দোল বা হোলিতে বেড়ানোর জায়গা পুরুলিয়া প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এক সঙ্গম। পুরুলিয়া সবচেয়ে প্রণোচ্ছল হয়ে ওঠে এই বসন্ত কালে যখন দোল ও বসন্ত উত্সব হয়। আর এই জেলা সবচেয়ে জীবন্ত বা প্রণোচ্ছল হয়ে ওঠে এই বসন্ত কালে। বসন্তে পুরুলিয়ায় পলাশের সৌন্দর্য এক আলাদা মাত্রা এনে দেয়। তাই দোল-হোলিতে এক অন্যরকম বসন্ত উৎসবে মাততে গত কয়েক বছরে বঙ্গবাসী চেনা শান্তিনিকেতনের পথ বোলপুর-ভুবনডাঙা-খোয়াইকে সরিয়ে রেখে আপাতত বসন্তোৎসবের নয়া নেশায় বাঙালির ডেস্টিনেশন লাল পলাশে মোড়া অযোধ্যা পাহাড়। শুধুমাত্র পলাশকে কেন্দ্র করেই আস্ত একটা উৎসব হয় রাঢ় বাংলার এই পুরুলিয়াতে।
এই বছরে হোলিতে বেড়ানোর জায়গা খুজছেন?
পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ের চারিদিক এখন পলাশের রঙে রঙিন হয়ে ওঠেছে। পলাশ ফুলের সৌন্দর্যের টানে ছুটে যান বহু পর্যটক। মোটামুটি শীতের শেষ দিক থেকে পলাশ উত্সব দেখতে ছুটে আসেন মানুষজন। দোল এবং হোলি এই দু’দিনই অযোধ্যা পাহাড়ে আয়োজিত হয় পলাশ উৎসব। হোলিতে বেড়ানোর জায়গা এই পুরুলিয়ার লোকসংস্কৃতি পরিপূর্ণ মাত্রা পায় এই সমগ্র উৎসবকে ঘিরে। দুরদূরান্ত থেকে বহু মানুষ ছুটে আসেন এই উৎসবে মেতে উঠতে। কারণ পুরুলিয়ার পলাশ মানুষের মনে আগুন লাগায়। এক অপরূপ সাজে সেজে ওঠে পুরুলিয়ার অযোধ্যা সুন্দরী-সহ নানা পর্যটন কেন্দ্র। গরমের দাপট তুচ্ছ করে পর্যটকরা মেতেছে বসন্ত উৎসবে পলাশের সৌন্দর্যে।
হোলিতে কী দেখবেন পুরুলিয়ায়?
বর্তমানে পুরুলিয়া সাহেব বাঁধ, জয়চণ্ডী পাহাড়, বড়ন্তী বা অযোধ্যা পাহাড় প্রায় সব জায়গাতেই হোটেলিয়ার্স সংগঠনগুলির উদ্যোগে দোল-হোলির এই কয়েকদিন বিশেষভাবে এই উত্সবের আয়োজন করা হচ্ছে। পরিচ্ছন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিশেষ খাবারের মেনু ইত্যাদির আয়োজন করেছেন। তাই যাবার আগে অবশ্যই বুকিং কনফার্ম করে তবেই যাওয়া ভাল।
- হোলিকা দহন : হোলির আগের রাতে “হোলিকা দহন” অনুষ্ঠান হয়। এই সময় আগুন জ্বালিয়ে হোলির কাহিনীর প্রতীক হিসেবে খারাপের উপর ভালোর বিজয় উদযাপন করা হয়। পুরুলিয়ার মথুরাপুরে হোলির এক অন্য মাত্রা দেখা যায়। এখানে বেশ জোরদার হোলিক দহনের রেওয়াজ রয়েছে।
- বসন্ত উৎসব : পুরুলিয়ায় হোলির আগের তিনদিন জুড়ে চলে বসন্ত উৎসব। চলে লোকগান, ঝুমুর নাচ, ঐতিহ্যবাহী শিল্পকলা – এই উৎসবে বাংলার মনের স্বরূপ ফুটে ওঠে। পুরুলিয়ার অযোধ্যা হাট এলাকা হোলির সময় যেন এক রঙের সমুদ্রে পরিণত হয়। এখানে নৃত্য, গান, ও আনন্দধারায় মেতে উঠুন স্থানীয়দের সাথে।
পুরুলিয়া যাবেন কীভাবে?
কলকাতা থেকে হোলিতে বেড়ানোর জায়গা পুরুলিয়া যেতে পারেন গাড়িতে , ট্রেনে বা বাসে। তিনরকম যানবাহনে আলাদা আলাদা খরচ।
- ট্রেনে : হাওড়া থেকে বেশ কিছু ট্রেন পুরুলিয়ার উদ্দেশে ছাড়ে। এর মধ্যে কিছু ট্রেন রোজই পাবেন। চক্রধরপুর এক্সপ্রেস, রাঁচি সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস, রাঁচি বন্দেভারত এক্সপ্রেস, পুরুলিয়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসে যেতে পারেন। এছাড়াও, শালিমার ও সাঁতরাগাছি থেকে ট্রেন যেমন গোরক্ষপুর উইকলি এক্সপ্রেস, রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস, আনন্দবিহার ও পোরবন্দর এক্সপ্রেস পেয়ে যাবেন।
- বাসে : বাসে করে পুরুলিয়া যাওয়ার জন্য ধর্মতলা থেকে নিয়মিত পুরুলিয়ার বাস রয়েছে। এছাড়া, অন্যান্য জেলা থেকেও পুরুলিয়ার বাস পেয়ে যাবেন।
- গাড়িতে : কলকাতা থেকে পুরুলিয়া গাড়িতেও যেতে পারেন। এর জন্য দিল্লি রোড ধরে দুর্গাপুর, আসানসোল হয়ে যেতে হবে পুরুলিয়া। মোট পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ ঘন্টার জার্নি করতে হবে। আরামবাগ হয়েও যাওয়া যায়।
আরও পড়ুন: কলকাতার ৩০ টি বেড়ানোর জায়গার সমস্ত তথ্য
পুরুলিয়ায় কোথায় থাকবেন?
- জয়চণ্ডী পাহাড় ট্যুরিস্ট লজ: এটি পুরুলিয়ার জয়চণ্ডী পাহাড় এলাকায় অবস্থিত একটি সরকারি লজ। এটি একটি পাহাড়ে অবস্থিত এবং আশেপাশের অঞ্চলগুলির একটি সুন্দর দৃশ্য দেখায়। লজের ঘরগুলি ভালই। সরকারী লজে যেমন মৌলিক সুবিধাগুলি অবশ্যই থাকে।
- পুরুলিয়া ট্যুরিস্ট লজ: এটা পুরুলিয়া শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত একটা সরকারি লজ। এটা বেশ সুলভ মূল্যে পাওয়া যায়। ঘরগুলিও বেশ বড় আর মৌলিক সুবিধাগুলি অবশ্যই আছে।
- বাঘমুন্ডি ট্যুরিস্ট লজ: এটা পুরুলিয়া বাঘমুন্ডি এলাকায় অবস্থিত আরেকটি সরকারি লজ। এটি সুন্দর ল্যান্ডস্কেপ করা বাগান ঘেরা, ঘরগুলিও বড় আর মৌলিক সুবিধাগুলি আছে।
- গার্ডেন রিট্রিট: এটি পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড় এলাকায় অবস্থিত একটি বিলাসবহুল রিসর্ট। এটি প্রশস্ত কক্ষ এবং আধুনিক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে এবং সুন্দর ল্যান্ডস্কেপ দ্বারা বেষ্টিত।
- মৌচাক ট্যুরিস্ট লজ: পুরুলিয়া শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এটি একটি বাজেট হোটেল। এটি আরামদায়ক কক্ষ এবং মৌলিক সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে এবং এটি বাজেট ভ্রমণকারীদের মধ্যে একটি জনপ্রিয় পছন্দ।
- বিহারিনাথ ট্যুরিস্ট কমপ্লেক্স: এটি পুরুলিয়ার বিহারিনাথ এলাকায় অবস্থিত একটি সরকারি লজ। এটি সুন্দর ল্যান্ডস্কেপ দ্বারা বেষ্টিত এবং আরামদায়ক কক্ষ এবং মৌলিক সুবিধাগুলি রয়েছে।
- গীতাঞ্জলি গেস্ট হাউস: এটি পুরুলিয়ার মাঠা এলাকায় অবস্থিত একটি হোমস্টে। এটি একটি স্থানীয় পরিবার দ্বারা পরিচালিত হয় এবং আরামদায়ক কক্ষ, বাড়িতে রান্না করা খাবার এবং স্থানীয় সংস্কৃতির অভিজ্ঞতা লাভের সুযোগ দেয়।
যদি হোলিতে বেড়াতে পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ের কাছে থাকতে চান তবে অযোধ্য পাহাড়ের কাছে মুরুগুমায় বেশ কয়েকটি হাট বা ভিলা রয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য ভাল রিসর্ট, হোটেলও পেয়ে যাবেন সেখানে। এগুলির থাকার খরচ টাউনের তুলনায় কিছুটা বেশি। পাহাড়ি এলাকাতে হলেও আধুনিক সব সুবিধাই রয়েছে। এসি রুম, গিজার, ইলেকট্রিক পরিষেবাসহ সবই পাবেন সেখানে। তাই কুশল পল্লী, অযোধ্যা হিল টপ টুরিস্ট লজের মতো অনেক ভাল হোটেলও এখানে রয়েছে।
কিছু সাবধানতা:
- রাস্তায় রঙ খেলার সময় চোখে যাতে রঙ না লাগে, সে সাবধানতা অবশ্যই নিন।
- অপরিচিতদের রঙ না দেওয়াই ভালো।
- স্থানীয় সংস্কৃতির প্রতি সর্বদা সম্মান প্রদর্শন করুন।
পুরুলিয়ায় হোলির উৎসব শুধু রঙের খেলা নয়, এখানে আপনি উপভোগ করতে পারবেন আদিবাসী সংস্কৃতির ঐতিহ্য, লোককাহিনী, নাচগান, বসন্ত উৎসব। তাই আগামীতে হোলির অভিজ্ঞতার জন্যে পুরুলিয়াকে বেছে নিন।
এখানে পুরুলিয়া সম্পর্কে উত্তর সহ কিছু প্রশ্ন দেওয়া হল:
পুরুলিয়া কলকাতা থেকে কত দূরে?
কলকাতা থেকে প্রায় 250 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পুরুলিয়া ।
পুরুলিয়ায় ট্রেক করা যেতে পারে?
অবশ্যই পারেন, অযোধ্যা পাহাড় এবং জয়চন্ডী পাহাড় এলাকা সহ পুরুলিয়ায় বেশ কয়েকটি ট্রেকিং করার জায়গা রয়েছে।
পুরুলিয়ায় ঘোরার সেরা সময় কি?
পুরুলিয়া ভ্রমণের সেরা সময় হল শীতকাল অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ, যখন আবহাওয়া বেশ মনোরম থাকে।
পুরুলিয়ার জনপ্রিয় স্পটগুলি কি কি?
পুরুলিয়া সবেথেকে জনপ্রিয় জায়গা হল অযোধ্যা পাহাড়, বামনি জলপ্রপাত, আপার বা লোয়ার ড্যাম, বাঘমুন্ডি, গড় পঞ্চকোট, জয়চন্ডী পাহাড়, বড়ন্তি এবং মুখোশ গ্রাম বা চারিদা গ্রাম।
পুরুলিয়ার জনপ্রিয় খাবার?
জনপ্রিয় স্থানীয় খাবারের মধ্যে গুপচুপ, ছানার জিলাপি, পিঠে ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
প্রতীক দত্তগুপ্ত, থাকেন কলকাতায়, কাজ বাদে বেড়ানোই যার প্রথম ভালবাসা। এই কয়েক বছর হল বেড়ানোর সাথে কলমও ধরেছেন । তিনি শুধুমাত্র যে জায়গাগুলি পরিদর্শন করেছেন সেগুলি সম্পর্কেই ব্লগ করেন না, তবে তিনি তার অনুগামীদের জন্য টিপস, কৌশল এবং নির্দেশিকাগুলি সম্পর্কেও পোস্ট করেন৷