কলকাতা শহর গড়ে উঠেছিল গঙ্গা নদীকে কেন্দ্র করেই। বাণিজ্যের প্রয়োজনে কলকাতায় গঙ্গা নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল অনেকগুলি ঘাট। সময়ের সাথে সাথে সেইসব ঘাটগুলির অবশিষ্ট কয়েকটি আজও লড়াই করে কোনোভাবে বেঁচে আছে। কলকাতার প্রতিটি ঘাটের নিজস্ব ইতিহাস এবং তাৎপর্য রয়েছে এবং এই ঘাটগুলি কলকাতার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি বহন করে আসছে। উল্লেখযোগ্য ঘাটগুলি যেগুলি কলকাতার ইতিহাসে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে এবং দ্রুত পরিবর্তনশীল শহরের প্রকৃত ঐতিহ্যকে আত্মস্থ করেছে তা হল প্রিন্সেপ ঘাট, আমেনিয়াম ঘাট, চাঁদপাল ঘাট, বাবু ঘাট, বাগবাজার ঘাট, নিমতলা ঘাট, মল্লিক ঘাট এবং জগন্নাথ ঘাট। .
কলকাতার ঘাট – গঙ্গাঘাট ভ্রমণ কেমন হবে? – Ghats of Kolkata
গঙ্গার তীর বরাবর কলকাতার উত্তর বা দক্ষিন যেকোন প্রান্ত থেকে অপর দিকে এই ঘাট কেন্দ্রিক ভ্রমণ দারুন আনন্দের। সাথে সাথে এটি কলকাতাকে একটু অন্যভাবে দেখার সুযোগ করে দেয়। এই যাত্রা তিন রকম ভাবে করা যেতে পারেঃ-
- গাড়িতে – মোট দুরত্ব ৮ থেকে ১০কিমি। একটা ছোট গাড়ি নিয়ে ঘাটের কাছে নেমে কিছুক্ষন ঘাটে বসে গঙ্গার হাওয়া খান। প্রত্যেকটি ঘাটেই কাছাকাছি নৌকা ভ্রমণের ব্যবস্থা আছে, চাইলে একটু নৌকাবিহার করুন। গন্তব্য পথের কাছাকাছি দ্রষ্টব্য স্থানগুলি ছুঁয়ে পরের ঘাটের পৌঁছে যাওয়া। এর থেকে বেশি আনন্দায়ক উপায়ে ও ভাল করে কলকাতাকে জানার উপায় খুব কমই আছে।
- চক্ররেলে – একেবারে ঘাটগুলি ছুঁয়ে যায়, যাত্রা পথ ৬ কিমি। চক্ররেলে বাগবাজার বা প্রিন্সেপঘাট ষ্টেশন থেকে শুরু করে নিজের ইচ্ছেমত, স্টেশনে নেমে ঘুরে দেখতে পারেন। সেক্ষেত্রে পরবর্তি ট্রেনের জন্য অনেক সময় লাগে।
- লঞ্চে – জোয়ার বা ভাঁটা অনুযায়ী লঞ্চে গেলে নিচে বর্নিত ঘাটগুলি যেতে ৩০ থেকে ৫০মিনিট লাগে। গঙ্গার উপর দিয়ে ফেরি সার্ভিস ব্যবহার করে প্রত্যেকটি ঘাটের কাছের জায়গাগুলি ঘুরে দেখা কঠিন তবে উপরি পাওনা হল গঙ্গাবক্ষ থেকে ঘাটের দৃশ্য কেবল লঞ্চ থেকেই সম্ভব। আর সন্ধ্যার সময় ওই লঞ্চে বসে ঘাট গুলির দিকে তাকালে অসম্ভব ভাল লাগবে।
তবে গাড়িতে ভ্রমণ আপনাকে ঘাট ছাড়াও কাছাকাছি জায়গাগুলি দেখার আনন্দ চটকরে সেরে নেওয়া যায়। শুরু করা যাক তবে কয়েক ঘন্টার ছোট্ট যাত্রা।
1. বাগবাজার ঘাট
বাগবাজার ঘাট, উত্তর কলকাতার বাগবাজারে অবস্থিত। একসময় গোবিন্দরাম মিত্রের পুত্র রঘু মিত্রের নামানুসারে এটি ‘রোগ মিটের ঘাট’ নামে পরিচিত ছিল। এটি পরে বাগবাজার ঘাট নামে পরিচিত হয়। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রারম্ভিক দিনগুলিতে জমিদারের পদ গ্রহণের পর তিনি শুধুমাত্র বিপুল পরিমাণ সম্পদের জন্যই নয়, বরং প্রশাসনের মধ্যে বিপুল ক্ষমতার অধিকারী হওয়ার জন্যও বিখ্যাত হয়েছিলেন। বাগবাজার শব্দটি এসেছে ‘বাগ’ অর্থাৎ ফুলের বাগান এবং “বাজার” এর অর্থ বাজার। সুতরাং এটি এমন একটি স্থানকে নির্দেশ করে যেখানে প্রচুর পরিমাণে ফুল রয়েছে।
বাগবাজার ঘাট কলকাতার অন্যতম বিখ্যাত ঘাট এবং সবথেকে ভালভাবে রক্ষনাবেক্ষনে থাকে। আপনাকে যদি কলকাতার ইতিহাস আকর্ষন করে বা আপনি যদি অতীতের স্মৃতিচারণ করতে ভালোবাসেন, তাহলে এই জায়গায় ভ্রমণ করুন। সেখানকার স্থানীয়দের কাছ থেকে আরও জানুন। সেখানে বসে আপনি প্রতিদিনের জীবনে বিভিন্ন ধরণের লোক এবং তাদের দৃষ্টিভঙ্গি দেখতে পাবেন। অসংখ্য লোক এই ঘাট রোজ ব্যবহার করেন, এই পবিত্র নদীতে স্নান করেন এবং শ্রদ্ধার সাথে গঙ্গার জল সংগ্রহ করেন ধর্মিয় অনুষ্ঠানের জন্য। স্থানীয় নৌকাগুলি পন্য উঠা-নামা করার জন্যও ব্যবহৃত হয়। ঘাটটিতে মায়ের ঘাট নামে আরেকটি নির্দিষ্ট অংশ রয়েছে।
কাছের চক্ররেল ষ্টেশন | বাগবাজার |
নিকটে আর কি দেখার | 1. মায়ের বাড়ি – এটি বাগবাজার রামকৃষ্ণ মঠ। মা সারদা কলকাতায় এসে এই বাড়িতেই থাকতেন। 2. শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু মিউজিয়াম – কালীপ্রসাদ চক্রবর্তী স্ট্রিটে গৌড়ীয় মিশন প্রাঙ্গণেই অবস্থিত। 3. বলরাম মন্দির – ১৯২২ সালে বলরাম মন্দিরে শ্রী রামকৃষ্ণ মঠের সূচনা এখানেই হয়। বলরাম মন্দির রামকৃষ্ণ পরমহংসের শিষ্য বলরাম বসুর বাড়ি ছিল। 4. সিস্টার নিবেদিতা সংগ্রহশালা 5. গিরিশ চন্দ্র ঘোষের বাড়ি ও গিরিশ মঞ্চ |
2. আহিরীটোলা ঘাট
আহিরীটোলা কথাটি এসেছে ‘আহির‘ অর্থাৎ দুধওয়ালা (পুরুষ বা নারী যেকেউ) বোঝায় এবং ‘টোলা‘ সাধারানত অস্থায়ী বড় আস্তানা কে বোঝায়। হয়ত ঘাটটি তারা তাদের গরু ও মহিষকে স্নান করানোর জন্য ব্যবহার করত। বর্তমানে তুলনামূলকভাবে পরিচ্ছন্ন ও সুসংহত ঘাটটি ঠাকুর ‘বিসর্জনের’ জন্য ব্যবহৃত হয়। আহিরিটোলা ঘাটটি সকাল 5.30 টায় খোলে এবং রাত 9 টা পর্যন্ত চালু থাকে, বাঁধাঘাট, বাগবাজার এবং হাওড়া স্টেশনে নিয়মিত ফেরি পরিষেবা প্রদান করে।
কাছের চক্ররেল ষ্টেশন | শোভাবাজার আহিরিটোলা |
নিকটে আর কি দেখার | 1. কুমারটুলি – পশ্চিমবঙ্গের সবেথেকে বড় এলাকা জুড়ে ঠাকুর মুর্তি গড়ার জায়গা। ফটোগ্রাফির শখ থাকলে অবশ্যই যাওয়া উচিৎ। 2. শোভাবাজার রাজবাড়ি – কলকাতার পর্যটকদের সবচেয়ে প্রিয় রাজবাড়ি। 3. পুতুল বাড়ি – শোভাবাজার জেটির কাছে চক্র রেলের লাইনের ধারেই একটি ভৌতিক বাড়ি বলেই খ্যাত। 4. নিমতলা মহাশ্মশান – বাংলার সবথেকে বড় ও ব্যাস্ত শ্মশান। বাঙালি মহাপুরুষগনের বেশিরভাগের শেষ ঠিকানা। |
3. জগন্নাথ ঘাট
গঙ্গার পূর্ব তীরে হাওড়া ব্রিজের কাছেই এই জগন্নাথ ঘাট, একটি ঐতিহাসিক ঘাট। ১৭৬০ সালে তৎকালীন একজন সুপরিচিত বণিক ও ব্যবসায়ী শোভরাম বসাক এই ঘাটটি নির্মান করেন। আগে ঘাটটিকে শোভাম বসাকের স্নান ঘাট বলা হত, পরে তা পরিবর্তন করে জগন্নাথ ঘাট করা হয়। এটি ধ্রুপদী ইউরোপীয় স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত এবং একটি গৌরবময় ইতিহাস সমৃদ্ধ ঘাট। একটি ব্যস্ত স্নান ঘাট হওয়ার পাশাপাশি, জগন্নাথ ঘাট ছিল হুগলি নদীর তীরের ব্যস্ততম বাষ্পচালিত নৌযান চলাচলের স্টেশনগুলির মধ্যে একটি।
জায়গাটিতে একটি নির্দিষ্ট স্পন্দন রয়েছে যা এখানে আসা মাত্রই আপনি অনুভব করবেন। এই ঘাটের সৌন্দর্য সত্যই অবর্ননিয়। এখনও রোজ বহু দর্শনার্থী আকর্ষিত হন। মন ভালো করতে এই ঘাটে পবিত্র গঙ্গার জলে ডুব দিতে পারেন। সূর্য অস্ত যাওয়ার সাথে সাথে পুরো জায়গাটির দৃশ্যপটই বদলে যায়। দূরের জলে নৌকায় লণ্ঠনের জ্বলন্ত আলো স্বপ্নের মতো মনে হয়। কিছু সময়ের জন্য সেখানে থাকুন এবং একটি নতুন বিশ্বের দরজা আপনার সামনে খুলে যাবে। যতক্ষণ মন চায় ঘাটে বসে থাক।
কাছের চক্ররেল ষ্টেশন | বড়বাজার |
নিকটে আর কি দেখার | 1. জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি – বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মস্থান । 2. ভুতনাথ মন্দির – প্রায় আড়াইশ বছরের পুরান শিব মন্দির। 3. মার্বেল প্যালেস – উনিশ শতকের একটি প্রাসাদোপম অট্টালিকা। |
4. মল্লিক ঘাট
মল্লিক ঘাট হল হাওড়া ব্রিজের কলকাতা প্রান্তের ঠিক দক্ষিন দিকে অবস্থিত। যে ঘাটটিকে আমরা আজকে শুধু মল্লিক ঘাট হিসেবে চিনতাম সেটি নিমাই মল্লিক ঘাট নামে পরিচিত। ১৮৫৫ সালে রামমোহন মল্লিক তার পিতা নিমাই চরণ মল্লিকের স্মরণে এটি নির্মাণ করেছিলেন। তবে মল্লিক ঘাট কেবল একটা স্নানের ঘাট নয়, ভারতের “সাংস্কৃতিক রাজধানী” হিসাবে পরিচিত কলকাতার একটি বিশেষ আকর্ষণ রয়েছে, এশিয়ার সবথেকে বড় ফুলের বাজার। মল্লিক ঘাট বাজারটি কলকাতার প্রাণবন্ত সংস্কৃতির একটি ছোট অংশের মতো। সুতরাং, কলকাতায় এই প্রাণবন্ত এবং বন্ধুত্বপূর্ণ বাজারটি দেখতে মিস করবেন না।
ঘাটের পরিবেশ রঙ, সুগন্ধি এবং বিভিন্ন ধরনের ফুলের নির্যাস মিলেমিশে তৈরি পরিবেশ আপনাকে মুগ্ধ করবেই। এটি কলকাতার বিখ্যাত প্রাক-বিবাহের গন্তব্যগুলির মধ্যে একটি। মল্লিক ঘাট ফ্লাওয়ার মার্কেট শুধু ফুল কেনার জায়গা নয় – এটি কলকাতার সংস্কৃতির একটি জীবন্ত, শ্বাসপ্রশ্বাসের অংশ। এটি শহরের দৈনন্দিন জীবনের একটি আভাস দেয়। আপনি যদি ফটোগ্রাফি উত্সাহী হন তবে এই জায়গাটি একটি সোনার খনি। দেখবেন কলকাতার নানান রঙ, ব্যস্ত বিক্রেতা এবং জীবনের সত্যতা সবই এখানে ধরা পড়েছে। আপনি ক্যামেরা বা স্মার্টফোন যাই ব্যবহার করুন, আপনি কিছু দুর্দান্ত শট নিয়ে চলে যাবেন।
কাছের চক্ররেল ষ্টেশন | বড়বাজার |
নিকটে আর কি দেখার | 1. জগন্নাথ মন্দির – 2.পুরান ট্যাঁকশাল – |
5. চাঁদপাল ঘাট
হাওড়া ব্রিজ থেকে দক্ষিনে কিছুদুর এগিয়ে বি-বা-দি বাগ এলাকায় অবস্থিত চাঁদপাল ঘাট। এক সময় চাঁদপাল ঘাট ছিল শহরের ব্যস্ততম ফেরি ঘাট। সময়ের সাথে সাথে এটি ব্রিটিশ ভারতের প্রবেশদ্বারে পরিণত হয়। চাঁদপাল ঘাটের নামকরণ করা হয়েছে চন্দ্রনাথ পাল নামে একজন মুদি দোকানদারের নামে যিনি সেযুগে এই ঘাটে দৈনন্দিন জীবনযাত্রার সামগ্রী বিক্রি করতেন। এখনো চাঁদপাল ঘাট থেকে আসা-যাওয়া ফেরি সার্ভিসগুলো সক্রিয়ভাবে দর্শনার্থীদের সেবা দিচ্ছে। লোকেরা দুটি সক্রিয় জেটি থেকে বেছে নিতে পারে – একটি হাওড়াগামী যাত্রীদের পরিষেবা দেয়, অন্যটি রামকৃষ্ণপুর এবং শিবপুর ভ্রমণকারী যাত্রীদের জন্য।
কাছের চক্ররেল ষ্টেশন | বি-বা-দি বাগ |
নিকটে আর কি দেখার | 1. মিলেনিয়াম পার্ক – দুই কিলোমিটারের বেশি দির্ঘ গঙ্গার পাড় ঘেঁষে গাছ, ফুল ও আলো দিয়ে সাজান, ছোটদের জন্য কিছু রাইড সহ অতন্ত্য সুন্দর পার্কটি সবার কাছেই প্রিয়। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬.৩০ পর্যন্ত খোলা থাকে। টিকিট ১০টাকা। 2. রাইটার্স বিল্ডিং – এটি রাজ্যের প্রথম তিনতলা বাড়ি হিসাবে জন্য হয় এবং স্বাধীনতার পরথেকে যেটি পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সেক্রেটারিয়েট হিসাবে ব্যবহৃত হত। 3. জিপিও – ১৮৬৮ সালে পুরনো ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গের একাংশে এই ডাকঘরটি স্থাপিত হয়। বর্তমানে এটি রাজ্যের প্রধান ডাকঘর হিসাবে কাজ করে। |
আরও পড়ুনঃ কলকাতার ৩০টি ভ্রমণ গন্তব্য সম্পর্কে জানুন
6. বাবু ঘাট
বাবু ঘাট হল গঙ্গা নদীর পূর্ব তীরে ব্রিটিশ যুগে নির্মিত ঘাটগুলির মধ্যে একটি। বাবুঘাট বি বা দি বাগ অঞ্চলে স্ট্র্যান্ড রোডে অবস্থিত। ঐতিহাসিক কারনে এই ঘাট বেশ গুরুত্বপুর্ন । কলকাতার জানবাজারের জমিদার রাণী রাসমনির স্বামী বাবু রাজ চন্দ্র দাসের নামানুসারে ঘাটটির নামকরণ করা হয়। ১৮৩০ খৃস্টাব্দে রানী রাসমনি তার প্রয়াত স্বামীর স্মরণে নির্মাণ করেছিলেন। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে ডরিক-গ্রিক স্থাপত্য অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল এমন সময়ে নির্মিত, এই ঘাটটিও একই শৈলীতে নির্মিত হয়েছিল।
বাবু ঘাট আজ একটি জনাকীর্ণ স্থান, কারণ এটি যাত্রী ও বিক্রেতাদের ফেরি করার জন্য একটি জেটি হিসাবে ব্যবহার করা হয় যারা হাওড়া স্টেশনে পৌঁছানোর জন্য হুগলি নদী পার হয়। সন্ধ্যায় প্রচুর পর্যটকদের পাশাপাশি স্থানীয় লোকজনের কাছেও এই জায়গা সমান আকর্ষণীয়। নদীর ধারে হাঁটা সাথে দূর থেকে লঞ্চের বা অপর পাড়ের আলোর দিকে তাকিয়ে থাকা এক দারুন অনুভব। বিকালে বা সন্ধ্যার দিকে আপনার বন্ধুদের সাথে যান, পারলে একটা নৌকা নিয়ে পরিষ্কার খোলা আকাশের নীচে জলে থাকার মজায় লিপ্ত হন। বলতে পারি, সুর্যাস্তের বা গঙ্গাবক্ষে সন্ধ্যাবেলার ফটোগ্রাফারদের লোভনিয় স্পট। বাবু ঘাট আজ একটি জনাকীর্ণ স্থান, কারণ এটি যাত্রী ও বিক্রেতাদের ফেরি করার জন্য একটি জেটি হিসাবে ব্যবহার করা হয় যারা হাওড়া স্টেশনে পৌঁছানোর জন্য হুগলি নদী পার হয়।
কাছের চক্ররেল ষ্টেশন | ইডেন গার্ডেন |
নিকটে আর কি দেখার | 1. কলকাতা হাই কোর্ট ভারতের প্রাচীনতম হাইকোর্ট। ১৮৬২ সালের ১ জুলাই কলকাতা হাইকোর্ট স্থাপিত হয়। 2. রাজভবন – এটি পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালের সরকারি বাসভবন। প্রাসাদোপম বাড়িটি পূর্বে ছিল ভারতের ভাইসরয়ের সরকারি বাসভবন। তখন একে বাংলায় লাটভবন বলা হত । 3. নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম – ইডেন গার্ডেনস-এর ধারেই অবস্থিত। 4. ইডেন গার্ডেন – ইডেন গার্ডেন স্টেডিয়াম ও সাথে ইডেন গার্ডেন পার্কও বটে। |
7. আর্মেনিয়ান ঘাট
গঙ্গা নদীর পূর্বতীরে হাওড়া ব্রিজের দক্ষিনে মল্লিক ঘাটের গা ঘেষেই এই আর্মেনিয়ান ঘাট। আর্মেনিয়ান বংশোদ্ভূত ব্যবসায়ী মানভেল হাজার মালিয়ান আর্মেনিয়ান ঘাটটি নির্মাণ করেন ১৭৩৪ সালে। ঘাটটি নির্মিত হয়েছিল প্রধানত জাহাজের ডকিংয়ের সুবিধার্থে এবং পন্য পরিবহনের নিরাপদ স্টোরেজ ব্যবস্থা করার জন্য। ঘাটের ঢালাই লোহার কাঠামোতে সুন্দর মার্জিত নকশা সবার দৃষ্টি আকর্ষন করে।
জায়গাটি দেখার মতো এবং এখান থেকে আপনি হাওড়া সেতুর ছবি তোলার একটি নিখুঁত কোণ পেতে পারেন। পুরো এলাকাটি ফটোগ্রাফির জন্য আদর্শ। অঞ্চলটি ঘুরে দেখুন এবং ঘাটে কিছু দারুন সময় কাটান। সেখানকার স্থানীয়দের কাছ থেকে এটি সম্পর্কে খবরাখবর নিন। এখনথেকে হাওড়ার ব্রিজ এবং গঙ্গার ওপারের দৃশ্য একসাথে এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আনন্দ নিন। চাইলে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। কমলা-লাল রঙে রাঙান আকাশের নিচে আর্মেনিয়ান ঘাট থেকে নৌকা যাত্রা করতে পারেন।
কাছের চক্ররেল ষ্টেশন | প্রিন্সেপঘাট |
নিকটে আর কি দেখার | 1. ফোর্ট উইলিয়াম – দেখুন সঙ্গে বিশাল গড়ের মাঠ। 2. ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল – কলকাতার আইকনিক স্থাপত্য। 3. ইলিয়ট পার্ক – এসপ্ল্যানেড এলাকায় সুন্দর একান্তে সময় কাটাবার জায়গা। 4. নন্দন প্রেক্ষালয়। |
8. প্রিন্সেপ ঘাট
প্রিন্সেপ ঘাট ১৮৪১ সালে নির্মিত এবং বর্তমানে কলকাতার অন্যতম একটি পর্যটন স্পট। এটি ব্রিটিশ আমলে নির্মিত হয়েছিল এবং জেমস প্রিন্সেপের নামে নামকরণ করা হয়েছিল। এই ঘাটটি শহরের প্রাচীন বিনোদনমূলক স্থান তবে বরতমানে তরুনদের আড্ডা দেওয়ার জন্য একটি হটস্পট বলা যায়। ঘাটটি জেমস প্রিন্সেপের স্মৃতিতে নিবেদিত মার্জিত গ্রীক এবং গথিক মোটিফ সহ একটি প্যালাডিয়ান বারান্দা এটিকে অন্যন্য করেছে।
শান্ত, বাতাসের পরিবেশ নদীর ধারে একটি শান্তিপূর্ণ সময়ের জন্য একটি ভাল পরিবেশ সৃষ্টি করে। বিদ্যাসাগর সেতুর পিছনে সূর্যাস্ত উপভোগ করার জন্যও এটি সঠিক জায়গা। আপনি চাইলে কাছাকাছি নৌকা ভ্রমণ করতে পারেন। এই রাইডগুলি হুগলি নদীর তীরে পাওয়া যায়। ফটোগ্রাফি যারা ভালবাসেন এবং ভোজনরসিকদের জন্যও ঘাটটি দারুন উপযোগি।
কাছের চক্ররেল ষ্টেশন | প্রিন্সেপঘাট |
নিকটে আর কি দেখার | 1. বিদ্যাসাগর সেতু – আইকনিক প্রিন্সেপঘাটের ছবি যাকে ছাড়া অসম্পুর্ন থেকে যায়। 2. রেসকোর্স – এ শহরের গর্ব একমাত্র ঘোড়দৌড়ের মাঠ। 3. চিড়িয়াখানা – ভারতের প্রাচিনতম চিড়িয়াখানা। |
প্রতীক দত্তগুপ্ত, থাকেন কলকাতায়, কাজ বাদে বেড়ানোই যার প্রথম ভালবাসা। এই কয়েক বছর হল বেড়ানোর সাথে কলমও ধরেছেন । তিনি শুধুমাত্র যে জায়গাগুলি পরিদর্শন করেছেন সেগুলি সম্পর্কেই ব্লগ করেন না, তবে তিনি তার অনুগামীদের জন্য টিপস, কৌশল এবং নির্দেশিকাগুলি সম্পর্কেও পোস্ট করেন৷