বিহারের ধর্মীয় স্থান ভ্রমণ গাইড: সেরা 6 টি সম্পর্কে জানুন

বিহারের ধর্মীয় স্থান ভ্রমণ

বিহারের ধর্মীয় স্থান ভ্রমণ সম্পর্কে প্রথমেই বলতে হয় যে, প্রাচীন জ্ঞান ও আধ্যাত্মিকতায় সমৃদ্ধ বিহার, ভারতের হিন্দু ও জৈন তীর্থস্থানগুলোর আবাসস্থল। এই রাজ্যের ইতিহাস বহু শতাব্দী পুরোনো, যার শিকড় প্রাচীন মহাকাব্য রামায়ণের যুগ পর্যন্ত বিস্তৃত। বিহারের মিথিলা ছিল সেই পবিত্র ভূমি, যেখানে দেবী সীতার জন্ম হয়েছিল।

সময়ের প্রবাহে, বিশেষত ৪০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে, এই অঞ্চলে ধর্মীয় জাগরণের এক নতুন অধ্যায় সূচিত হয়। গৌতম বুদ্ধ এখানেই বোধিলাভ করে বৌদ্ধধর্মের সূচনা করেন, যা পরবর্তীতে সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। একই সময় মহাবীরও এখানে তাঁর উপদেশ প্রচার করেন এবং জৈন ধর্মকে শক্তিশালী ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করেন।

বিহারের ধর্মীয় স্থান ভ্রমণ: জনপ্রিয় 6 টি স্থানের বিবরণ

বিহারের তীর্থস্থান পরিভ্রমণ ধর্মপ্রাণ ভক্তদের জন্য এক অনন্য অভিজ্ঞতা প্রদান করে। এই নির্দেশিকায় আপনাকে বিহারের গুরুত্বপূর্ণ হিন্দু ও জৈন মন্দিরগুলোর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হবে। প্রতিটি তীর্থস্থানের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং ভ্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য তুলে ধরা হবে, যা তীর্থযাত্রীদের জন্য অত্যন্ত সহায়ক হবে।

1. রাজগীর

রাজগীর
Picture credit: travelsetu.com

রাজগীর একটি আধ্যাত্মিক শহর, যা সবুজ উপত্যকার মাঝে এবং পাথুরে পাহাড়ে বেষ্টিত। মহাভারতে রাজগীরের উল্লেখ পাওয়া যায়, এটি ছিল কংসের শ্বশুর তথা কৃষ্ণ ও যাদব বংশের প্রধান শত্রু জরাসন্ধের রাজ্য। যদিও রাজগীরের প্রতিষ্ঠার নির্দিষ্ট তারিখ জানা যায় না, তবে এখানে প্রাপ্ত প্রাচীন মৃৎপাত্র প্রায় খ্রিস্টপূর্ব ১০০০ সালের বলে অনুমান করা হয়। শহরটিতে বিখ্যাত ২৫০০ বছর পুরোনো সাইক্লোপিয়ান প্রাচীর (Cyclopean masonry) রয়েছে, যা এর ঐতিহ্যের অন্যতম নিদর্শন।

রাজগীর ছিল প্রাচীন মগধ সাম্রাজ্যের প্রথম রাজধানী। কিন্তু খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতকে অজাতশত্রুর পুত্র উদয়িন (৪৬০-৪৪০ খ্রিস্টপূর্ব) রাজধানী পাটলিপুত্রে স্থানান্তর করেন। তখন এটি ‘রাজগৃহ’ নামে পরিচিত ছিল, যার অর্থ ‘রাজাদের বাসস্থান’। এটি জৈন ও বৌদ্ধ ধর্মের ইতিহাসের সাথে নিবিড়ভাবে জড়িত। জৈন ধর্মের ২০তম তীর্থঙ্কর মুনিসুভ্রত রাজগীরেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এছাড়াও, আরিহন্ত মহাবীর এবং গৌতম বুদ্ধের শিক্ষা রাজগীরের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ ও ৫ম শতকে তারা এখানে তাদের ধর্মীয় মতবাদ প্রচার করেন। বুদ্ধের মহাপরিনির্বাণের পর, তার শিষ্যরা সপ্তপর্ণী গুহায় প্রথম বৌদ্ধ সংঘের আয়োজন করেন।

রাজগীর প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে ঘেরা এক আধ্যাত্মিক স্থান। সবুজ অরণ্য, রহস্যময় গুহা এবং উষ্ণ প্রস্রবণ এই শহরের বিশেষ আকর্ষণ। রাজগীরের উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে—বিশ্ব শান্তি স্তূপ, গৃধ্রকূট পর্বত, রাজগীর হট স্প্রিংস, বেণুবন, ঘোড়া কাতোরা লেক, বীরায়তন জাদুঘর, স্বর্ণভাণ্ডার, বিম্বিসার কারাগার, সাইক্লোপিয়ান প্রাচীর, অজাতশত্রু দুর্গ ইত্যাদি।

  • অবস্থান: পাটনা থেকে প্রায় ৯৫ কিলোমিটার দূরে।
  • বেড়ানোর সেরা সময়: অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি।
  • প্রবেশের সময়: সকাল ৬:০০ টা থেকে রাত ৮:০০ টা পর্যন্ত।
  • ভ্রমণ পরামর্শ: রাজগীরের উষ্ণ প্রস্রবণগুলিকে ঔষধি গুণসম্পন্ন বলে মনে করা হয়, তাই সেখানে ডুব দেওয়ার ইচ্ছা থাকলে অতিরিক্ত পোশাক সঙ্গে রাখতে ভুলবেন না।
  • প্রধান উৎসব: রাজগীর নৃত্য উৎসব, যা রাজগীর মহোৎসব নামেও পরিচিত, এই শহরের অন্যতম প্রধান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ১৯৮৬ সালে শুরু হওয়া এই তিন দিনের বার্ষিক উৎসবটি প্রতি বছ র অক্টোবর বা নভেম্বর মাসে কিলা ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়। বিহার পর্যটন বিভাগ এই উৎসবের আয়োজন করে, যাতে ভারতের সমৃদ্ধ শাস্ত্রীয় ও লোকনৃত্যের প্রচার হয়। এছাড়া, মকর সংক্রান্তি রাজগীরে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার সাথে পালিত হয়।

আরও পড়ুন: ঝাড়খন্ডের জনপ্রিয় 13 টি উৎসব সংস্কৃতি ও তাদের ইতিহাস

2. বৈশালী

বৈশালী
Picture credit: localtourism.in

বৈশালী একসময় একটি প্রাচীন শহর ছিল এবং বর্তমানে এটি বসারহের নিকটবর্তী একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। মনে করা হয়, মহাভারতের যুগের রাজা বিশালের নাম অনুসারে বৈশালীর নামকরণ হয়েছে। গৌতম বুদ্ধ তার মৃত্যুর আগে (খ্রিস্টপূর্ব ৪৮৩) এখানে শেষ উপদেশ দিয়েছিলেন এবং এর প্রায় একশত বছর পর (খ্রিস্টপূর্ব ৩৮৩) রাজা কালাশোক দ্বিতীয় বৌদ্ধ সংঘের আয়োজন করেন। এ কারণে এটি বৌদ্ধ ও জৈন উভয় ধর্মের জন্য গুরুত্বপূর্ণ স্থান। বৈশালীতে সম্রাট অশোকের অন্যতম সংরক্ষিত স্তম্ভ রয়েছে, যার উপরে একটি একক এশীয় সিংহ খোদাই করা আছে। জৈনদের জন্যও এটি অত্যন্ত পবিত্র স্থান, কারণ এখানেই মহাবীরের জন্ম হয়েছিল। এছাড়াও, রামচউরা মন্দিরে ভগবান রামের পাদচিহ্ন থাকায় এটি হিন্দুদের কাছেও তীর্থস্থান হিসেবে বিবেচিত।

কিংবদন্তি অনুসারে, খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতকে বৈশালী ছিল লিচ্ছবি বংশের শাসনাধীন, যা এশিয়ার প্রথম প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচিত হয়। খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতকে মহান মগধ রাজা অজাতশত্রু বৈশালীকে অধিকার করেন, যার পর থেকে এটি ধীরে ধীরে তার গৌরব ও শক্তি হারাতে থাকে। চীনা পর্যটক ফা-হিয়েন (৪র্থ শতক) ও হিউয়েন সাং (৭ম শতক) তাদের ভ্রমণ বৃত্তান্তে বৈশালীর কথা উল্লেখ করেছেন। পরবর্তীতে, ১৮৬১ সালে ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ আলেকজান্ডার কানিংহাম তাদের বর্ণনা ব্যবহার করে বৈশালীকে বিহারের বৈশালী জেলার বসারহ গ্রামের সাথে চিহ্নিত করেন। ১৯৭২ সালে মুজফ্ফরপুর থেকে বিভক্ত হয়ে বৈশালী একটি স্বতন্ত্র জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।

আম, কলা এবং অন্যান্য ফলের বাগানে পরিবেষ্টিত বৈশালী তার ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক গুরুত্বের পাশাপাশি প্রাচীন স্তূপগুলোর জন্যও পরিচিত। বৈশালীর দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে—অশোক স্তম্ভ, বিশ্ব শান্তি স্তূপ, চৌমুখী মহাদেব মন্দির, রামচউরা মন্দির, বাওয়ান পোখর মন্দির, বৈশালী জাদুঘর ইত্যাদি। এছাড়া, বৈশালী ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নৃত্যশিল্পী আম্রপালীর জন্মস্থান হিসেবেও পরিচিত। আম্রপালী ছিলেন অসাধারণ সুন্দরী ও প্রতিভাবান এক নর্তকী, যিনি পরবর্তীতে সন্ন্যাস গ্রহণ করে গৌতম বুদ্ধের অনুসারী হয়েছিলেন।

  • অবস্থান: পাটনা থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে।
  • বেড়াবার সেরা সময়: অক্টোবর থেকে এপ্রিল।
  • প্রবেশের সময়: সকাল ৬:০০ টা থেকে সন্ধ্যা ৬:০০ টা পর্যন্ত।
  • ভ্রমণ পরামর্শ: বৈশালীতে বহু প্রাচীন স্তূপ ও বুদ্ধ যুগের ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে, তাই পর্যাপ্ত সময় নিয়ে একদিন বেশি রাখার পরিকল্পনা করুন।
  • প্রধান উৎসব: বৈশালী মহোৎসব এখানে উদযাপিত সবচেয়ে বড় উৎসবগুলোর মধ্যে একটি। এটি দিগম্বর ও শ্বেতাম্বর উভয় জৈন সম্প্রদায়ের দ্বারা মহাবীরের জন্মদিন উপলক্ষে চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষের ১৩তম দিনে উদযাপিত হয়। এছাড়াও, রামনবমী, ছট পূজা, বুদ্ধ পূর্ণিমা ইত্যাদি উৎসব বৈশালীতে অত্যন্ত উৎসাহ ও উদ্দীপনার সাথে পালিত হয়।

আরও পড়ুন : ঝাড়খণ্ডের বিখ্যাত 10 টি মন্দির কোথায় ও কখন যাবেন

3. পাওয়াপুরি (বা পাবাপুরী) , নালন্দা

পাওয়াপুরি
Picture credit: tourism.bihar.gov.in

পাওয়াপুরি জৈন ধর্মাবলম্বীদের জন্য ভারতের অন্যতম প্রধান তীর্থস্থান। এটি সেই পবিত্র ভূমি যেখানে ৫২৭ খ্রিস্টপূর্বে মহাবীর স্বর্গারোহণ করেন। ‘পাওয়াপুরি’ শব্দের অর্থ হল ‘পাপমুক্ত নগর’। ২৪তম জৈন তীর্থঙ্কর ভগবান মহাবীরের প্রতি উৎসর্গীকৃত জল মন্দির বা ওয়াটার টেম্পল তার দাহস্থলের স্মারক হিসেবে নির্মিত হয়। মন্দিরটি মূলত মহাবীরের দাদা রাজা নন্দিবর্ধন নির্মাণ করেন। এটি পাওয়াপুরীর পাঁচটি প্রধান মন্দিরের একটি, যেখানে মহাবীরের ‘চরণ পদুকা’ বা পায়ের ছাপ পূজিত হয়।

জল মন্দিরটি ১৬.৮ একর জলাশয়ের মাঝে সাদা মার্বেল পাথরে নির্মিত। জলাশয়ের পৃষ্ঠে পদ্মফুল ফুটে থাকে, যা এর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। মন্দিরের স্থাপত্য অত্যন্ত নান্দনিক এবং এটি ‘বিমান’ বা রথের আকৃতিতে নির্মিত হয়েছে, যেখানে মহাবীরের পদচিহ্ন পূজিত হয়। একটি ৬০০ ফুট (১৮০ মিটার) দীর্ঘ পাথরের সেতুর মাধ্যমে মন্দিরটি পুকুরের তীরে সংযুক্ত হয়েছে। পূর্ণিমার রাতে মন্দিরটি জ্যোৎস্নার আলোয় দ্যুতিময় হয়ে ওঠে। এই পুকুরে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ রয়েছে, যাদের পুরোহিত ও ভক্তরা খাবার দেন।

পাওয়াপুরীতে আরও অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো গাঁও মন্দির, যা গ্রাম্য মন্দির হিসেবে পরিচিত এবং যেখানে মহাবীর তার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন। এছাড়া, সাদা মার্বেলের তৈরি অপর একটি অপূর্ব জৈন মন্দির ‘সমোশরণ’ এখানে অবস্থিত, যেখানে মহাবীর তার ধর্মীয় বাণী প্রচার করেছিলেন।

  • অবস্থান: রাজগীর থেকে প্রায় ১৯ কিলোমিটার দূরে।
  • বেড়াবার সেরা সময়: নভেম্বর থেকে মার্চ।
  • প্রবেশের সময়: সকাল ৬:০০ টা থেকে সন্ধ্যা ৭:০০ টা পর্যন্ত।
  • ভ্রমণ পরামর্শ: রাজগীর থেকে সড়কপথে পাওয়াপুরি পৌঁছানো সবচেয়ে সুবিধাজনক। প্রাইভেট ট্যাক্সি ও বাস সহজলভ্য।

4. বোধগয়া

বোধগয়া
Picture credit: budgetyourtrip.com

নিরঞ্জনা নদীর তীরে অবস্থিত বোধগয়া বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে অন্যতম শ্রদ্ধার স্থান, কারণ এখানেই গৌতম বুদ্ধ ৫৩৪ খ্রিস্টপূর্বে বোধি বৃক্ষের নিচে বোধিলাভ করেন। মহাবোধি মন্দির, যেখানে এই পবিত্র বোধি বৃক্ষ অবস্থিত, তা বিশ্বজুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের আকর্ষণ করে এবং এটি বর্তমানে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটগুলোর একটি। বোধগয়া ভারতের বৌদ্ধ ধর্মের চারটি প্রধান তীর্থক্ষেত্রের মধ্যে অন্যতম, অন্য তিনটি হল কুশীনগর, লুম্বিনী এবং সারনাথ।

আগে উরুবেলা বা সাম্বোধি নামে পরিচিত, এই ছোট শহরটি বৌদ্ধ ধর্মের ইতিহাসের সাথে গভীরভাবে জড়িত। যুবরাজ সিদ্ধার্থ গৌতম যখন ২৯ বছর বয়সে সংসার ত্যাগ করেন, তখন তিনি এই পবিত্র স্থানে আত্মজ্ঞান লাভ করেন। কাহিনিমতে, উরুবেলায় (বর্তমান বোধগয়া) ছয় বছর কঠোর তপস্যার পর, তিনি বুঝতে পারেন যে এই আত্মসংযম তাঁকে মুক্তি দিতে পারছে না। এরপর তিনি ‘অষ্টাঙ্গিক মার্গ’ আবিষ্কার করেন, যা তাঁকে লোভ, ঘৃণা ও মোহ থেকে মুক্ত করে এবং পরিশেষে তিনি আত্মজ্ঞান লাভ করেন। যে বৃক্ষের নিচে তিনি নির্বাণ লাভ করেন, সেটিই আজকের বিখ্যাত বোধি বৃক্ষ।

সম্রাট অশোক ছিলেন বুদ্ধের অন্যতম প্রধান অনুগামী, যিনি মহাবোধি মন্দির নির্মাণ করেন। ১৩শ শতকের দিকে এই পবিত্র স্থান বিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং অনেক মন্দির ও স্তূপ নির্মিত হয়। কিন্তু পরবর্তীকালে, তুর্কি শাসকদের আক্রমণে এই স্থান ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। পরে ব্রিটিশ শাসনামলে বোধগয়া পুনরুদ্ধার করা হয় এবং তার পবিত্র রূপ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে, বোধগয়া শুধু বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জন্য নয়, বরং সমস্ত আধ্যাত্মিক অনুসন্ধানকারীদের জন্য একটি পবিত্র তীর্থস্থান।

বোধগয়া শান্তি, আধ্যাত্মিক একাগ্রতা ও অন্তিম প্রশান্তির এক অনন্য প্রতীক। এই শহরের প্রধান আকর্ষণ হল মহাবোধি মন্দির, যেখানে বুদ্ধ ধ্যান করেছিলেন। এছাড়াও, মহান বুদ্ধ মূর্তি, বোধি বৃক্ষ, থাই মঠ, মুচলিন্দ হ্রদ, ডুঙ্গেশ্বরী পাহাড়, ওয়াট থাই বুদ্ধগয়া, জাপানি মন্দির, সুজাতার মন্দির, বিষ্ণুপদ মন্দির ইত্যাদি বোধগয়ার অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থান।

  • অবস্থান: গয়া শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে, বিহার।
  • বেড়াবার সেরা সময়: অক্টোবর থেকে মার্চ।
  • প্রবেশের সময়: সকাল ৫:০০ টা থেকে রাত ৯:০০ টা পর্যন্ত।
  • ভ্রমণ পরামর্শ: বোধগয়া ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হওয়ায়, মহাবোধি মন্দিরসহ আশেপাশের স্থানগুলি ঘুরে দেখার জন্য পর্যাপ্ত সময় রাখুন।
  • প্রধান উৎসব: বুদ্ধ পূর্ণিমা বোধগয়ার সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ উৎসবগুলোর মধ্যে একটি। প্রতি বছর মে মাসে পূর্ণিমার দিনে এই উৎসব পালন করা হয়, যা বুদ্ধের জন্মবার্ষিকী ও নির্বাণ লাভের স্মরণে অনুষ্ঠিত হয়। মহা কালচক্র পূজা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বার্ষিক অনুষ্ঠান, যা ৭ থেকে ১০ দিন ধরে চলে এবং এতে মন্ত্রপাঠ ও পূজা করা হয়, যা আসন্ন বছরকে শুভ করে তুলতে সাহায্য করে বলে বিশ্বাস করা হয়। এছাড়াও, বুদ্ধ মহোৎসব একটি ত্রিদিবসীয় অনুষ্ঠান, যেখানে সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়।

5. রামচউরা মন্দির, বৈশালী

রামচউরা মন্দির
Picture credit: news18.com

বৈশালী থেকে প্রায় ৩৭ কিলোমিটার দূরে, বিহারের হাজীপুর শহরে অবস্থিত রামচউরা মন্দির একটি পবিত্র হিন্দু মন্দির। এটি বৈশালীর কাছাকাছি অন্যতম জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান এবং অবশ্যই পরিদর্শনযোগ্য স্থানের মধ্যে একটি।

রামচউরা মন্দির ভগবান রামের প্রতি উৎসর্গীকৃত এবং কথিত আছে যে এই মন্দিরটি রামায়ণের সময়কাল থেকেই বিদ্যমান। বিশ্বাস করা হয় যে ভগবান শ্রী রাম জনকপুর যাওয়ার পথে এখানে এসেছিলেন, যার ফলে এটি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে বিশেষ ধর্মীয় গুরুত্ব বহন করে। মন্দিরটি সেই স্থানে নির্মিত হয়েছে, যেখানে তাঁর পদচিহ্ন খোদিত ছিল।

  • অবস্থান: পাটনা থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে।
  • বেড়াবার সেরা সময়: অক্টোবর থেকে এপ্রিল।
  • প্রবেশের সময়: সকাল ৬:০০ টা থেকে সন্ধ্যা ৬:০০ টা পর্যন্ত।
  • ভ্রমণ পরামর্শ: বৈশালী বৌদ্ধ যুগের প্রাচীন স্তূপ ও নিদর্শনের জন্য বিখ্যাত, তাই দর্শনের জন্য অতিরিক্ত একটি দিন পরিকল্পনায় রাখুন।
  • প্রধান উৎসব: প্রতিবছর এখানে ভগবান রামের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রাম নবমী উৎসব অত্যন্ত আড়ম্বরের সাথে উদযাপিত হয়। এছাড়াও, এই উপলক্ষে একটি ছোট মেলাও অনুষ্ঠিত হয়। রামচউরা মন্দিরের কাছেই ‘বড়ি সংগত’ এবং ‘ছোটি সংগত’ নামে দুটি ধর্মীয় স্থান রয়েছে, যেখানে প্রাচীনকালে বহু সাধু, মহাত্মা এবং যোগী প্রার্থনার জন্য আসতেন।

6. গয়া: পূর্বপুরুষদের আত্মার শান্তির তীর্থ

গয়া
Picture credit: namoastro.com

হিন্দুদের অন্যতম পবিত্র শহর গয়া, যা বিষ্ণুপদ মন্দিরের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। এখানে ভক্তরা তাঁদের পূর্বপুরুষদের আত্মার শান্তির জন্য “পিণ্ড দান” সম্পন্ন করেন। ফাল্গু নদী, যেখানে এই ধর্মীয় আচার সম্পন্ন হয়, তা হিন্দু ধর্মে গভীর গুরুত্ব বহন করে। প্রতি বছর, পিতৃ পক্ষ মেলার সময় হাজার হাজার হিন্দু ভক্ত গয়া সফর করেন।

  • অবস্থান: বোধগয়া থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে।
  • বেড়াবার সেরা সময়: অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি (বিশেষ করে পিতৃ পক্ষ মেলার সময়)।
  • প্রবেশের সময়: সকাল ৫:০০ টা থেকে রাত ৮:০০ টা পর্যন্ত।
  • ভ্রমণ পরামর্শ: যদি মেলার সময় গয়া পরিদর্শন করতে চান, তবে আগে থেকেই থাকার ব্যবস্থা বুক করে নিন, কারণ এই সময় শহর ভীষণ ভিড় হয়।

Leave a Comment