আমখই ফসিল পার্ক কলকাতার কাছাকাছি দু-এক দিনের ছুটিতে অফবিট গন্তব্য হিসাবে দারুন উপযুক্ত। বীরভূম জেলার শান্তিনিকেতন থেকে মাত্র ১৮ কিমি দুরেই রয়েছে আমখই উড ফসিল পার্ক বা আমখই উদ্ভিদ জীবাশ্ম উদ্যান। এটাই পশ্চিমবঙ্গের একমাত্র ফসিল পার্ক। পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই পার্কটীকে বায়োডাইভারসিটি হেরিটেজ সাইট ঘোষনা করেছে। এখানে প্রায় ১৬৫ টি ছোট বড় উদ্ভিদ জীবাশ্ম রয়েছে ।
কিভাবে শুরু হল ফসিল পার্ক
আমখই উড ফসিল পার্কে গাছের জীবাশ্ম প্রথম আবিষ্কৃত হয় যখন ২০১৫ সালে বন বিভাগের কর্মকর্তারা বীরভূমের ইলামবাজারের চৌপাহাড়ী জঙ্গলের ভিতরে আদিবাসী অধ্যুষিত আমখই গ্রামে একটি পুকুর খনন করা শুরু করেন তখন মাটির গভীরে গাছের গুড়ির মত কিছু পাথর উঠে আসে। পরে যাচাই করে জানতে পারেন সেগুলি পায় ২ কোটি বছরের প্রাচীন উদ্ভিদ জীবাশ্ম। আর পরের বছর অর্থাৎ ২০১৬ সালে সরকারের উদ্যোগে এখানে প্রায় ১০ হেক্টর জমির ওপর তৈরি করা হয় রাজ্যের প্রথম ও একমাত্র জীবাশ্ম উদ্যান ৷
কী বলেন বিজ্ঞানীরা
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছে কয়েক কোটি বছর আগে এই গাছগুলি বীরভূমের রাজ মহল পাহাড় এবং ছোটনাগপুর মালভূমি থেকে বন্যার জলে ভেসে এসেছিল এই এলাকায় এবং এখানকার মিহি বালি আর মাটিতে আটকে যায় সেগুলি। পরবর্তীকালে বিভিন্ন প্রাকৃতিক এবং ভূমিবিপর্যয়ের পর এগুলি ফসিল হয়ে যায়। সেগুলি চাপের ও তাপের প্রভাবে একেবারে ফসিলে পরিণত হয়। বিজ্ঞানীরা গাছের কিছু প্রজাতি শনাক্ত করেছেন, তাদের নাম এবং ইতিহাস উদ্যানে জীবাশ্মের অবশিষ্টাংশের কাছে সেই তথ্য প্রদর্শিত রয়েছে।
কীভাবে যাবেন আমখই ফসিল পার্ক
কলকাতা বা বিভিন্ন জায়গা থেকে শান্তিনিকেতন যাওয়ার পরিকল্পনা করলে ট্রেন কিংবা বাস দুরকম পরিবহন ব্যবহার করেই যাওয়া যায়।
- ট্রেনে করে যেতে চাইলে শিয়ালদহ কিংবা হাওড়া থেকে রামপুরহাটগামী ট্রেনের তালিকা দেখতে হবে।
হাওড়া থেকে: গনদেবতা এক্সপ্রেস, শান্তিনিকেতন এক্সপ্রেস, সরাইঘাট এক্সপ্রেস, বিশ্বভারতী ফাস্ট প্যাসেঞ্জার
শিয়ালদহ থেকে:কাঞ্চনজঙ্ঘা ফেস্টিভ্যাল স্পেশাল, মালদা টাউন স্পেশাল
- বাসে করে যেতে চাইলে কলকাতার এসপ্ল্যানেড থেকে বোলপুর যাওয়ার বাস রোজ বহু বাস সার্ভিস রয়েছে।
শান্তিনিকেতন পৌঁছে সেখান থেকে একটা গাড়ি বা টোটো ভাড়া করে সহজেই পৌঁছে যেতে পারবেন চৌপাহাড়ির জঙ্গলের ভিতরে এই আমখই উড ফসিল পার্কে।
খোলার সময় | রোজ সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত |
বন্ধের দিন | প্রতি বুধবার বন্ধ থাকে |
টিকিট মুল্য | মাথা পিছু ১০টাকা – ছাত্র এবং শিশুদের জন্য ৫টাকা |
কোথায় থাকবেন
থাকার জন্য আমখই নয়, শান্তিনিকেতনের প্রান্তিক স্টেশনের কাছাকাছি এলাকাতেই বিভিন্ন বাজেটের অনেক রিসর্ট বা হোটেল রয়েছে। ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা প্রতিদিন দামের মধ্যে কয়েকটির নাম দেওয়া হল। যেমন রাঙ্গামাটি গার্ডেন রিসর্ট, দীপ হলিডেস, হোটেল রয়াল বেঙ্গল বা ঘরানা হোটেল ইত্যাদি। আপনি তাদের অনলাইনেও বুকিং করতে পারবেন। এই হোটেল গুলোতে কার পারকিং, Free Wi-Fi ইত্যাদি রয়েছে এবং সবারই চেক-ইন ১২টায় এবং চেক-আউট সকাল ১১টায়।
আপনি যদি পৌষ মেলা, বসন্ত উৎসব, জয়দেবের মেলা এই সব সময়ে যেতে চান তবে অন্তত কয়েকমাস আগে থেকে আপনাকে হোটেল বুকিং করতে হবে।
যদি আপনি হাতে দুদিন নিয়ে ফসিল পার্ক সাথে শান্তিনিকেতন ঘুরতে যান তবে আপনি শনিবার সকাল সকাল বেড়িয়ে পড়ুন। বোলপুরে গিয়ে পৌঁছবেন দুপুরবেলা।
খেয়ে দেয়েই বেরিয়ে পড়ুন সোনাঝুরির হাট দেখতে যা শনিবারের হাট নামেও পরিচিত।
টোটোতে যাওয়ার জন্য একটু দর কষাকষি করতে হবে হয়তো কিন্তু ওনারাই আপনাকে সোনাঝুরি কোপাই দেখাতে নিয়ে যাবে।
পরের দিন অর্থাৎ রবিবার সকাল সকাল বেড়িয়ে পড়ুন আমখই ফসিল পার্ক।
আরও পড়ুনঃ শান্তিনিকেতন কিভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন, সব তথ্য
কাছাকাছি আর কি দেখবেন
- বিশ্বভারতী ঘুরে দেখা ছাড়াও বিশ্ব বাংলা হাট, কোপাই নদী, বল্লভপুর ডিয়ার পার্ক, খোয়াই বনের হাট, কঙ্কালিতলা মন্দির ইত্যাদি দেখতেই পারেন।
- সাঁওতাল গ্রাম ঘুরে দেখাঃ ফসিল পার্কে বেড়ানোর পাশাপাশি সাঁওতাল গ্রাম দেখার সুযোগও থাকছে। চৌপাহাড়ী জঙ্গলের মধ্যে যেখানে এই উদ্ভিদ ফসিল পার্কটি তৈরি হয়েছে সেটি একেবারেই আসলে একটি আদিবাসী সাঁওতাল গ্রাম। সেখানে একটি সাঁওতাল শিশুদের জন্য স্কুল রয়েছে। যাঁরা আদিবাসীদের জীবনযাত্রা একটু কাছথেকে দেখতে চান তাঁদের জন্য এই আমখই গ্রাম একেবারে আদর্শ। একই সঙ্গে ফসিল পার্ক দেখা আর সাঁওতাল গ্রাম দেখার সুযোগ পেতে পারেন পর্যটকরা।
- জঙ্গলের গভীরে হাঁটার রোমাঞ্চঃ চৌপাহাড়ীর জঙ্গল একটা সময়ে এমন ছিল যে মানুষ দিনের বেলাতেই সেখানে যেতে ভয় পেতেন। এমন ডাকাতের দাপট ছিল। এখন সেই আতঙ্ক আর নেই। কিন্তু জঙ্গলে ঘোরার সেই এডভেঞ্চার কিন্তু আছে। বড় বড় শাল ও সোনাঝুড়ি গাছের মাঝখান দিয়ে মেঠোপথ দিয়ে ফসিল পার্কের ভেতরে ঢুকেছে রাস্তা। এই জঙ্গলের মধ্য দিয়ে যেতে বেশ জঙ্গলে বেড়ানোর রোমাঞ্চ অনুভব করবেন সকলে।
যদিও পশ্চিমবঙ্গ তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং ঐতিহ্য দিয়ে প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটককে আকৃষ্ট করে কিন্তু এই ধরনের অনন্য উদ্যান অনেকের নজর এড়িয়ে যায়। প্রকৃতি মাতার এই অপূর্ব সৃষ্টিকে রক্ষা করতে স্থানীয় মানুষের অদম্য প্রচেষ্টাকে সম্মান করার জন্য আমার আন্তরিক অনুরোধ। আপনার পরবর্তি ভ্রমণ পরিকল্পনার সাথে অনুগ্রহ করে এই ফসিল পার্কটি দেখুন।
প্রতীক দত্তগুপ্ত, থাকেন কলকাতায়, কাজ বাদে বেড়ানোই যার প্রথম ভালবাসা। এই কয়েক বছর হল বেড়ানোর সাথে কলমও ধরেছেন । তিনি শুধুমাত্র যে জায়গাগুলি পরিদর্শন করেছেন সেগুলি সম্পর্কেই ব্লগ করেন না, তবে তিনি তার অনুগামীদের জন্য টিপস, কৌশল এবং নির্দেশিকাগুলি সম্পর্কেও পোস্ট করেন৷