আপনি যদি প্রকৃতিপ্রেমী হন কিংবা জঙ্গলের বুনো সৌন্দর্য আবিষ্কার করতে চান, তাহলে ওডিশার বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। ভারতের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের একটি বৈচিত্র্যময় রাজ্য ওডিশা, যেখানে অসংখ্য প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণীর বাস। এই রাজ্যে এমনকি একটি কচ্ছপ সংরক্ষণ কেন্দ্র ও একমাত্র লেগুন পাখি অভয়ারণ্যও রয়েছে। আজ আমরা ওডিশার কিছু দুর্দান্ত বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের কথা জানব। এখানে ১১ টি জনপ্রিয় অভয়ারণ্যের তালিকা দেওয়া হলো, যা আপনার বন্যপ্রাণী ভ্রমণকে স্মরণীয় করে তুলতে পারে।
ওডিশার বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য – শীর্ষ ১১ টি দেখে নিন
১. নন্দনকানন বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য – সিংহ ও সাদা বাঘের সাফারি
অবস্থান: বারাং, ভুবনেশ্বর জেলা
আয়তন: ৪.৩৭ বর্গ কিমি
সিংহ সাফারির পাশাপাশি সাদা বাঘ সাফারিও আছে এমন একটি স্থান, এটি আপনার অন্যতম সেরা বন্যপ্রাণী গন্তব্য হতে চলেছে। ১৯৭৯ সালে নন্দনকাননকে বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে রূপান্তরিত করা হয়েছিল। নন্দনকাননের অপূর্ব সৌন্দর্য অভিযাত্রীদের জন্য অনন্য এবং অসাধারণ।
নন্দনকানন আসলে প্রাণীদের প্রতি যত্ন, ভালোবাসা এবং বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহারে সমৃদ্ধ। এটি ঘড়িয়াল সংরক্ষণের পথিকৃৎ। এই অভয়ারণ্যটি বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত সাদা বাঘের জন্য বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত। এই স্থানটি ঘড়িয়াল (গ্লাডিয়েটর) ছাড়াও সাদা বাঘ, প্যান্থার, প্যাঙ্গোলিন, ইঁদুর হরিণ, সিংহ, ইঁদুর এবং শকুনের মতো প্রাণীতে সমৃদ্ধ। এর সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য এবং গুরুত্বপূর্ণ বন্যপ্রাণীর পাশাপাশি, নন্দনকানন প্রকৃতির প্রশিক্ষণের জন্য প্রশংসিত ।
- উপযুক্ত ভ্রমণ সঙ্গী: পরিবার, বন্ধু
- ভ্রমণের সময়কাল: ৩ ঘণ্টা
- ভ্রমণের উপযুক্ত সময়: সারা বছর
- কীভাবে পৌঁছাবেন: ভুবনেশ্বর থেকে মাত্র ১৫ কিমি দূরে। বাসে পৌঁছানো সহজ।
- থাকার ব্যবস্থা: ফরেস্ট রেস্ট হাউজ ও কটেজ পাওয়া যায়।
২. হাদগড় বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য – প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে হারিয়ে যেতে পারেন
অবস্থান: কেওনঝর জেলা
আয়তন: ১৯১.৬ বর্গকিমি
ঘন শালবন আর মাঝখানে বিশাল সবুজ মাঠের ছোঁয়া, হাদগড় বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য তার অত্যাশ্চর্য প্রকৃতির সৌন্দর্যের সাথে এক মনোরম দৃশ্য উপস্থাপন করে। এই বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে বাঘ, প্যান্থার, মাছ ধরার এবং জঙ্গল বিড়াল, প্যাঙ্গোলিন, হায়েনা, নেকড়ে, শজারু এবং ল্যাঙ্গুর (বানরের একটি প্রজাতি) সহ কয়েক ধরণের পাখির আবাসস্থল রয়েছে। ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত, হাদগড় বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ১৯১.৬ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। ঘন বনের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত সালন্দি নদী হল এর জীবনের উৎস, যার নাম সালন্দি বাঁধ। এই নদীটি মগর কুমিরের জন্য একটি নিখুঁত আবাসস্থল।
কাদের জন্য উপযুক্ত: বন্ধু, পরিবার ও একক ভ্রমণ
ভ্রমণের সময়কাল: ২-৩ ঘণ্টা
সেরা সময়: অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি
যেভাবে যাবেন: কাছাকাছি শহর আনন্দপুর থেকে যাতায়াত সুবিধা সহজ
থাকার ব্যবস্থা: বন বিভাগের বিশ্রামাগার, হোটেল ও ঘরভাড়া ব্যবস্থা – সবই আনন্দপুরে পাওয়া যায়
আরও পড়ুন: ওড়িশার ৯ টি সেরা হানিমুন গন্তব্য
৩. বড়রমা (উষাকোঠি)বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য – বাঘ দেখার উত্তেজনাপূর্ণ অভিজ্ঞতা
অবস্থান: সম্বলপুর জেলা
আয়তন: ৩০৪ বর্গকিমি
বড়রমা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ওড়িশার অন্যতম প্রধান পর্যটন আকর্ষণ। বড়রমা সংরক্ষিত বন, বিঞ্জিপালি সংরক্ষিত বন, উষাকোঠি সংরক্ষিত বন এবং কাঁসার সংরক্ষিত বন বড়রমা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের অধীনস্ত। এই দর্শনীয় অভয়ারণ্যটি সম্বলপুর থেকে মাত্র ২২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত । এই অভয়ারণ্যের প্রাণীজগতে উড়ন্ত কাঠবিড়ালি, বাঘ, হাতি এবং সাম্বার চিতাবাঘ রয়েছে। সমৃদ্ধ এই ওডিশার বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য যে উদ্ভিদ প্রত্যক্ষ করতে পারেন তার হল চন্দন, কাসুয়ারিন, অর্জুন, নিম এবং বাবলা প্রজাতি। অবিশ্বাস্য বন্যপ্রাণীর ছবি তোলার জন্য আপনার ক্যামেরা সাথে রাখুন।
কাদের জন্য উপযুক্ত: পরিবার, বন্ধু ও একক পর্যটক
ভ্রমণের সময়কাল: ২-৩ ঘণ্টা
সেরা সময়: অক্টোবর থেকে এপ্রিল
যেভাবে যাবেন: নিকটবর্তী রেলস্টেশন – সম্বলপুর
থাকার ব্যবস্থা: সম্বলপুরে সরকারি গেস্ট হাউস ও বিলাসবহুল হোটেল
আরও পড়ুন: ওড়িশায় একক ভ্রমণের আদর্শ গন্তব্য চন্দকা ও সাতকোশিয়া
৪. গহিরমাথা মেরিন স্যাংচুয়ারি – বিশ্বের অলিভ রিডলি কচ্ছপের বৃহত্তম আবাস
অবস্থান: কেন্দ্রপাড়া জেলা
আয়তন: ১৪৩৫ বর্গকিমি (জল ও সৈকত মিলিয়ে)
১৯৭৯ সালে, গহিরমাথা সামুদ্রিক অভয়ারণ্যকে ওড়িশার বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বিশ্বের বৃহত্তম অলিভ রিডলি কচ্ছপের বাসা বাঁধার সমুদ্র সৈকত হিসেবে পরিচিত এই অভয়ারণ্য প্রতি বছর প্রচুর সামুদ্রিক বন্যপ্রাণী প্রেমীদের আকর্ষণ করে। ওড়িশার কেন্দ্রপাড়ায় অবস্থিত এই সামুদ্রিক অভয়ারণ্যে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের আবাসস্থল। নভেম্বর এবং জানুয়ারি মাসে অলিভ রিডলি কচ্ছপরা সঙ্গম করে এবং এই মাসগুলিতে তারা উপকূলীয় জল থেকে বেরিয়ে আসে এবং সহজেই দেখা যায়। এই অভয়ারণ্যটি কচ্ছপের স্বর্গ এবং আপনি এই সুন্দর প্রাণীদের দেখার সময় সৈকতে সহজেই আরাম করতে পারেন।
কাদের জন্য উপযুক্ত: পরিবার ও বন্ধু
ভ্রমণের সময়কাল: ১-২ ঘণ্টা
সেরা সময়: নভেম্বর ও জানুয়ারি
যেভাবে যাবেন: ভুবনেশ্বর থেকে ক্যাব নিয়ে পৌঁছানো যায়
থাকার ব্যবস্থা: বন বিভাগের গেস্ট হাউস ও হোটেল
৫. টিকারপাড়া বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য – অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের জন্য সেরা
অবস্থান: অঙ্গুল জেলা
আয়তন: ৭৯৬ বর্গকিমি
ওড়িশার জনপ্রিয় বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যগুলির মধ্যে একটি যা আপনাকে অবশ্যই আপনার ভ্রমণসূচীতে যোগ করতে হবে তা হল টিকারপাড়া বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। টিকারপাড়া বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যটি মহানদী নদীর তীরে অবস্থিত। এই অসাধারণ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যটি কুমিরের প্রজাতির সংরক্ষণের লক্ষ্যে খোলা হয়েছিল। বিখ্যাত ঘড়িয়াল কুমির এই অভয়ারণ্যে দেখা যায়। সাপ থেকে শুরু করে কচ্ছপ পর্যন্ত। আপনি টিকারপাড়া বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে প্রচুর সরীসৃপ দেখতে পাবেন। বাঘ, হাতি, প্যাঙ্গোলিন, চিতাবাঘ এবং দাগযুক্ত হরিণের মতো প্রাণীও এই অভয়ারণ্যে রয়েছে। এই আশ্চর্যজনক বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে আপনার কাটানো দিনে আপনি নদীতে ভেলা, নৌকা ভ্রমণ, হাইকিং এবং মাছ ধরার মতো বিভিন্ন দুঃসাহসিক কার্যকলাপে লিপ্ত হতে পারেন।
কাদের জন্য উপযুক্ত: পরিবার ও বন্ধু
ভ্রমণের সময়কাল: ২-৩ ঘণ্টা
সেরা সময়: অক্টোবর থেকে মে
যেভাবে যাবেন: ভুবনেশ্বর থেকে গাড়িতে যাতায়াত
থাকার ব্যবস্থা: বন বিভাগের গেস্ট হাউস ও হোটেল
আরও পড়ুন: ওড়িশার সেরা 12 দর্শনীয় স্থান – জনপ্রিয় ও অফবিট
৬. দেব্রিগড় বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য – বিচিত্র প্রাণীজগতের এক অপূর্ব অভিজ্ঞতা
অবস্থান: সম্বলপুর জেলা
আয়তন: ৩৫৩ বর্গকিমি
সম্বলপুর জেলায় অবস্থিত এবং ৩৫৩ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, ডেব্রিগড় বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য হল ওড়িশার অন্যতম বিখ্যাত বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। প্রায় ২৩৪ প্রজাতির পাখি, ৪০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ১২ প্রজাতির উভচর প্রাণী, ৪১ প্রজাতির সরীসৃপ, ৪২ প্রজাতির মাছ, ৩৯ প্রজাতির ওডোনেট, ৮ প্রজাতির মাকড়সা এবং ৮৫ প্রজাতির প্রজাপতির আবাসস্থল এই বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যটি সমস্ত বন্যপ্রাণী প্রেমীদের জন্য উপযুক্ত স্থান। এই আকর্ষণীয় স্থানে ২৫০ প্রজাতির উদ্ভিদও রয়েছে যা সম্পর্কে আরও জানতে আপনার অবশ্যই সাক্ষাৎ করা উচিত। সব মিলিয়ে এই বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যটি একটি আকর্ষণীয় সপ্তাহান্তে ছুটি কাটানোর জন্য একটি আশ্চর্যজনক স্থান।
- উপযুক্ত ভ্রমণ সঙ্গী: পরিবার, বন্ধু বা একা
- ভ্রমণের সময়কাল: ২–৩ ঘণ্টা
- ভ্রমণের উপযুক্ত সময়: নভেম্বর থেকে জুন
- কীভাবে পৌঁছাবেন: সাম্বলপুর রেলস্টেশন নিকটতম, সেখান থেকে ক্যাব ভাড়া করতে পারবেন।
- থাকার ব্যবস্থা: সাম্বলপুরে বিলাসবহুল হোটেল ও সরকারি অতিথিশালা রয়েছে।
৭. সোনাবেড়া বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য – রয়েল টাইগার রিজার্ভ
অবস্থান: নুয়াপাড়া জেলা
আয়তন: ৫০০ বর্গকিমি
সোনাবেড়া বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য বিশাল এলাকা বিস্তৃত একটি ব্যাঘ্র সংরক্ষণাগার । সোনাবেড়া বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য হল বিচিত্র উদ্ভিদ ও প্রাণীর আশ্রয়স্থল, যা বিস্তৃত মালভূমি, জলপ্রপাত এবং গিরিখাত দ্বারা পরিপূর্ণ। এই অভয়ারণ্যের বন্যপ্রাণী অন্যান্য অভয়ারণ্যের তুলনায় অনেক ভালো। এটি জোঙ্ক নদীর সাথে সংযুক্ত জলাশয়ের একটি এলাকা নিয়ে গঠিত এবং সেচের সুবিধার্থে এখানে একটি বাঁধ রয়েছে।
এটি বাঘ, হরিণ, স্লথ ভালুক, গৌড় এবং আরও অনেক সমৃদ্ধ প্রাণী দ্বারা বৈচিত্র্যপূর্ণ। আপনি কিছু সাধারণ ল্যাঙ্গুর (বানরের একটি প্রজাতি) এবং রিসাস বানর দেখতে পাবেন। এই সোনাবেড়া অভয়ারণ্য পরিযায়ী পাখির পাশাপাশি প্যাট্রিজ, শকুন, পাহাড়ি ময়না এবং ময়ূরের মতো অন্যান্য পাখি দ্বারা সমৃদ্ধ। এই অভয়ারণ্যে ছত্তিশগড়ের পার্শ্ববর্তী বন থেকে আসা আকর্ষণীয় প্রজাতির বন্য মহিষও রয়েছে। সোনাবেড়া বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য এমন দুঃসাহসিক ভ্রমণকারীদের জন্য একটি দুর্দান্ত পছন্দ যারা কিছু স্বতন্ত্র বন্যপ্রাণী অভিজ্ঞতা চান।
- উপযুক্ত ভ্রমণ সঙ্গী: পরিবার, বন্ধু
- ভ্রমণের সময়কাল: ২–৩ ঘণ্টা
- ভ্রমণের উপযুক্ত সময়: অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি
- কীভাবে পৌঁছাবেন: নুয়াপাড়া রোড রেলস্টেশন নিকটতম। রোডেও ৩০ কিমি দূরত্বে পৌঁছানো সম্ভব।
- থাকার ব্যবস্থা: ফরেস্ট রেস্ট হাউজ, হোটেল হেলো জেপুর, উষাশ্রী রেসিডেন্সি, হোটেল সাই ইন্টারন্যাশনাল প্রভৃতি।
আরও পড়ুন: ওড়িশার সেরা ১৪ টি সমুদ্র সৈকত – কি তাদের বিশেষত্ব, কখন যাবেন
৮. কোটগড় বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য – রঙিন পাখিদের এক স্বর্গরাজ্য
অবস্থান: কন্ধমাল জেলা
আয়তন: ৩৯৯.৫ বর্গকিমি
এই বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যটি কন্ধমাল অঞ্চলের বালিগুড়া মহকুমায় অবস্থিত এবং জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ। প্রায় ৪০০ বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত অঞ্চল সহ প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্যের ভূমি । কোটগড় বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যটি বিভিন্ন ধরণের গাছপালা দ্বারা সমৃদ্ধ। এটি ঘন পর্ণমোচী বনভূমি এবং তৃণভূমি নিয়ে গঠিত। এটি অসংখ্য প্রাণী এবং সরীসৃপের আবাসস্থল। এখানে পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ প্রজাতি হল হাতি, গৌড়, সাম্বার, দাগযুক্ত হরিণ, ময়ূর, লাল পাখি এবং বিভিন্ন ধরণের সরীসৃপ। প্রকৃতির কোলে সাদৃশ্যপূর্ণ ঘন সমৃদ্ধ সবুজ বনভূমি এবং প্রকৃতির শান্তিপূর্ণ অপূর্ব সৌন্দর্য দর্শনার্থীদের জন্য উল্লেখযোগ্য আকর্ষণ।
কাদের জন্য উপযুক্ত: বন্ধু, পরিবার ও একক ভ্রমণ
ভ্রমণের সময়কাল: ২ ঘণ্টা
সেরা সময়: অক্টোবর থেকে এপ্রিল
যেভাবে যাবেন: বালিগুড়া থেকে বাসে সহজ যাতায়াত
থাকার ব্যবস্থা: বালিগুড়া ও বেলগারাথ অঞ্চলে বিশ্রামাগার ও হোটেল
৯. চিলিকা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য – পাখিপ্রেমীদের জন্য এক স্বর্গীয় স্থান
অবস্থান: পুরী, খুর্দা ও গঞ্জাম জেলা
আয়তন: প্রায় ১৬ বর্গকিমি
পাখি দেখার জন্য আগ্রহী সকলের জন্য একটি দর্শনীয় স্থান। চিলিকা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য হল ওড়িশার আরেকটি জনপ্রিয় বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য যা আপনার ছুটিতে অবশ্যই পরিদর্শন করা উচিত। এই বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যটি ফ্লেমিঙ্গো, ওপেনবিল্ড স্টর্ক, হোয়াইট বেলিড সি ঈগল, ব্রাহ্মণী ঘুড়ি, স্পুনবিল, স্পট-বিল্ড পেলিকান এবং বার-হেডেড গুজের মতো বিভিন্ন প্রজাতির পাখির আবাসস্থল। এই অভয়ারণ্যটি সমস্ত প্রকৃতি প্রেমীদের ব্ল্যাকবাক, গোল্ডেন জ্যাকাল, স্পটেড হরিণ এবং হায়েনার মতো প্রাণী দেখার সুযোগ করে দেয়। চিলিকা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য কেবল বিভিন্ন প্রজাতির পাখি এবং প্রাণীর আবাসস্থল নয়, এখানে প্রায় 225 প্রজাতির মাছও রয়েছে। এই বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য সূর্যাস্ত এবং সূর্যোদয়ের মনোরম দৃশ্যের জন্যও বিখ্যাত এবং আপনার এগুলি মিস করা উচিত নয়।
কাদের জন্য উপযুক্ত: পরিবার, বন্ধু ও একক পর্যটক
ভ্রমণের সময়কাল: ১-২ ঘণ্টা
সেরা সময়: নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি
যেভাবে যাবেন: ভুবনেশ্বর থেকে ট্যাক্সিতে চিলিকা পৌঁছানো যায়
থাকার ব্যবস্থা: ওডিশা ট্যুরিজমের হোটেল ও অতিথিশালা
১০. কুলডিহা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য – বিপন্ন পাখি ও প্রাণী সংরক্ষণের আদর্শ নিদর্শন
অবস্থান: বালাসোর জেলা
আয়তন: ২৭৩ বর্গকিমি
কুলডিহা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য হল বিপন্ন বন্যপ্রাণী এবং বিপন্ন পাখি প্রজাতির একটি অসাধারণ আশ্রয়স্থল। ওড়িশা উদ্ভিদ ও প্রাণীতে পরিপূর্ণ আর কুলডিহা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য রাজ্যের অভয়ারণ্যগুলির একটি বিশিষ্ট অংশ। বিপন্ন ও বিপন্ন প্রজাতিগুলিকে সংরক্ষণের মত গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। এই বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যটি বন কর্তৃপক্ষ এবং ওড়িশার সরকার দ্বারা পরিচালিত হয়। এই অভয়ারণ্যে আপনি যে বিপন্ন পাখি এবং প্রাণীর প্রজাতিগুলি দেখতে পাবেন তা হল কাঠঠোকরা, পাহাড়ি ময়না, হর্নবিল, চিতাবাঘ, এশিয়াটিক হাতি, প্যাঙ্গোলিন, গৌড় এবং ইঁদুর হরিণ। এই অভয়ারণ্য বিপন্ন প্রজাতির পাশাপাশি ওড়িশার পর্যটনকে উপকৃত করার ক্ষেত্রে একটি দুর্দান্ত ভূমিকা পালন করে।
কাদের জন্য উপযুক্ত: পরিবার ও বন্ধু
ভ্রমণের সময়কাল: ২-৩ ঘণ্টা
সেরা সময়: অক্টোবর থেকে মে
যেভাবে যাবেন: ভুবনেশ্বর থেকে গাড়িতে সহজ যাতায়াত
থাকার ব্যবস্থা: তাঁবু, গেস্ট হাউস ও হোটেল
১১. ভিতরকনিকা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য – ম্যানগ্রোভ ও লবণাক্ত জলের কুমির
অবস্থান: কেন্দ্রপাড়া জেলা
আয়তন: ৬৭২ বর্গকিমি
যদি আপনি সবচেয়ে বড় জীবন্ত সরীসৃপ দেখতে চান, তাহলে আপনাকে অবশ্যই ওড়িশার কেন্দ্রপাড়া জেলায় অবস্থিত ভিতরকণিকা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য পরিদর্শন করতে হবে। ভিতরকণিকা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ওড়িশার বিখ্যাত বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যগুলির মধ্যে একটি যেখানে বৃহত্তম লবণাক্ত জলের কুমির, কিং কোবরা, ভারতীয় পাইথনকে সংরক্ষণ করে । আপনি ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বাস্তুতন্ত্রও প্রত্যক্ষ করতে পারবেন। এটা কি কম রোমাঞ্চকর? একটি আকর্ষণীয় তথ্য হল যে ম্যানগ্রোভ এবং বন্যপ্রাণীর ক্ষেত্রে সারা ভারতের বিপন্ন লবণাক্ত জলের কুমিরের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
কাদের জন্য উপযুক্ত: পরিবার ও বন্ধু
ভ্রমণের সময়কাল: ১-২ ঘণ্টা
সেরা সময়: মার্চ থেকে জুন
যেভাবে যাবেন: ভদ্রক থেকে ভ্রমণ সহজ, কলকাতা হাওড়া স্টেশন থেকে ট্রেনে ভদ্রকে পৌঁছানো যায়
থাকার ব্যবস্থা: তোশালী স্যান্ডস রিসোর্ট ও অন্যান্য অনেক ভাল হোটেল রয়েছে।
উপসংহার
ওডিশার ভিতরকণিকা, কুলডিহা, কোটগড় বা হাদগড় এইসব বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য শুধু প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের নিদর্শনই নয়, বরং প্রকৃতি ও অ্যাডভেঞ্চারের এক অপূর্ব মিশ্রণ। যদি প্রকৃতি আপনার ভালোবাসার জায়গা হয়, তাহলে ওডিশা হতে পারে আপনার পরবর্তী স্বপ্নের গন্তব্য। এখনই পরিকল্পনা করুন এক অসাধারণ বন্যপ্রাণ অভিযানের, আর উপভোগ করুন প্রকৃতির এক অনন্য রূপ।

প্রতীক দত্তগুপ্ত, থাকেন কলকাতায়, কাজ বাদে বেড়ানোই যার প্রথম ভালবাসা। এই কয়েক বছর হল বেড়ানোর সাথে কলমও ধরেছেন । তিনি শুধুমাত্র যে জায়গাগুলি পরিদর্শন করেছেন সেগুলি সম্পর্কেই ব্লগ করেন না, তবে তিনি তার অনুগামীদের জন্য টিপস, কৌশল এবং নির্দেশিকাগুলি সম্পর্কেও পোস্ট করেন৷