হাওড়া জেলার সেরা ৭টি দর্শনীয় স্থান

হাওড়া জেলার সেরা ৭টি দর্শনীয় স্থান

হাওড়া হল কলকাতার ঠিক পাশেই গঙ্গার পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত কলকাতার জমজ শহর। পশ্চিমবঙ্গের সবথেকে ছোট জেলা যেমন কোলকাতা ঠিক তেমনি দ্বিতীয় সবথেকে ছোট হল এই হাওড়া জেলা। একসময় হাওড়া জেলার শিল্পায়নের ইতিহাস বেশ উজ্জ্বল ছিল তাই হাওড়া জেলাকে ভারতের ‘শেফিল্ড’ বলা হত। হাওড়া বললেই প্রথম যে ছবিটা চোখের সামনে ভেসে সেটি হল হাওড়া ব্রিজ। উনিশ শতকের সেতু প্রকৌশল ও প্রযুক্তির অন্যতম নিদর্শন, যা হাওড়া ব্রিজ নামে বহুল পরিচিত, যদিও এটির সরকারী নাম “রবীন্দ্রসেতু”।

হাওড়া জেলায় শুধু মাত্র হাওড়া ব্রিজ নয়, জেলা জুড়ে রয়েছে বিভিন্ন ঘোরার জায়গা। এই হাওড়া শহরেই রয়েছে “আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু বটানিক্যাল গার্ডেন”, “শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ” যার বর্তমান নাম “ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং সাইন্স এন্ড টেকনোলজি”। আমরা আজ এই জেলার সেরা ৭ টি এমন জায়গা নিয়ে আলচনা করব যেখানে আপনি হয়তো আগে জাননি বা গিয়ে থাকলে অনেক আনন্দ পেয়েছেন।

হাওড়া জেলার সেরা বেড়ানোর জায়গা কি কি?

আন্দুল রাজবাড়ি

আন্দুল রাজবাড়ি

হাওড়া জেলার আন্দুল রাজবাড়ি প্রায় দুশ বছরের এক প্রাচীন ঐতিহাসিক অট্টালিকা যা এক সময়ের বৈভব ও প্রাচুর্যের সাক্ষী আর আজ চতুর্দিকে জরাজির্ন, অসহায়তার স্পষ্ট ছাপ বহন করে চলেছে। সরস্বতী নদীর (বর্তমানে সরস্বতী খাল) ধারে যে রাজপ্রাসাদটি আন্দুল রাজবাড়ি নামে পরিচিত, সেটি রাজা রাজনারায়ন রায় বাহাদুর তৈরি শেষ করেন ১৮৩৪ সালে। প্রায় ৬০ফুট উঁচু এই রাজপ্রাসাদ বাংলার ইতিহাসে কিন্তু এক বিরল দৃষ্টান্ত। রাজবাড়ির সামনে রয়েছে প্রায় ৫০ ফুট উচ্চতার ডোরিক স্থাপ্যতের অনুকরনে গাঁথা হয় ১০টি প্রকান্ড স্থম্ভ, যা সারা বাংলায় শুধুমাত্র হাওড়া জেলার এই প্রাসাদটিতেই দেখতে পাওয়া যায়।

আজ সে রাজাও নেই, সেই জৌলুশও অস্তমিত। কালের নিয়মে অনেক কিছু বদলে গেলেও আন্দুল রাজবাড়ির পুজোর মাহাত্ম্য কমেনি আজও। কামান গর্জন থেমেছে বটে, কিন্তু এখনও নিয়ম করে ঢাকে কাঠি পড়ে বোধনের ১২ দিন আগে। পুরোনো নিয়ম মেনেই তৈরি করা হয় ডাকের সাজের সাবেকি একচালা প্রতিমা। পিছনের চালচিত্রতে আঁকা থাকে পুরাণের কাহিনি। দুর্গাপুজোর কদিন বিশেষ পুজো পান রাজবাড়ির গৃহদেবতা অন্নপূর্ণাও।

বর্তমানে বারোয়ারি পুজোর এই বাড়বাড়ন্ত সময়েও আন্দুলে আজও শেষ কথা বলে রাজার পুজো। আজও আন্দুল রাজবাড়ির ঠাকুর ভাসান না হওয়া পর্যন্ত মণ্ডপ থেকে নড়ে না অন্য কোনও প্রতিমা।

একটা সময় ছিল, মানে পলাশির যুদ্ধের বেশ কয়েকবছর পরের কথা। যখন আলোর মালায় সেজে উঠেছিল ষাট ফুট উঁচু রাজপ্রাসাদ। সামনের দশ দশটা থামের গায়ে সাজানো হয়েছে মঙ্গল কলশগুলি। তার পাশেই সারি দিয়ে বসানো হয়েছে কামান। বিশাল রাজবাড়ির চারিদিক ঘিরে রেখেছে পাইক, বরকন্দাজ আর গোরা পল্টনেরা। সে একটা সাজো সাজো রব চারদিকে। কলকাতা থেকে ফিটন গাড়িতে চড়ে আসছেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মেজর জেনারেল লর্ড ক্লাইভ স্বয়ং। দেবীদুর্গাকে উৎসর্গ করবেন বলে তিনি সঙ্গে আনছেন ১০ হাজার টাকার মিস্টান্ন, ১০৮ টি রক্তপদ্ম। ঠিক এভাবেই আন্দুলের রাজবাড়ির সাবেক দুর্গাপুজোর ইতিহাসে ঢুকে গেছে পরাধীন ভারতের গৌরব ও অগৌরবের এক মিশ্রিত ইতিহাস।

কিন্তু বর্তমানে রাজবাড়ির বাইরের অবস্থা খুবই শোচনীয়। হেরিটেজ বিল্ডিং হিসাবে মর্যাদা পেলেও বাড়ীর রক্ষনাবেক্ষনের তেমন কোন ভুমিকা নেই। আর এখন সেই রাজাও নেই আর তাদের রাজপাটও নেই। কিন্তু এখনও বাংলার ইতিহাস আঁকড়ে ধরে আছে হাওড়া জেলার বিখ্যাত এই আন্দুল রাজবাড়িকে। আর রয়েছে রাজবাড়ির বিখ্যাত দুর্গাপুজো।

কিভাবে যাবেন আন্দুল রাজবাড়ি

  • বাসে – রবীন্দ্রসদন থেকে কিংবা হাওড়া থেকে হাওড়া জেলার আন্দুলগামী যেকোন বাসে উঠে নামতে হবে আন্দুল বাজার। ওখান থেকে যেকোন রিক্সা নিয়েনিন বা কয়েক মিনিট হাঁটলেই রাজমঠের সামনেই আন্দুল রাজবাড়ি।
  • ট্রেনে – হাওড়া স্টেশন থেকে মেদিনীপুর বা পাঁশকুড়া লোকাল ধরুন আর নামুল আন্দুল স্টেশন। সেখান থেকে টোটো বা রিক্সা ধরে আন্দুল রাজবাড়ি।

বেলুড় মঠ

বেলুড় মঠ

বেলুড় মঠ হাওড়া জেলার একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় আন্তর্জাতিক তীর্থস্থান যা সারা বিশ্বের মানুষের শ্রদ্ধা ও আস্থা অর্জন করেছে । পর্যটকরা এখানে আসেন শান্তি ও সুখের সন্ধান পেতে। শ্রীরামকৃষ্ণ, স্বামী বিবেকানন্দ ও সারদামায়ের স্মৃতি বিজড়িত এই মঠ একেবারে গঙ্গার ধারে অবস্থিত। একসময় এখানে এসে কিছুদিন ছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। মঠের মুল মন্দিরটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যা রামকৃষ্ণ আন্দোলনের মুল ভাবনার প্রতিফলন স্পস্টভাবে প্রতিফলিত। ভক্তকুলের দেখার জন্য একটি মিউজিয়ামও আছে। গোটা শীতকাল জুড়ে এখানে বিভিন্ন মরসুমি ফুলের চাষ হয়। মঠের সবথেকে বড় পাওয়ার জায়গা হল প্রতিদিন মঠের সন্ধ্যারতি যা আপনার মনকে প্রশান্তি দেবেই।

বেলুড় মঠের একদম কাছেই আরও একটি সুন্দর মন্দির কমপ্লেক্স আছে দেখতে চাইলে ক্লিক করুন।

কিভাবে যাবেন বেলুড় মঠ

হাওড়া স্টেশন থেকে বেলুড় মঠে যাওয়ার জন্য বাস পাওয়া যাবে। গাড়ি করে জিটি রোড ধরেও পৌঁছে যাওয়া যায় এই মঠে এবং আরও একটি পথ হল জলপথে – দক্ষিণেশ্বর থেকে সরাসরি লঞ্চ সার্ভিস ছাড়াও হাওড়া থেকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পর্যটন দপ্তরের লঞ্চ পাওয়া যায়।

ঝালুয়ারবেড়

হাওড়া জেলার - ঝালুয়ারবেড়
Picture credit: dailynewsreel.in

ঝালুয়ারবেড় জায়গার নাম বললে হয়তো এখনও অনেকে চিনতে পারবেন না কিন্তু জানতে চান ‘মিনি ডুয়ার্স’ কোথায়, হয়তো অনেকেই বলে দেবেন বা অনেকে বলবেন শুনেছি হাওড়া জেলার কোথাও কিন্তু এখনও যাওয়া হয়ে ওঠেনি। সাধারণভাবে ডুয়ার্সের নাম বললেই আমাদের মাথায় এসে ভিড় করে উত্তরবঙ্গের জঙ্গলে ঘেরা এক রহস্যময় স্থানের কথা যেখানে মাঝে মাঝেই ঘন কুয়াশা চারিদিক ঢেকে ফেলে।

হাওড়া শহরের কাছেই রয়েছে সেই মিনি ডুয়ার্স। যার নাম ঝালুয়ারবেড়। স্টেশনে নামলেই বুঝতে পারবেন কেন তাকে বলা হয় মিনি ডুয়ার্স। আপনার জন্যে অপেক্ষা করছে একটাই প্ল্যাটফর্ম। আর ট্রেন থেকে নামলেই ছবি তুলতে ইচ্ছে করবে। স্টেশনের পরিবেশটা এতটাই সুন্দর যে দেখলেই মন ভাল হয়ে যাবে। দীর্ঘক্ষণ সেখানে বসে থাকতে ইচ্ছে করবে। চারপাশে কেমন একটা জঙ্গলের গন্ধ। শীতের সকালে ঘন কুয়াশাময় ভেজাভেজা গন্ধে মন ভরে উঠবে। মনে মনে হইচই আশা করবেন না, হতাশ হবেন,মনে হতেপারে এক ভুতুড়ে স্টেশন। আর এখানেই মিল আসল ডুয়ার্সের সাথে, একটা মোহময় গাছমছমে ভাব, স্টেশনে ভিড় নেই বললেই চলে।

ঝালুয়ারবেড় স্টেশনটি ঘিরেও একটি ইতিহাস রয়েছে। স্টেশনটি প্রথম তৈরি হয়েছিল ১৮৯৭ সালে। অর্থাৎ ব্রিটিশ আমলে। ১৯৭১ সালে সেটি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। পরবর্তি কালে ২০০৪ সালে সেটি আবার তৈরি করা হয়েছিল। ঝালুয়ারবেড় স্টেশনের সৌন্দর্যই অসাধারণ। সারাদিন মনে হবে স্টেশনেই কাটিয়ে দিই। এতটাই সুন্দর এই স্টেশন। তবে দেখার জায়গাও রয়েছে এই ঝালুয়ারবেড়ে। স্টেশনের পাশেই রয়েছে একটা শিব মন্দির। গ্রামের দিকে এগোতে শুরু করলেই বেশ কিছু মন্দির চোখে পড়বে। কাছেই রয়েছে রামকৃষ্ণ বাটি। শিবকালী মন্দির। যার চূড়া দক্ষিণেশ্বরের মন্দিরের আদলে

কিভাবে যাবেন ঝালুয়ারবেড়

হাওড়া স্টেশন থেকে ১ ঘন্টার মধ্যেই পৌঁছে যাওয়া যায়। হাওড়া থেকে আমতা লোকাল ধরলেই পৌঁছে যাওয়া যায় ঝালুয়াবেড়ে।

হাওড়ার বিখ্যাত সাঁতরাগাছি ঝিল

সাঁতরাগাছি ঝিল

হাওড়া জেলার বিখ্যাত সাঁতরাগাছি ঝিলে জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিযায়ী পাখিদের মেলা বসে। সাঁতরাগাছি রেল স্টেশনের কাছে যে বিশাল ঝিল বা জলাশয়টি রয়েছে তাতে প্রতি বছর শীতের শুরুতেই, সাধারণত অক্টোবর মাসের শেষ দিক থেকে হিমালয় পেরিয়ে অথবা হিমালয় পাদদেশ অঞ্চল থেকে পরিযায়ী পাখিরা খাবারের সন্ধানে এখানে চলে আসে। তাছাড়া চিন ও রাশিয়ার মতো দেশে নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে অতিরিক্ত ঠান্ডা পড়ার জন্যই পরিযায়ী পাখিরা সেখান থেকে সাঁতরাগাছি, নলবনের মতো ঝিলে চলে আসে। পাখিরা সাময়িক এখানে এসে বাসা বাঁধে ডিম পাড়ে তারপর শীতের শেষ দিকে আবার তাদের নবজাত পাখি সহ হাজার হাজার কিলোমিটার উড়ে চলে যায়। বিগত প্রায় এক দশক বা তার বেশি সময় ধরে আলিপুর চিড়িয়াখানা এড়িয়ে অনেক পরিযায়ী পাখিই আসে শুধুমাত্র এই ঝিলে।

হাওড়ার বিখ্যাত এই ঝিলে কচুরিপানার পরিমাণ নির্দিষ্ট থাকার ফলে পাখিরা অনেক স্বচ্ছন্দে বসবাস করতে পারছে। চারদিকের শব্দদূষণ এবং উপদ্রব থেকে কচুরিপানায় সহজেই লুকিয়ে থাকা যায়। তাই আগে থেকে কচুরিপানার বংশবৃদ্ধি পরিযায়ী পাখিদের সহায়ক হয়েছে। প্রতিবছর, পরিযায়ী পাখির আগমনের খবর পেতেই প্রতিদিন ঝিলে ভিড় করেন পাখিপ্রেমীরা। বাইনোকুলার দিয়ে ভিনদেশী অতিথিদের ভালকরে দেখার সাথে সাথে মনের মত ছবিও তোলেন তারা। এখানকার প্রসাশন, পরিবেশবিদ্গন ছাড়াও উৎসাহী মানুষজনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় পরিযায়ী পাখির সংখ্যা বৃদ্ধি বেশ বৃদ্ধি পাওয়ায় খুশি এলাকাবাসীও।

কিভাবে যাবেন সাঁতরাগাছি

  • ট্রেনে – হাওড়া থেকে পাঁশকুড়া লোকাল ধরে সাঁতরাগাছি জংশন নামুন। তারপর প্রায় মিনিট সাতেক হাঁটুন, ব্যাস সাঁতরাগাছি ঝিলে পৌঁছে যান।
  • সড়ক পথে – হাওড়া ব্রিজ পার হয়ে বঙ্কিম সেতু অনুসরণ করুন। পঞ্চাননতলা – বাকসারা হয়ে সোজা সাঁতরাগাছি চলে আসুন। আপনি বিদ্যাসাগর সেতু হয়ে আরও তাড়াতাড়ি সাঁতরাগাছি পৌছুতে পারবেন।

গাদিয়াড়া

গাদিয়াড়া

গাদিয়াড়া হল দামোদর আর রূপনারায়ণ নদের সঙ্গম স্থলের তীরে হাওড়ার অন্যতম জনপ্রিয় পিকনিক স্পট। একটা দারুন সপ্তাহান্তের বেড়াবার আদর্শ জায়গা। প্রকৃতি যেন নিজের হাতে সময় নিয়ে তৈরি করেছেন এই সুন্দর গ্রামটিকে। যদিও ট্রেনে বা গাড়িতে করে সকালে গিয়ে রাতে ফিরে আসা যায় গাদিয়ারা থেকে। তবে গাদিয়ারার সবথেকে সুন্দর ব্যাপার হল এখানকার সুর্যোয়ের দৃশ্য। তাই ভোর বেলাটা সেখানে না কাটাতে পারলে ভ্রমণ সত্যই অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। একদিন থাকলে রূপনারায়ণের বুকে সূর্যোদয়ের দৃশ্য আপনাকে মুগ্ধ করবে। সোনালি আভায় যখন দুই নদীর জল রাঙা হয়ে যায়, সেই দৃশ্য মনে রাখার মতোই। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ছাড়াও এখানে একটি পুরানো জীর্ণ দুর্গ রয়েছে, ফোর্ট মর্নিংটন যা একটি বিধ্বংসী বন্যায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এটি নির্মাণ করেছিলেন লর্ড ক্লাইভ। একটি ছোট লাইট হাউস আজও দাঁড়িয়ে আছে গাদিয়াড়ায়।

সারাদিন পায়ে হেঁটে গ্রামে ঘুরুন, নদীর তীরে হেঁটে বেড়ানো, নদীতে নৌকাবিহার ইত্যাদিতে কখন যে দুপুর গড়িয়ে বিকাল বা সন্ধ্যা নেমে আসবে আপনি বুঝতে পারবেন না। আর হ্যাঁ সূর্যাস্ত দেখতে কিন্তু একদম মিস করবেন না। থাকতে চাইলে নানা বাজেটের হোটেল এবং রিসর্ট পেয়ে যাবেন এখানেই।

কিভাবে যাবেন গাদিয়াড়া

  • বাসে – কলকাতা বা হাওড়া থেকে এখানে আসতে, এই ঘন্টা দুয়েক লাগে। কলকাতা থেকে আসার সময় ধর্মতলা থেকে নূরপুর পর্যন্ত অনেক বাস পাবেন। বাস থেকে নেমেই খেয়া পার করে সোজা পৌঁছে যান গাদিয়ারা।
  • ট্রেনে – ট্রেনে আসতে চাইলে হাওড়া স্টেশন থেকে লোকাল ধরে নামুন বাগনান স্টেশন তারপর ম্যাজিক গাড়ি বা টোটোতে করে সোজা চলে আসুন এই গাদিয়ারা।

বোটানিক্যাল গার্ডেন

বোটানিকাল গার্ডেন - বট গাছ

Picture credit: dailynewsreel.in

পরিক্ষার ছুটিতে বা শীত হোক বা সপ্তাহান্তে বাঙ্গালির প্রিয় একটি গন্তব্য হল আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু ভারতীয় বোটানিক্যাল গার্ডেন যাকে অনেকেই ‘শিবপুর বোটানিক্যাল গার্ডেন’ নামেই জানেন। পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে অনেক মানুষ এখানে দেখতে সারা বছর। কেউ আসেন শুধুই বেড়ানোর জন্য, কেউ বা জানা-অজানা গাছপালা চাক্ষুষ করতে। তবে যারা উদ্ভিদবিদ্যা নিয়ে উচ্চশিক্ষায় ব্রতী তাঁদের কাছে এটি অত্যন্ত প্রিয় জায়গা।

এখানে নাকি কম-বেশি ১২০০০ প্রজাতির গাছগাছালি আছে। তবে এই উদ্যানের প্রধান আকর্ষণ ২৫০ বছরেরও বেশি পুরোনো বিশাল একটি মহাবটবৃক্ষ। যা ইতিহাস বহন করে চলেছে। গাছটির পরিধি ৩৩০ মিটার। বর্তমানে এই সুবিশাল বটগাছটি প্রায় ৫ একর জায়গা জুড়ে সাম্রাজ্য বিস্তার করেছে। এখনও সে যথেষ্ট প্রাণবন্ত।

বলা হয়, এ উদ্যান প্রতিষ্ঠার কৃতিত্বের অধিকারী ফোর্ট উইলিয়মের সামরিক বিভাগের তৎকালিন সচিব, শৌখিন উদ্ভিদবিদ কর্নেল রবার্ট কিড । ১৭৮৬ সালের ১ জুন তারিখে স্বাক্ষরিত এক পত্রে কিড মূলত অর্থনৈতিক লক্ষ্যে একটি বোটানিক্যাল গার্ডেন প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেন। তবে এই কিড সাহেবের বাগানের নাম পরিবর্তিত হয়েছে বার বার। ১৭৮৭ সালে জন্মকালে নাম দেওয়া হয়েছিল ‘ইন্ডিয়ান বোটানিক গার্ডেন’। মহাবিদ্রোহের পর, ব্রিটিশ রাজের আমলে নাম হয় ‘রয়্যাল বোটানিক গার্ডেন’। স্থানীয়দের কাছে পরিচিত ছিল আটপৌরে ‘কোম্পানির বাগান’ নামে। স্বাধীনতা লাভের ছয় দশক পরে, ২০০৯ সালে বাগানের নতুন নামকরণ হয় ‘আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু ইন্ডিয়ান বোটানিক গার্ডেন’।

কিভাবে যাবেন বোটানিকাল গার্ডেন

হাওড়া স্টেশনের পাশেই বাসস্টান্ড সেখান থেকে বাস বা মিনিবাস যায় বোট্যানিকাল গার্ডেন। প্রাইভেট গাড়িতে ৩০ মিনিটেই পৌঁছে যাবেন। বিদ্যাসাগর সেতু হয়ে গেলে আরও তাড়াতাড়ি পৌঁছে যাবেন।

দেউলটি

দেউলটি - শরৎ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বাসস্থান

দেউলটি হল সপ্তাহান্তে দু-এক দিনের ছুটি পেলেই অনায়াশে ছুট্টে আশা যায় আপনার শহুরে কোলাহল জর্জরিত মনকে শান্ত ও পুনররুজ্জিবিত করার আদর্শ স্থান। কোলকাতা থেকে মাত্র ৬০ কিমি দূরে হাওড়া জেলায় রুপনারায়ানের তীরে ছবির মত সুন্দর শান্ত একটি গ্রাম। এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশের মনোরম দৃশ্য উপভোগ সত্যিই অবাক হওয়ার মত। সামনে আপাত শান্ত বহমান রূপনারায়ান সাথে নানা রকমের পাখির সমবেত কিচিরমিচির আপনাকে এক অনাবিল আনন্দে ভরিয়ে তুলবে। তাছাড়াও এই গ্রামেই রয়েছে টেরাকোটার কাজ সমৃদ্ধ আটচালা রাধা ও মদনগোপাল মন্দির। এই মন্দিরটি ১৬৫১ সালে নির্মান করান মঙ্গলহাট পরগনার জমিদার মুকুন্দপ্রসাদ রায়চৌধুরী।

এখানেই, দেউলটি স্টেশন থেকে প্রায় ৩ কিমি দূরে অবস্থিত শরৎ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বাসস্থান। কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বেশ কয়েক বছর এখানে কাটিয়েছিলেন। এখানে থেকেই তিনি পরিণীতা, দেবদাসের মত কালজয়ী উপন্যাস লিখেছিলেন। লেখক তাঁর নিজের ঘরে বসে জানলা দিয়েই দেখতে পেতেন নদীর বয়ে চলা, নৌকার আসা যাওয়া। এখন নদী অনেকটাই পিছিয়ে গেছে। দেউলটি বেড়াতে এলে শরৎচন্দ্রের বাড়ি যেকোনও বাঙালি পর্যটকের কাছেই বাড়তি আকর্ষণ।

কিভাবে যাবেন দেউলটি

হাওড়া ষ্টেশন থেকে দেউলটি ষ্টেশন প্রায় ৫০ কিলোমিটার। লোকাল ট্রেনে সময় লাগে প্রায় ১ ঘন্টা ৩০ মিনিট ৷ হাওড়া থেকে যে কোনও মেদিনীপুরগামী ট্রেন ধরে দেউলটি স্টেশনে নামতে হবে। কম ভিড়ের লোকাল ট্রেনও আছে, যেমন – মেচেদা লোকাল, পাঁশকুড়া লোকাল বা খড়গপুর লোকাল।

রাত্রিবাস করবেন কোথায়?

দেউলটিতে বেশ কয়েকটি হোটেল, রিসর্ট বা আবাসনের সুবিধা রয়েছে, যেখানে খাবারের ব্যবস্থাও রয়েছে ।

হাওড়া জেলা ভ্রমন সংক্রান্ত অতিরিক্ত কিছু তথ্য

হাওড়া জেলার বিখ্যাত ব্যক্তি

লেখক বা কবি – ভরতচন্দ্র রায়, মনিশঙ্কর মুখার্জি, পুর্নেন্দু পত্রী , শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (যদিও তাঁর জন্ম হুগলী জেলায় কিন্তু তাঁর সৃষ্টিময় জীবন কেটেছে হাওড়া জেলায়)। শিক্ষাবিদ সুনীতি কুমার চ্যাট্টার্জি, মুহম্মদ শহিদুল্লা, মহেশ চন্দ্র ন্যায়রত্ন ভট্টাচার্জ্য । তৎকালীন শিল্পপতি – আলামোহন দাস । পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত, আপামর বাঙালির প্রিয় কার্টুনিস্ট শ্রীনারায়ান দেবনাথ এই জেলাতেই জন্মগ্রহন করেন।

হাওড়ার বিখ্যাত ঝিল কোনটি

হাওড়া জেলার সাঁতরাগাছি রেল স্টেশনের কাছেই যে ঝিল বা বড় জলাশয় তা সত্যই বিখ্যাত কারন প্রতি বছর শীতকালে মানে ডিসেম্বর এবং জানুয়ারি মাসে অসংখ্য পরিযায়ী পাখি এই ঝিল বা হ্রদে চিন এবং রাশিয়ার বিস্তির্ন বরফ ঢাকা অঞ্চল থেকে উড়ে এখানে আসে, বাসা বাঁধে, ডিম পাড়ে এবং আবার শীতের শেষে তাদের নতুন প্রজন্মকে সাথে নিয়ে ঘরে ফিরে জয়ায়।

হাওড়া জেলায় কয়টি ব্লক আছে

হাওড়া জেলায় মোট ১৪টি ব্লক আছে এবং সেগুলি হল –
বালি-জগাছা, ডোমজুড়, পাঁচলা, সাঁকরাইল, জৎতবল্লভপুর, উলুবেড়িয়া-১, উলুবেড়িয়া-২, আমতা-১, আমতা-২, বাগনান-১, বাগনান-২, শ্যামপুর-১, শ্যামপুর-২ ও উদয়নারায়ানপুর

পৃথিবীর সবথেকে বড় বোটানিকাল গার্ডেন কোথায়

লন্ডনে অবস্থিত ‘কিউ পার্ক রয়াল বোটানিকাল গার্ডেন’ পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় উদ্ভিদ উদ্যান। ১৮৪০ সালে প্রতিষ্ঠিত ৩২০ একর জায়গার নিয়ে এই বিশাল বটানিকাল গার্ডেন। এখানে প্রায় ৩০,০০০ প্রজাতির বিভিন্ন গাছপালা সংরক্ষিত রয়েছে।

Leave a Comment