
ভারত মানেই শুধু ঐতিহাসিক স্থাপত্য বা রঙিন উৎসব নয়। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে নদীর স্রোত আর বাতাসের কারুকার্যে তৈরি হওয়া গিরিখাত বা নদী ক্যানিয়নগুলি তেমনই এক অবিশ্বাস্য সৃষ্টি। এই বিশাল দেশের আনাচে-কানাচে লুকিয়ে আছে এমন সব প্রাকৃতিক বিস্ময়, যা আপনাকে মন্ত্রমুগ্ধ করে দেবে। এই বিস্তীর্ণ পাথুরে জগৎ কেবল সুন্দর নয়, এর সাথে জড়িয়ে আছে গভীর ভূতাত্ত্বিক এবং সাংস্কৃতিক তাৎপর্য।
ভারতের নদী ক্যানিয়ন বা গিরিখাত : সেরা ৮ টি
চলুন, আজ আমরা ভারতের বুকে লুকিয়ে থাকা এমনই কিছু অসাধারণ নদী ক্যানিয়ন বা নদী গিরিখাতের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ি, যা আপনার পরবর্তী ভ্রমণের ঠিকানা হতেই পারে।
১. কড়িয়া ধ্রো, গুজরাট: কচ্ছের বুকে এক টুকরো গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন
কল্পনা করুন, মাইলের পর মাইল বিস্তৃত মরুভূমির মাঝে হঠাৎ করে মাটি দু’ভাগ হয়ে গিয়ে এক গভীর নদী ক্যানিয়ন বা গিরিখাতের সৃষ্টি হয়েছে, আর তার মধ্যে দিয়ে বয়ে চলেছে শান্ত এক নদী। গুজরাটের কচ্ছ জেলার কোডকি গ্রামের কাছে অবস্থিত কড়িয়া ধ্রো ঠিক এমনই এক বিস্ময়কর দৃশ্যপট। স্থানীয়দের কাছে এটি ‘গুজরাটের গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন’ নামেই পরিচিত।
লক্ষ লক্ষ বছর ধরে বাতাস আর নদীর ক্ষয়কার্যের ফলে তৈরি হওয়া এখানকার পাথরের খাঁজকাটা গঠনগুলি দেখার মতো। স্থানীয় কুচি ভাষায় পশুপালকেরা এই গঠনগুলিকে ‘কোটারো’ বলে ডাকেন। ট্রেকিং এবং প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এটি একটি স্বর্গরাজ্য। সবচেয়ে বড় কথা, এই জায়গাটি এখনও পর্যটকদের ভিড় থেকে অনেকটাই মুক্ত, তাই এখানে পাবেন এক অদ্ভুত শান্ত ও স্নিগ্ধ পরিবেশ।
কীভাবে ঘুরবেন?
- কাছাকাছি দর্শনীয় স্থান: ভূজ শহর থেকে কড়িয়া ধ্রো মাত্র দেড় ঘণ্টার পথ। তাই যাত্রাপথে ঘুরে নিতে পারেন कच्छ-এর রণ, আইনা মহল, হামিরসর লেক এবং বিখ্যাত মাণ্ডভি বিচ।
- যাওয়ার সেরা সময়: নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস হল কড়িয়া ধ্রো ভ্রমণের আদর্শ সময়। এই সময়ে শীতল আবহাওয়া এবং মনোরম রোদ আপনার ভ্রমণকে আরও আনন্দদায়ক করে তুলবে।
- কীভাবে পৌঁছাবেন: ভূজ শহর বিমান, রেল এবং সড়কপথে দেশের বাকি অংশের সাথে ভালোভাবে সংযুক্ত। ভূজ থেকে প্রায় ৩৫-৪০ কিমি দূরে অবস্থিত কড়িয়া ধ্রো যাওয়ার জন্য স্থানীয় জিপ বা ভালো গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্সযুক্ত গাড়ি ভাড়া করাই বুদ্ধিমানের কাজ, কারণ শেষ ৪-৫ কিমি রাস্তা বেশ দুর্গম।
- বিশেষ সতর্কতা: এখানকার নদীতে কুমিরের আনাগোনা আছে, তাই জলে নামা বা সাঁতার কাটার চেষ্টা করবেন না।
আরও পড়ুন: ভারতের সেরা সমুদ্র সৈকতগুলি – শান্তি ও সৌন্দর্য মিলনস্থল
২. ওয়ারি চোরা, মেঘালয়: গারো পাহাড়ের গোপন স্বর্গ
মেঘালয়ের নাম শুনলেই আমাদের চোখে ভাসে চেরাপুঞ্জি বা শিলং-এর ছবি। কিন্তু গারো এবং জয়ন্তিয়া পাহাড়ের গভীরে এমন অনেক অনাবিষ্কৃত সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে, যা আপনাকে বাকরুদ্ধ করে দেবে। ইনস্টাগ্রামে ইদানীং জনপ্রিয় হয়ে ওঠা তেমনই এক নাম—ওয়ারি চোরা।
গারো পাহাড়ের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এই নদী ক্যানিয়ন বা গিরিখাতটি দেখলে মনে হবে যেন কোনো ডিজনি সিনেমার সেট! দু’পাশে উঁচু পাথরের দেওয়াল, যা সবুজ শ্যাওলা আর গাছপালায় ঢাকা। তার মাঝখান দিয়ে বয়ে চলেছে স্বচ্ছ সবুজ জলের নদী। আর যখন সূর্যের আলো সেই গভীর গিরিখাতে প্রবেশ করে, তখন এক রহস্যময় ও নাটকীয় পরিবেশ তৈরি হয়। ‘ওয়ারি’ শব্দের গারো অর্থ হল গভীর নদী। এই জায়গাটি গারো উপজাতির বাসস্থান, যারা তাদের উষ্ণ আতিথেয়তা এবং প্রকৃতির সাথে নিবিড় সম্পর্কের জন্য পরিচিত।
কীভাবে ঘুরবেন?
- যাওয়ার সেরা সময়: ওয়ারি চোরা ভ্রমণের জন্য নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস সবচেয়ে উপযুক্ত। এই সময় আবহাওয়া মনোরম থাকে এবং বৃষ্টি প্রায় হয় না বললেই চলে।
- সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা: এখানকার স্থানীয় গারো মানুষদের সাথে কথা বলুন। প্রকৃতির কোলে বেড়ে ওঠা এই জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারাটা আপনার জন্য এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা হবে।
পড়ে দেখুন: ভারতের সেরা রাফটিং স্পট নানান গ্রেডের 12 টি স্পট
৩. ভেড়াঘাট, মধ্যপ্রদেশ: মার্বেল পাথরের মাঝে নৌবিহার

মধ্যপ্রদেশের জবলপুর শহর থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরে নর্মদা নদীর বুকে জেগে উঠেছে এক বিস্ময়কর মার্বেল পাথরের জগৎ—ভেড়াঘাট। প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ এই গিরিখাতের দু’পাশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে শ্বেতশুভ্র, ধূসর ও গোলাপি মার্বেলের পাহাড়। একে অনেকেই ভালোবেসে ‘ভারতের গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন’ বলে থাকেন।
এখানে নৌবিহার করার অভিজ্ঞতা এক কথায় অসাধারণ। শান্ত নর্মদার বুকে যখন নৌকা এগিয়ে চলে, আর দু’পাশের সুউচ্চ মার্বেল পাথরের দেওয়ালে সূর্যের আলো প্রতিফলিত হয়, তখন মনে হয় যেন অন্য কোনো জগতে এসে পড়েছেন। পূর্ণিমার রাতে এখানকার সৌন্দর্য নাকি বহুগুণ বেড়ে যায়, যখন চাঁদের আলোয় গোটা উপত্যকা চকচক করে। কাছেই রয়েছে শক্তিশালী ধুঁয়াধার জলপ্রপাত, যা আপনার ভ্রমণকে পূর্ণতা দেবে।
কীভাবে ঘুরবেন?
- কীভাবে পৌঁছাবেন: জবলপুর শহর থেকে ট্যাক্সি, বাস বা অটো ভাড়া করে সহজেই ভেড়াঘাট পৌঁছানো যায়। একদিনের সফরে ভেড়াঘাট এবং ধুঁয়াধার জলপ্রপাত একসঙ্গে ঘুরে আসা সম্ভব।
- যাওয়ার সেরা সময়: বর্ষার সময় (জুলাই থেকে অক্টোবর) অতিরিক্ত জলের কারণে এখানে নৌবিহার বন্ধ থাকে। তাই বর্ষার পর থেকে গ্রীষ্মের আগে পর্যন্ত যেকোনো সময় ভ্রমণের জন্য আদর্শ।
- কোথায় থাকবেন: ভেড়াঘাটে রাত কাটাতে চাইলে মধ্যপ্রদেশ ট্যুরিজমের হোটেল ‘মোটেল মার্বেল রকস’ একটি ভালো বিকল্প।
পড়ে দেখুন: ভারতের সেরা ১০ টি অ্যাডভেঞ্চার স্পট লাদাখ থেকে আন্দামান পর্যন্ত
৪. কনাকুন্ড, ওড়িশা: এক অনাবিষ্কৃত ভূতাত্ত্বিক বিস্ময়
ওড়িশা মানেই পুরীর সমুদ্র সৈকত বা কোণারকের সূর্য মন্দির নয়। রাজ্যের সুন্দরগড় জেলার গভীরে লুকিয়ে আছে এক ভূতাত্ত্বিক বিস্ময়, যার নাম কনাকুন্ড। স্থানীয়দের কাছে এটি ‘ওড়িশার গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন’ নামে পরিচিত।
সহস্রাব্দ ধরে জলের ক্ষয়কার্যের ফলে বেলেপাথর এবং ব্যাসল্ট শিলা দিয়ে তৈরি হওয়া এই বিশাল নদী ক্যানিয়ন বা গিরিখাত ও উপত্যকা এক রুক্ষ অথচ মুগ্ধ করার মতো ল্যান্ডস্কেপ তৈরি করেছে। এখানকার লাল, বাদামী আর ধূসর পাথরের স্তরগুলি যেন পৃথিবীর প্রাচীন ইতিহাসের গল্প বলে। যারা অ্যাডভেঞ্চার ভালোবাসেন, তাদের জন্য কনাকুন্ডে হাইকিং এবং রক ক্লাইম্বিংয়ের দারুণ সুযোগ রয়েছে। গিরিখাতের কিনার বরাবর হেঁটে যাওয়ার সময় নীচের উপত্যকার যে মনোরম দৃশ্য দেখা যায়, তা ভোলার নয়।
ফটোগ্রাফারদের জন্য এই জায়গাটি একটি স্বর্গ। সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের সময় গিরিখাতের পাথুরে দেওয়ালে যখন সোনালী আলো পড়ে, তখন এক জাদুকরী মুহূর্ত তৈরি হয়। শহুরে কোলাহল থেকে দূরে, প্রকৃতির শান্ত ও আদিম রূপের সাক্ষী থাকতে চাইলে কনাকুন্ড আপনার জন্য সেরা ঠিকানা।
কীভাবে ঘুরবেন?
- যাওয়ার সেরা সময়: অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত আবহাওয়া শীতল ও মনোরম থাকায় কনাকুন্ড ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে ভালো সময়।
- কীভাবে পৌঁছাবেন: কনাকুন্ডের নিকটতম শহর সুন্দরগড় (প্রায় ৪৭ কিমি দূরে)। বিলাসপুর বা ঝাড়সুগুদা স্টেশন থেকে সড়কপথে এখানে পৌঁছানো যায়। নিকটতম বিমানবন্দর ভুবনেশ্বর, তবে সেখান থেকে সড়কপথে দূরত্ব অনেকটাই বেশি।
- স্থানীয় সংস্কৃতি: কনাকুন্ডের আশেপাশের গ্রামগুলিতে আদিবাসী সম্প্রদায়ের বাস। তাদের সংস্কৃতি, আতিথেয়তা এবং প্রকৃতির প্রতি তাদের শ্রদ্ধা আপনার ভ্রমণকে আরও সমৃদ্ধ করবে।
অবশ্যই, আপনার ভ্রমণ ব্লগের জন্য বাকি অংশগুলোকেও নতুন এবং আকর্ষণীয় আঙ্গিকে লেখা হল। এটি আগের চারটি বর্ণনার ধারাবাহিকতা হিসাবে দেওয়া হলো।
পড়ে দেখুন: উত্তর পূর্ব ভারতের সেরা 11 টি হানিমুন গন্তব্য
৫. গান্ডিকোটা, অন্ধ্র প্রদেশ: ভারতের গোপন গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন
‘গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন’ শুনলেই যদি আপনার চোখে আমেরিকার অ্যারিজোনার ছবি ভাসে, তবে এবার দেশের দিকে তাকানোর পালা। অন্ধ্র প্রদেশের কাডাপা জেলায় পেন্না নদীর তীরে লুকিয়ে আছে প্রকৃতির এক বিস্ময়কর সৃষ্টি—গান্ডিকোটা, যা পরিচিত ‘ভারতের গোপন গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন’ নামে।
লক্ষ লক্ষ বছর ধরে পেন্না নদীর স্রোত লালচে বেলেপাথরকে খোদাই করে তৈরি করেছে এই বিশাল ও গভীর গিরিখাত। রুক্ষ, খাঁজকাটা পাথরের দেওয়াল আর নীচ দিয়ে বয়ে চলা শান্ত নদী—এখানকার দৃশ্যপট আপনাকে মুগ্ধ করবেই। তবে গান্ডিকোটার আকর্ষণ শুধু তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সীমাবদ্ধ নয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে সমৃদ্ধ ইতিহাস।
গিরিখাতের ধারেই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে ১৩শ শতকে নির্মিত গান্ডিকোটা দুর্গ। কাকাতিয়, বিজয়নগর এবং কুতুব শাহী শাসকদের সাক্ষী এই দুর্গ থেকে নীচের পেন্না নদীর দৃশ্য এক কথায় অসাধারণ। প্রকৃতি এবং ইতিহাসের এই অপূর্ব মেলবন্ধন গান্ডিকোটাকে এক অনন্য পরিচয় দিয়েছে। যারা ট্রেকিং, ক্যাম্পিং বা রক ক্লাইম্বিং ভালোবাসেন, তাদের জন্য এই জায়গাটি এককথায় স্বর্গ।
কীভাবে ঘুরবেন?
- প্রধান আকর্ষণ: পেন্না নদীর গিরিখাত, গান্ডিকোটা দুর্গ, মাধবরায় স্বামী মন্দির এবং জামিয়া মসজিদ।
- যাওয়ার সেরা সময়: অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত আবহাওয়া মনোরম থাকে, যা ভ্রমণের জন্য আদর্শ।
- অবস্থান: কাডাপা জেলা, অন্ধ্র প্রদেশ।
৬. চম্বল গিরিখাত, রাজস্থান: গরাদিয়া মহাদেব এক ঐশ্বরিক দৃশ্য

রাজস্থানের কোটা শহর থেকে প্রায় ২৮ কিলোমিটার দূরে চম্বল নদীর তীরে অবস্থিত গরাদিয়া মহাদেব মন্দিরটি নিছকই একটি উপাসনাস্থল নয়, এটি প্রকৃতির এক অবিশ্বাস্য ক্যানভাস। এখানে এসে চম্বল নদী একটি নিখুঁত ‘U’ বা ঘোড়ার খুরের নালের মতো বাঁক নিয়েছে এবং প্রায় ৩০০ ফুট গভীর এক গিরিখাত তৈরি করেছে।
খাড়া পাহাড়ের চূড়া থেকে শান্ত চম্বল ও তার সবুজ উপত্যকার ৩৬০-ডিগ্রি প্যানোরামিক ভিউ আপনাকে স্তব্ধ করে দেবে। ২০১৬ সালে রাজস্থান পর্যটনের একটি বিজ্ঞাপন এবং জনপ্রিয় গায়ক বি প্রাকের ‘মান ভারিয়া’ গানের শুটিং হওয়ার পর এই লুকানো রত্নটি ভ্রমণপিপাসুদের নজরে আসে। বাণিজ্যিক কোলাহল থেকে দূরে, এই জায়গার নির্মল ও স্নিগ্ধ পরিবেশ মনকে এক অদ্ভুত শান্তি দেয়। এর প্রাকৃতিক গঠন অনেকটা গান্ডিকোটার মতো হলেও, চম্বলের এই изумруд-সবুজ জলরাশি এটিকে এক স্বতন্ত্র রূপ দিয়েছে।
কীভাবে ঘুরবেন?
- অভিজ্ঞতা: শান্ত পরিবেশে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা উপত্যকার সৌন্দর্য উপভোগ করুন। ফটোগ্রাফির জন্য এটি একটি আদর্শ জায়গা।
- কীভাবে পৌঁছাবেন: কোটা শহর থেকে গাড়ি ভাড়া করে সহজেই এখানে পৌঁছানো যায়।
- বিশেষ আকর্ষণ: নির্জনতা এবং প্রকৃতির মাঝে আধ্যাত্মিকতার এক অসাধারণ অনুভূতি।
৭. জান্সকার উপত্যকা, লাদাখ: যেখানে নদী জমে বরফ হয়ে যায়
কখনও কি জমে যাওয়া নদীর উপর দিয়ে হাঁটার স্বপ্ন দেখেছেন? আপনার এই স্বপ্ন সত্যি হতে পারে লাদাখের জান্সকার উপত্যকায়! সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৭,০০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এই উপত্যকাটি অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের চূড়ান্ত ঠিকানা। ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত পর্যটকদের কাছে প্রায় অজানা থাকায় এটি আজও তার কুমারী সৌন্দর্য ধরে রেখেছে।
জান্সকারের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হল কিংবদন্তিতুল্য চাদর ট্রেক। শীতকালে এখানকার জান্সকার নদী পুরোপুরি জমে বরফের চাদরে পরিণত হয়, আর সেই বরফের উপর দিয়েই ট্রেকিং করে এগিয়ে যেতে হয়। এ এক अविश्वसनीय এবং রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা! এছাড়া, প্রাচীন মঠ, সুউচ্চ হিমবাহ আর চারপাশের রুক্ষ পাহাড়ের শ্বাসরুদ্ধকর দৃশ্য তো রয়েছেই। আপনি যদি বাইক রাইডার হন, তবে লেহ-লাদাখ থেকে জান্সকার পর্যন্ত বাইক ট্রিপ আপনার জীবনের সেরা স্মৃতি হয়ে থাকতে পারে।
কীভাবে ঘুরবেন?
- যাওয়ার সেরা সময়:
- জুন থেকে সেপ্টেম্বর: এই সময় রাস্তা খোলা থাকে এবং আবহাওয়া মনোরম থাকে। উপত্যকার সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য এটি সেরা সময়।
- জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি: শুধুমাত্র চাদর ট্রেকের জন্য। এই সময় তাপমাত্রা হিমাঙ্কের অনেক নীচে থাকে, তাই কঠিনতম চ্যালেঞ্জ নেওয়ার মানসিক প্রস্তুতি থাকতে হবে।
- জুন থেকে সেপ্টেম্বর: এই সময় রাস্তা খোলা থাকে এবং আবহাওয়া মনোরম থাকে। উপত্যকার সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য এটি সেরা সময়।
৮. গনগনি, পশ্চিমবঙ্গ: বাংলার নিজস্ব ‘গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন’ ও বকাসুরের উপাখ্যান
আমেরিকা বা অন্ধ্রপ্রদেশ অনেক দূর, খাস কলকাতাবাসীর হাতের কাছেই রয়েছে এক ‘মিনি গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন’—পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতায় অবস্থিত গনগনি। শিলাবতী নদীর তীরে লক্ষ লক্ষ বছর ধরে মাটি ক্ষয়ের ফলে তৈরি হয়েছে এই লাল মাটির বিচিত্র গিরিখাত। স্থানীয়ভাবে এটি ‘গনগনি ডাঙ্গা’ নামেও পরিচিত।
ভূতাত্ত্বিক কারণের পাশাপাশি এই জায়গার সঙ্গে জড়িয়ে আছে মহাভারতের এক দারুণ গল্প। স্থানীয়দের বিশ্বাস, পাণ্ডবদের বনবাসকালে এখানেই মহাবলী ভীমের সাথে নরখাদক বকাসুরের যুদ্ধ হয়েছিল। সেই ভয়ঙ্কর যুদ্ধের ফলেই নাকি এখানকার সমতল ভূমি আজকের এই ঢেউ খেলানো, খাঁজকাটা রূপ নিয়েছে।
আজ গনগনি একটি সংগঠিত পর্যটন কেন্দ্র। গিরিখাতের গভীরে নামার জন্য রয়েছে সিঁড়ি। অসংখ্য ছোট-বড় নালা বা ‘গালি’ দিয়ে হেঁটে আপনি ঘুরে দেখতে পারেন এই লাল উপত্যকার অন্দরমহল। কিছু জায়গায় গুহার মতো গঠন, আবার কোথাও উঁচু মিনার—প্রকৃতির খেয়ালে তৈরি হওয়া এই ভাস্কর্য আপনাকে অবাক করবেই। সপ্তাহান্তে একদিনের ভ্রমণের জন্য গনগনি এক কথায় আদর্শ।
কীভাবে ঘুরবেন?
- প্রধান আকর্ষণ: শিলাবতী নদীর তীরে লাল মাটির গিরিখাত, প্রাকৃতিক ভাস্কর্য এবং এর পৌরাণিক ইতিহাস।
- অভিজ্ঞতা: গিরিখাতের ভেতরের ছোট ছোট পথ দিয়ে হেঁটে বেড়ানো এবং শিলাবতী নদীর তীরে বসে শান্ত পরিবেশ উপভোগ করা।
- কীভাবে পৌঁছাবেন: কলকাতা থেকে সড়কপথে গাড়িতে মাত্র চার ঘণ্টার রাস্তা। গড়বেতা হল নিকটতম শহর।

প্রতীক দত্তগুপ্ত, থাকেন কলকাতায়, কাজ বাদে বেড়ানোই যার প্রথম ভালবাসা। এই কয়েক বছর হল বেড়ানোর সাথে কলমও ধরেছেন । তিনি শুধুমাত্র যে জায়গাগুলি পরিদর্শন করেছেন সেগুলি সম্পর্কেই ব্লগ করেন না, তবে তিনি তার অনুগামীদের জন্য টিপস, কৌশল এবং নির্দেশিকাগুলি সম্পর্কেও পোস্ট করেন৷