শিমুলতলা ভ্রমন অর্থাৎ দু-তিন দিনের হাওয়া বদল করতে যাওয়ার জায়গা হিসাবে এক্কেবারে আদর্শ গন্তব্য। শিমুলতলা বিহার রাজ্যের মুঙ্গের জেলায় অবস্থিত। শিমুলতলার একসময় বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে একটা বিশেষ জায়গা ছিল। সত্যজিৎ রায়ের ‘মহাপুরুষ’ ছবি বা তরুণ মজুমদারের ‘দাদার কীর্তি’ ও আরও বেশ কিছু বাংলা চলচিত্রের শুটিং কিন্তু এই শিমুলতলা এখানেই হয়েছিল। বাঙালির পশ্চিম বলতে বোঝাত শিমুলতলা, মধুপুর বা দেওঘর। শিমুলতলা ছিল বাংলার ধনী বা ক্ষমতাশালী বেক্তিদের বাগানবাড়ির ঠিকানা। স্বাস্থ্যোদ্ধারের জন্য বাঙালির প্রথম পছন্দ ছিল এই শিমুলতলা ভ্রমন।
সময়ের সাথে সাথে বাঙালির সেই “পশ্চিম” এখন হয়ত মুম্বাই, দুবাই বা ইউরোপ হয়েছে। তবে শিমুলতলার সেই স্বাস্থ্যকর জল-হাওয়া কিন্তু এখনও একই রকম আছে। তাই নিশ্চিন্তে থাকুন ওখানে গিয়ে যাই খান ক্ষিদে আপনার একটু বেশি পাবেই। গত শতাব্দির উচ্চ-বর্গিয়দের বাড়িগুলি কিন্তু এখনও দাঁড়িয়ে আছে, কিছুটা জৌলুষহীন অবস্থায় যদিও। কিন্তু পাহাড়, টিলা, শাল, মহুয়ার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য কিন্তু একই আছে। তাই জঙ্গলের সবুজ গাছের মাঝে ঘুরে বেড়ান, উপভোগ করুন প্রকৃতি।
শিমুলতলা বাজার থেকে পছন্দমত মাছ কিনে রান্না করে খেতে পারেন। আর নাহলে বাংলো বাড়িতে রাঁধুনির ব্যাবস্থাও করে নিতে পারেন। আর একটা কথা, গরম জামা কাপড় অবশ্যই নিয়ে যাবেন। কেননা, শিমুলতলায় বেশ ভালই ঠান্ডা পড়ে। আর এই ঠান্ডাটাও বেশ উপভোগ্য। বাজারেই ডেকরের্টার্স রয়েছে, সেখানথেকে কম্বল, তোষক, বালিশ এবং হ্যাজাকের কোনও অসুবিধা হবে না। ভাড়া পাওয়া যায়। হ্যাজাকের কথা এই কারণেই উল্লেখ করা হল সন্ধ্যের সময় শিমুলতলাতে বিদ্যুতের সমস্যা রয়েছে। বিশেষত দ্য গ্রেট ‘লো ভোল্টেজ’। সে জন্যই হ্যাজাকের ব্যাবস্থা রাখা ভাল। আর সঙ্গে অবশ্যই টর্চ নিয়ে যাবেন।
আর একটা কথা, শিমুলতলায় পা রাখবেন আর স্থানীয় মিষ্টির চেখে দেখবেন না তা কি হয়। সকাল এবং বিকাল দু’বেলা হাতে গরম সিঙ্গাড়া আপনি পাবেনই। এছাড়া সঙ্গে রয়েছে রসগোল্লা, সন্দেশের মধ্যে কালাকাদ, ল্যাংচা, বোঁদে, নিমকি, গাঠিয়া আর চানামুড়কি। কালাকাদ কিন্তু সত্যই ভাল।
কি দেখবেন শিমুলতলায়
শিমুলতলায় পৌঁছে একটা অটো ভাড়া করে নেবেন। আর তারপর বেরিয়ে পড়বেন লাটু পাহাড়, রাজবাড়ির উদ্দেশ্যে। একদিনেই অটো চেপে শিমুলতলা ঘুরে বেড়াতে পারবেন। শিমুলতলা নামার পর রেলস্টেশন থেকে বেরিয়েই চোখে পড়বে ডাইনে বাঁয়ে স্টেশন রোডে গড়ে ওঠা স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারের আনন্দ নিকেতন। সেই বহুশ্রুত “টিলা টিলা শিমুলতলায়, ভিলা ভিলা বাড়ি” সমুহ যেমন – স্যার আর এন মুখার্জির বাড়ি ‘রিট্রিট’, ভূতুড়ে বাড়ি হিসাবে পরিচিত ‘দুলারি ভবন’, কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন অ্যাডভোকেট পি সি চন্দর বাড়ি ‘বিজনাবাস’, বা সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জির ‘মা হাউস’ ইত্যাদি আরও অনেক ভিলা। – (একেবারে ষ্টেশন সংলগ্ন )
শিমুলতলা ভ্রমনের মূল আকর্ষণ লাট্টু পাহাড় ও নলডাঙ্গা রাজবাড়ী। স্টেশন সংলগ্ন মাঠ পেরিয়ে উঠে পড়ুন হাজারখানেক ফুট উঁচু লাট্টু পাহাড়ে। আর তার সঙ্গে দিগন্ত বিস্তৃত খোলা আকাশ! যার তলায় দাঁড়িয়ে আপনি প্রতি মুহূর্তে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যকে দু’ চোখ মেলে ধরে রাখতে পারবেন আজীবন মনের মণিকোঠায়। মুক্ত আকাশের তলায় দাঁড়িয়ে বাধাহীন ফুরফুরে বাতাসের স্পর্শে আপনার শরীর আর মন আরও সবুজ হয়ে উঠবেই। প্রকৃতি তার অপার সৌন্দর্য দুহাত উজাড় করে মেলে ধরেছে শিমুলতলায়। গাছগাছালিতে ছাওয়া লাট্টুর শীর্ষে চড়ে দেখে নেওয়া যায় আদিবাসী দেবতাদের স্থান। এখানথেকে সুর্যাস্ত সত্যই মনোরম দৃশ্য। কাছেই দেখে নেওয়া যেতে পারে ছোট্ট ঝর্না লীলাবরন। তবে ওই জঙ্গলের পথ ধরে একটু এগিয়ে হলদি ফল্স দেখে আসতে পারেন।
আরও পড়ুনঃ রাজগীর ভ্রমণের খুটিনাটি
কিভাবে যাবেন শিমুলতলা
হাওড়া থেকে শিমুলতলা যাওয়ার প্রচুর ট্রেন রয়েছে। তবে টিকিট পাওয়ার ব্যাপারে সব থেকে ভালো ট্রেন হল পটনা জনশতাব্দী এক্সপ্রেস। সেক্ষেত্রে আপনাকে ঝাঝা জংশন থেকে শিমুলতলা প্রায় ২০ কিমি একটা গাড়ি নিতে হবে।
হাওড়া-মোকামা এক্সপ্রেস রাত ১১টার পর হাওড়া ছেড়ে শিমুলতলা পৌঁছোয় সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ।
এসব ট্রেনের খবর বা টিকিটের জন্য ই-রেল চেক করতে পারেন।
শিমুলতলা ভ্রমন, কোথায় থাকবেন?
শিমুলতলা ভ্রমনে এসে রাত্রিবাস করার জন্য যেখানে থাকতে পারেন তা হল, শিমুলতলা স্টেশনে নেমে ডানদিকে বাসস্ট্যান্ড ও বাজার রয়েছে। বাজারের ডানদিকে আছে অনেক বাংলো বাড়ি ও আধুনিক মানের হোটেল এবং মঠ আছে।
শিমূলতলায় থাকার জন্য হোটেল বা রিসর্ট পাওয়া যায় তবে ওই ভিলা ভিলা বাড়ি গুলির বেশির ভাগই বর্তমানে থাকার জন্য অনেক কম ভাড়াতে পাওয়া যায় এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে হোম-স্টের মতই।
( * ) এই পেজে দেওয়া ট্রেনের বা হোটেলের কোনোটাই স্পন্সর্ড লিঙ্ক নয়।
প্রতীক দত্তগুপ্ত, থাকেন কলকাতায়, কাজ বাদে বেড়ানোই যার প্রথম ভালবাসা। এই কয়েক বছর হল বেড়ানোর সাথে কলমও ধরেছেন । তিনি শুধুমাত্র যে জায়গাগুলি পরিদর্শন করেছেন সেগুলি সম্পর্কেই ব্লগ করেন না, তবে তিনি তার অনুগামীদের জন্য টিপস, কৌশল এবং নির্দেশিকাগুলি সম্পর্কেও পোস্ট করেন৷