ভারতের বিখ্যাত মন্দির: যে 5 টি আপনাকে অবশ্যই দেখতে হবে

নানা ভাষা, ধর্ম ও বর্ণের লোকের মাতৃভূমি এই দেশ ভারতবর্ষ । বৈচিত্রময় এই ভারতের বিখ্যাত মন্দির বা উপাসনালয়গুলি সমগ্র মানুষকে একসূত্রে ভারতীয় হিসাবে বেঁধে রাখে।

ভারতের বিখ্যাত মন্দির

বিশাল দেশ এই ভারতবর্ষ নদী, পাহাড়, সমুদ্রের আশীর্বাদে সিক্ত, বিভিন্ন ধর্মের মানুষের আধ্যাত্মিক আশ্রয়স্থল। এখানে প্রত্যেকটি মানুষের শিক্ষা, সংস্কৃতি, রীতিনীতি এক অনন্য ফুলের মতো। তাদের আরাধনার ধারা ভিন্ন ভিন্ন হলেও, আধ্যাত্মিকতার পথে তারা একই গন্তব্যে যাত্রা করে। আজ আমি আপনাদের নিয়ে যাব ভারতের পাঁচটি পবিত্র তীর্থে। এমন স্থানে যেখানে হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান সকলেই এক হয়ে আধ্যাত্মিক শান্তি খুঁজে পায়। আসুন, একসঙ্গে এই পবিত্র যাত্রায় শামিল হই।

ভারতের বিখ্যাত মন্দির: সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় 5টি কোনগুলি ?

1. কাশী বিশ্বনাথ মন্দির: মহাদেবের শহরে একটি আধ্যাত্মিক যাত্রা

কাশী বিশ্বনাথ মন্দির
Picture credit: sangbadpratidin.in

বারাণসী ভারতের আধ্যাত্মিক হৃদয়

কাশী বা বারাণসী শুধু একটি শহর নয়, এটি হিন্দু ধর্মের অন্যতম পবিত্র তীর্থস্থান। এই পবিত্র শহরের মধ্যে অবস্থিত কাশী বিশ্বনাথ মন্দির, ভগবান শিবের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মন্দির, যেটি দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম। এই মন্দির শুধু ভারত নয়, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শিবভক্তদের জন্য আধ্যাত্মিক আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।

মন্দিরের ইতিহাস

কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের ইতিহাস অত্যন্ত প্রাচীন। বহুবার ধ্বংসস্তূপের উপর থেকে নতুন করে গড়ে উঠেছে এই মন্দির। মন্দিরটির বর্তমান রূপটি অহল্যা বাঈ নির্মাণ করান বলে মনে করা হয়। মন্দিরের সঙ্গে বহু পুরাণ ও কিংবদন্তি জড়িত।

শিবের আলোক শিখা

পুরাণ অনুসারে, একবার ব্রহ্মা ও বিষ্ণু যার মধ্যে শ্রেষ্ঠ সে নিয়ে বিতর্ক করছিলেন। তখন মহাদেব একটি আলোক শিখায় স্বর্গ, মর্ত্য ও পাতালকে বিদ্ধ করে দিয়েছিলেন। সেই আলোক শিখা থেকেই কাশী বিশ্বনাথের জ্যোতির্লিঙ্গের সৃষ্টি হয়েছিল। এই জ্যোতির্লিঙ্গই মহাদেবের অন্যতম প্রতীক। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, কাশীতে মৃত্যু হলে মোক্ষ পাওয়া যায়। হিন্দু ধর্মানুসারিদের বিশ্বাস, মহাদেবের এই পবিত্র শহরে মৃত্যু হলে আত্মা মোক্ষের পথে চলে যায়।

কেন কাশী বিশ্বনাথ মন্দির দেখতে হবে

  • আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা: মন্দিরের পবিত্র পরিবেশে মন শান্তি খুঁজে পাবেন।
  • ঐতিহাসিক গুরুত্ব: হাজার বছরের পুরনো ইতিহাসের সাক্ষী এই মন্দির।
  • স্থাপত্যের সৌন্দর্য: মন্দিরের স্থাপত্য শৈলী অত্যন্ত মনোহর।
  • গঙ্গার তীরে: মন্দিরের পাশেই পবিত্র গঙ্গা নদী।
  • সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধি: কাশী শহরের সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধি উপভোগ করতে।

কিভাবে যাবেন বারাণসী:

কাশী ভারতের অন্যান্য শহর থেকে ভালভাবে যোগাযোগ করা যায়। আপনি ট্রেন, বাস বা বিমান যোগে কাশী যেতে পারেন। মন্দিরে পৌঁছাতে স্থানীয় পরিবহন ব্যবস্থা ব্যবহার করতে পারেন।

  • বিমানে: আপনি ফ্লাইট বুক করে কলকাতা থেকে বারাণসী যেতে পারেন। কলকাতা এবং বারাণসীর মধ্যে মোট ফ্লাইট সময় প্রায় 1 ঘন্টা 50 মি।
  • ট্রেনে: আপনি ট্রেনে ভ্রমণ করে কলকাতা থেকে বারাণসী পৌঁছাতে পারেন। কলকাতা থেকে বারাণসী ট্রেনে প্রায় 9 ঘন্টা সময় লাগে 35 মি. আপনি কলকাতা থেকে ট্রেন ধরে বারাণসীতে নামতে পারেন।
  • বাসে:
    প্রথমে: বিহার শরীফ পৌঁছানোর জন্য কলকাতা থেকে একটি বাস নিন। বাসে ভ্রমণ হল কলকাতা থেকে বিহার শরীফ পৌঁছানোর অন্যতম উপায়। কলকাতা এবং বিহার শরীফের মধ্যে মোট যাত্রা একটি বাসে প্রায় 11 ঘন্টা লাগে।

    তারপর: বারাণসী পৌঁছানোর জন্য বিহার শরীফ থেকে একটি ট্রেন নিন।
    আপনি ট্রেনে ভ্রমণ করে বিহার শরীফ থেকে বারাণসী পৌঁছাতে পারেন। বিহার শরীফ থেকে বারাণসী ট্রেনে প্রায় 6 ঘন্টা 14 মি সময় লাগে। আপনি বিহার শরীফ থেকে ট্রেন ধরে বারাণসীতে নামতে পারেন।

কখন যাবেন কাশী বিশ্বনাথ

সারা বছরই কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরে যাওয়া যায়। তবে শীতকালে আবহাওয়া অনেক সুন্দর হয়।

কাশী বিশ্বনাথ মন্দির শুধু একটি মন্দির নয়, এটি হিন্দু ধর্মের আধ্যাত্মিক কেন্দ্র।

2. অমৃতসরের স্বর্ণ মন্দির: একটি ভ্রমণ গাইড

স্বর্ণ মন্দির
Picture credit: magicbricks.com

শিখ ধর্মের স্বর্ণময় হৃদয়

পাঞ্জাবের অমৃতসরের স্বর্ণ মন্দির, অর্থাৎ হরমন্দির সাহিব, শুধু ভারত নয়, বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন ও পবিত্র তীর্থস্থান। সোনার অলংকরণে ঝকমকে এই মন্দিরটি শুধু শিখ ধর্মের অনুসারীদের কাছেই নয়, সকল ধর্মের মানুষের কাছে আধ্যাত্মিক আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।

ইতিহাসের ছোঁয়া

১৬শ শতাব্দীর শেষের দিকে গুরু রাম দাস এই মন্দিরের নির্মাণের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। পরবর্তীকালে মহারাজা রঞ্জিত সিং এই মন্দিরটিকে সোনার আস্তরণ দিয়ে আরও ঝকমকে করে তোলেন। মন্দিরের মূল কাঠামোটি মার্বেল দিয়ে তৈরি এবং এর উপরের অংশ প্রায় ৪০০ কেজি সোনার পাত দিয়ে মোড়া।

আধ্যাত্মিক চেতনা

হরমন্দির সাহিব শুধু একটি মন্দির নয়, এটি শিখ ধর্মের অনুসারীদের জন্য জীবন ও আধ্যাত্মিকতার কেন্দ্র। মন্দিরের মধ্যে অবস্থিত গুরু গ্রন্থ সাহিব, শিখ ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ, যা শিখদের কাছে শেষ গুরু হিসেবে পূজিত হয়। মন্দিরের প্রতিটি কোণে আধ্যাত্মিক শান্তি ও একাত্মতার অনুভূতি মেলে।

পংক্তি ভোজনের অনন্য অভিজ্ঞতা

স্বর্ণ মন্দিরে পংক্তি ভোজন একটি অনন্য অভিজ্ঞতা। ধনী-গরীব, উচ্চ-নীচ নির্বিশেষে সকলেই একসাথে মেঝেতে বসে লঙ্গর গ্রহণ করেন। এই পংক্তি ভোজন শুধু খাবার নয়, এটি সমতা ও ভ্রাতৃত্বের প্রতীক।

কেন অবশ্যই দেখতে হবে স্বর্ণ মন্দির

  • ঐতিহাসিক গুরুত্ব: শিখ ধর্মের ইতিহাস ও সংস্কৃতি জানার জন্য।
  • আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা: মনের শান্তি খুঁজে পেতে।
  • সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধি: পংক্তি ভোজনের মতো অনন্য অভিজ্ঞতা উপভোগ করতে।
  • স্থাপত্যের সৌন্দর্য: সোনার ঝকমকে ও মার্বেলের মিশেলে নির্মিত এই মন্দিরটি দেখতে অবশ্যই চোখ জুড়িয়ে যাবে।
  • সমাজ সেবা: মন্দিরের পরিচালনা ও সেবাকর্মীদের নিঃস্বার্থ সেবা দেখে আপনিও অনুপ্রাণিত হবেন।

কিভাবে যাবেন অমৃতসর স্বর্ণ মন্দির

অমৃতসর ভারতের অন্যান্য শহর থেকে ভালভাবে যোগাযোগ করা যায়। আপনি ট্রেন, বাস বা বিমান যোগে অমৃতসরে যেতে পারেন। মন্দিরে পৌঁছাতে স্থানীয় পরিবহন ব্যবস্থা ব্যবহার করতে পারেন।

  • বিমানে: আপনি একটি ফ্লাইট বুকিং করে কলকাতা থেকে অমৃতসর যেতে পারেন। কলকাতা এবং অমৃতসরের মধ্যে মোট ফ্লাইট সময় প্রায় 5 ঘন্টা 15 মি।
  • ট্রেনে: আপনি ট্রেনে ভ্রমণ করে কলকাতা থেকে অমৃতসর পৌঁছাতে পারেন। কলকাতা থেকে অমৃতসর ট্রেনে প্রায় ২৮ ঘন্টা ৫৫ মি. আপনি কলকাতা থেকে ট্রেন ধরে অমৃতসরে নামতে পারেন।
  • ট্রেন-বাসে:
    প্রথমে:- কলকাতা থেকে নতুন দিল্লি পৌঁছানোর জন্য একটি ফ্লাইট নিন
    আপনি একটি ফ্লাইট বুকিং করে কলকাতা থেকে নয়াদিল্লি যেতে পারেন। কলকাতা এবং নয়াদিল্লির মধ্যে মোট ফ্লাইট সময় প্রায় 2 ঘন্টা 10 মি।

    তারপর:- অমৃতসর পৌঁছানোর জন্য নয়াদিল্লি থেকে একটি বাস নিন
    বাসে ভ্রমণ হল নতুন দিল্লি থেকে অমৃতসর পৌঁছানোর অন্যতম উপায়। নয়াদিল্লি এবং অমৃতসরের মধ্যে মোট যাত্রা একটি বাসে প্রায় 11 ঘন্টা 12 মিনিট লাগে।

স্বর্ণ মন্দিরে যাবার সেরা সময়

সারা বছরই স্বর্ণ মন্দিরে যাওয়া যায়। তবে শীতকালে আবহাওয়া অনেক সুন্দর হয়।

স্বর্ণ মন্দির ভারতীয় সংস্কৃতি ও আধ্যাত্মিকতার একটি জ্বলন্ত উদাহরণ।

আরও পড়ুন: ওড়িশার সেরা 12 দর্শনীয় স্থান কোনগুলি

3. কামাক্ষ্যা মন্দির: রহস্যময়ী দেবীর আরাধনা

কামাক্ষ্যা মন্দির
Picture credit: tv9bangla.com

অসমের আধ্যাত্মিক হৃদয়

গুয়াহাটির নীলাচল পাহাড়ে অবস্থিত কামাক্ষ্যা মন্দির শুধু একটি মন্দির নয়, এটি হিন্দু ধর্মের তান্ত্রিক শাখার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান। দেবী কামাখ্যা শক্তিপীঠের দেবী, এখানে বিশেষভাবে পূজিতা।

মন্দিরের ইতিহাস ও গুরুত্ব

১২ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মঙ্গলদের আক্রমণে প্রথম কামাখ্যা মন্দির ধ্বংস হয়েছিল। এরপরও কয়েবার আক্রমণ হয়েছে এবং পুনরায় নির্মিত হয়েছে। বর্তমান কামরূপ কামাখ্যা মন্দিরটি অহম রাজাদের রাজত্বকালে নির্মিত।

পুরাণ অনুসারে, দেবী সতীর দেহের যোনি এই স্থানে পড়েছিল বলে কামাখ্যা মন্দিরকে ৫১ শক্তিপীঠের অন্যতম বলে মনে করা হয়। মন্দিরের গর্ভগৃহে কোনো মূর্তি নেই, শুধু একটি পাথরের গর্ত রয়েছে যাকে দেবীর যোনি বলে মনে করা হয়। এই গর্ত থেকে সারা বছর জল বের হতে থাকে।

অম্বুবাচী মেলা

কামাখ্যা মন্দিরের সবচেয়ে বিখ্যাত উৎসব হল অম্বুবাচী মেলা। এই সময় দেবীর ঋতুচক্রের কারণে মন্দির তিন দিনের জন্য বন্ধ থাকে। এই উৎসবটি তন্ত্র সাধনার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত।

কেন কামাক্ষ্যা মন্দির দেখতে হবে

  • আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা: তন্ত্র সাধনার সাথে যুক্ত এই মন্দিরে আধ্যাত্মিক শান্তি খুঁজে পাবেন।
  • ঐতিহাসিক গুরুত্ব: হাজার বছরের পুরনো ইতিহাসের সাক্ষী এই মন্দির।
  • প্রাকৃতিক সৌন্দর্য: নীলাচল পাহাড়ের মনোরম পরিবেশে অবস্থিত।
  • সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধি: অসমের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সাক্ষী।
  • অম্বুবাচী মেলা: এই বিখ্যাত উৎসব দেখার জন্য।

কিভাবে যাবেন কামাক্ষ্যা মন্দির

গুয়াহাটি ভারতের অন্যান্য শহর থেকে ভালভাবে যোগাযোগ করা যায়। আপনি ট্রেন, বাস বা বিমান যোগে গুয়াহাটি যেতে পারেন। মন্দিরে পৌঁছাতে স্থানীয় পরিবহন ব্যবস্থা ব্যবহার করতে পারেন।

  • বিমানে: মন্দিরটি গুয়াহাটি বিমানবন্দর থেকে প্রায় 20 কিমি দূরে। গুয়াহাটি বিমানবন্দর ভারতের সমস্ত বড় বিমানবন্দরের সাথে সংযুক্ত। নিয়মিত ফ্লাইটগুলি এটিকে কলকাতা, নতুন দিল্লি, বাগডোগরা, চেন্নাই এবং ভারতের অন্যান্য শহরের সাথে সংযুক্ত করে।
  • রেলওয়ে: কামাখ্যা মন্দির গুয়াহাটি রেলওয়ে স্টেশন থেকে প্রায় 6 কিমি দূরে। গুয়াহাটি রেলওয়ে স্টেশন উত্তর-পূর্ব ভারতের বৃহত্তম রেলওয়ে স্টেশন। নিয়মিত ট্রেনের মাধ্যমে সমস্ত প্রধান শহরের সাথে ভালভাবে সংযুক্ত।
    এছাড়াও একটি পৃথক কামাখ্যা রেলওয়ে স্টেশন রয়েছে, যা মন্দিরের কাছাকাছি, তবে তুলনামূলকভাবে ছোট।
  • হেঁটে: আপনার যদি পর্বতারোহণের মনোভাব থাকে এবং আরোহণের মাধ্যমে মন্দিরের শীর্ষে পৌঁছানোর ইচ্ছা থাকে তবে আপনি নীলাচল পাহাড়ের নীচে থেকে কামাখ্যা মন্দিরের সাথে সংযোগকারী দুটি পাথর কাটা সিঁড়ি ব্যবহার করে তা করতে পারেন।

কামাক্ষ্যা মন্দিরে যাওয়ার সেরা সময়

সারা বছরই কামাক্ষ্যা মন্দিরে যাওয়া যায়। তবে অম্বুবাচী মেলার সময় মন্দিরে ভক্তদের ভিড় জমে।

কামাক্ষ্যা মন্দির ভারতে তান্ত্রিক সাধনার একটি কেন্দ্রবিন্দু

আরও পড়ুন: ঘাটশিলা ভ্রমণ গাইড – দর্শনীয় স্থান, কিভাবে যাবেন

4. তিরুপতি তিরুমালা ভেঙ্কটেশ্বর স্বামী মন্দির: ভক্তির আধ্যাত্মিক আশ্রয়স্থল

তিরুপতি
Picture credit:tv9bangla.com

ভারতে হিন্দু ধর্ম চর্চার কেন্দ্রবিন্দু

অন্ধ্রপ্রদেশের তিরুপতি শহরে অবস্থিত তিরুমালা পাহাড়ের শীর্ষে বিराजমান তিরুপতি বালাজি মন্দির শুধু একটি মন্দির নয়, এটি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য এক আধ্যাত্মিক আশ্রয়স্থল। ভগবান শ্রী বিষ্ণুর এই অবতার, ভেঙ্কটেশ্বর স্বামী, লক্ষ লক্ষ ভক্তের কাছে শ্রদ্ধার পাত্র।

পাহাড়ের শীর্ষে স্বর্গ

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৮৫৩ মিটার উঁচুতে অবস্থিত এই মন্দিরটি সাতটি পাহাড়ের মধ্যে সবচেয়ে উঁচু বেঙ্কটাদ্রিতে অবস্থিত। প্রতিটি পাহাড়ের নিজস্ব গুরুত্ব রয়েছে এবং পুরাণে এর উল্লেখ পাওয়া যায়।

দ্রাবিড় স্থাপত্যের অপরূপ সৌন্দর্য

খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ অব্দ নাগাদ নির্মিত এই মন্দিরটি দ্রাবিড় স্থাপত্যশৈলীর একটি নিদর্শন। মন্দিরের প্রধান দেবতা ভেঙ্কটেশ্বর স্বামীর বিগ্রহ পূর্বমুখী করে গর্ভগৃহে স্থাপিত। গর্ভগৃহটির নাম ‘আনন্দ-নিলয়ম্’।

বিশ্বের সবচেয়ে ধনী মন্দির

তিরুপতি বেঙ্কটেশ্বর মন্দির বিশ্বের সবচেয়ে ধনী মন্দিরগুলির একটি। প্রতিদিন হাজার হাজার ভক্ত এই মন্দিরে আসেন ভগবানের দর্শন করতে।

কেন তিরুপতি মন্দির দেখতে হবে

  • আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা: ভগবান ভেঙ্কটেশ্বরের দর্শন করে আধ্যাত্মিক শান্তি খুঁজে পাবেন।
  • ঐতিহাসিক গুরুত্ব: হাজার বছরের পুরনো ইতিহাসের সাক্ষী এই মন্দির।
  • স্থাপত্যের সৌন্দর্য: দ্রাবিড় স্থাপত্যশৈলীর একটি নিদর্শন।
  • প্রাকৃতিক সৌন্দর্য: তিরুমালা পাহাড়ের মনোরম পরিবেশে অবস্থিত।
  • সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধি: আন্ধ্রপ্রদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সাক্ষী।

কিভাবে যাবেন তিরুপতি

তিরুপতি ভারতের অন্যান্য শহর থেকে ভালভাবে যোগাযোগ করা যায়। আপনি ট্রেন, বাস বা বিমান যোগে তিরুপতি যেতে পারেন। মন্দিরে পৌঁছাতে স্থানীয় পরিবহন ব্যবস্থা ব্যবহার করতে পারেন।

  • বিমানে: কলকাতা থেকে তিরুপতি পৌঁছানোর দ্রুততম উপায়টি আপনাকে 6ঘন্টা 18মি সময় লাগে, যা হল কলকাতা-চেন্নাই ইন্ডিগো ফ্লাইট তারপর চেন্নাই থেকে ট্যাক্সি নিয়ে তিরুপতি।
  • ট্রেন: রেল দূরত্ব 1594 কিমি। কলকাতা থেকে তিরুপতি পৌঁছতে দুরন্ত এক্সপ্রেস সময় নেয় 23 ঘন্টা 15 মি।
  • কিভাবে তিরুপতি থেকে তিরুমালা পৌঁছাবেন: প্রতি 2 মিনিটে একটি বাসের ফ্রিকোয়েন্সি সহ তিরুমালার তিরুপতি থেকে সরাসরি বাস পরিষেবা রয়েছে।

তিরুপতি যাবার সেরা সময়

সারা বছরই তিরুপতি মন্দিরে যাওয়া যায়। তবে উৎসবের সময় মন্দিরে ভক্তদের ভিড় জমে।

5. পুরী জগন্নাথ মন্দির: রহস্যময়তায় ভরা আধ্যাত্মিক আশ্রয়স্থল

পুরী জগন্নাথ মন্দির

ভারতের অন্যতম পবিত্র তীর্থস্থান

ওড়িশার পুরী শহরে অবস্থিত জগন্নাথ মন্দির শুধু একটি মন্দির নয়, এটি হিন্দু ধর্মের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রার মূর্তি এই মন্দিরে বিশেষভাবে পূজিত হয়।

রথযাত্রার জৌলুস

প্রতি বছর জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত রথযাত্রা উৎসবের সময় পুরী শহরের মধ্য দিয়ে জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রার বিশাল রথ টানা হয়। এই উৎসব দেখতে দেশ-বিদেশ থেকে লক্ষ লক্ষ ভক্ত এখানে সমবেত হন।

নব কলেবরের রহস্য

প্রতি ৮, ১২ ও ১৯ বছর অন্তর মন্দিরের মূর্তিগুলো বদলে দেওয়া হয়। এই প্রক্রিয়াকে নব কলেবর বলা হয়। নব কলেবরের সময় পবিত্র নিম গাছের কাঠ দিয়ে নতুন মূর্তি তৈরি করা হয়। এই প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত গোপনীয়ভাবে সম্পন্ন হয়। মন্দিরের একজন নির্দিষ্ট কাঠুরে একাকী এই কাজটি করে থাকেন।

মূর্তি বদলের রহস্য

নব কলেবরের পর মূর্তি বদলের সময়ও অনেক রহস্যময় ঘটনা ঘটে। পুরোহিতদের চোখ বেঁধে, হাতে দস্তানা পরিয়ে এই কাজটি সম্পন্ন করা হয়। এই সময় মন্দিরের বাইরে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয় এবং গোটা শহরে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়।

কেন জগন্নাথ মন্দির দেখতে হবে

  • আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা: জগন্নাথদেবের দর্শন করে আধ্যাত্মিক শান্তি খুঁজে পাবেন।
  • ঐতিহাসিক গুরুত্ব: হাজার বছরের পুরনো ইতিহাসের সাক্ষী এই মন্দির।
  • সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধি: ওড়িশার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সাক্ষী।
  • রথযাত্রা উৎসব: এই বিখ্যাত উৎসব দেখার জন্য।
  • রহস্যময়তা: নব কলেবরের মতো অনেক রহস্যময় ঘটনার জন্য।

কিভাবে যাবেন পুরী

পুরী ভারতের অন্যান্য শহর থেকে ভালভাবে যোগাযোগ করা যায়। আপনি ট্রেন, বাস বা বিমান যোগে পুরী যেতে পারেন। মন্দিরে পৌঁছাতে স্থানীয় পরিবহন ব্যবস্থা ব্যবহার করতে পারেন।

  • বিমানে-বাসে:
    প্রথমে : ভুবনেশ্বর পৌঁছানোর জন্য কলকাতা থেকে একটি ফ্লাইট নিন
    আপনি একটি ফ্লাইট বুকিং করে কলকাতা থেকে ভুবনেশ্বর যেতে পারেন। কলকাতা এবং ভুবনেশ্বরের মধ্যে মোট ফ্লাইট সময় প্রায় 1 ঘন্টা।

    তারপর : ভুবনেশ্বর থেকে পুরী পৌঁছানোর জন্য একটি বাস নিন
    ভুবনেশ্বর থেকে পুরী পৌঁছানোর অন্যতম উপায় হল বাসে ভ্রমণ। ভুবনেশ্বর এবং পুরীর মধ্যে মোট যাত্রা একটি বাসে প্রায় 1 ঘন্টা 15 মিনিট লাগে।
  • ট্রেনে : কলকাতা থেকে পুরী ট্রেনে প্রায় 7 ঘন্টা 45 মি. আপনি কলকাতা থেকে ট্রেন ধরে পুরীতে নামতে পারেন।
  • বাসে : কলকাতা থেকে পুরী পৌঁছানোর অন্যতম উপায় হল বাসে ভ্রমণ। একটি বাসে প্রায় 10 ঘন্টা 30 মিটার লাগে।

কখন যাবেন পুরী

সারা বছরই জগন্নাথ মন্দিরে যাওয়া যায়। তবে রথযাত্রার সময় মন্দিরে ভক্তদের ভিড় জমে।

Leave a Comment