উত্তরবঙ্গে ছড়িয়ে ছিটিয়ে প্রচুর মনভোলানো দারুন জায়গা রয়েছে যেগুলো আপনাকে বার বার এখানে টেনে আনবে। এখানে আমরা উত্তরবঙ্গের অফবিট কয়েকটি সুন্দর জায়গা সংগ্রহ করেছি যেগুলি আপনি সপ্তাহান্তে দেখার কথা ভাবতে পারেন। দৈনন্দিন জীবন থেকে দূরে সপ্তাহান্তে ছুটি কাটাতে এই জায়গাগুলির জুড়ি নেই বললেই চলে। আমাদের প্রিয় গন্তব্যগুলির মধ্যে উত্তরবঙ্গ অবশ্যই যথেষ্ট এগিয়ে থাকে। উত্তরবঙ্গ এই পাহাড়, চা বাগান, বন ও নদী নিয়ে এক মায়াময় স্বর্গ রচনা করে। আমার মনে হয় বাংলার এই অংশটি আপনাকেও ভালবাসতে বাধ্য করবে। এখানে আমাদের ভাল লাগার কয়েকটি অফবিট উত্তরবঙ্গ জায়গার কথা লিখলাম আশাকরি আপনাদের ভাল লাগবে।
অফবিট উত্তরবঙ্গের সেরা ১০ টি জায়গা – offbeat tourist places in north bengal
সুন্দরী উত্তরবঙ্গে বেড়ানোর দুটি খুব স্বতন্ত্র অংশ রয়েছে – ১. ডুয়ার্স অঞ্চল এবং ২. দার্জিলিং এবং কালিম্পং। ডুয়ার্স হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত এবং এখানকার মনোরম গ্রাম, পাহাড়ী নদী, চা বাগান এবং বন আপনাকে মুগ্ধ করবে। আর দার্জিলিং এবং কালিম্পং এর পাহাড় তাদের নিজস্ব গরিমায় সুন্দর। উত্তরবঙ্গে অনেকগুলি ছোট গ্রাম রয়েছে যা সারা বছর প্রচুর পর্যটকদের আকর্ষণ করে। অফবিট উত্তরবঙ্গের সেরা যে ১০ টি জায়গার কিছুটা অনুভুতি দেওয়ার চেস্টা করলাম।
1. মেঘে ঘেরা মাহালদিরাম
দার্জিলিং পাহাড়ে অবস্থিত উত্তরবঙ্গের এই জায়গাটি হয়তো অনেকের কাছেই অজানা। তবে একসাথে মেঘ, রোদ, চা বাগান, পাহাড়, মোমো, ছোটোখাটো ট্রেকিং, প্রকৃতি, পাখি, জৈব সবজি এবং অবশ্যই কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পাওয়া যায় এখানে। ঘরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে হাত দিয়েই ছুঁতে পারবেন মেঘ, কখনও মেঘ হয়তো চলে যাবে আপনার ভিতর দিয়ে। বারান্দায় দাড়িয়ে উপভোগ করুন টি গার্ডেনের চা-পাতা তোলার দৃশ্য।
কী ভাবে যাবেন মাহালদিরাম
প্রথমে পৌঁছোতে হবে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন বা বাগডোগরা বিমানবন্দরে। এখান থেকে মাহালদিরাম ৬২ কিমি। কার্শিয়াং থেকে ১২ কিমি। হিলকার্ট রোড ধরে কার্শিয়াং পেরিয়েই পৌঁছে যান দিলারাম মোড়। এখান থেকে ডান দিকে ঘুরে যান। দিলারাম থেকে মাহালদিরাম ১২ কিমি।
কোথায় থাকবেন মাহালদিরামে
আমরা ‘মাহালদিরাম সালামান্দার জংল ক্যাম্প’ এ ছিলাম। যদিও এর নাম ক্যাম্প কিন্তু এটি একটি সুন্দর হোমস্টে, দুতলা বাড়ি। তবে একটু খরচা সাপেক্ষ হলেও মাহালদিরামে থাকার আরও একটি ভালো জায়গা হল ‘টি গার্ডেন রিট্রিট।’
মাহালদিরামে কাছাকাছি কি কি দেখবেন
বাগোরা এবং চিমেনি মালদিরামের বেশ কাছাকাছি অবস্থিত। আর তাই চাতকপুর, মংপু, লটপঞ্চার, আহলদরা ও সিটং। আপনার যদি সময় থাকে তবে আপনি এই জায়গাগুলিকে ক্লাব করতে পারেন এবং একসাথে ঘুরে আসতে পারেন।
নামথিং পোখরি মালদিরাম থেকে প্রায় 7 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটি একটি সুন্দর হ্রদ এবং এটি হিমালয় পাখির একটি প্রাকৃতিক আবাসস্থল। পাখিপ্রেমীদের কাছে স্বর্গরাজ্য হতে পারে জায়গাটি
2. সপ্তাহান্তে – সোনাদা
সোনাদা দার্জিলিং এবং কার্সিয়ং-এর মধ্যে প্রায় মাঝপথে অবস্থিত। এটি দার্জিলিং শহর থেকে প্রায় 17 কিমি এবং কার্সিয়ং থেকে প্রায় 16 কিমি দূরে অবস্থিত। এটি দার্জিলিং হিমালয়ান রেলের একটি স্টেশনও বটে। যদিও ২০১৭তে স্টেশনটি আগুন লেগে পুড়ে যায়। এখন আবার সম্পুর্ন নতুন করে তৈরি হচ্ছে। উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি অফবিট জায়গা হিসেবে সোনাদা দারুন। সোনাদার উপরের অংশ থেকে আপনি কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বতমালার বিস্ময়কর দৃশ্য পাবেন। আর সোনাদার নিম্ন উপত্যকাগুলি সবুজ ঘাস, চা বাগান এবং পাইন বনের গাড় সবুজের ছেয়ে থাকে।
কী ভাবে যাবেন সোনাদা
সোনাদা জাতীয় সড়ক 110-এ অবস্থিত যেটি হিল কার্ট রোড নামেই বেশি পরিচিত। দার্জিলিং শহরে যাতায়াতের যেকোন যানবাহনকে সোনাদা দিয়ে যেতে হয় যেজন্য সোনাদা সবচেয়ে সহজে গন্তব্যগুলির মধ্যে অন্যতম। এছাড়াও, সমস্ত DHR ট্রেনের সোনাদাতে স্টপেজ রয়েছে, যা এখানে পৌঁছানোর একটি আকর্ষণীয় উপায়ও হতে পারে।
কোথায় থাকবেন সোনাদায়
আমরা ছিলাম ‘নিশ্চল’ হোমস্টে তে। এদের আতিথেয়তা সত্যই মুগ্ধ করেছিল আমাদের। প্রথম ঘরটা বেশ বড়, ঢুকেই দেখলাম এটা আসলে তাদের ডাইনিং রুম কিন্তু পুরোপুরি বাঁশের তৈরি। আমাদের থাকার ব্যবস্থা হল আর একটা বাঁশের কটেজে। এখানে আরও কিছু কটেজ আছে।
সোনাদা’র কাছাকাছি কি কি দেখবেন
কাছেই অনেকগুলি মনমুগ্ধকর চা বাগান আছে ঘুরে দেখতে পারেন। তারপর কাছেই ‘রেনবো’ জলপ্রপাত, তার অপুর্ব রূপ দেখতে অবশ্যই যাবেন। তবে সবার আগে এখানকার মনেস্টারি দর্শনিয়। এর আগে আপনি যদি উত্তরবঙ্গের ‘ঘুম’ মনেস্টারি বা ‘ডালি’ মনেস্টারি দেখে থাকেন তাহলেও বলব সোনাদা মনেস্টারি আপনার চিরদিন মনে থাকবে। চাতকপুর গ্রাম এখান থেকে মাত্র ৭ কিমি কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে যেতে পারেন। বা যদি টাইগার হিল দেখতে চান – মাত্র ১৫ কিমি দূর, একদম ভোরবেলা বেরিয়ে পড়ুন।
3. গণ্ডার দেখতে – পাতলাখাওয়া
অনেকে হয়তো এখনও পাতলাখাওয়ার নামও শোনেননি। কিন্তু কোচবিহারের এই জায়গাটি আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটনকেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে। উত্তরবঙ্গের এই পাতলাখাওয়া জঙ্গলটি জলদাপাড়া অভয়ারণ্যের বিস্তৃত একটা অংশ। এক সময় এখানেও গন্ডারের দেখা যেত কিন্তু বিভিন্ন কারনে ধীরে ধীরে এখান থেকেও গন্ডাররা জলদাপাড়ার দিকে চলে যায়। জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানে গন্ডারের সংখ্যাধিক্য কমাতেই রসমতী বনাঞ্চলকে গন্ডার আবাসস্থল করা হচ্ছে। পাতলাখাওয়া জঙ্গলের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়েছে তোর্সা। গত তিন বছর ধরে এই জঙ্গলকে গন্ডারের আবাসস্থল হিসেবে উপযুক্ত করে তোলা হয়েছে।
তবে শুধু গন্ডারই নয়, এই জঙ্গলে আগে থেকেই হরিণ, গাউর এবং চিতাবাঘ রয়েছে। ফলে পাতলাখাওয়াতে যদি আপনার গন্ডারদর্শন না-ও হয় তা হলেও হতাশ হওয়ার কিছু থাকবে না।
কী ভাবে যাবেন – পাতলাখাওয়া
কোচবিহার থেকে মাত্র ৩০ কিমি দূরে পাতলাখাওয়া। ট্রেনে আসতে চাইলে পৌঁছোতে হবে কোচবিহার বা নিউ কোচবিহার স্টেশন। বিমানে আসতে হলে বাগডোগরাই ভরসা। সেখান থেকে বাসে বা ট্রেনে কোচবিহার এসে পাতলাখাওয়া পৌঁছোতে পারেন। কোচবিহার থেকে পাতলাখাওয়া পৌঁছোনোর জন্য গাড়ি ভাড়া করতে পারেন। পাতলাখাওয়ার সব থেকে কাছের স্টেশন ঘোকসাডাঙা। একমাত্র শিয়ালদহ-নিউ আলিপুরদুয়ার তিস্তা তোর্সা এক্সপ্রেস এই স্টেশনে থামে। স্টেশন থেকে অটো বা টোটো পাওয়া যাবে।
কোথায় থাকবেন পাতলাখাওয়ায়
কোচবিহারের এত কাছে হওয়ার ফলে হয়তো অনেকেই পাতলাখাওয়ায় রাত্রিবাসের প্রয়োজন মনে করবেন না। কিন্তু উত্তরবঙ্গের এই জঙ্গলের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য এখানে একটা রাত কাটানো উচিত। ভবিষ্যতে হয়তো এখানে আরও রিসর্ট হবে, কিন্তু আপাতত এখানে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ বনোন্নয়ন এজেন্সির রসমতী কটেজ। সাধারণ দ্বিশয্যা ঘরের ভাড়া ১০০০ টাকা।
4. রুপকথার রাজ্য – বিদ্যাং
ছবির মত সুন্দর বিদ্যাং-কে প্রকৃতি তার সমস্ত সৌন্দর্য ঢেলে দিয়ে সাজিয়েছেন। আঁকাবাঁকা নদী, যতদুর চোখ যায় শুধু পাইন, ফার, ওক এবং দেবদারু গাছের সারি। চারিদিক কুয়াশাচ্ছন্ন হয়ে আছে ও সরল এবং অতিথিবৎসল মানুষজন – সবকিছু মিলে আপনার মনে হবে যেন উত্তরবঙ্গের এক স্বর্গরাজ্যে এসে পড়েছেন। যারা প্রকৃতি ভালবাসেন বিদ্যাং তাদের কাছে যেন স্বর্গসম।
বছরের প্রায় যেকোনো দিন আপনি এখানে আসতে পারেন, তবে বর্ষাকালে এলে একটু সাবধানতা অবলম্বন করবেন ।
কীভাবে যাবেন বিদ্যাং
ট্রেনে বা বাসে কলকাতা থেকে নিউ জলপাইগুড়ি, সেখান থেকে কোনও গাড়ি ভাড়া করে কলিম্পং যাওয়া। আর কালিম্পং থেকে মাত্র ১৫ কিমি দূরে এই বিদ্যাং, তা প্রায় আধ ঘন্টা থেকে ৪৫ মিনিটেই পৌঁছে যাবেন।
কোথায় থাকবেন বিদ্যাং-এ
বিদ্যাং গ্রামে বেশকিছু হোম স্টের ব্যবস্থা আছে। এছাড়া ‘বিদ্যাং দুন ভ্যালি নেচার রিত্রিট‘ নামে সমস্ত আধুনিক সুযোগ সুবিধা সহ একটি রিসর্ট আছে।
বিদ্যাং-এ কাছাকাছি কি কি দেখবেন
এখানে বেড়ানোর জন্য রেলী নদীর দুইকুল আছে। আপনার সমস্ত সময় কেটে যাবে উত্তরবঙ্গের ছোট্ট এক টুকরো স্বর্গরাজ্যের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে। তাছাড়াও আসে পাশে সুন্দর কমলা লেবুর বাগান রয়েছে। এই উপত্যকার থেকে সামান্য দুরে আছে এক পাহাড়ি ঝর্না ঘুরে আসুন সেখান থেকে। তাছাড়া কাফেরগাও, ইচ্ছেগাও, ডেল পার্ক বা কালিম্পং সবই এক ঘন্টার ভিতর পৌঁছে যাবেন।
5. প্রকৃতির কোলে – তাবাকোশী
তাবাকোশি মিরিকের কাছেই রংভাং নদীর ধারে কমলালেবু গাছ আর চা বাগানে ঘেরা সুন্দর একটি পাহাড়ি গ্রাম। শান্ত আর আসম্ভব সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য সমৃদ্ধ একটি গ্রাম যা এক কথায় প্রকৃতিপ্রেমীর কাছে স্বর্গ সমান। তাবাকোশির বুকচিরে বয়ে চলা এই রংভাং বা রাঙভাঙ নদী নেপালে তাবাকোশী বা তামাকোশী নামে পরিচিত আর সেই থেকেই উত্তরবঙ্গের এই গ্রামটির নামও হয়ে উঠেছে তাবাকোশী। বিচিত্র পাখির আনাগোনা আর তাদের কলতানে মুখরিত এই ছোট্ট অনবদ্য তাবাকোশী। নদীর পাশে আছে একটি সুন্দর পার্ক। সব মিলিয়ে সুন্দর মন জুড়ানো পরিবেশে বেশ কয়েকটা দিন কাটাতে পারলে আপনার শরীর ও মনের যে উদ্দিপন ঘটবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
কিভাবে যাবেন তাবাকোশি
প্রথমে ট্রেনে বা বাসে এনজেপি পৌঁছন। সেখান থেকে মিরিক লেক যাওয়ার রাস্তা ধরুন। লেক পেরিয়ে গোপালধারা চা বাগানের দিকে ২ কিমি গেলেই রাঙভাঙ মোড় । ঘুরুন ডান দিকে। এখান থেকে পাঁচ কিলোমিটারের মত নীচে নামতে হবে। মনে রাখবেন স্থানীয় লোকেরা যতটা তাবাকোশী নামে জানে তার চেয়ে বেশি রাঙভাঙ নামে চেনে। উত্তরবঙ্গের ব্যাস্ততম শহর শিলিগুড়ি থেকে সরাসরি আসতে চাইলে গাড়ি ভাড়া করে নেওয়াই ভালো। নতুবা শেয়ার জিপে মিরিক এসে, সেখান থেকে গাড়ি বদল করতে পারেন।
কোথায় থাকবেন তাবাকশিতে
তাবাকোশিতে থাকার জন্য বেশ কয়েকটি হোমস্টে রয়েছে চা বাগানের গায়েই গ্রামের শুরুতেই বেশ সাজানো গোছানো। কয়েকটির উল্লেখ করা হল নিচেঃ-
- রিভারসাইড ডোয়েলিং। যোগাযোগঃ ৬২৯৭১ ৪৬৪৩০
- টি ভিলেজ হোমস্টে। যোগাযোগঃ ৯৪৩৪১ ৩১৭৩৭
- ইয়োলমো হোমস্টে। যোগাযোগঃ ৮২৫০১ ৪০৩৮০
- সুনাখারী হোমস্টে। যোগাযোগঃ ৯৩৩৯৫ ১৬৭৯৮
- খুশি ফার্ম হাউস। যোগাযোগঃ ৯১৬৩৪ ২৮৩৮৫
- ঝর্না হোমস্টে। যোগাযোগঃ ৭৫৪৭৯ ৮৪৭২৮
তাবাকোশি’র কাছাকাছি কি কি দেখবেন
তাবাকোশির আশেপাশে অনেক কমলালেবুর বাগান, এলাচের বাগান এবং আদার বাগান আছে। এই এলাচ বাগানে আবার রাত কাটাবার জন্য টেন্টের ব্যবস্থা আছে। এখানকার চা-বাগানগুলিতে প্রচুর পাখির আনাগোনা আছে আবার মাঝে মাঝে কাছাকাছি জঙ্গল থেকে হরিন এখানে চলে আসে সেজন্য পথে মাঝে মাঝে ‘NO HUNTING’বোর্ড চোখে পড়বে।
উত্তরবঙ্গের আরেকটি সুন্দর জায়গা হল টারজাম (Turzum) এখানথেকে মাত্র ৩০ মিনিটের পথ গাড়িতে কিন্তু পুরোটাই চা-বাগানের মধ্যে দিয়ে । অসম্ভব সুন্দর পুরো পথটাই – একেবারে স্বর্গিয়।
6. ইকো ভিলেজ – কার্শিয়াং
কার্শিয়াং যদিও অফবিট হতে পারে না। বাঙালির অত্যন্ত জনপ্রিয় এই হিলস্টেশন কার্শিয়াং। আমরা যে জায়গাটি নিয়ে আলোচনা করব সেটা কার্শিয়াং থেকে প্রায় ২ কিলমিটার দূরে হিলকার্ট রোডের ধারে পাহাড়ে ঢালে। কার্শিয়াংয়ের সমস্ত মজাও নিতে চান, আবার শহরের কোলাহল থেকে কিছুটা দূরে থাকতে চাইলে এই ইকো ভিলেজ আদর্শ হতে পারে। হিলকার্ট রোডের ধারে কটেজের সামনে দিয়ে কু-ঝিকঝিক করতে করতে চলে যাবে টয়ট্রেন আর আপনি কটেজের ব্যালকনিতে এসে ফিরে যাবেন আপনার স্বপ্নের জগতে । কার্শিয়াংয়ের সমস্ত পয়েন্ট আপনি এই ইকো ভিলেজ থেকেই ঘুরে নিতে পারেন। তা হলে এ বার কার্শিয়াং শহরের বদলে হবে না কি এই ইকো ভিলেজ?
কিভাবে যাবেন কার্শিয়াং ইকো ভিলেজ
প্রথমে ট্রেনে বা বাসে এনজেপি পৌঁছন। এখান থেকে কার্শিয়াং পৌঁছে যান বাস, শেয়ার জিপ বা ভাড়া করা গাড়িতে। কার্শিয়াং স্টেশন থেকে দার্জিলিংয়ের দিকে কিছুটা এগোলেই এই ইকো ভিলেজ।
কোথায় থাকবেন?
এই ইকো ভিলেজের প্রকৃত নাম কার্শিয়াং সানিসাইড ইকো ভিলেজ হোমস্টে। যদিও নামে হোমস্টে কিন্তু সমস্ত আধুনিক সুবিধা আছে সাথে প্রকৃতির খুব কাছে একটা দারুন সময় কাটাতে পাড়েন। এখানে রাত্রিবাস একটু খরচসাপেক্ষ। কিন্তু ব্যবস্থাপনা খুবই ভালো। যোগাযোগ-৯০০২৯৮৪০৮১। (একটু বলে রাখি – এটা কিন্তু কোনো স্পনসর্ড লেখা নয় )
কার্শিয়াং’র কাছাকাছি কি কি দেখবেন
কার্শিয়াংয়ের সমস্ত পয়েন্ট আপনি এই ইকো ভিলেজ থেকেই ঘুরে নিতে পারেন। ইগল ক্রেগ, ডাও হিল, গিদ্দাপাহাড়, নেতাজির মিউজিয়াম, সেন্ট ম্যারিজ হিল, কার্শিয়াং স্টেশন ও রেল মিউজিয়াম সব আপনার হাতের নাগালে।
7. পাহাড় নদী বনানীর – রায়মাটাং
রাইমাটাং ডুয়ার্স অঞ্চলের একটি নতুন পর্যটন গন্তব্য, এটি বক্সা টাইগার রিজার্ভ অঞ্চলের প্রান্তবর্তি অংশ। রাইমাটাং ভুটান সিমান্তের বেশ কাছেও বটে এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রাচুর্যে গরা একটি অঞ্চল। রাইমাটাং-এ দেখার বা দেখার মতো কোনো তথাকথিত পর্যটনের আগ্রহের জায়গা নেই কারণ এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং নির্মল পরিবেশ আপনাকে অবাক করবেই। রাইমাটাং গ্রামটি চারিদিক দিয়ে এক্কেবারে সবুজ অরন্যে ঘেরা। এখানকার প্রকৃতি বন্যপ্রাণী বিশেযত হাতি এবং বিভিন্ন ধরনের গাছে সমৃদ্ধ। এখানে মাছধরা, পাখি, বার্ড ওয়াচিং এবং জঙ্গল সাফারি হল কয়েকটি বিকল্প।
কিভাবে যাবেন রাইমাটাং
ট্রেন – রাইমাটাংয়ে কোনো রেলওয়ে স্টেশন নেই। এটি আলিপুরদুয়ার জংশন, নিউ জংশন ইত্যাদির মতো নিকটবর্তী রেলওয়ে স্টেশনগুলির উপর নির্ভর করে। আলিপুরদুয়ার জংশন থেকে রাইমাটাং পর্যন্ত দূরত্ব প্রায় 40 কিমি এবং নিউ জলপাইগুড়ি জংশন (NJP) থেকে দূরত্ব 155 কিমি।
বাস – আপনি সড়কপথে বেশ আরামে রাইমাটাং পৌঁছাতে পারেন। প্রথমে কালচিনি পেরিয়ে আপনি চুয়াপাড়া, গাঙ্গুটিয়া, এবং মেছপাড়া চা বাগান হয়ে অবশেষে রাইমাতং খোলা নদীর ঘাটে পৌঁছে যান। শেষপর্যন্ত গ্রামে পৌঁছানোর জন্য আপনাকে নদীর ঘাট দিয়ে যেতে হয়। তাই বর্ষাকালে দুর্গম হয়ে পড়ে।
কোথায় থাকবেন রাইমাটাং-এ
গ্রামে থাকার জন্য বেশ কয়েকটি হোমস্টে রয়েছে। রাইমাটাং-এর হোমস্টেগুলি প্রায় সব মৌলিক সুযোগ-সুবিধা দেয় যেমন পরিষ্কার রুম, লাগোয়া ওয়েস্টার্ন বাথরুম, বিদ্যুৎ, ২৪ ঘন্টা জল, এলইডি টেলিভিশন, গিজার, রুম সার্ভিস এবং আরও অনেক কিছুর মতো সুবিধা আছে। তাদের নিজস্ব বাগানে উৎপাদিত তাজা সবজি থেকে বানানো খাবার পরিবেশন করা হয় ।
রায়মাটাং’র কাছাকাছি কি কি দেখবেন
কাছাকাছি ওয়াচটাওয়ারে জঙ্গল সাফারি আছে। আপনার ইকো-রিসর্ট বা হোমস্টের কাছে কিছু বন্যপ্রাণী দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু এলাকাটি প্রজাপতির জন্য বিখ্যাত এবং আপনি নদীর তীরে তাদের প্রচুর দেখতে পারেন। বনের ভিতর বিশেষ করে ভোরবেলা ঘুরে আসুন বিভিন্ন সাধারণ এবং বিরল প্রজাতির পাখির জন্য।
আপনি যদি দুঃসাহসী প্রকৃতির হন তবে এখান থেকে চুনাভাটি, লালবাংলোর মতো গ্রাম সহ বক্সা বনাঞ্চলের বিভিন্ন অংশে ট্রেক করা যেতে পারে এবং অবশেষে বক্সা দুর্গে পৌঁছানো যেতে পারে।
8. শান্ত অনন্য – গুলমা
এক দিকে মহানন্দা অভয়ারণ্যের জঙ্গল। পাশে ছোট্ট গুলমা রেল স্টেশন। মাঝ দিয়ে কুলকুল করে বয়ে চলেছে মহানন্দা এবং গুলমাখোলা নদী। দূরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে পাহাড়। প্রায়ই পাশের জঙ্গলে হাতি, চিতাবাঘের সঙ্গে দেখা মেলে নানা পাখি, কীটপতঙ্গ-সহ নানা বন্যজন্তুর। নিস্তব্ধ, শান্ত এই পরিবেশে সময় কোথা দিয়ে চলে যায় তা টের পাওয়াই দায়। পাথুরে মহানন্দার তীরে বিশ্রাম, শিলিগুড়ির উপকণ্ঠে গুলমা পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে কম আবিষ্কৃত এবং অফবিট জায়গাগুলির মধ্যে একটি। আপনার পরিবারের সাথে কিছু শান্তিতে সময় উপভোগ করার জন্য একটি চমৎকার জায়গা গুলমা আপনাকে কলকাতাকে ভুলিয়ে দেবে এর নির্মল পরিবেশ এবং দূরবর্তী দার্জিলিং পাহাড়ের কারণে।
কী ভাবে যাবেন – গুলমা
প্রথমে পৌঁছোতে হবে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন বা বাগডোগরা বিমানবন্দরে। এনজেপি থেকে গুলমা মাত্র ১৭ কিমি। শিলিগুড়ি স্টেশন থেকে মাত্র ১২ মিনিটের লোকাল ট্রেনযাত্রায় পৌঁছে যেতে পারেন গুলমা।
কোথায় থাকবেন গুলমা’য়
এখানে থাকার একমাত্র এবং সব থেকে ভালো জায়গাটি হল হামরো হোম রিসর্ট। গুলমা স্টেশন থেকে ১ কিমি দূরে চাষের জমির মাঝখানে অবস্থিত এই রিসর্ট। যোগাযোগ করার জন্য লগইন করুন হামরো হোমের ওয়েবসাইটে
গুলমা’র কাছাকাছি কি কি দেখবেন
- ইওয়াম ইন্ডিয়া বৌদ্ধ মঠ – গুলমা থেমে শিলিগুড়ি যাওয়ার পথে, প্রায় 11 কিলোমিটার দূরে, ইওয়াম ইন্ডিয়া বৌদ্ধ বিহারের নিস্তব্ধতা আপনাকে মুগ্ধ করবে। গুলমা বনের সুন্দর গঙ্গা, প্রার্থনা ঘণ্টা এবং এই অঞ্চলের নীরবতা আপনাকে দীর্ঘ সময় ধরে বসে ধ্যান করতে বাধ্য করবে। ভিতরের বুদ্ধ মন্দিরটি বেশ শৈল্পিক মাস্টারপিস।
- মহানন্দা নদী – গুলমার এই অঞ্চল বেশ সমতল তাই মহানন্দা এখানে অলস। নুড়িপাথর বেসিন এবং হাঁটার যোগ্য ভূখণ্ড এটিকে বেশ ল্যান্ডস্কেপ করে তোলে।
- এলিফ্যান্ট ক্রসিং জোন – মহানন্দা নদীর অপর পাশ দিয়ে জঙ্গলের দিকে একটি সরু কাঁকর পথ রয়েছে। এটি এলিফ্যান্ট ক্রসিং জোন নামে পরিচিত। বৃষ্টির সময়, আপনি সহজেই বন্য হাতিটিকে তাদের পরিবারের সাথে নদী পার হতে দেখতে পারেন এবং এটি সত্যই বেশ বিস্ময়কর দৃশ্য।
9. নিঝুম স্বর্গরাজ্য – বুনকুলুং
শহরে থাকতে থাকতে আপনার জীবন যখন ব্যতিব্যস্ত, তখন বুনকুলুংয়ের অপার সবুজ আপনার চোখকে স্নিগ্ধ করবেই। বুনকুলুং এমনই এক জায়গা, যেখানে চা-বাগান এবং চাষের জমি আপনি এক সঙ্গে দেখা যায়। এটিকে মডেল গ্রাম হিসাবেও ধরা হয়। ঈশ্বর যেন নিজে হাতে এই গ্রামকে সাজিয়েছেন। পাহাড়, জঙ্গল, হরেক পাখির মেলা, নদী কী নেই এই গ্রামে। শীতে কমলালেবুর বাগিচার সুগন্ধ এতে অন্য মাত্রা যোগ করে। বুনকুলুং-এর এক্কেবারে কাছ দিয়েই বয়ে চলেছে ছোট্ট নদী মুর্মাখোলা। আর কিছুটা দূরে রয়েছে বালাসন নদী, মিরিক যাওয়ার পথে দুধিয়ায় যে নদীকে পেরোতে হয়।
কী ভাবে যাবেন বুনকুলুং
প্রথমে আপনাকে এনজেপি স্টেশন বা বাগডোগরা বিমানবন্দরে পৌঁছোতে হবে। এখান থেকে বুনকুলুং ৪৩ কিমি। গাড়ি ভাড়া করে প্রথমে মিরিকের পথে দুধিয়া পর্যন্ত যান। সেখানে বালাসন নদী পেরিয়েই মিরিকের রাস্তা ছেড়ে ঘুরতে হবে ডান দিকে। সেখানে থেকে ৭-৮ কিমি দূরে বুনকুলুং। মিরিক থেকেও বুনকুলুং আসা যায়। দূরত্ব ১২ কিমি।
কোথায় থাকবেন বুনকুলুং এ
বুনকুলুং থাকার জন্য কিছু রিসর্ট তথা হোমস্টে রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বুনকুলুং জঙ্গল ক্যাম্প – যোগাযোগঃ ৯৯৩২২ ৩৪০৭৪, বুনকুলুং রিট্রিট ইকো হাট – যোগাযোগঃ ৯০৭৩০ ২৬১৪৫
বুনকুলুং’র কাছাকাছি কি কি দেখবেন
বুংকুলুং আসলে হল মিরিকের কৃষি হাব৷ গেলেই এক অপরূপ সুন্দর গ্রামের দেখা পাবেন৷ যা ক্লান্তি দূর করে মন ভাল করে দেবেই৷ এই গ্রাম থেকে যেদিকেই তাকাবেন, চোখে পড়বে ঘনজঙ্গলে মোড়া সবুজ পাহাড়৷ চাষের জমি ছাড়াও বিস্তীর্ণ খোলা সবুজের শোভা চোখকে তৃপ্তি দেবে৷ শহরে কোলাহলে যা প্রায় অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে৷ ছবির মতো গ্রামটি ১৯টি পুকুরে ঘেরা৷ সেখানে মাছের চাষও হয়৷
10. ঘুমন্ত বুদ্ধকে অপলক উপভোগ কর – ধোতরে
ধোতরে, দার্জিলিং জেলার প্রান্তে সিঙ্গালিলা ন্যাশনাল পার্কের একদম কাছে এই ছোট্ট গ্রাম। ধোতরে দার্জিলিং শহর থেকে প্রায় ৪৩ কিলোমিটার দূরে। এই জায়গাটা ট্রেকার, প্রকৃতি প্রেমী এবং পাখি পর্যবেক্ষকদের জন্য একটি স্বর্গ। কাঞ্চনজঙ্ঘার স্বর্গীয় দৃশ্য ধোত্রেয়ের আরেকটি বড় বৈশিষ্ট্য। কারণ এখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার ঘুমন্ত বুদ্ধের পূর্ণ পরিসর দেখা যায়। এছাড়াও গ্রামটি তার অবস্থানের জন্যও বিখ্যাত কারণ ধোত্রে টংলু, সান্দাকফু এবং ফালুট ট্রেকিংয়ের জন্য একটি প্রিয় বেস ক্যাম্প। এখানকার লজের ছাদে গিয়ে যা দেখালাম তা এই ট্যুরের অন্যতম আকর্ষণীয় দৃশ্য হয়ে থাকল আমার কাছে। পূর্ব দিকে ঝলমল করছে রাত্রের দার্জিলিং ও কার্শিয়াং শহরের আলো।
কী ভাবে যাবেন ধোতরে
যারা এনজেপি বা বাগডোগরা থেকে আসছেন তারা মিরিক, সুখিয়াপোখরি হয়ে মানেভঞ্জনে পৌঁছাতে পারেন এবং যারা দার্জিলিং থেকে আসছেন তারা লেপচাজগত এবং সুখিয়াপোখরি হয়ে মানেভঞ্জনে পৌঁছাতে পারেন।
মানেভঞ্জন থেকে ধোত্রে পর্যন্ত কোনো শেরে গাড়ি পাওয়া খুব কঠিন। এখান থেকে আপনাকে একটি প্রাইভেট কার বুক করতে হবে।
কোথায় থাকবেন ধোতরে-তে
শেরপা লজ – যোগাযোগ: ৮৩৭১৯ ১৮১৯২
ধোতরে’র কাছাকাছি কি কি দেখবেন
সান্দাকফু: এখানকার সবচেয়ে উঁচু এবং পশ্চিমবঙ্গের সবথেকে জনপ্রিয় ট্রেকিং স্পট। এই ট্রেকিং মানেভঞ্জন বা ধোত্রে থেকেই শুরু হয়।
এ ছাড়াও টংলু – গভির জঙ্গলের ট্রেক, টুমলিং,ফালুট, মানেভঞ্জন, সুখিয়াপখরি সবই যাওয়া যায়।
আরও পড়ুনঃ দারিংবাড়ি ঘুরে আসুন, পাহাড়, ঝর্না নিয়ে ‘ওড়িশার কাশ্মির’
প্রতীক দত্তগুপ্ত, থাকেন কলকাতায়, কাজ বাদে বেড়ানোই যার প্রথম ভালবাসা। এই কয়েক বছর হল বেড়ানোর সাথে কলমও ধরেছেন । তিনি শুধুমাত্র যে জায়গাগুলি পরিদর্শন করেছেন সেগুলি সম্পর্কেই ব্লগ করেন না, তবে তিনি তার অনুগামীদের জন্য টিপস, কৌশল এবং নির্দেশিকাগুলি সম্পর্কেও পোস্ট করেন৷
সুন্দর বর্ননা দিয়েছেন জায়গা গুলোর