পশ্চিম বর্ধমান জেলার জনপ্রিয় ৫টি দর্শনীয় স্থান – দেখুন

পশ্চিম বর্ধমান জেলার দর্শনীয় স্থান

পশ্চিম বর্ধমান জেলা পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম প্রান্তে ঝাড়খন্ড রাজ্যের সীমানা ঘেঁসে অবস্থিত। জেলাটি মুলত কয়লা ও শিল্পপ্রধান অঞ্চল কিন্তু প্রাকৃতিক সৌন্দ্যর্য্যের ছোঁয়ায় বহু জায়গা মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছে। জনপ্রিয় হয়েছে বেশ কিছু পর্যটন স্থল। অতীতে এই জায়গার পরিচিতি ছিল রাঢ় অঞ্চল নামে। মগধ, মৌর্য থেকে শুরু করে কুশন, গুপ্ত ইত্যাদি। একসময় এই অঞ্চলটি গৌড় রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই জেলা ঐতিহাসিকভাবে ও শিল্পাঞ্চল হিসেবে পশ্চিমবঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা।

পশ্চিম বর্ধমান জেলার দর্শনীয় স্থান কি কি?


1. গড় জঙ্গল

গড় জঙ্গল

গড় জঙ্গল পশ্চিম বর্ধমান জেলার দুর্গাপুর মহকুমার কাঁকসা ব্লকে অবস্থিত। বৈদিক পুরাণ অনুসারে শক্তির সাধনার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। ধর্মিয় বিশ্বাস, রাজা সুরথ মেধাসের আশ্রমে বৌস্য সমাধিতে মিলিত হন। তিনিই বসন্তকালে এখানে দুর্গাপুজোর আয়োজন করেছিলেন। শ্রী শ্রী চণ্ডী এবং মার্কণ্ডেয় পুরাণ অনুসারে এই দুর্গাপূজা, যা গড় জঙ্গলে আয়োজিত হয়েছিল, এটি ছিল বিশ্বের প্রথম দুর্গাপূজা। রাজা সুরথ এই গড় জঙ্গল এলাকায় মহাকালী, মহাসরস্বতী এবং মহালক্ষ্মী এই তিন দেবীর মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। জনশ্রুতি এই যে এখানে ১৬ টি মন্দির ছিল তবে বর্তমানে মাত্র দুটি অর্থাৎ শ্যামরূপ মন্দির এবং শিব মন্দির আছে।

2. ইছাই ঘোষের দেউল

ইছাই ঘোষের দেউল
Picture credit : paschimbardhaman.gov.in

ইছাই ঘোষের দেউল, এটি রেখ-দেউল স্থাপত্যের জন্য টাওয়ার মন্দির নামেও পরিচিত। ইছাই ঘোষের দেউল পশ্চিম বর্ধমান জেলার গৌরাঙ্গপুরের কাছে অবস্থিত। এটি বাংলার মন্দির স্থাপত্যের একটি অঙ্গ, আবার একই সাথে ওড়িশার স্থাপত্যেরও প্রভাব খুঁজে পাওয়া যায়। মন্দিরটি পশ্চিম বর্ধমান জেলার গৌরাঙ্গপুর এলাকার আশেপাশে অজয় নদীর দ্বারা বিচ্ছিন্ন। ঐতিহাসিক বিনয় ঘোষের মতে, ইছাই ঘোষের দেউল গৌরাঙ্গপুরে অবস্থিত। এটি বাংলার হাতে গোনা কয়েকটি রেখ-দেউলের মধ্যে একটি। ঐতিহাসিকদের মতে ইছাই ঘোষের দেউল ১৬শ বা ১৭শ শতকের মধ্যে সম্ভবত ইছাই ঘোষের বংশধরদের দ্বারা নির্মিত।

3. চুরুলিয়া

চুরুলিয়া
চুরুলিয়া

চুরুলিয়া হল বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মস্থান এবং তাঁর স্ত্রী প্রমিলা দেবীর সমাধি স্থল। চুরুলিয়ায় নজরুলের জন্মভিটা ‘কবিতীর্থ’ নামে পরিচিত। কবির অনেকগুলি পাণ্ডুলিপি, পদক এবং অন্যান্য জিনিসপত্র গ্রামের নজরুল একাডেমীতে সংরক্ষিত আছে। অজয় নদী দিয়ে ঘেরা নিভৃত প্রত্যন্ত গ্রাম চুরুলিয়া শান্তির পরশ বুলিয়ে দেবে। আসানসোল থেকে চুরুলিয়া যাওয়ার পথে বাসগুলো অজয় ঘাট পর্যন্ত যায়। চুরুলিয়া গ্রামে ঢুকতেই কবির ম্যুরাল দেখা যাবে। তবে ‘কবিতীর্থ’ এখন অবহেলায় পড়ে আছে।

কবিতীর্থ বা নজরুলের বাড়ি এখন ‘নজরুল একাডেমি’। কবির জীবনের বাঁক নেয়া বিভিন্ন ঘটনার ইতিহাস সংবলিত বই, ম্যাগাজিন ও পেপার কাটিং এখানের লাইব্রেরিতে রয়েছে। কবির জন্মদিন উপলক্ষে কবিতীর্থে সাত দিনব্যাপী মেলার আয়োজন হয়। ধারণা করা হয় যে প্রাচীনকালে চুরুলিয়ায় একটি দুর্গ ছিল। এটি ষোড়শ শতাব্দীতে আফগান সর্দার শের খানের হাতে পড়ে। গ্রামের একটি স্তূপ দুর্গের ধ্বংসাবশেষ ধারণ করে বলে মনে করা হয়।

4. ঘাঘর বুড়ী

ঘাঘর বুড়ি
Picture credit : Bodhisattwa CC BY SA 4.0 via wikipedia.org

ঘাঘর বুড়ী মন্দির পশ্চিমবঙ্গে আসানসোল শহরের উপকণ্ঠে ভারতের জাতীয় রাজপথ এর পাশে অবস্থিত। এটি কালী দেবীর উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত একটি মন্দির। ঘাঘর বুড়ী আসানসোলের প্রাচীনতম মন্দির। প্রতি মঙ্গলবার ও শনিবার পূজা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতি বছর ১লা মাঘ মন্দির প্রাঙ্গনে মেলার আয়োজন করেন । ঐদিন ঘাঘর বুড়ী মন্দিরের দায়িত্ব সেদিনের জন্য তুলে দেওয়া হয় সাঁওতাল সমাজের হাতে । ঐদিন বাংলা, বিহার,ঝাড়খন্ড থেকে সাধারন মানুষের সাথে সাঁওতাল সমাজের প্রচুর মানুষজনের সমাবেশ ঘটে এই মেলা প্রাঙ্গনে । উপাসনার অংশ হিসাবে পশুবলিও দেওয়া হত।

5. মাইথন

মাইথন
Picture credit : anandabazar.com

মাইথন পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোল থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এখানে আছে বাঁধ, জলাধার, মন্দির আর ছোট-বড় পাহাড়। এখানকার অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বরাবর আকৃষ্ট করে ভ্রমণপিপাসুদের। মনে করা হয়, মাইথন নামের উৎপত্তি মাই-কা-থান থেকে। এই মা হচ্ছেন দেবী কল্যাণেশ্বরী।

বরাকর নদের উপর প্রায় ১৬হাজার ফুট দীর্ঘ ও ১৬৫ ফুট উঁচু বাঁধ আর ৬৫ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে সুন্দর জলাধার। দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন পরিচালিত মাইথন বাঁধটি পশ্চিম বর্ধমান জেলায় পশ্চিমবঙ্গ এবং ঝাড়খণ্ড রাজ্যকে আলাদা করেছে। বাঁধ তৈরি হয়েছিল মূলত বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য। এখানে আশেপাশে অসংখ্য ছোট-বড় পাহাড় দেখা যায়।

এখানকার অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আপনার মনকে ছুঁয়ে যাবেই। মাইথন বাঙালির প্রিয় একটি ভ্রমণ গন্তব্য। মাইথন লেকে বোটিং করার ভাল ব্যবস্থা আছে। লেকের জলে বোটিং করতে করতে সূর্যাস্ত দেখা আপনি ভলতে পারবেন না।

কিভাবে যাবেন

কলকাতা থেকে পশ্চিম বর্ধমান জেলার যেকোন অংশে ভ্রমণের জন্য আসানসোল পৌছান সহজ। আসানসোল থেকে সড়কপথে জেলার যেকোন জায়গায় সহজ। তাই এখানে আসানসোল পৌঁছান এবং থাকার খবর দেওয়া হল।

  • ট্রেনঃ কলকাতা থেকে দৈনিক একাধিক ট্রেন আছে তবে প্রতিদিন সকালে হাওড়া থেকে ৬টা ১৫ মিনিটে ব্ল্যাক ডায়মন্ড এক্সপ্রেস মনে হয় বেশ সুবিধাজনক।
  • বাসঃ দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণের (এসবিএসটিসি) বাস পাওয়া যায় আসানসোল শহর পর্যন্ত। এসবিএসটিসি বাসের জন্য অনলাইন বুকিং সুবিধা রয়েছে, দেখতে পারেন।
  • সড়কঃ চাইলে কলকাতা থেকে সরাসরি গাড়ি ভাড়া করেও আসানসোল বা মাইথন ইত্যাদি জায়গায় সরাসরি যেতে পারেন।

কোথায় থাকবেন?

আসানসোল শহরে থাকার জন্য অসংখ্য হোটেল রয়েছে – তাই আলাদা করে কোন নাম দিলাম না।
মাইথন ভ্রমণের জন্য সুবিধাজনক হল – পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন উন্নয়ন নিগমের মুক্তধারা ট্যুরিজম প্রপার্টি। এই ভবনটি সবুজ টিলার উপরে। সেখান থেকে পাহাড়ে ঘেরা মাইথন জলাধার দেখতে খুব সুন্দর লাগে। অনলাইন বুকিং করতেই পারেন।

পার্শ্ববর্তী জেলা পুরুলিয়া জেলার দর্শনীয় জায়গাগুলি জানুন


Leave a Comment