাদল পূর্ব মেদিনীপুর জেলার একটি ঐতিহাসিক শহর। মহিষাদল রাজবাড়ি কমপ্লেক্সে রাজকীয় মেজাজে পর্যটকদের থাকার সব বন্দোবস্ত করা হয়েছে। প্রাচীন আমলের দরদালান থেকে শুরু করে রাজার পালঙ্ক সেই আদলেই সাজানো হয়েছে পর্যটকদের ঘরগুলি। ষোড়শ শতকে জনার্দন উপাধ্যায় প্রথম মহিষাদল রাজবাড়িটি তৈরি করেছিলেন। ক্রমে বংশ পরম্পরায় সেই প্রাসাদ ধীরে ধীরে বড় হতে শুরু করে। মহিষাদল রাজবাড়ি তিনটি প্রাসাদ নিয়ে তৈরি। এদের মধ্যে কেবল মাত্র চতুর্থটি অর্থাৎ ফুলবাগেই পর্যটকরা থাকতে পারেন। সেই ফুলবাগই একদিনে দেখে শেষ করতে পারেন না পর্যটকরা। একরকম বলাযায় জনপ্রিয়তার শির্ষে থাকা পশ্চিমবঙ্গের রাজবাড়ী
- আকর্ষন-ইতিহাসঃ এখানকার প্রধান দুটি প্রাসাদ, একটি কাচারি বা কোর্ট হাউস, একটি ঘাট এবং একটি বিশাল নবরত্ন মন্দির নিয়ে গঠিত। রাজবাড়িটি বাংলার সুপরিচিত নবরত্ন শৈলীতে নির্মিত, এটিতে একটি ইউরোপীয় আকর্ষণ যোগ করেছে।
- কলকাতা থেকে দুরত্বঃ মহিষাদল কলকাতা থেকে ১১০ কিলোমিটার
- সেখানে কীভাবে যাবেনঃ– গাড়িতে কলকাতা থেকে বম্বে রোড ধরে নন্দকুমার মোড় পার করে ৮ কিলোমিটার গেলে পড়বে কাপাসিরিয়া মোড়। সেখান থেকে ৫ কিলোমিটার গেলেই রাজবাড়ি।
ট্রেনে আসতে চাইলে হাওড়া থেকে সাউথইস্টার্ন লাইনের ট্রেন ধরে নামতে হবে মহিষাদল। সেখান থেকে মাত্র ২ কিমি গেলেই রাজবাড়ি।
- সময় এবং প্রবেশঃ আরও বেশি জানতে বা থাকার জন্য তাদের ওয়েবসাইট চেক করতে পারেন।
১২. বলাখানা রাজবাড়ী
নদীয়ার জেলার কৃষ্ণনগর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে নবদ্বীপ ঘাট রোডের ওপর অবস্থিত বলাখানা রাজবাড়ী। ১৭ শতকের শেষ দিকে এখানে জলঙ্গী নদীর ধারে সেই সময় ফরাসি নীলকর সাহেবরা এই অঞ্চলে নীল চাষের দেখাশোনা করার জন্য এই প্যালেস তৈরি করেন এবং পরে বহুবার হাত বদল হয়ে পাল চৌধুরীদের হাতে এসে পড়ে। বর্তমানে অত্যন্ত ভাল যত্ন নেওয়া পশ্চিমবঙ্গের রাজবাড়ীগুলির মধ্যে একটি।
- আকর্ষন-ইতিহাসঃ বলাখানা রাজবাড়ীর বিশেষ আকর্ষণ হলো ৪ ফুট উঁচু ছত্রিওয়ালা খাট, যাতে দেখতে তিন ধাপ সিঁড়ি পেরোতে হয়। তাছাড়া সারা বলাখানা রাজবাড়ী জুড়ে রয়েছে বিভিন্ন অ্যান্টিক বা প্রাচীন দেখবার মত আসবাবপত্র ইত্যাদি।
- কলকাতা থেকে দুরত্বঃ কলকাতা থেকে প্রায় ১২১ কিলোমিটার
- কীভাবে যাবেনঃ
- গাড়িতে কলকাতা থেকে প্রায় ৩ ঘন্টার মত লাগবে।
ট্রেনে আসলে শিয়ালদহ থেকে লোকাল ট্রেনে কৃষ্ণনগর, তারপর ষ্টেশন থেকে টোটো ধরে সোজা বলাখানা রাজবাড়ী।
- সময় এবং প্রবেশঃ আরও বেশি জানতে বা থাকার জন্য তাদের ওয়েবসাইট চেক করতে পারেন।
আরও পড়ুন – উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বেড়াবার ভাল জায়গা
প্রতীক দত্তগুপ্ত, থাকেন কলকাতায়, কাজ বাদে বেড়ানোই যার প্রথম ভালবাসা। এই কয়েক বছর হল বেড়ানোর সাথে কলমও ধরেছেন । তিনি শুধুমাত্র যে জায়গাগুলি পরিদর্শন করেছেন সেগুলি সম্পর্কেই ব্লগ করেন না, তবে তিনি তার অনুগামীদের জন্য টিপস, কৌশল এবং নির্দেশিকাগুলি সম্পর্কেও পোস্ট করেন৷
বেশ কয়েকটি নতুন রাজবাড়ীর সন্ধান পেলাম। Nice post.