কলকাতার সেরা দই খুঁজছেন? আপনি যদি কলকাতার বাইরে থাকেন তবে বলাই যায় যে, কলকাতার কথা মনে পড়লেই হয়তো প্রথমেই এর সুস্বাদু মিষ্টির কথা আপনার মনে আসে, বিশেষ করে রসগোল্লা এবং মিষ্টি দই। আসুন আমরা মিষ্টি দই সম্পর্কে একটু জেনে নেই এবং শহরের মধ্যে এটি সংগ্রহ ও উপভোগ করার শীর্ষ দোকানগুলি খুঁজে বের করি।
মিষ্টি দই হল একটি খাঁটি বাঙালি সুস্বাদু খাবার যা বিশ্বজুড়ে স্বাদে মুগ্ধ করেছে। এটি একটি সম্পূর্ণ সুষম মিষ্টি যা ভোজনের শেষপাতে অপরিহার্য। এটি বাঙালি পরিবারের প্রতিটি উত্সব এবং উদযাপনের একটি অবিছেদ্য অঙ্গ। এই মিষ্টি মসৃণ ক্রিমযুক্ত দইয়ের ট্রিটটি কলকাতার একটি সিগনেচার ডিশ। এর ইতিহাসও এর স্বাদের মতোই আকর্ষণীয়। বেশিরভাগ বাঙালি, যারা রাজ্যের বাইরে বেড়ে উঠেছেন, তারা প্রায়ই আত্মীয়দের কাছে কলকাতার মিষ্টি দই ভাঁড় অথবা মাটির পাত্রে কলকাতার মিষ্টি দই নিয়ে আসতে বলেন। তাদের প্রিয়জনরা পশ্চিমবঙ্গ থেকে তাদের সাথে দেখা করতে আসার সময় মিষ্টি অবশ্যই নিয়ে আসেন।
আরও পড়ুন: কলকাতার সেরা ১২ টি মিষ্টির দোকান
কলকাতার নানা প্রকারের মিষ্টি দই
মিষ্টি দই বেশিরভাগ ডেজার্টের তুলনায় স্বাস্থ্যকর ও যথেষ্ঠ সুস্বাদু। বর্তমানে এই মিষ্টি দইও বৈচিত্রময় স্বাদে পাওয়া যায়, যেমন:
- ক্লাসিক মিষ্টি দই : অর্থাৎ এটি মিষ্টি দইয়ের ঐতিহ্যবাহী ও ভেজালহীন সংস্করণ। এটি বেশ ক্রিম সমৃদ্ধ দই, সাদা এবং লাল দুরকমেরই হয়। এটি প্রায়শই মাটির পাত্রে বা ভাঁড়ে পরিবেশন করা হয় যাকে।
- নলেন গুড়ের মিষ্টি দই : নলেন গুড় বা খেজুরের গুড়, বাঙালি মিষ্টির একটি লালিত উপাদান। এটি উচ্চমানের খেজুরের গুড় সমৃদ্ধ দই। এই নলেন গুড়ের মিষ্টি দই ক্লাসিক সংস্করণের তুলনায় গাঢ় ক্যারামেল রঙের হয়ে থাকে।
- ফ্রুট-ইনফিউজড মিষ্টি দই : একটি ফ্রুটি টুইস্ট যোগ করতে, ক্যারামেলাইজেশন প্রক্রিয়ার আগে আম, স্ট্রবেরি বা আনারসের মতো বিভিন্ন ফল দইয়ের সাথে মিশ্রিত করা হয়। এই বৈচিত্র দইয়ে একটি সুন্দর, ফলের স্বাদ প্রদান করে। আম দোই আসলে একটি খুব জনপ্রিয় ধরণ হয়ে উঠেছে।
- চকোলেট মিষ্টি দই : ক্লাসিকের একটি আধুনিক মোড়ক, চকলেট মিষ্টি দই, কোকো বা চকোলেট চিপসকে অন্তর্ভুক্ত করে, যা বাঙালি ঐতিহ্য এবং আন্তর্জাতিক পছন্দের সংমিশ্রণ তৈরি করে। আমুল এবং সুধার মতো অনেক কোম্পানিতেও চকোলেট মিষ্টি দই তৈরি করে।
- ড্রাই ফ্রুট যুক্ত মিষ্টি দই : সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, উদ্ভাবক-কারিগর’রা কাজু, কিশমিশ এবং বাদামের সাথে উপরে জাফরান, পেস্তা বা এলাচের মতো নতুন কিন্তু পরিপূরক উপাদান সমৃদ্ধ মিষ্টি দই নিয়ে পরীক্ষা করেছেন। এই সংযোজনগুলি ডেজার্টটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
কলকাতায় 10 টি বিখ্যাত মিষ্টি দইয়ের দোকান
কলকাতার সেরা দই অর্থাৎ মিষ্টি দই হল বাংলার একটি একটি সিগনেচার ডিশ। কলকাতার বিখ্যাত মিষ্টি দইয়ের দোকান : সেরা 10 টির একটি তালিকা দেওয়া হল।
1. অমৃত
উত্তর কলকাতার ফড়িয়াপুকুরে অবস্থিত, এই কিংবদন্তি দোকানটি প্রবীণ নাগরিকদের মধ্যে সমান জনপ্রিয় যারা এখান থেকে মিষ্টি দই খেয়ে বড় হয়েছেন এবং কলেজের ছাত্ররা যারা এখন একই জাদু অনুভব করছেন। সবচেয়ে ভালো ব্যাপার হল এই জায়গার মিষ্টি দই আজও সেই একই রকম স্বাদ আছে যেমনটা বছর আগে ছিল। দই খেতে খেতে ক্ষীরের কথা মনে পড়বে৷ ক্ষীর দই ৷
2. ভীম নাগ
মিষ্টি দই এদেরও সাদা ৷ মিষ্টি একটু কম৷ তবে অন্য রকম খেতে৷ চামচ দিয়ে কেটে নিলে জল বেরোবে না ৷ সমস্যা হল, লেডিকেনির আবিষ্কারকের দোকানে একশো গ্রামের ভাঁড়ে দই পাওয়া যায় না ৷ কম করে আড়াইশোর ভাঁড় নিতে হয় ৷ দাম অন্যদের থেকে সামান্য বেশি ৷
3. কে সি দাস
মিষ্টি দইয়ের প্যাকেজিং সবচেয়ে ভালো ৷ কাগজ দিয়ে ঢাকা ৷ একশো গ্রাম প্লাস্টিকের কাপ ৷ আড়াইশো গ্রাম হলে চমত্কার মাটির প্লেট ৷ দইয়ের উপর রংটা অনেকটা হলদে৷ প্রথম দেখলে মনে হবে, আম দই বুঝি ৷ আসলে উপরের সরের চাদর সরালে সাদাটে ৷ হালকা মিষ্টি ভাল লাগলে, এদের মিষ্টি দই আপনার পছন্দ হবেই।
আরও পড়ুন: কলকাতার সেরা 13 টি আইসক্রিম পার্লার
4. যাদব চন্দ্র দাস
যদি চিনি পাতা সাদা মিষ্টি দই খেতে চান, তবে যাদবের কোনও বিকল্প মনে হয় না ৷ অসাধারণ খেতে ৷ এমন সাদা মিষ্টি দই কলকাতায় বিরল ৷ খুব বেশি মিষ্টি নয়, ধবধবে সাদা দই ৷ শ্রীরামকৃষ্ণের কেন প্রিয় ছিল এখানকার মিষ্টি, তা বোঝা যায় দই দেখেই ৷ উত্তরের ঝামাপুকুরের কেশব সেন স্ট্রিট, দক্ষিণের ট্র্যাঙ্গুলার পার্কে, দু’জায়গায় এই দোকান ৷ সত্যজিৎ রায় এবং কিশোর কুমারের মতো কিংবদন্তি বাঙালি সেলিব্রিটিদের একটি সর্বকালের প্রিয় দোকান, কলেজ স্ট্রিটের এই নিরীহ জায়গাটি।
5. বলরাম মল্লিক রাধারমন মল্লিক
বলরাম মল্লিকের আম দই উল্লেখযোগ্য ৷ তাদের আম দইয়ের নীচে আমের পাল্প থাকে ৷ বেশ অন্য রকম খেতে ৷ কিন্তু পারলে তাদের পয়োধি অবশ্যই খাবেন ৷ দই এবং ক্ষীর মিশিয়ে এই অসামান্য পয়োধি ৷ মনে হবে যেন পুরো ক্ষীর খাচ্ছি ৷ গোলা পাকিয়ে খাওয়া যায় ৷ বলরাম মল্লিক রাধরমন মল্লিকের পয়োধি অনেকটা ওই রকম ৷ এখন ওখানে ব্লু বেরির দই হচ্ছে একটু অন্য রকম ৷
6. যশোদা মিষ্টান্ন ভান্ডার (সিঁথি ও তালতলা)
তালতলা অঞ্চলে যশোদার নাম সবাই এক ডাকে চেনে ৷ এদের দোকানের দই মন ভোলানো ৷ এক একটা দোকানে দই এত গোলাপি হয় যে দেখলে মনে হয়, না জানি কী খাব৷ সিঁথির মোড়ে এই দোকানে ঢুকলে দইয়ের বড় বড় হাঁড়ি দেখা যায় ৷ সে গুলো গোলাপিই বেশি৷ তবে খেতে বেশ ভালো ৷ তবে এদের তালতলার দোকানে পাওয়া যায় কলকাতার সেরা দই । এখানকার দই পুরোপুরি সাদা রঙের, এবং গোপন রেসিপিটি ছয় দশক ধরে কারিগরদের কাছে রয়ে গেছে ।
7. নবকৃষ্ণ গুঁই (বউবাজার)
নবকৃষ্ণ গুঁই, বউবাজারের দোকানটি 200 বছরের পুরনো, এবং তাদের সাফল্যের রহস্য হল ধারাবাহিকতা। মিষ্টি দোই এবং আম দই এখানে খুব জনপ্রিয়, টেক্সচার সিল্কের মতো মসৃণ। সারাদেশের বাঙালিদের কাছে দোকানটি জনপ্রিয়।
8. গাঙ্গুরাম
গাঙ্গুরামের দইও এক জায়গায় একেক রকম কারন বর্তমানে তিন চারটে ভাগ হয়ে গিয়েছে দোকান ৷ গাঙ্গুরামস, গাঙ্গুরাম অ্যান্ড সন্স, গাঙ্গুরাম অ্যান্ড গ্র্যান্ড সন্স ৷ এক এক জায়গায় এক এক রকম স্বাদ ৷ অনেক জায়গায় খুব সাধারণ ৷ ব্যক্তিগত ভাবে আমার পছন্দ চাঁদনি চক স্টেশনের গায়ে গাঙ্গুরামের দোকানের লাল দই ৷ চমত্কার স্বাদ ৷
9. নিউ আশীর্বাদ সুইটস
বালিগঞ্জ স্টেশনের গায়ে এই দোকানে আম দইয়ের এক চমত্কার বিশেষত্ব রয়েছে ৷ পুরো আম নিয়ে কাজ করা হয় ৷ শুধু আমের পাল্প নয় ৷ ফলে দইয়ের মধ্যে আমের আঁশ থেকে যায় ৷ খাওয়ার সময় দইয়ে আঁশ পাবেন ৷ একেবারে অন্য রকম লাগে ৷ আম দইয়ের পাশে এখানে ভ্যানিলা বা স্ট্রবেরি দই খেয়ে দেখতে পারেন ৷ অন্য রকম, নতুনত্ব আছে ৷
10. সন্তোষ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার
কলেজ স্ট্রিটে বহু পুরোনো দোকান ৷ উত্তর কলকাতায় অনেক বাড়িতে বিয়েবাড়িতে সন্তোষের দই থাকা আভিজাত্যের প্রতীক ৷ ক’দিন আগে গিয়ে দেখলাম, গোলাপি দইয়ে বিশেষত্ব ৷ প্লাস্টিকের কাপে কেটে কেটে ১০০ গ্রাম করে দেওয়া হয় ৷ দইয়ের সেই চাপ চাপ ব্যাপারটা থাকছে না ৷ এই অঞ্চলের অন্যান্য দোকানের তুলনায় এদের দইয়ের দাম অপেক্ষাকৃত কম রাখা হয়েছে । লাল দইয়ের পাশে ওই ভাবে কেটে বিক্রি হয় সাদা দইও ৷
উপরে কেবল 10 টি, কলকাতার বিখ্যাত মিষ্টি দইয়ের দোকান সম্পর্কে বলা হল কিন্তু প্রকৃত পক্ষে কলকাতায় আরও অনেকগুলি ভাল মিষ্টি দইয়ের দোকান থাকবে যা আমাদের নজর এড়িয়েছে। এক্ষেত্রে আপনাদের সুপরামর্শ আমরা সাদরে গ্রহণ করব।
প্রতীক দত্তগুপ্ত, থাকেন কলকাতায়, কাজ বাদে বেড়ানোই যার প্রথম ভালবাসা। এই কয়েক বছর হল বেড়ানোর সাথে কলমও ধরেছেন । তিনি শুধুমাত্র যে জায়গাগুলি পরিদর্শন করেছেন সেগুলি সম্পর্কেই ব্লগ করেন না, তবে তিনি তার অনুগামীদের জন্য টিপস, কৌশল এবং নির্দেশিকাগুলি সম্পর্কেও পোস্ট করেন৷