কলকাতায় বিজ্ঞান মিউজিয়াম: জনপ্রিয় 4 টি জাদুঘর, কি আছে ?

কলকাতায় বিজ্ঞান মিউজিয়াম সাধারণ মানুষের মধ্যে বিজ্ঞানকে আরও আকর্ষণীয় করার চেষ্টা করে। ভারতের সর্বপ্রথম বিজ্ঞান জাদুঘর এই কলকাতাতেই রয়েছে।

কলকাতায় বিজ্ঞান মিউজিয়াম
চিত্র সৌজন্যে: sciencecitykolkata.org.in

বিজ্ঞানচর্চায় বাংলার এক নিজস্ব ইতিহাস রয়েছে। আমাদের দেশের মাটিতে জন্ম নিয়েছিলেন অনেক বড় বড় বিজ্ঞানী। জগদীশচন্দ্র বসু, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, মেঘনাদ সাহা। বিজ্ঞান জগতে ওঁদের অবদান বিশ্ববিদিত। কলকাতা ছিল একসময় বিজ্ঞান গবেষণার কেন্দ্র।

আজকাল বিজ্ঞানকে আর শুধু গবেষণাগারে বন্দি রাখা হয় না। আমাদের কাছে বিজ্ঞানকে আরও মজার করে তুলে ধরার জন্য অনেক সায়েন্স মিউজিয়াম হয়েছে। এখানে তুমি বিজ্ঞানের নানা রহস্য খুঁজে পেতে পারবে, নানা ধরনের এক্সপেরিমেন্ট করতে পারবে। সব মিলিয়ে বিজ্ঞান আর আগের মতো শুধু বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ নেই, কলকাতা বিজ্ঞান মিউজিয়াম আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটা অংশ হয়ে উঠেছে।

কলকাতায় বিজ্ঞান মিউজিয়াম: সেরা 4 টির তালিকা


1. মিউজিয়াম অফ অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড স্পেস সায়েন্স

মিউজিয়াম অফ অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড স্পেস সায়েন্স
চিত্র সৌজন্যে: csp.res.in
ঠিকানা :ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্স
নিতাই নগর, মুকুন্দপুর, কলকাতা 700099
খোলার সময়: সকল ৯ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা

মহাকাশের রহস্য জানতে চাও ? চল একবার মিউজিয়ামে !

কলকাতায় একটা এমন জায়গা আছে যেখানে তুমি মহাকাশের অনেক রহস্য জানতে পারবে। হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছ! এই মিউজিয়ামটা খুবই স্পেশাল কারণ এখানে আছে চাঁদের মাটি থেকে শুরু করে নিল আর্মস্ট্রংয়ের চুলের টুকরো পর্যন্ত রয়েছে।

কী কী আছে এই মিউজিয়ামে?

  • চাঁদের মাটি: হ্যাঁ, তুমি ঠিকই শুনেছ! চাঁদের মাটি ছুঁয়ে দেখার সুযোগ পাবে।
  • নিল আর্মস্ট্রংয়ের চুল: মহাকাশে পা রাখা প্রথম মানুষের চুল! কত অবিশ্বাস্য, তাই না?
  • রাইট ব্রাদার্সের বিমান: ইতিহাসের প্রথম বিমানের একটি মডেলও আছে এখানে।
  • মহাকাশচারীদের নোট: বিখ্যাত মহাকাশচারীরা তাদের হাতে লেখা নোটও দেখতে পাবে।
  • উল্কাপিণ্ড: আকাশ থেকে পড়া উল্কাপিণ্ড ছুঁয়ে দেখার সুযোগ পাবে।

কেন এই মিউজিয়াম এত স্পেশাল?

এই মিউজিয়ামটা শুধু মহাকাশের জিনিসপত্র দেখানোর জায়গা না। এখানে তুমি জানতে পারবে কীভাবে মানুষ মহাকাশে যাত্রা করে, মহাকাশ সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা কী কী আবিষ্কার করেছেন, আরও অনেক কিছু।

কিছু মজার তথ্য:

  • এই মিউজিয়ামটা উদ্বোধন ভারতের প্রথম মহাকাশচারী রাকেশ শর্মা
  • মিউজিয়ামের অনেক জিনিস বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
  • এই মিউজিয়ামটা ভারতের দুইজন বিখ্যাত বিজ্ঞানীকে উৎসর্গ করা

যদি তুমি মহাকাশ সম্পর্কে জানতে চাও, তাহলে এই মিউজিয়ামে একবার ঘুরে আসতে পারো। নিশ্চিত তুমি খুব আনন্দ পাবে ।

আরও পড়ুন: কলকাতার জনপ্রিয় 10টি মন্দির : দেখুন

2. সায়েন্স সিটি

সায়েন্স সিটি
চিত্র সৌজন্যে: sciencecitykolkata.org.in
ঠিকানা :জে বি এস হ্যালডেন এভিনিউ, মিরনিয়া গার্ডেন্স
পূর্ব তোপসিয়া, তোপসিয়া, কলকাতা 700046
খোলার সময়: সকল ১০ টা থেকে সন্ধ্যা ৭ টা

কলকাতার সায়েন্স সিটি: জানতে এবং বেড়াতে এসো !

১৯৯৭ সাল থেকে কলকাতার সায়েন্স সিটি মজা আর জ্ঞানের এক অদ্ভুত মিশেল! বড় থেকে ছোট সবাইকেই এখানে আকর্ষণ করে বিজ্ঞানের জাদু। এটা কেবল কলকাতাবাসীর জন্য নয়, দেশ-বিদেশের লোকেরাও এখানে ভিড় সায়েন্স সিটি কলকাতা ভারতের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান কেন্দ্র।

কেন সায়েন্স সিটি এত জনপ্রিয়?

  • বিজ্ঞানকে আকর্ষণীয় করে: এখানে বিজ্ঞানকে এত মজার করে দেখানো হয় যে, পড়াশোনা বাদ দিয়েও তোমার মন চাইবে আরও জানতে!
  • অনেক কিছু দেখার আছে: করোনা ভাইরাস থেকে শুরু করে মানুষের উদ্ভব, সবকিছুই এখানে চোখের সামনে ফুটে উঠবে।
  • মজার মজার গেম: ৩ডি মুভি, টাইম মেশিন, ইল্যুশন… এসব তো আর নতুন করে বলার দরকার নেই!
  • খোলা আকাশের নিচে বিজ্ঞান: বাইরেও অনেক মজার এক্সপেরিমেন্ট আছে, যেখানে তুমি নিজেই বিজ্ঞানের কারসাজি করতে পারবে।

সায়েন্স সিটিতে এত কিছু দেখার আছে যে, একদিনে সব ঘুরে দেখা সম্ভব না। তাই বন্ধুদের সাথে প্ল্যান করে একটা দিন বের হয়ে যাও। নিশ্চিত তুমিও আনন্দে মেতে থাকবে।

কাজে লাগতে পারে:

  • খাবারের ব্যবস্থা: ভেতরে খাবারের দোকান আছে, তবে তুমি নিজেও কিছু নিয়ে যেতে পার ।
  • ক্যামেরা ব্যাটারি চার্জ করে রেখ: এত কিছু দেখে শেষে ছবি তুলতে ভুলে যেওনা !

আরও পড়ুন: একদিনে কলকাতা ঘুরে দেখুন

3. এম. পি. বিড়লা প্ল্যানেটেরিয়াম

এম. পি. বিড়লা প্ল্যানেটেরিয়াম
চিত্র সৌজন্যে: mpbirlaplanetarium.org
ঠিকানা :সেন্ট পলস ক্যাথেড্রাল, 96, জওহরলাল নেহরু রোড, ক্যাথেড্রাল রোড, ক্যাথেড্রালের পাশে, কলকাতা 700071
খোলার সময়: সকল ১১টা ৩০ থেকে সন্ধ্যা ৬ টা

কলকাতার তারা মণ্ডলে একটা ভ্রমণ

কলকাতায় বেড়াতে এসেছ? তাহলে এম. পি. বিড়লা প্ল্যানেটেরিয়ামে একবার অবশ্যই যেতে হবে, তাইনা? এই জায়গাটা কলকাতার সবচেয়ে জনপ্রিয় জাদুঘরগুলির মধ্যে একটি। কেন এত জনপ্রিয়? চল একটু জেনে নিই।

কি দেখতে পাবে এখানে?

  • তারাদের বিচরণ: একটা বিশাল গোলকের নিচে বসে তুমি দেখতে পাবে কীভাবে তারা আকাশে ঘুরছে!
  • মহাকাশের রহস্য: মহাকাশ সম্পর্কে অনেক মজার মজার তথ্য জানতে পারবে ।
  • ইতিহাসের ছোঁয়া: পৃথিবীর সৃষ্টি থেকে শুরু করে মহাকাশযান লঞ্চ করা, সবকিছু সম্পর্কে জানার সুযোগ পাবে।
  • অনেক মজার এক্সপেরিমেন্ট: শুধু দেখার জন্য নয়, অনেক কিছু নিজে করে দেখার সুযোগও পাবে।

কেন এখানে যাওয়া উচিত?

  • বিজ্ঞানকে আরও আকর্ষণীয় করে: বিজ্ঞানকে এত মজার করে শেখানো হয় যে, তুই নিজেও অবাক হয়ে যাবি।
  • নতুন কিছু জানার সুযোগ: মহাকাশ সম্পর্কে অনেক নতুন নতুন তথ্য জানতে পারবে ।
  • বন্ধুদের সাথে আনন্দ করার জায়গা: বন্ধুদের সাথে এসে একদিন কাটিয়ে দিতেই পার।

কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য:

  • এই প্ল্যানেটেরিয়ামটা ভারতের প্রথম পাবলিক প্ল্যানেটেরিয়াম
  • এখানে একসাথে অনেক মানুষ বসে অনুষ্ঠান দেখতে পারে।
  • বাংলা, হিন্দি আর ইংরেজি তিনটি ভাষাতেই অনুষ্ঠান হয়।

যদি তুমি মহাকাশ সম্পর্কে জানতে চাও, তাহলে এম. পি. বিড়লা প্ল্যানেটেরিয়ামে একবার অবশ্যই ঘুরে এসো।

4. বিড়লা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড টেকনোলোজিকাল মিউজিয়াম (বিআইটিএম)

বিড়লা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড টেকনোলোজিকাল মিউজিয়াম
চিত্র সৌজন্যে: bitm.gov.in
ঠিকানা :19A, গুরুসদয় রোড, কলকাতা 700019
বালিগঞ্জ আইস স্কেটিং রিঙ্কের কাছে
খোলার সময়: সকাল ৯ টা ৩০ থেকে সন্ধ্যা ৬ টা


বিড়লা ইন্ডাস্ট্রিয়াল মিউজিয়াম: শুধু একটা মিউজিয়াম নয়, একটা মজার জায়গা!

কলকাতায় ঘুরতে এসেছো ? তাহলে বিড়লা ইন্ডাস্ট্রিয়াল মিউজিয়ামে না গেলে ভ্রমণ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। এই জায়গাটা শুধু একটা মিউজিয়াম নয়, ভারতের প্রথম বিজ্ঞান জাদুঘর। এখানে তুমি বিজ্ঞানের জগতে একটা আনন্দ ভ্রমণ করতে পারবে।

এই মিউজিয়াম (বিআইটিএম) শুরুর ইতিহাস

বিড়লা ইন্ডাস্ট্রিয়াল মিউজিয়াম বর্তমানে যেখানে রয়েছে অর্থাৎ গুরুসদয় রোডের এই বাড়িটি আগে ঠাকুর পরিবারের ছিল। পরে ঘনশ্যাম দাস বিড়লা এটা কিনে নেন আর এটাকে বিজ্ঞান মিউজিয়াম বানিয়ে দেয়। তথ্য অনুযায়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কন্যা মীরা দেবী এই বাড়িতে বড় হয়েছিল!

এখানে কী কী আছে?

এখানে অনেক মজার মজার বিভাগে বিস্তারিত আছে। এখানে বিদ্যুৎ, খনিজ তেল, পরমাণু শক্তি, ইস্পাত, কম্পিউটার, এমনকি মহাকাশ সম্পর্কেও জানতে পারবে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল, এখানে অনেক কিছু নিজ হাতে করে দেখতে পারবে ।

কেন এখানে যাওয়া উচিত?

  • বিজ্ঞানকে মজার করে: বিজ্ঞানকে এত মজার করে শেখানো হয় যে, তুমি নিজেও অবাক হয়ে যাবে ।
  • কিছু নতুন জানার সুযোগ: বিজ্ঞান সম্পর্কে অনেক নতুন নতুন তথ্য জানতে পারবে ।
  • বন্ধুদের সাথে মজা করার জায়গা: বন্ধুদের সাথে এসে একদিন কাটিয়ে দিতে পার।

কিছু দরকারি তথ্য:

  • এই মিউজিয়ামটা খুব পুরনো। এখানে অনেক ইতিহাস লুকিয়ে আছে।
  • এখানে দৃষ্টিহীন মানুষের জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা আছে।
  • এখানে সারা বছর ধরে নানা ধরনের অনুষ্ঠান হয়।

যদি তুমি বিজ্ঞান সম্পর্কে জানতে চাও, তাহলে বিড়লা ইন্ডাস্ট্রিয়াল মিউজিয়ামে একবার ঘুরে আসতে পারো। নিশ্চিত তুমি খুব আনন্দ পাবে। মজা করবে।

Leave a Comment