দারিংবাড়ি ভ্রমণ – পাহাড়, ঝর্না, কুয়াশা ঢাকা জঙ্গল চাই শুধু দিন তিনেকের ছুটি

দারিংবাড়ি ভ্রমণ

দারিংবাড়ি পুর্বঘাট পর্বতমালার কোলে লুকিয়ে থাকা এক বিস্ময়ের নাম। দারিংবাড়ি ওড়িশার কন্ধমল জেলায় অবস্থিত একটি শৈলশহর, যাকে অনেকে বলেন ‘ওড়িশার কাশ্মীর’। দারিংবাড়ি ভ্রমণ নির্জন পাহাড়প্রেমী মানুষের কাছে হয়ে উঠতে পারে সেরা ‘উইকেন্ড ডেস্টিনেশন’। ঝর্না, নদী, পাহাড় বা কুয়াশা ঢাকা জঙ্গল সবকিছু একসাথে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় তিন হাজার ফিট উচ্চতায় অবস্থিত শৈলশহর। জানা যায়, দারিং নামের এক সাহেবের দৌলতেই ব্রিটিশ আমলে এই শৈলশহরের প্রতিষ্ঠা হয়। স্থানীয় কুইভাষায় ‘দারিং’ শব্দের অর্থ উপত্যকা, আর ‘বাড়ি’ অর্থে ঘর। সেইদিক থেকে ‘দারিংবাড়ি’ শব্দের অর্থ হল উপত্যকার বাড়ি।

কেন বেড়াতে যাবেন দারিংবাড়ি

ওড়িশার নাম করলে প্রথমেই মাথায় আসে পুরী, চিলকা বা শ্রীশ্রীজগন্নাথ দেবের মন্দিরের কথা। কিন্তু ওসব বাদেও ওড়িশার পূর্বঘাট পর্বতের উপর দারিংবাড়ির মতো ভ্রমণের এমন একটা সৌন্দর্যমন্ডিত জায়গা যে রয়েছে তা বিশ্বাস করা সত্যিই একটু কঠিন। দারিংবাড়িতে সকালে আপনার ঘুম ভাঙবে পাখির ডাকে। এখানকার স্থানীয় বাসিন্দাদের বেশিরভাগ খ্রিষ্টধর্মে দীক্ষিত। সুন্দর পাহাড়ি রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে কানে আসা চার্চের ঘণ্টার ধ্বনি আপনাকে দারিংবাড়ি ভ্রমণ স্মরণীয় করে রাখবে। দারিংবাড়ি ভ্রমণ করার সময় লুদু জলপ্রপাত, দারিংবাড়ি জলপ্রপাত, মড়ুবান্দা জলপ্রপাত, এবং পুটুদি জলপ্রপাত ঘুরে দেখতে ভুলবেন না। রয়েছে লাভার্স পয়েন্ট, সাইলেন্ট ভ্যালি, হিল ভিউ পার্ক ও গোলমরিচের বাগানের মতো একাধিক দর্শনীয় স্থান। চাইলে গাড়ি ভাড়া করে দেখে নিতে পারবেন সবকটিই। রয়েছে বন পরিক্রমা বা ফরেস্ট সাফারির ব্যবস্থাও

দারিংবাড়ির দর্শনীয় স্থান – Darinbadi tourist places list

দারিংবাড়ি শহরটি ঘেরা পাইন ও কফি গাছে। পূর্বঘাট পর্বতের উপর অবস্থিত হওয়ায় দারিংবাড়িতে রয়েছে মশলার বাগান। ঘুরে দেখতে পারেন কফি ও গোলমরিচের প্লানটেশন। তাছাড়া পাহাড়ে ঘেরা এই ছোট্ট শহরের সৌন্দর্য লুকিয়ে রয়েছে এখানকার জলপ্রপাতে। পাইন জঙ্গলের মধ্য দিয়ে সশব্দে বয়ে চলেছে স্রোতস্বিনী দুলুরি। চুপ করে বসে থাকলে কানে আসবে পাখির ডাক ও নদীর বয়ে চলার শব্দ।

লাভার্স পয়েন্ট

লাভার্স পয়েন্ট

লাভার্স পয়েন্ট দারিংবাড়ি থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বেশ মসৃন পাথুরে ছোট ছোট খাদের সৃষ্টি করেছে আর তার উপর দিয়ে ঝর্নার জল বয়ে যাচ্ছে। চারিদিকে সদিও ঘন জঙ্গল পরিবৃত হওয়ায় বেশ একটা নির্জন এবং রোমান্টিক পরিবেশ বিরাজ করছে। বাড়ি ফিরে গিয়েও এই লাভার্স পয়েন্ট আপনাকে দারিংবাড়ি ভ্রমণ অভিজ্ঞতা বারবার জেগে উঠবে। জায়গাটা স্থানিয়দের কাছে সাপ্তাহিক পিকনিকের জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয়।

মান্দাসরু

মান্দাসরু

রাইকিয়া ব্লকের মান্দাসরু বা মান্দাসুরু কুটি: দারিংবাড়ি থেকে প্রায় 40 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত, মান্দাসরু কুটি একটি মনোরম পাহাড়ি এলাকা। এখানথেকে আশেপাশের পাহাড় এবং উপত্যকার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখায়। স্থানটি তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সবুজ বনের জন্যও পরিচিত।

ইমু পাখির অভয়ারণ্য

ইমু পাখির অভয়ারণ্য
Picture credit : sambadenglish.com

ইমু পাখির অভয়ারণ্য: দারিংবাড়ি থেকে প্রায় 20 কিলোমিটার দূরে কলিঙ্গ ঘাট পাহাড়ের কাছে অবস্থিত, ইমু পাখির অভয়ারণ্যে বিরল ইমু পাখি সহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখির আবাসস্থল। অভয়ারণ্যটি আশেপাশের পাহাড় এবং উপত্যকাগুলির একটি সুন্দর দৃশ্য দেখা যায়।

মিদুবান্দা জলপ্রপাত

মিদুবান্দা জলপ্রপাত

মিদুবান্দা জলপ্রপাত: দারিংবাড়ি থেকে প্রায় 16 কিমি দূরে অবস্থিত, মিদুবান্দা জলপ্রপাত হল একটি মনোরম স্পট যেটি পাথরের গা বেয়ে নিচে নেমে আসা জলপ্রপাতের একটি মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখায়। জায়গাটি সবুজ বনে ঘেরা এবং প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য একটি আদর্শ স্থান। দারিংবাড়ি ভ্রমণের একটি সেরা স্পট এই মিদুবান্দা ফলস।

পাইন জঙ্গল ও দুলুরি নদী

পাইন জঙ্গল
Picture credit : hotelutopia.in

পাইন বন এবং দুলুরি নদী: দারিংবাড়ি থেকে প্রায় 15 কিমি দূরে সুন্দর পাইন বন রয়েছে এবং দুলুরি নদী লম্বা পাইন গাছের সারির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে চলেছে। এই স্থানটি সুন্দর নদী সহ একটি নির্মল ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ পিকনিক বা প্রকৃতিতে হাঁটার জন্য আদর্শ। নিশব্দে প্রিয়জনের হাত ধরে হাঁটার সময়টুকু আপনার দারিংবাড়ি ভ্রমণের সবচেয়ে স্মরণীয় মুহুর্ত হয়ে থাকবে।

সানসেট পয়েন্ট

সানসেট পয়েন্ট

সানসেট পয়েন্ট (সাইলেন্ট ভ্যালি): দারিংবাড়ি থেকে প্রায় 10 কিমি দূরে অবস্থিত, সাইলেন্ট ভ্যালির সানসেট পয়েন্ট একটি মনোমুগ্ধকর সূর্যাস্ত দেখার জন্য একটি সুন্দর জায়গা। জায়গাটি সবুজ সবুজ বন দ্বারা বেষ্টিত এবং একটি নির্মল এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ প্রদান করে।

দারিংবাড়ি ভ্রমণের সেরা সময়

দারিংবাড়ি যেহেতু একটা হিল-স্টেশন বা শৈলশহর তাই সারা বছরই আবহাওয়া মনোরম আপনাকে এখানে স্বাগত জানাবে। তবে বছরের প্রতিটি ঋতুই তার নিজস্ব রঙ দিয়ে প্রকৃতিকে সাজিয়ে দেয়। আর দারিংবাড়ির পাইন ও কফি বাগান ঘিরে আসল সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে তার নদী ও জলপ্রপাতে। তাই আমি বলব আপনি আসুন বর্ষা কালে বা বর্ষার পরপরই। চারিদিক ঘন সবুজ বন ও জলপুর্ন ঝর্নাগুলি মন ভরিয়ে দেবে ।

কিভাবে যাবেন দারিংবাড়ি

  • নিকটতম বিমানবন্দর হল ভুবনেশ্বরের বিজু পট্টনায়ক বিমানবন্দর। ভুবনেশ্বর থেকে দারিংবাড়ি প্রায় ২৯০ কিলোমিটার।
  • এছাড়া হাওড়া থেকে ওড়িশাগামী যেকোনও ট্রেনে চেপে আপনাকে নামতে হবে ব্রহ্মপুর (বেরহামপুর)। নিকটতম বাস স্ট্যান্ড ফুলবনি। বেরহামপুর থেকে সড়কপথে দারিংবাড়ি ১২৫ কিলোমিটারের পথ। যদি গোপালপুর ঘুরে দারিংবাড়ি যেতে চান, সেক্ষেত্রে দূরত্ব ১৪০ কিলোমিটার।
  • কলকাতা থেকে সড়কপথে দারিংবাড়ির দূরত্ব প্রায় ৬৯০ কিলোমিটার। জাতীয় সড়ক ১৬ ধরে যেতে হবে। লং ড্রাইভের ইচ্ছা থাকলে যেতে পারেন কলকাতা থেকে সড়কপথে দারিংবাড়ি।

কোথায় থাকবেন

দারিংবাড়িতে থাকার জন্য বেশ অনেকগুলো হোটেল, বাংলো এবং রিসোর্ট রয়েছে। সেখানেই আপনি খাওয়া-দাওয়াও সেরে ফেলতে পারেন। এখানে ১,৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫,০০০ টাকা অবধি বাংলো ও রিসোর্ট রয়েছে। সব মিলিয়ে বলা যায় পর্যটক হিসাবে প্রাথমিক ভাবে দরকারি সবকিছুই ঠিকঠাক আছে ।

আপনার ব্রহ্মপুর থেকে ট্রেন ধরার পথেই গোপালপুর ও আশেপাশের বেড়াবার জায়গা সম্পর্কে পড়ুন।

2 thoughts on “দারিংবাড়ি ভ্রমণ – পাহাড়, ঝর্না, কুয়াশা ঢাকা জঙ্গল চাই শুধু দিন তিনেকের ছুটি”

Leave a Comment