শীতে কলকাতায় কোথায় বেড়াবেন ভাবছেন তো? শীতের সময় কলকাতা শহরের এই জমজমাট 10 টি হ্যাংআউট স্পটগুলো জেনে নিন । এই স্পটগুলির সুন্দর প্রকৃতি ও আশেপাশের দারুন মজার স্ট্রিট ফুড সাথে সুন্দর আবহাওয়ার আনন্দ নিন। কলকাতার শীত শেষের দিকে, আর শীতকালের এই শেষ মুহূর্তগুলো উপভোগের জন্য একদম সঠিক সময়। তীব্র গরম এসে হাজির হওয়ার আগে, যেখানে আমাদের সবাইকে এসির ঘরে ঢুকে যেতে হবে, তার আগে একটু খোলা আকাশের নিচে দিন কাটানোর মজা নিন। এখানে দক্ষিণ আর মধ্য কলকাতার কিছু দারুণ জায়গার লিস্ট দেওয়া হল, যাতে আপনি কলকাতার স্টাইলে শীতকে বিদায় জানাতে পারেন।
শীতে কলকাতায় কোথায় বেড়াবেন: 10 টি জনপ্রিয় হ্যাংআউট স্পট
1. রবীন্দ্র সরোবর
দক্ষিণ কলকাতার একটা জনপ্রিয় হ্যাংআউট স্পট। সকালে এখানে হাঁটতে এলে দেখবেন অনেকে ব্যায়াম করছে, কেউ কেউ রোয়িং করতেও ব্যস্ত। লেকের চারপাশে ঘুরে বেড়ানোর মজাই আলাদা – শান্ত পরিবেশ, সঙ্গে সূর্যের আলো গায়ে মেখে আরাম করার সেরা জায়গা। সন্ধ্যাবেলা জায়গাটা হয়ে যায় একদম রোমান্টিক, দম্পতিরা গল্পে মশগুল থাকে আর চারপাশের বাতাসও বেশ ফুরফুরে।
সরোবরের বাইরে মেনোকা সিনেমার কাছে ছোট দোকানগুলোতে মোমো, চাউমিন, রোল, আর চাটের মতো নানান খাবারের লোভনীয় অপশন আছে। সঙ্গে এক কাপ চা – মেজাজ একেবারে ফুরফুরে!
প্রবেশ: ফ্রি
সময়: সকাল ৫টা – রাত ৮টা
2. আলিপুর চিড়িয়াখানা
শীতকালে আলিপুর চিড়িয়াখানা না গেলে যেন কিছু একটা অপূর্ণ থেকে যায়। ছোটবেলার শীতের ছুটির অনেক স্মৃতি জুড়ে থাকে এই জায়গাটা। এখানে এসে বিভিন্ন রকমের প্রাণী আর পাখি দেখতে দেখতে আপনার ক্ষুধা লাগবেই, তাই পিকনিকের ঝুড়ি সঙ্গে আনতে ভুলবেন না। ঘাসে বসে শীতের মিষ্টি রোদ্দুর উপভোগ করার মজাই আলাদা। ছোটদের জন্য এটা তো দারুণ, কিন্তু বড়রাও একেবারে আরাম করে সময় কাটাতে পারেন। আর পথে একটা রঙিন টুপি কিনতে ভুলবেন না, দারুণ মানাবে! শীতের কলকাতায় সবচেয়ে জনপ্রিয় হ্যাংআউট স্পট এই চিড়িয়াখানা ।
প্রবেশ:
- ৫ বছরের কম বয়সীদের জন্য ₹২০
- অন্যদের জন্য ₹৫০
- ভিডিও ফটোগ্রাফির জন্য ₹২৫০
সময়: সকাল ৯টা – বিকেল ৫.৩০টা (টিকিট কাউন্টার ৪.৩০টায় বন্ধ)
আরও পড়ুন: কলকাতায় বিজ্ঞান মিউজিয়াম: জনপ্রিয় 4 টি জাদুঘর
3. ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল
কলকাতার একেবারে মাঝখানে থাকা ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল এমন একটা জায়গা, যা একবার হলেও যাওয়া উচিত। যাদুঘর দেখতে পারেন কিংবা শুধু বাগানের চারপাশে ঘুরে বেড়ান। সকালে এখানে অনেকেই হাঁটতে আসেন – ছোট থেকে বড়, সবার জন্য এটা বেশ প্রিয় জায়গা। ইতিহাসে আগ্রহ থাকলে এখানকার মিউজিয়াম ঘুরুন, আর নাহলে বিশাল বাগানের ভেতর দিয়ে হেঁটে বেড়ান। সন্ধ্যেবেলায় জায়গাটা একটু বেশি রোমান্টিক হয়ে ওঠে – অনেক প্রস্তাবের সাক্ষী এই ভিক্টোরিয়া! শীতের রোদে এখানে একটা দিন কাটানোর মজা কোনোদিনই ফিকে হয় না।
একটা লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শোও আছে এখানে, যা সত্যই দেখার মতো।
যাদুঘরের প্রবেশ ফি:
- ভারতীয়দের জন্য ₹৫০
- সার্ক দেশের পাসপোর্টধারীদের জন্য ₹১০০
- অন্য দেশের নাগরিকদের জন্য ₹৫০০
- স্কুলের ইউনিফর্ম পরা শিশুরা বিনামূল্যে প্রবেশ করতে পারে।
বাগানে প্রবেশ ফি: ₹৩০
সময়: - মিউজিয়াম: সকাল ১০টা – সন্ধ্যা ৬টা
- বাগান: ভোর ৫.৩০টা – সন্ধ্যা ৬টা
4. শিরাজের শীতকালীন স্ন্যাক
মাটন পায়া আর ডালপুরির মতো নাস্তা দিয়ে শীতের সকাল শুরু করার মজাই আলাদা! শিরাজের পার্ক সার্কাস শাখা শীতকালে সকাল ৫:৩০ থেকে ১০টা পর্যন্ত স্পেশাল ব্রেকফাস্ট মেনু অফার করে। ১৮০ টাকায় মাটন পায়া বা ১৬০ টাকায় মাটন ম্যাগাজ—যেকোনোটা ট্রাই করুন। এই সুযোগ সারা বছর পাওয়া যায় না, তাই দেরি না করে চলে যান।
ঠিকানা: ১৩৫, মাদার তেরেসা সরণি, পার্ক সার্কাস
সময়: সকাল ৫:৩০ থেকে ১০টা
পকেট খরচ: মাথাপিছু ২৫০-৩০০ টাকা
আরও পড়ুন: কলকাতার অফবিট কিন্তু আকর্ষণীয় 10 টি ভ্রমণ গন্তব্য
5. এজেসি বোস ইন্ডিয়ান বোটানিক্যাল গার্ডেন
হাওড়া ব্রিজ পেরিয়ে এই বাগানটা যেন কলকাতার সবুজের মরূদ্যান। ২৫০ বছরেরও বেশি পুরনো এই বাগান বিশ্বের সবচেয়ে বড় বটগাছের জন্য বিখ্যাত। যদিও এর মূল কাণ্ড কেটে ফেলা হয়েছে, তবুও গাছটা এখনো তার পুরনো মহিমায় টিকে আছে। ২০২০-র আম্ফান ঝড়ে কিছু ক্ষতি হয়েছিল, তাই গাছটা এখন আবদ্ধ এলাকাতেই আছে।
বটগাছ ছাড়াও এখানে প্রায় ১৪,০০০ রকমের গাছপালা আছে। শিক্ষামূলক ভ্রমণের জন্য, কিংবা শীতের রোদে অক্সিজেন-সমৃদ্ধ বাতাসে সময় কাটানোর জন্য একেবারে উপযুক্ত। নেচার ট্রেইলের পথে হাঁটা মিস করবেন না। খাবার নিয়ে প্রবেশ করা যায় না, আর প্লাস্টিকও নিষিদ্ধ – প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য এটাই সেরা জায়গা!
প্রবেশ ফি:
- ভারতীয়দের জন্য ₹১০
- বিদেশীদের জন্য ₹১০০
- স্থির ফটোগ্রাফির জন্য ₹২০
সময়: সকাল ৮টা – বিকেল ৫টা (টিকিট কাউন্টার বিকেল ৪টায় বন্ধ)
6. বিবেকানন্দ পার্ক
বিবেকানন্দ পার্ক, সাউদার্ন অ্যাভিনিউ-এর ওপর একেবারে জমজমাট জায়গা, যেখানে দিনের যে কোনও সময় খাওয়ার অসংখ্য অপশন পাবেন। সকালে ঘুগনি আর ডিম-টোস্ট দিয়ে শুরু করে রাতে ফুচকার মেলা, বিশেষ করে দিলীপ দার ফুচকা কিন্তু মিস করবেন না। দিনের বেলা পার্কের ভিতর দিয়ে হাঁটুন, আর একটু ক্রিকেট ম্যাচ দেখে নিন – এখানে সবসময় কিছু না কিছু খেলা হয়ই। স্বাস্থ্যকর কিছু খেতে চাইলে পার্কের আশেপাশে তাজা ফলও পাবেন। সব মিলিয়ে, এই জায়গাটা একেবারে আদর্শ শীতের দিনে সময় কাটানোর জন্য।
প্রবেশ: ফ্রি
সময়: সকাল ৫:৩০ – রাত ৮টা
খরচ: মাথাপিছু প্রায় ₹২০০
7. ময়দান
কলকাতার সবুজের আরেক দম ফেলার জায়গা ময়দান। এখানে একদিকে চলছে ক্রিকেট আর ফুটবল খেলা, তো অন্যদিকে ঘোড়া, গরু আর কুকুর দৌড়াদৌড়ি। শীতের সকালে এখানে পিকনিকের মজা অন্যরকম। চারপাশে ক্রীড়া কোচিং আর সবজায়গায় প্রাণবন্ত ভিড়। কুয়াশার মধ্যে সকালে দৌড়ানো, কিংবা বিকেলের দিকে আরাম করে হাঁটা—সবই এখানে একদম জমে যায়। সন্ধ্যার আগে পরিষ্কার করার জন্য বললেও, দিনের যে কোনো সময় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে বা পিকনিকের জন্য এটা দারুণ জায়গা। আর কুকুর ছুটিয়ে খেলার জন্যও ময়দান একদম আদর্শ। তাই শীতের শেষ রোদটা উপভোগ করতে কম্বল পেতে বসে পড়ুন!
প্রবেশ: সম্পূর্ণ বিনামূল্যে
সময়: ভোর থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত
8. নন্দন
শিল্পপ্রেমীদের আড্ডার সেরা জায়গা নন্দন। এখানে সিনেমার টিকিট থাকুক বা না থাকুক, আপনি এই শৈল্পিক পরিবেশ উপভোগ করতে পারবেন। চা হাতে আড্ডা, গিটার বাজানো কিংবা মনের কথা শেয়ার করার মতো আরামদায়ক পরিবেশ, সবই এখানে মেলে। শীতের সন্ধ্যায় নন্দনের উষ্ণতায় হারিয়ে যেতে চাইলে বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটান, কিংবা একাই চলে আসুন। শিল্প আর বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে এই প্রাণবন্ত জায়গাটা আপনাকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যাবে।
প্রবেশ: প্রাঙ্গনে বিনামূল্যে
সময়: সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা
9. নিউ মার্কেট
১৫০ বছরের পুরোনো নিউ মার্কেট এখনো কলকাতার শপিং হাব। জামাকাপড়, আনুষাঙ্গিক, খাবার থেকে শুরু করে খেলনা—সবই এখানে পাওয়া যায় দারুণ দামে। শীতের বিকেলে এখানে ফুচকা বা মিষ্টি ভুট্টার চাট খেতে ভুলবেন না। বাজারের পুরোনো মাংসের দোকানগুলোও বেশ জনপ্রিয়। শুয়োরের মাংসের মশলাদার সসেজ চাইলে নিউ মার্কেটের ইউপি কোল্ড স্টোরগুলো একবার ঘুরে দেখুন।
সময়: সকাল ১০:৩০ থেকে রাত ৯টা
10. চিন্তামণি কর পাখির অভয়ারণ্য
কবি নজরুল মেট্রো থেকে অটো ধরে পৌঁছে যান নরেন্দ্রপুরের চিন্তামণি কর পাখির অভয়ারণ্যে। বাইরের কোলাহল ছেড়ে এখানে পাখির ডাক শোনার শান্তি পাবেন। শীতকালে হাঁটতে বেশ মনোরম লাগে, আর পাখি, প্রজাপতি আর দেশীয় গাছগাছালি এখানে দেখতে পাবেন। প্রকৃতির মাঝে কিছুটা সময় কাটানোর জন্য এটি দারুণ জায়গা।
প্রবেশ: ৫০ টাকা
সময়: সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৫টা
প্রতীক দত্তগুপ্ত, থাকেন কলকাতায়, কাজ বাদে বেড়ানোই যার প্রথম ভালবাসা। এই কয়েক বছর হল বেড়ানোর সাথে কলমও ধরেছেন । তিনি শুধুমাত্র যে জায়গাগুলি পরিদর্শন করেছেন সেগুলি সম্পর্কেই ব্লগ করেন না, তবে তিনি তার অনুগামীদের জন্য টিপস, কৌশল এবং নির্দেশিকাগুলি সম্পর্কেও পোস্ট করেন৷