10 টা একদিনে ঘুরে আসার জায়গা – কোথায়, কিভাবে যাবেন সব খবর

কলকাতার কাছে ১০টা একদিনে ঘুরে আসার জায়গা কোথায়, কিভাবে

একদিনে ঘুরে আসার জায়গা কলকাতার ভিতরে ও উপকন্ঠে প্রচুর। কলকাতায় দর্শনীয় স্থান কি কি রয়েছে? নাহ, আমি দর্শনীয় স্থান বলতে চাই না। তবে, দেখার জিনিস এই শহরে অনেক রয়েছে। মন চাইলে, হাঁটতে পারলে, অনেক কিছু আছে দেখার জন্য, নতুন উপলব্ধির জন্য, একা বা পরিবারের সাথে। কলকাতা থেকে ১০টা একদিনে ঘুরে আসার বা একটি রাত্রিবাস করার মত স্থান সম্বন্ধে তথ্য দিলাম।

শুধু খাস কলকাতায় কেন, শহরতলীতেও প্রচুর দেখার জিনিস রয়েছে। এই শহরের এক একটা প্রান্ত যেন এক এক রকমভাবে কথা বলে। হোক না জন্মদিন, রাখি-বন্ধন বা সপ্তাহান্তের ছুটি, হাতে থাকা সময় অনুযায়ি অর্থাৎ একবেলা, একদিন বা দেড়দিন ছুটি থাকলে বেড়িয়ে পড়ুন একা, দুজন বা পুরো পরিবারের সাথে। অনাবিল আনন্দে ভ্রমন করুণ কলকাতার মধ্যে বা কলকাতার আশেপাশে। ৫টি খুব ছোট ও ৪টি রাত্রি বাস উপযোগী কলকাতার কাছাকাছি ঘোরার জায়গার তথ্য দেওয়া হল।

সেরা ১০টি কলকাতার কাছাকাছি ঘোরার জায়গা- One day trip near kolkata


1. ইকো পার্ক, কলকাতা

ইকো পার্ক, কলকাতা
Picture credit: telegraphindia.com

কলকাতার কাছাকাছি ঘোরার জায়গা খুঁজলে সবার আগে বলতে হয় রাজারহাট নিউ টাউনে অবস্থিত ইকো ট্যুরিজ্‌ম পার্ক বা সংক্ষেপে ইকো পার্কটি যেটি ভারতের বৃহত্তম আরবান পার্ক। এর অপর নাম প্রকৃতি তীর্থ। ছুটি নেই বলে যাঁরা বেশি দূর ঘুরতে যেতে পারছেন না, অথচ কর্মব্যস্ত সপ্তাহের মাঝে একটি দিন নিরিবিলিতে কাটাতে চান, তাঁরা কলকাতার কাছাকাছি এক দিনের জন্য ঘুরে আসতেই পারেন ইকোপার্ক থেকে। ঘরের কাছেই এমন পৃথিবী দর্শনের সুযোগ এ দেশে আর একটিও নেই। আর হাতে যদি দু’দিন থাকে, তবে প্রিয়জনের সঙ্গে লেকের ধারে “একান্তে কটেজ” এ বিলাসবহুল রাত্রিবাসও করতে পারেন।

২০১৩ সালের পয়লা জানুয়ারি থেকে সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হয় ইকো পার্ক, ১০৪ একর জলাভূমি সহ এই পার্কের আয়তন ৪৮০ একর। জলাভূমির মাঝে একটি দ্বীপও আছে যা ‘সবুজসাথী’ নামে পরিচিত। লন্ডনের “মাদাম তুসো” মিউজিয়ামের অনুকরণে ইকোপার্কের উল্টো দিকে তৈরি করা হয় “মাদার ওয়াক্স মিউজিয়াম”।

পার্কের ভিতর কী কী দেখবেন?

পার্কে এত দেখার জিনিষ আছে যে একদিনে সবকিছু ঘুরে দেখা প্রায় অসম্ভব। আগে থেকে একটু প্লান করে নিলে বেশ অনেকটা সঠিক পরিকল্পনা থাকলে তবেই বেশ খানিকটা ঘুরতে পারবেন। বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের প্রতিরূপগুলি দেখুন। এখানে দেখতে পারেন চিনের প্রাচীর, রোমের বিখ্যাত কলোসিয়াম, ব্রাজিলের রিও-ডি-জেনিরোর বিখ্যাত যিশুর মূর্তি, জর্ডনের পেট্রা, মিশরের পিরামিড, ভারতের তাজমহল এবং চিলির রহস্যময় দ্বীপ ইস্টার আইল্যান্ডের বিভিন্ন ভাস্কর্য (সপ্তম আশ্চর্যের জন্য আলাদা টিকিট লাগে) ।

একদিনে ঘুরে আসার জায়গা কি ইকো পার্ক?

ইকো পার্কের ভিতর আছে সুন্দর একটা চিল্ড্রেন্স পার্ক। তার ভিতরে ট্রি হাউসের মতো বাড়িও আছে। সিঁড়ি দিয়ে উঠে উপর থেকে দেখতে বেশ ভালই লাগে। আর আছে ডিয়ার পার্ক, পাখিবিতান, রেন ফরেস্ট, বিভিন্ন ফলমূলের বাগান, চা-বাগান, জোড় বাংলো মন্দির, ফ্লোটিং মিউজিক ফাউন্টেন, কাচের তৈরি গ্লাস হাউস, পার্কের মধ্যে কাফে একান্তে, প্যারিসের আইফেল টাওয়ার, ইকো রির্সট, জাপানি ফরেস্ট, গল্ফ কোর্স, অ্যাম্ফিথিয়েটার, বাটারফ্লাই গার্ডেন, হেলিকোনিয়া গার্ডেন, স্কাল্পচার গার্ডেন। গাছ-গাছালি দিয়ে ঘেরা বাঁধানো পথ একে বেঁকে চলে গেছে একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে, বিস্তীর্ণ জলাশয়ের পাশে পাশে সবুজ গালিচার মত মাঠ, বসার জন্য কাঠের বেঞ্চ শান্তিনিকেতনের পরিবেশের আদলে তৈরি রবি অরণ্য। পরিবারে সবার সাথে একটা দিন বেড়াবার দারুন জায়গা।

কী ভাবে যাবেন ইকো পার্ক

ইকো পার্ক যাওয়ার বাস আসলে কলকাতার বিভিন্ন জায়গা থেকে সরাসরি পাওয়া যায়। হাওড়া ও শিয়ালদহ থেকে প্রতি ঘণ্টায় এসি বাস ছাড়ে। তা বাদে সরকারি ও বেসরকারি অনেক বাস আছে শুধু জিজ্ঞাসা করে উঠলেই হবে। এ ছাড়াও রাজারহাটের বিভিন্ন জায়গা থেকে টোটো করেও পৌঁছতে পারেন ইকোপার্কের গেটে।

ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোতে শিয়ালদহ থেকে সেক্টর ৫ পর্যন্ত এসে, সেখান থেকে টোটো করে অনেক কম সময়ে পৌছে যাবেন।

কত টাকার টিকিট লাগে

ইকো পার্কে ঢুকতে মাত্র ৩০ টাকার টিকিট লাগে। তবে ভিতরে বিভিন্ন রাইডে চড়তে আলাদা টিকিট কাটতে হয়।

কটা পর্যন্ত খোলা থাকে ইকো পার্ক?

ইকোপার্ক খোলা থাকে প্রতি মঙ্গলবার থেকে রবিবার – বর্তমানে সময় দুপুর আড়াইটে থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত। শুধু রবিবার এবং সরকারি ছুটির দিন দুপুর ১২টায় খোলে পার্ক।

মনে রাখবেনঃ ইকো পার্ক প্রতি সোমবার বন্ধ থাকে

আর শীতকালে যেহেতু তাড়াতাড়ি সন্ধ্যা হয় তাই সেই অনুযায়ী পার্কের খোলা বা বন্ধ ঘন্টা খানেক আগে হয়। অর্থাৎ প্রতি মঙ্গলবার থেকে শনিবার দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত এবং রবিবার বা কোনও সরকারি ছুটির দিনে বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত খোলা থাকে ইকো পার্ক।

2. রাসবাড়ি গার্ডেন হাউস – বেলুড়

রাসবাড়ি গার্ডেন হাউস - বেলুড়
Picture credit: pinterest.com

কলকাতার কাছাকাছি ঘোরার জায়গাগুলির মধ্যে রাসবাড়ি গার্ডেন হাউস অন্যতম একটি। এটি বেলুড় মঠের প্রায় লাগোয়া একটি স্বল্প পরিচিত হেরিটেজ মন্দির কমপ্লেক্স। রাসবাড়ির বিশেষত্ব হল এখানে অত্যাধুনিক সুবিধা সহ থাকার জায়গা বা ঘরগুলি সাজানো, সাথে সাথে মন্দিরের একটা সুন্দর পরিবেশ চারিদিকে ছেয়ে থাকে। গার্ডেন হাউস একটা অন্যরকম পরিবেশে ছোট্ট ছুটি কাটানোর জন্য একটি সবচেয়ে ভাল জায়গা। এখানে থাকার ব্যবস্থা দুটি বিল্ডিং জুড়ে বেশ ভাল।একেবারে নদীর ধারে রয়েছে সুন্দর একটি লন। সেখানে রঙিন ছাতার নীচে বসার ব্যবস্থা রয়েছে। সত্যই বলতে কলকাতার মধ্যে ঘোরার জায়গা হিসাবে এই রাসবাড়ি এক্কেবারে আদর্শ স্থান। গঙ্গার অপর তীরেই রয়েছে দক্ষিণেশ্বরের কালী মন্দির।
রাসবাড়ি গার্ডেন হাউস‘এর সম্পুর্ন তথ্য জানুন


3. পরেশনাথ মন্দির কলকাতা

পরেশনাথ মন্দির কলকাতা
Picture credit: telegraphindia.com

সুন্দরী আমাদের এই শহর কলকাতা এত বিভিন্নতায় পরিপুর্ন যে আমরা প্রায়ই অবাক হয়ে যাই, যখন নতুন কিছু আবিস্কার করি যেটা আমাদের সন্নিকটেই এতদিন অজানা ছিল। সেরকমই একটি জায়গা হল পরেশনাথ জৈন মন্দির। এখানে রয়েছে অদ্ভুত এক প্রশান্তি, যা মুহূর্তে আপনার মন ভালো করে দেবে। পরেশনাথ মন্দির চত্ত্বরের এর ভিতরে একটি সুন্দর বাগান আছে এবং পুরো মন্দির চত্বরটি গ্লাস মোজাইক, ইউরোপীয় মূর্তি, প্রচুর ফোয়ারা এবং ঝকঝকে জলাশয় তাতে আবার অনেক রঙিন মাছ রয়েছে।

কলকাতার ভিতরে একদিনে ঘুরে আসার জায়গা হিসাবে একদম প্রথম সারিতে থাকবে এই পরেশনাথ মন্দির। আরও আনন্দ নিতে, দেখতে পাবেন গেটের বাইরে এই মাছ খাবার ও বিক্রি হচ্ছে, ওই খাবার মাছগুলিকে খাওয়াতে পারেন। পরেশনাথ মন্দিরটি মুল্যবান ধাতু, সাদা মার্বেল, হীরা, রুবি, মুক্তা, প্রবাল ইত্যাদি দিয়ে সাজানো। মন্দিরের প্রতি ইঞ্চিতে সূক্ষ্ম কারুকার্য দেখে অবাক হতেই হয়।

এখানে মুলত চারটি মন্দির আছে। প্রধান মন্দিরের দক্ষিণে রয়েছে চন্দ্র প্রভুজী মন্দির। মন্দিরের উত্তর দিকে আছে মহাবীর স্বামী মন্দির। আবার প্রধান মন্দিরের ডানদিকে যে মন্দিরটিতে আছেন দাদাওয়াড়ি ( কুশলজী মহারাজের পদচিহ্ন পূজিত হয় ) । প্রধান মন্দিরটিতে জৈন ১০ম অবতার শীতলানাথ জির মূর্তি স্থাপিত আছে। এই মূর্তির একটি বিশেষত্ত হলো এই মূর্তির কপালে একটি হীরে খচিত আছে। আর এই মূর্তির সামনে একটি ঘি এর বাতি প্রজ্বলিত যা ১৮৬৭ সাল থেকে নিরন্তর জ্বলছে। এর প্রজ্বলিত শিখা জৈনদের বিশ্বাস অহিংসা এবং শান্তির প্রতীক যা চিরকাল একইভাবে প্রজ্জ্বলিত থাকবে।

পরেশনাথ মন্দির কখন খোলা থাকে

মন্দির খোলার সময় সকাল ৬.00 টা থেকে ১১.00 টা পর্যন্ত এবং বিকেল সাড়ে ৩ টা থেকে সন্ধ্যা ৭.00 টা পর্যন্ত। কোন প্রভেশ মুল্য নেই।

পরেশনাথ মন্দির কোথায় ও কীভাবে যাবেন?

কোথায় – এই পরেশনাথ মন্দিরটি কলকাতার মানিকতলা এবং গৌরিবাড়ির ঠিক মাঝখানে

কিভাবেবাসে শ্যামবাজার, বিধান নগর বা শিয়ালদহ স্টেশন থেকে গৌরীবাড়ী বা বঙ্গিয় সাহিত্য পরিষদ স্টপেজ এ নামতে হবে, সেখানে থেকে ৪/৫ মিনিট এর হাঁটা পথ।

মেট্রো – শোভাবাজার বা শ্যামবাজার পর্যন্ত মেট্রো, সেখান থেকে থেকে অটোতে গৌরীবাড়ি। তারপর মাত্র পাঁচ মিনিটের হাঁটা দূরত্বে রয়েছে এই মন্দির

4. গঙ্গাকুটির অথবা দ্য ফোর্ট – রায়চক

গঙ্গাকুটির অথবা দ্য ফোর্ট - রায়চক
Picture credit: easemytrip.com

কলকাতার কাছে, কোলাহল মুক্ত, দু-একদিনে ঘুরে আসার জায়গা রায়চকের এই গঙ্গা কুটির। যদিও খরচ একটু উপরের দিকেই। তবে বহু মানুষ কাজের চাপের জন্য লম্বা ছুটি ব্যবস্থা করতে পারছেন না, তাই কলকাতার কাছেই বেড়ানোর ভাল জায়গা খুঁজছেন। এবার তাদের হয়তো দারুন লাগবে।

কলকাতা থেকে ভোরে বেড়িয়ে পড়ুন এবং চাইলে সন্ধের মধ্যেই ফিরে চলে আসুন বাড়ি। একটি গোটা দিন কাটানোর জন্য হুগলি নদীর তীরে। রায়চক কলকাতার কাছে থাকায় বেড়ানোর ষোলআনা মজা তো আছেই। শহর থেকে ৫৫ কিলোমিটার দূরে ডায়মন্ড হারবারের একেবারে কাছেই, রায়চক। এক সময় এখানে একটি দুর্গ ছিল যেটি প্রায় ধ্বংস হতে চলেছিল। পরবর্তীকালে রেডিসন গ্রুপ এই দুর্গটিকে পুনর্নির্মাণ করে একটি পাঁচতারা হোটেলে রূপান্তরিত করায় বর্তমানে এটি একটি মনোরম সপ্তাহান্তের গন্তব্য বলাযেতে পারে। হুগলি নদীর পাড়ের এ তল্লাটের মনোরম আবহাওয়া পর্যটকদের আকর্ষণ করে।

রায়চক গঙ্গাকুটির‘এর সম্পুর্ন তথ্য জানুন

5. মার্বেল প্যালেস – কলকাতা

মার্বেল প্যালেস - কলকাতা
Picture credit: kolkatatourism.travel

বর্তমান সময়ে ইট, কাঠ ও কংক্রিটের শহরের মাঝখানে এক টুকরো মরূদ্যানের মত লাগবে এই প্রাসাদটিকে দেখলে। মার্বেল প্যালেস উত্তর কলকাতায় অবস্থিত উনবিংশ শতকের ফরাসি উপনিবেশিক যুগের একটি বিস্ময়কর স্থাপত্য নিদর্শন। এটি কলকাতার মধ্যে সুন্দর একটি ঘোরার জায়গা।

শোনাযায় এই প্রাসাদ নির্মানে ১২৬ রকমের পাথর ব্যবহার করা হয়েছে, আর তা থেকেই এই নামের উৎপত্তি। এই মার্বেল প্যালেস পরিসরের ভিতরে রাজেন্দ্র মল্লিক ১৮৫৬ সালে একটি চিড়িয়াখানা প্রতিষ্ঠিত করেন। এই চিড়িয়াখানাটি সম্ভবত ভারতবর্ষের প্রথম চিড়িয়াখানা। বর্তমান এ এখানে কিছু পাখি এবং হরিণ অবশিষ্ট আছে । খুব ভালভাবে সংরক্ষিত এই প্রাসাদ, তার সামনে বাগান, সুন্দর ফোয়ারা এবং হ্রদ ছাড়াও প্যালেসের ভিতরে অত্যন্ত সুন্দর আসবাব ও পেন্টিং দ্বারা সজ্জিত।

এগুলো দেখতে দেখতে আপনার অনেক সময় দেড়শ কি দুশ বছর আগেকার কলকাতার সাথে পরিচয় হয়েযাবে। তবে প্রাসাদের ভিতরে ফটোগ্রাফি নিষিদ্ধ কিন্তু প্রাসাদের ভিতর টা ঘুরিয়ে দেখানোর জন্য গাইড আছে। যদিও তার জন্য আপনাকে ব্যয় করতে হবে না। মার্বেল প্যালেস এর কোন প্রবেশমূল্য নেই। তবে আপনাকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পর্যটন বিভাগ থেকে অনুমতি নিতে হবে। তারা এই প্যালেসে প্রবেশের জন্য একটি অনুমোদন চিঠি বানিয়ে দেন সেটি এখানে দেখাতে হয়। অনুমতির জন্য আপনার আইডি মানে আধার বা ভোটার জাতীয় প্রমাণপত্র আনতে হবে। আর নিচের ঠিকানায় যোগাযোগ করতে পারেন।

পর্যটন দপ্তর, পশ্চিমবঙ্গ সরকার
২, ব্র্যাবর্ন রোড, চতুর্থ তল,
কলকাতা – ৭০০০০১

মার্বেল প্যালেস কোথায় অবস্থিত?

প্যালেসটির ঠিকানা হলঃ 46-এ মুক্তরাম বাবু স্ট্রিট পিন কোড -700007
সেন্ট্রাল আভেন্যুর উপর মহাজাতি সদন বা রাম মন্দির থেকে কয়েক মিনিতের হাঁটা পথে এই মার্বেল প্যালেস।

মার্বেল প্যালেস কখন খোলা থাকে

মার্বেল প্যালেস সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। তবে সোমবার এবং বৃহস্পতিবার বন্ধ থাকে

6. লেক ভিউ ইক রিসর্ট – বাওর বিতান

লেক ভিউ ইক রিসর্ট - বাওর বিতান
Picture credit: nomadicweekends.com

বাওর বিতান কলকাতা থেকে সামান্য দূরে একটা দারুন উইকেন্ড গন্তব্য। এটি বনগাঁর থেকে একটু দূরে পাঁচপোতা এলাকায় অবস্থিত। এই বাওর লেক ভিউ ইকো রিসোর্টটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সাথে সুস্থ সবুজ পরিবেশ দুই সমান ভাবে বর্তমান। এই রিসর্টের সংলগ্ন এক বিশাল জলা রয়েছে যা বাওর নামে পরিচিত। একটি মুক্ত আবহাওয়ার মধ্যে যেখানে শহুরে জীবন থেকে দূরে আপনাকে মানুষকে মুগ্ধ করবে।

বাওর বিতান, কলকাতা থেকে একদিনে ঘুরে আসার জায়গা হিসাবে অতি উত্তম। এটি পাঁচপোতায় যে ৮ কিলোমিটার লম্বা বেড়ি বাওরের পাশে উদ্ভূত হর্স-শু’র মত জায়গা এখানে অত্যাধুনিক সুবিধাসম্পন্ন বাসগৃহ, খাদ্য, নৌকা ভ্রমণ, মাছ ধরার সুবিধা রয়েছে। বাওরের প্রাকৃতিক দৃশ্যটি আপনার নিশ্চয়ই ভাল লাগবে।
বাওর বিতান লেক ভিউ রিসর্ট‘এর সম্পুর্ন তথ্য জানুন

7. প্রিন্সেপ ঘাট – কলকাতা

প্রিন্সেপ ঘাট - কলকাতা
Picture credit: riderescaped.com

শহর কলকাতা তার রূপ, গুণ ও সৌন্দর্য্য দিয়ে মুগ্ধ করে রেখেছে পৃথিবীর সকল প্রান্তের মানুষজনকে। আর এই সৌন্দর্যের প্রতীক হিসাবে শামিল হয়েছে প্রিন্সেপ ঘাট। প্রিন্সেপ ঘাট কলকাতার এক ঐতিহ্যপূর্ণ পর্যটক কেন্দ্র, যা ব্রিটিশ আমলে নির্মিত হয়েছিল। আজও সেই নির্মাণের সৌন্দর্য মানুষকে মুগ্ধ করে দেয়। এটি কলকাতা শহরের মধ্যেই এমন একটি জায়গা যেখানে আপনি প্রিয়জনদের সঙ্গে একটা বেলা মানে পুরো বিকেল ও সন্ধ্যাবেলা বারবার কাটাতে চাইবেন। কলকাতায় ঘোরার জায়গা হিসাবে সেরা মনে হবে।

এই ব্যস্ত শহরের মধ্যেই এক টুকরো শান্তির জায়গা যেখানে আছে অনেক গাছ, বাগান, অপরূপ স্থাপত্য, গঙ্গার বুকে সূর্যাস্ত দেখার সুযোগ, নৌকোয় বেড়ানোর ব্যবস্থা, পাশাপাশি সন্ধ্যায় চমৎকার আলোকসজ্জা, দারুন সব ভাল্ভাল খাবারের স্টল অথচ উচ্চগ্রামের আওয়াজও নেই। সব মিলিয়ে একটা দারুন আনন্দের জায়গা। এটা কলকাতায় অত্যন্ত প্রিয় একটা ফটো তলার জায়গা। কলকাতাে একটা সেরা ফটোজেনিক জায়গা বলা যেতে পারে। এই প্যালাডিয়ান পোর্চ ধাঁচে তৈরি প্রিন্সেপ ঘাট সাথে দ্বিতীয় হুগলী সেতু বা বিদ্যাসাগর সেতু। বিকালে অবশ্যই আসুন – আপনি অনেক ছবি না তুলে থাকতে পারবেন না।

প্রিন্সেপ ঘাটের ইতিহাস

১৮৪১সালে জেমস প্রিন্সেপের নামানুসারে এই প্রিন্সেপ ঘাট এর নামকরণ, তিনি হলেন একজন ইংরেজ পণ্ডিত, প্রাচ্য -বিদ, পুরাতাত্ত্বিক ও বিশিষ্ট ভারত তত্ত্ব-বিদ।ভারতের টাঁকশালে মুদ্রা-ধাতু পরীক্ষকের কর্মজীবন শুরু করে মুদ্রা-শাস্ত্র, ধাতুবিদ্যা ও আবহাওয়া বিজ্ঞানে নিজের প্রতিভা ফুটিয়ে তুলেছিলেন।তিনি ধাতু পরীক্ষক হিসাবে কাজ করেছিলেন।

জেমস প্রিন্সেপ কে ছিলেন?

জেমস প্রিন্সেপ ভারতীয় প্রত্নতত্ত্বকে নতুন জীবন দিয়েছিলেন। সম্রাট অশোকের শিলালিপির পাঠোদ্ধার করেছিলেন জেমস প্রিন্সেপ। যখন তিনি ব্রাহ্মীলিপিতে অশোকের দীর্ঘ অনুশাসনের পাঠোদ্ধার করেন, তখন অশোক ও প্রাচীন ভারত সম্পর্কে কেউই বিশেষ কিছু জানতেন না। প্রাচীন মুদ্রাগুলোতে গ্রিক ও ব্রাহ্মীলিপিতে রাজার নাম লেখা থাকত। প্রিন্সেপ গ্রিক হরফ জানতেন, ব্রাহ্মীলিপিতেও দক্ষতা ছিল। তাঁর পরিশ্রমের ফলেই বিশ্বের মানুষ প্রাচীন ভারতের শক্তিশালী শাসক বিহারের অশোক সম্পর্কে জানতে পারে। একই সূত্রে জানা যায় গৌতম বুদ্ধ সম্পর্কেও। তাঁর এই স্মরণীয় অবদান ভারতের প্রাচীনকালের ইতিহাস পুনরাবিষ্কারে ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক ভূমিকা রূপে স্বীকৃত।

8. শ্যামসুন্দরপুর রিভারসাইড রিসর্ট

শ্যামসুন্দরপুর রিভারসাইড রিসর্ট
Picture credit: nomadicweekends.com

দক্ষিণ ২৪ পরগণার ফলতা ব্লকের নদীতীরবর্তী একটি গ্রাম শ্যামসুন্দরপুর হল কলকাতার কাছাকাছি ঘোরার সেরা জায়গা। ডায়মন্ড হারবার থেকে দূরত্ব ১০ কিলোমিটার। এটি একটি সুন্দর সবুজ গ্রাম, যেখানে হুগলি নদী প্রশস্তভাবে প্রবাহিত হয়। কলকাতা থেকে একদিনে ঘুরে আসার জায়গা হিসাবে সবচেয়ে শান্তিপুর্ন। এখানে নদীর কিনারায় রং-বেরঙের পণ্যবাহী জাহাজ অবিরাম যাত্রা করে। বর্ষার সময় নদী আরও আকর্ষণীয় হয়। ঘোর বর্ষার সময় নদী দামাল হলেও বেশ লাগে। নদীর উপরে আসা উদাসী আর ঝোড়ো বাতাসের মাঝে সূর্যাস্তের আকাশে নদীতে রঙ্গীন খেলা দেখা যায়। নদীর জলে স্নান করার সময় তা একটি নতুন রূপ ধারণ করে।
শ্যামসুন্দরপুর রিসর্ট‘এর সম্পুর্ন তথ্য জানুন

9. স্বামীনারায়ন মন্দির – কলকাতা

স্বামীনারায়ন মন্দির - কলকাতা
Picture credit: baps.org

প্রিয়জন বা পরিবারের সবাইকে নিয়ে একসাথে কিছুটা সময় অত্যন্ত শান্তিতে কাটানোর একটা আদর্শ জায়গা হল পৈলানের কাছে স্বামীনারায়ন মন্দির। পৈলানের কাছে হলেও মন্দিরটি যে জায়গায় স্থাপিত তার নাম ভাষা, কলকাতার দিকথেকে গেলে পৈলানের একটু পরেই আসে এই জায়গাটা। স্বামীনারায়ন মন্দিরটি একটু লালচে রঙের অসাধারন স্থাপত্য শৈলির নিদর্শন। এটির ব্যাপ্তি ও উতকর্ষতা আপনাকে মুগ্ধ করবেই। এই মন্দির তৈরিতে ব্যবহার হয় রাজস্থানের লাল বেলে পাথর। কলকাতার কাছাকাছি ঘোরার জায়গা হিসাবে আপনি বারবার আসবেন ভবিষ্যতে। কথিত আছে যে, ভগবান স্বামীনারায়ণ একসময় নীলকান্ত বর্ণি রূপে বঙ্গোপসাগরে সাগর দ্বীপে পবিত্র তীর্থভূমি কপিলমুনির আশ্রম দর্শনের জন্য এই স্থান অতিক্রম করে যান।

প্রায় ২০০ একর এলাকা জুড়ে এই বৃহৎ মন্দির গড়ে তোলা হয়েছে। মন্দিরের গায়ে অসংখ্য দেবদেবীর মূর্তি এবং সূক্ষ্য কারুকাজ। এত নিখুঁত কাজ যুক্ত মন্দির এদিকে খুব কমই দেখা যায়। মন্দিরের দুটি ভাগ লক্ষ করা যায় একটি ওপরে এবং একটি নিচে। নিচে মন্দিরের প্রধান অংশ, এখানে ছবি তোলা সম্পুর্নভাবে বর্জিত। তবে একবার যদি স্বশরীরে এসে মুল মন্দির অর্থাৎ নিচের অংশটি দেখলে আপনার আসা সার্থক মনে হবে। তাছাড়া মন্দিরের নিজস্ব বুকস্টল থেকে শুরু করে, পুজো সামগ্রীর দোকান এবং একটি পুরোপুরি বিরাট ভেজ রেস্টুরেন্ট আছে। মন্দিরের নিজস্ব অনেক বড় পার্কিং ব্যবস্থা থাকায় প্রাইভেট গাড়িতে আসা আরও সহজ হয়।

কিভাবে যাবেন স্বামীনারায়ন মন্দির

ট্রেনে – নিকটতম স্টেশন হলো মাঝেরহাট। স্টেশন থেকে বেরিয়ে ওভার ব্রিজ পার করে ডায়মন্ড হারবার রোডের ওপরে চলে আসতে হবে। তারপর এই রাস্তাতেই ডায়মন্ড হারবার, রায়চক, নূরপুর গামি বাসে উঠে পৈলান মন্দির বললেই নামিয়ে দেবে।

বাসে – হাওড়া বা শিয়ালদা থেকে কে এই রুটের যেকোনো বাসে উঠে জোকা পর্যন্ত এসে, জোকা থেকে মন্দির যাওয়ার অটো পেয়ে যাবেন।
অথবা ধর্মতলা বাসস্ট্যান্ড থেকে যেকোনো ডায়মন্ড হারবার, রায়চক বা নূরপুর গামি বাসে পৈলান মন্দির পৌঁছে যাওয়া যাবে।

মেট্রো – পুরোপুরি চালু হয়ে গেলে জোকা পর্যন্ত মেট্রোতেই আসতে পারবেন।

মন্দির খোলার সময়

প্রতিদিন সকাল ৭.৩০ থেকে রাত ৮.৩০ পর্যন্ত মন্দির টি খোলা থাকে। ৫০ টাকার কুপন কেটে আপনি গর্ভগৃহে পূজো দিতে পারেন।

10. স্বামী বিবেকানন্দের পৈত্রিক বাড়ি ( জন্মভিটা )

স্বামী বিবেকানন্দের পৈত্রিক বাড়ি
Picture source : vivekanandahome.org

বীর সন্ন্যাসী স্বামী বিবেকানন্দ, শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের শিষ্য এবং যিনি ১৯ শতকে ভারতীয় আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক চেতনা বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিয়েছিলেন, কলকাতার সিমলার দত্ত পরিবারের এই বাড়িতে জন্মগ্রহন করেন। বর্তমানে রামকৃষ্ণ মিশনের উদ্যোগে স্বামী বিবেকানন্দের ঐতিহ্যমণ্ডিত পৈতৃক বাড়িটিকে একটি সংগ্রহশালার আকারে গড়ে তুলে নাম রাখা হয়েছে ‘বিবেকানন্দ মিউজিয়াম’। সংগ্রহশালাটিকে সুন্দরভাবে তৈরি করা হয়েছে। এখানে আগত দর্শকরা বিবেকানন্দের জীবনের বিভিন্ন ঘটনা সম্পর্কে অবহিত হতে পারেন।

কি কি দেখবেন

  • স্বামী বিবেকানন্দের মূল বাড়িতেই স্বামীজির জন্মস্থান। সেখানে বর্তমানে বিবেকানন্দ সংগ্রহশালাও রয়েছে।
  • বিবেকানন্দ গবেষণাগার – স্বামীজিকে নিয়ে গবেষণার সুযোগ রয়েছে।
  • টেক্সট বুক লাইব্রেরি ও ভাষা শিক্ষা স্কুল।
  • মিশনের সাধু ও কর্মীদের জন্য নিবাস।
  • নিবেদিতা ভবনে আছে ফ্রি কোচিং সেন্টার ও দাতব্য চিকিৎসালয়

কিভাবে যাবেন বিবেকানন্দের জন্মভিটা

উত্তর কলকাতার বিবেকানন্দ রোড ও বিধান সরণির সংযোগস্থলে অবস্থিত বিবেকানন্দ জন্মস্থানে নানাভাবে যাওয়া যায়। মেট্রো রেলে এলে নামুন গিরিশ পার্ক স্টেশনে। সেখান থেকে বিবেকানন্দ রোড ধরে হাঁটা পথ। ট্রেনে দক্ষিণ থেকে এলে শিয়ালদহে নেমে কলেজ স্ট্রিট বা মানিকতলা হয়ে কিংবা উত্তর দিক থেকে এলে উল্টোডাঙা নেমে হাতিবাগান বা কাকুরগাছি হয়ে এখানে চলে আসতে পারেন। এসপ্ল্যানেড থেকে শ্যামবাজারগামী বাসেও আসা যায়।

খোলার সময়

মঙ্গলবার থেকে রবিবার বেলা ১০টা থেকে ১২.৩০ মিনিট এবং দুপুর ২টো থেকে বিকেল ৫টা। সোমবার বন্ধ

প্রবেশমূল্য

সংগ্রহশালা দেখার জন্য জনপ্রতি ১০ টাকা। তবে থ্রিডি মুভি দেখতে হলে লাগবে জনপ্রতি আরও ২০ টাকা।

Leave a Comment