বগুড়ান জলপাই: নিরিবিলি সৈকত offbeat sea beach

বগুড়ান জলপাই, নিরিবিলি সৈকত: offbeat sea beach near kolkata

এখন আর সমুদ্র সৈকতে ছুটি কাটানো মানেই দীঘার ভিড়ের মধ্যে গিয়ে পড়তে হবে এমন কথা নেই। আপনি চাইলে একটু নির্জনে, বন্ধু-পরিজন পরিবৃত হয়ে দুদিন কাটিয়ে আসতে পারেন। এরকমই একটি শান্ত সমুদ্র সৈকত হল বগুরান জলপাই, স্বল্প পরিচিত একটি সমুদ্র সৈকতে। একটি নির্জন সমুদ্র সৈকত যেখানে শুধু ঢেউয়ের আওয়াজ এবং সঙ্গে সামুদ্রিক কচ্ছপ বা সঙ্গত করার জন্য লক্ষ লক্ষ লাল কাঁকড়া আপনার কাছে থাকবে। । কলকাতা থেকে দীঘা যাওয়ার পথে কাঁথি ব্লকের অন্তর্গত বগুড়ান জলপাইয়ে প্রায় ৭.৩ কিলোমিটার বিস্তীর্ণ সমুদ্রসৈকত রয়েছে। এখানে সমুদ্র দীঘার মতো অতটা উত্তাল নয় বা সাজানো গোছানো হোটেলেও সেভাবে নেই। হয়তো সেটাই কারণ পর্যটকদের ভিড় কম হওয়ার। তবে এমন অনেক কিছু রয়েছে এখানে যা কাছাকাছি জনপ্রিয় সৈকতগুলিতে সেভাবে পাওয়া যায়না।

বগুড়ান-জলপাই কেন যাবেন?

বগুড়ান জলপাই, নিরিবিলি সৈকত

অন্যান্য সৈকতে যেখানে লাল কাঁকড়া কিছু পরিমাণে দেখা যায়, সেখানে বগুড়ানজালপাইয়ের সৈকতে লাল কাঁকড়ার অনেক বেশি সংখ্যায় চোখে পড়ে। মন্দারমণির মতো কাঁকড়া দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। “এখানে ডোলিলা-ফেডিলা প্রজাতির কাঁকড়াও রয়েছে” বলেন বন কর্তাদের একাংশ। শুধু তাই নয়, এখানে বেশ দেখা যায় বিরল প্রজাতির লিমুলাস বা রা‌জ কাঁকড়া। আরও একটা পাওনা হল সৈকত বরাবর রয়েছে দীর্ঘ ঝাউবন এবং ম্যানগ্রোভ অরণ্য বগুরণ জলপাইকে আরও আকর্ষণীয় করে কুলেছে। তাছাড়া গোল্ডেন জ্যাকল, বেঙ্গল ফক্স, মনিটর লিজার্ড, জাঙ্গল ক্যাট সহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণের যথেষ্ট আনাগোনা রয়েছে।

সমুদ্র সৈকত ঝাউবন সঙ্গে সবুজায়নে ভরা এই এলাকাটি বন্যপ্রাণীদের বাসস্থানের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছে। সে কারণে বেড়েছে নানা বন্যপ্রাণ আর সাথে বগুড়ান জলপাই পেয়েছে বায়োডাইভারসিটি হেরিটেজ সাইট বা জীববৈচিত্র্য ঐতিহ্যের তকমা। এই নির্জনতার টানেই এখানে ভ্রমণপ্রিয় মানুষজন ভিড় জমান।

সবশেষে বলতেই হয়, বাগুরান জলপাই সৈকত সূর্যোদয়সূর্যাস্তের সময় সোনালী মোহনীয় রঙে নিজেকে রাঙিয়ে নেয়। আর ঐ মুহূর্তগুলি উপভোগ করার ভাল উপায় হল খালি পায়ে হাঁটা। ধীর মৃদু ঢেউয়ের উপর হাঁটুন, সমুদ্রের শীতল বাতাস অনুভব করুন আর আপনার সামনের স্বর্গীয় দৃশ্য উপভোগ করুন। একটু আধটু এডভেঞ্চার চাইলে, যারা কোস্টাল ট্রেকিং পছন্দ করেন, তারা বাগুরান জলপাই থেকে পায়ে হেটেই চলে যেতে পারেন জুনপুট (৫ কিমি) বা বাঙ্কিপুট (১২ কিমি)

কাছাকাছি ঘোরার জায়গা?

  • বগুরান-জলপাই থেকে আপনি বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় সৈকত দেখতে পারেন এবং এর মধ্যে রয়েছে জুনপুট (5 কিমি), বাঁকিপুট (12 কিমি), মন্দারমনি (32 কিমি), তাজপুর (35 কিমি) এবং দীঘা (45 কিমি)।
  • কাছেই রয়েছে বঙ্কিমচন্দ্রের স্মৃতি বিজড়িত কপালকুণ্ডলা মন্দির, একবার সময় থাকলে ঘুরে আসতে পারেন।
  • একটা টোটো ভাড়া করে এক বেলাতেই ঘুরে আসতে পারেন দরিয়াপুর লাইট হাউস – ভাল লাগবে।

কখন যাবেন?

বগুরান জলপাই সারা বছর ঘুরে আসা যায়। তবে, অক্টোবর থেকে মার্চের মধ্যে সময়কাল বাগুরান জলপাই দেখার সেরা সময়। যদিও বর্ষাকালে জায়গাটা অন্যরকম সুন্দর রূপ নেয়।

কীভাবে যাবেন বগুরান?

  • বাসে: রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে প্রচুর দীঘা যাওয়ার বাস রয়েছে। তাই দিঘা যাওয়ার যে কোনও বাসে চড়ে কন্টাই বাস স্ট্যান্ডে নেমে সেখান থেকে অটো বা টোটো ধরে বগুরান-জলপাই চলে আসতে সময় লাগে মাত্র ১৫-২০ মিনিট।
  • ট্রেনে করে যদি আসেন তবে কাঁথি স্টেশনে নেমে সেখান থেকে আলদারপুর হয়ে বগুরান-জলপাই পৌঁছে যাওয়া যায়।
  • গাড়িতে কলকাতা থেকে কাঁথি হয়ে ঘণ্টা চারেক সময় লাগবে। কলকাতা থেকে প্রায় ১৬৫ কিলোমিটার দূরে।

আরও পড়ুন: কলকাতার কাছাকাছি ১৪ টি জনপ্রিয় সমুদ্র সৈকত

বগুরান জলপাই গিয়ে কোথায় থাকবেন ?

বগুরান জলপাই

বগুরান জলপাইতে বর্তমানে থাকার একটিই মাত্র ভাল জায়গা রয়েছে। সেটি হল সাগর নিরালা রিসর্ট। ‘সাগর নিরালা বিচ ভিলেজ হোম স্টে গেস্ট হাউস’-এ চোদ্দটি ঘর থাকার জন্য তাছাড়া চারটি বড় টেন্ট রয়েছে। রিসোর্টে বেশ বড় পার্কিং লট, ব‍্যাডমিন্টন কোর্ট, গাছে বাঁধা দোলনা, বারবিকিউয়ের ব‍্যবস্থা সব আছে। বেশ বোঝা গেল একটা মাত্র রিসর্ট থাকলেও সাম্প্রতিককালে বগুরান জলপাই জনপ্রিয়, তাই আস্তে আস্তে পর্যটকদের কথা মাছে রেখে এই সমস্ত আধুনিক সুবিধাগুলি তৈরি হয়েছে।

খরচের মোটামুটি একটা আন্দাজ :

  • এখান থেকে বাঁকিপুট, দরিয়াপুর ঘুরে দেখার অটো ভাড়া মোটামুটি ৮০০-৮৫০ টাকা, গাড়ি ভাড়া ১২০০-১৫০০ টাকা।
  • এসি ঘরের ভাড়া মোটামুটি ১৮০০ টাকা থেকে ৩০০০ টাকা আর নন-এসি ঘরের ভাড়া ১০০০ টাকা থেকে ১৬০০ টাকা।
  • টেন্টে থাকার ভাড়া পড়বে ১৫০০-১৬০০ টাকা।

যদিও দিঘার মতো বগুরান-জলপাইতে মাতাল করা ঢেউ নেই। বরং সমুদ্র এখানে বেশ শান্ত। কিন্তু বন কর্তাদের চিন্তা একটাই যে, অন্যান্য সৈকতের মতো যদি এখানেও ব্যাপক হোটেল গড়ে ওঠে তবে বন্যপ্রাণের ক্ষতির সম্ভবনা রয়েছে

Leave a Comment