পশ্চিমবঙ্গে ট্রেকিং রুট: 5টি পাহাড় ও রিভার ক্যানিয়ন ট্রেক

পশ্চিমবঙ্গে ট্রেকিং রুট: 5টি পাহাড় ও রিভার ক্যানিয়ন ট্রেকিং

পশ্চিমবঙ্গে অ্যাডভেঞ্চার উত্সাহীদের জন্য বেশ কিছু উত্তেজনপূর্ণ ও আনন্দদায়ক ট্রেকিং রুট রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে যেমন রয়েছে বরফ চাদরে ঢাকা হিমালয় পর্বত বা সতেজ ও সবুজ চা বাগানের মাঝে ট্রেকিং রুট, তেমনি আছে পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড় বা বেলপাহাড়ির গদরসিনী পাহাড়ের সহজ ট্রেকিং রুট । পশ্চিমবঙ্গ সব ধরনের ট্রেকিং যাত্রাকে উত্তেজনপূর্ণ ও আনন্দদায়ক করার মত প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে স্থানীয়দের উষ্ণ আতিথেয়তা আপনার ট্রেকিং স্মরণীয় করে তুলবেই।

পশ্চিমবঙ্গে এই মুহুর্তেই ২৫ টিরও বেশি ট্রেক রুট বা ট্রেক ট্রেইল রয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য কেবল একটি সূচী তৈরি করা নয়, বরং ট্রেকের বিভিন্ন প্রকার সম্পর্কে ধারনা দেওয়া, ট্রেক করতে যাওয়ার আগে নিজেকে কিভাবে প্রস্তুত করা যেতে পারে বা প্রাথমিক স্তরে কোন ধরনের ট্রেক ট্রেইল সুবিধাজনক সেসব দিক একটু বিবেচনা করা। যে ট্রেক রুটগুলি দৃষ্টিনন্দন কিন্তু যথেষ্ট অভিজ্ঞতা না থাকলে ট্রেক কষ্টকর হতে পারে সেই রুটগুলি এখনকার মত সরিয়ে রাখলাম (যেমন: সান্দাকফু-ফালুট, সিংগালিলা রিজ ট্রেক ইত্যাদি)। পরবর্তী সময়ে এক নিবন্ধে ঐ ধরনের ট্রেক ট্রেইল নিয়ে আলোচনা করব।

পশ্চিমবঙ্গে ট্রেকিং রুট : সেরা 5টি কোনগুলি?

আমরা এই নিবন্ধে কেবল মাত্র ৫ টি ট্রেক রুট বেছে নিলাম তাদের বৈচিত্র অনুযায়ী, যেমন ঝাড়গ্রামে গদরসিনী পাহাড় ট্রেক প্রথম ট্রেক হিসাবে আদর্শ সেটি ছোট্ট ও সহজ । আবার সামথার-পূর্বখোলা ট্রেক – সহজ, নৈসর্গিক কিন্তু একটু লম্বা কিন্তু এবং গোর্খে ট্রেক এবং নেওরা ভ্যালি ট্রেক ততটা সহজ না হলেও মধ্যম প্রকার কিন্তু পারিপার্শ্বিক প্রকৃতি অতি মনোরম। সবশেষে ইয়েলবং রিভার ক্যানিয়ন ট্রেক – নাম থেকেই বোঝা যায় এটি একটি নদীর পাড় বরাবর এবং গুহার মধ্যদিয়ে পথ, বেশ রোমাঞ্চক। এবার জানা যাক প্রত্যেকটি ট্রেক রুট সম্পর্কে:

1. সামথার, কালিম্পং এর কাছে দারুন ট্রেকিং গন্তব্য

সামথার
picture credit: blogger.stayapart.in

কালিম্পং থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে 1600 মিটার উচ্চতায় অবস্থিত একটি শান্তিপূর্ণ গন্তব্য। কালিম্পং-এর প্রত্যন্ত অংশে অবস্থিত, সামথার মালভূমি থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার, যেটি বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ শৃঙ্গ, তার সম্ভাব্য সবথেকে ভাল ভিউ দেখা যায়। সামথারের নৈসর্গিক সৌন্দর্যের তুলনা করা যেতে পারে একজন চিত্রশিল্পীর সৃষ্টির সাথে ঢালু ঢাল, সোপানযুক্ত কৃষি জমি, উপত্যকায় আচ্ছাদিত সবুজ বন, খড়ের কুটির, ছোট এবং মাঝারি নদীগুলি দুর্দান্ত প্রাকৃতিক দৃশ্যের সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে তোলে। ভারতের সবচেয়ে শান্ত প্রাকৃতিক রিসর্টগুলির মধ্যে একটি, সামথার 1400-1600 মিটার উচ্চতায় অবস্থিত, পশ্চিমবঙ্গে ট্রেকিং রুট গুলির মধ্যে অন্যতম।

ট্রেকিং রুট – সামথার থেকে কালিম্পং পর্যন্ত

সামথার থেকে কালিম্পং পর্যন্ত সবচেয়ে জনপ্রিয় ট্রেকগুলির মধ্যে একটি প্রায় 6 ঘন্টা সময় নেয়। ট্রেকের প্রথম পর্বটি রেলি খোলা (নদী) উপত্যকায় নেমে আসে এবং তারপরে আবার একটি খাড়া ট্রেক রুট রেলি স্রোত পেরিয়ে কালিম্পং-এ উঠে যায়। একই পথে কালিম্পং থেকে সামথার যাওয়া যায়।

  • দেখার সেরা সময়: জানুয়ারি থেকে মে এবং সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর
  • ট্রেকের সময়কাল: 7 দিন
  • কতটা কষ্টের: সহজ

সামথার গ্রামে থাকার ব্যবস্থা

সামথারে থাকা মজার কারণ আপনি সামথার সম্প্রদায়ের আতিথেয়তা অনুভব করার সুযোগ পান। সম্প্রদায়টি লেপচা, নেপালি এবং ভুটিয়াদের নিয়ে গঠিত যারা পর্যটকদের হোম স্টে সুবিধা প্রদান করে। এই ধরণের আবাসন সুবিধা একটি সাশ্রয়ী মূল্যে গ্রামীণ পরিবেশে পর্যটকদের সব ধরণের আরাম দেওয়ার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।

কিভাবে সামথার গ্রামে পৌঁছাবেন

পর্যটকরা এনজেপি রেলওয়ে স্টেশন বা বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে কালিঝোরা এবং পংবু হয়ে প্রায় আড়াই ঘন্টার মধ্যে সামথার গ্রামে পৌঁছাতে পারেন।

2. শ্রীখোলা-রামমাম-গোর্খে ট্রেক

শ্রীখোলা-রামমাম-গোর্খে ট্রেক
picture credit: theoffbeattour.com

গোর্খে ট্রেক, সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে 2223 মিটার উচ্চতায় অবস্থিত, হিমালয়ের পাদদেশে আপনার একটি স্মরণীয় যাত্রা হয়ে থাকবে। এই ট্র্যাকটি অ্যাডভেঞ্চার এবং নির্মলতার একটি নিখুঁত সংমিশ্রণ, কারণ আপনি ঘন জঙ্গল এবং ছবির মত সুন্দর গ্রামগুলির মধ্য দিয়ে হাঁটার সময় পথের পাশাপাশি, এই অঞ্চলের উষ্ণ এবং অতিথিপরায়ণ স্থানীয়দের সাথে সুখকর অভিজ্ঞতা তৈরি করবেন।

শ্রীখোলা-রামমাম-গোর্খে দার্জিলিং জেলার একটি মনোরম নৈসর্গিক পথ। সান্দাকফু এবং ফালুট থেকে ট্রেকিং রুট রয়েছে যা এই পথ দিয়ে মানেভঞ্জন এবং দার্জিলিং এর দিকে যায়। শ্রীখোলা থেকে ৭ কিমি আগে আরেকটি গ্রাম রিম্বিক। কথিত আছে প্রাচীনকালে এখানে একটি বিশাল বাঁশের দোলনা থাকত যেখানে স্থানীয় লোকজন খেলাধুলা করত। আজ রিম্বিক একটি ছোট ব্যস্ত শহর, যেখানে ছোট দোকান, ট্রেকারদের জন্য লজ এবং কয়েকটি গ্রাম উন্নয়ন অফিস রয়েছে। 3য় দিনে রামমাম থেকে গোর্খে যাত্রা খুব সহজ এবং মনোরম।

সম্ভাব্য ভ্রমণপথ

  • প্রথমদিন দিন: নিউজলপাইগুড়ি বা শিলিগুড়ি থেকে গাড়িতে শ্রীখোলা পৌছন এবং বিশ্রাম নিন। গোর্খে-শ্রীখোলা ট্রেকের স্টার্টিং পয়েন্ট হল এই শ্রীখোলা। পরের দিনের হাঁটা সহজ করার জন্য শ্রীখোলায় বিশ্রাম নিন।
  • দ্বিতীয় দিন: শ্রীখোলা থেকে রামমাম ট্রেক
    ব্রেকফাস্টের পর শ্রীখোলা থেকে হাঁটা শুরু করুন রামমাম (12 কিমি দূরে এবং 2560 মিটার উচ্চতায় অবস্থিত) প্রায় ঘণ্টা চারেক লাগবে। এখানকার ক্যাম্প সাইট থেকে, দার্জিলিং পাহাড়, রিম্বিক শহর এবং সিকিমের দক্ষিণ-পশ্চিমের গ্রামগুলির অপূর্ব দৃশ্য দেখা যায়। তখন বুঝতে পারবেন কেন এটি পশ্চিমবঙ্গের সেরা একটি ট্রেকিং রুট। রামামামে লজ বা তাঁবুতে রাত্রি যাপন করা যায়।
  • তৃতীয় দিন: রামমাম থেকে গোর্খে ট্রেক।
    প্রাতঃরাশের পর রামমাম থেকে গোর্খে পর্যন্ত ট্রেক রুটটি ধীরে ধীরে আরোহণ এবং ঘন জঙ্গল এবং ছোট স্রোতের মধ্য দিয়ে যায়। রামমাম থেকে গোর্খে 8 কিমি এবং পাঁচ থেকে ছয় ঘন্টা হাঁটা পথ। গোর্খে পশ্চিম সিকিমের উত্তর অংশের সাথে সীমান্তে অবস্থিত একটি ছোট গ্রাম। গোর্খে খোলা নামক দুটি স্রোতের মিলন পয়েন্টে অবস্থিত যা রামমাম নদীর একটি উপনদী, গোর্খে গ্রাম সিকিমের একটি সুন্দর গ্রাম যা একজন ট্রেকারকে বিশ্রামের জন্য একটি আদর্শ জায়গা দেয়।
  • ভ্রমণের সেরা সময়: অক্টোবর থেকে মে
  • ট্রেকের সময়কাল: 1 দিন
  • কতটা কষ্টের: মাঝারি

3. নেওরা ভ্যালি ট্রেক (রাচেলা পাস)

নেওরা ভ্যালি ট্রেক
picture credit: himalayatrekker.com

পশ্চিমবঙ্গে নেওরা ভ্যালি ন্যাশনাল পার্কের অস্পর্শিত বনের মধ্য দিয়ে ট্রেকটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে 3200 মিটার উচ্চতায় সম্ভবত আমাদের দেশের সেরা পাহাড়-জঙ্গল ট্রেকগুলির মধ্যে একটি। কালিম্পং জেলার নেওরা উপত্যকা জাতীয় উদ্যানটি ৮৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এবং রেড পান্ডা’র আবাস রয়েছে। 10,340 ফুট উচ্চতায় রাচেলা পাস, ন্যাশনাল পার্কের সর্বোচ্চ পয়েন্ট এবং এটি সিকিম, ভুটান এবং পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে ত্রিমুখী সংযোগস্থল। রাচেলা চূড়া থেকে একজন চোল রেঞ্জ এবং সিঙ্গালিলা রেঞ্জ উভয়ই দেখতে পাবেন কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বতের শ্বাসরুদ্ধকর দৃশ্য। ট্র্যাকটি মূলত বাঁশ এবং পাইনের অত্যন্ত ঘন বনের মধ্য দিয়ে, এতটাই ঘন যে সূর্যের আলোও মাটিতে স্পর্শ করা কঠিন বলে মনে হয়।

ট্রেকের প্রথম দিন শুরু হয় চৌদাফেরি ক্যাম্প থেকে, লাভা থেকে এখানে যাওয়ার রাস্তাটিতে ১৪টি বাঁক রয়েছে, তাই এই নাম। ক্রমাগত চড়াই এবং উতরাই করার পরের দিন নানারকম বাঁশের বনের মধ্য দিয়ে পিএইচই ক্যাম্পে যায়। পিএইচই ক্যাম্প থেকে, পথটি অনিশ্চিত কারণ নদী তার গতিপথ বিভিন্নভাবে পরিবর্তন করে। কিছুক্ষণ হাঁটার পর জারিবুটি ওয়াচটাওয়ার (জারিবুটি মানে ঔষধি গাছ) পেরিয়ে আসবে। বন বিভাগ পশুর গতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য এখানে ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করেছিল; ট্রেকাররা এখান থেকে পরিষ্কার দিনে একটি চমৎকার প্যানোরামিক ভিউ দেখতে পাবেন।

এই ট্রেইলের পরের দিন অবশেষে আপনাকে রাচেলা পাসে নিয়ে যাবে, এবং পথে একজন জোরপোখরি অতিক্রম করবে যেখানে একটি পবিত্র চিরহরিৎ হ্রদ রয়েছে। নেওরা ভ্যালি ন্যাশনাল পার্কের সর্বোচ্চ পয়েন্ট হওয়ার আগে উল্লেখ করা রাচেলা পাসটি কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বতের শ্বাসরুদ্ধকর দৃশ্য দেখায়, শুধু তাই নয়, এখান থেকে নাথুলা রেঞ্জ, নাথুলা পাস, ভুটান রিজ এবং দার্জিলিং এবং গ্যাংটক শহরগুলিও দেখতে পাওয়া যায়। এই পাহাড়ি গিরিপথ থেকে সিকিম এবং ভুটান উভয়ই যাওয়া যায়। আলুবাড়ি থেকে রাচেলা যাওয়ার পথটি ঘন বাঁশের বনের মধ্যে দিয়ে ক্লান্তিকর চড়াই-উৎরাই। অধরা রেড পান্ডার জন্য সর্বদা আপনার নজর রাখতে ভুলবেন না!

পরের দিন আপনাকে সুন্দর এবং প্রাচীন রডোডেনড্রন বনের মধ্য দিয়ে রুকা পর্যন্ত নিয়ে যাবে। নেওরা ভ্যালি ন্যাশনাল পার্কের পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত টোডে এবং টাংতার যমজ গ্রাম যা এই ট্র্যাকের শেষ পয়েন্ট।

কোথায় থাকবেন:

টাংটা এবং টোডেতে হোমস্টে পাওয়া যায়, অন্যদিকে ট্রেইল চলাকালীন অন্যান্য জায়গার জন্য তাঁবুতে থাকার ব্যবস্থা করা হয়। লাভায় একবার WBFDC নেচার এডুকেশন অ্যান্ড ওয়াইল্ডারনেস রিসোর্টে থাকতে পারেন।

গুরুত্বপূর্ণ নোট:

  • প্রয়োজনীয় অনুমতি লাভা বা সামসিং-এ ফরেস্ট রেঞ্জ অফিস থেকে পাওয়া যেতে পারে।
  • পোর্টার এবং গাইড আগে থেকেই বুকিং করতে হবে।

কিভাবে পৌছব:

  • ট্রেনে– নিকটতম রেলওয়ে স্টেশন হল নিউজলপাইগুড়ি, যেখান থেকে লাভা পর্যন্ত 3 ঘন্টার যাত্রার জন্য প্রাইভেট কার এবং শেয়ার্ড জীপ পাওয়া যায়
  • বিমানে– নিকটতম বিমানবন্দর হল বাগডোগরা, যেখান থেকে লাভা পর্যন্ত সাড়ে ৩ ঘণ্টার যাত্রার জন্য ব্যক্তিগত গাড়ি এবং শেয়ার্ড জিপ পাওয়া যায়।
  • দেখার সেরা সময়: মার্চ থেকে জুন এবং সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর
  • ট্রেকের সময়কাল: 5 দিন
  • কতটা কষ্টের: সহজ

4. গাড়রাসিনি ট্রেক

গাড়রাসিনি ট্রেক
picture credit: wikipedia.org

কলকাতা থেকে প্রায় ২০০ কিমি দূরত্বে অবস্থিত ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ি থেকে মাত্র ৭ কিলোমিটার দুরেই রয়েছে গাড়রাসিনি পাহাড়। গাড়রাসিনি ট্রেকটি আসলে এই সূচীতে রাখার কারণ একমাত্র প্রথমবার যারা ট্রেক শুরু করতে চান তাদের জন্য। এটি প্রাথমিক ট্রেক সম্বন্ধীয় জ্ঞানার্জনের জন্য। গাড়রাসিনি পাহাড়ের উপর থেকে বেলপাহাড়ির পাহাড়ের ঢেউ খেলানো ও শাল জঙ্গল অপরূপ দৃশ্য মন জয় করে নেবে যেকোনও ভ্রমণপিপাসু ব্যক্তির মন। ভৌগোলিক সৌন্দর্যের আকর্ষণকে মাথায় রেখেই গাড়রাসিনি পাহাড়ের কোলে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি হোমস্টে । যেখানে পর্যটকেরা শাল জঙ্গলের শান্ত পরিবেশে রাত্রিযাপনের পাশাপাশি সকাল সকাল ঠান্ডা আবহাওয়ার মধ্যে পাহাড়ে উঠার আনন্দ উপভোগ করতে পারবে। কেবলমাত্র পাহাড়ের সৌন্দর্যই নয়, ময়ূরও এখানকার অন্য়তম আকর্ষণ ।

কিভাবে করবেন ট্রেকিং

দুপুরের প্রখর রৌদ্রে পাহাড়ে ট্রেকিং করার খুবই সমস্যা হয়। তাছাড়া বিকেল চারটার পর প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞা রয়েছে পাহাড়ে ওঠার উপর। তাই কলকাতা থেকে বেলপাহাড়ির গাড়রাসিনি পাহাড়ের কাছে পৌঁছে হোমস্টেতে রাতটা কাটিয়ে সকাল সকাল ট্রেকিংয়ে বেরিয়ে পড়তে পারবেন পর্যটকেরা। ঝাড়গ্রামে ট্রেকিং আরও জনপ্রিয় করার জন্য রাজ্যের পর্যটন উন্নয়ন নিগম ডুংরি থেকে রাজবাড়ি এবং পাহাড়ে ট্রেকিং রুট উন্নতির সাথে সাথে ঝাড়গ্রামে বাড়ছে টুরিস্ট স্পট ও টুরিষ্টের সংখ্যা।

কিভাবে পৌঁছবেন গাড়রাসিনি?

  • ট্রেনে: কলকাতা থেকে হাওড়ার স্টেশন থেকে ট্রেন ধরে ঝাড়গ্রাম রেল স্টেশন । ঝাড়গ্রাম রেল স্টেশনে নেমে বাঁ দিকে রয়েছে ট্যাক্সি স্ট্যান্ড । যেখানে গাড়ি ভাড়া করে সোজা চলে যাওয়া যাবে বেলপাহাড়ি । বেলপাহাড়ির থেকে হদরার মোড় থেকে বাঁ দিকের পিচ রাস্তা ধরে থেকে ৬ কিলোমিটার গেলে পৌঁছে যাবেন গাড়রাসিনি পাহাড় ।
  • সড়ক পথে: এছাড়াও যদি আপনি ব্যক্তিগত গাড়িতে আসতে চান তাহলে কলকাতা থেকে ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে খড়্গপুর পেরিয়ে আসতে হবে লোধাশুলী। এই লোধাশুলীর মোড় থেকে ডানদিকে ঝাড়গ্রাম শহর আসার পাঁচ নম্বর রাজ্য সড়ক ধরে ঝাড়গ্রাম শহর পেরিয়ে সোজা শিলদার মোড় থেকে বাঁদিকে নারানপুরের মোড় পড়বে । নারানপুরের মোড় থেকে ডানদিকে সোজা বেলপাহাড়ি বাজার । ওই বেলপাহাড়ি বাজার থেকে বাঁশপাহাড়ি রাস্তা ধরে প্রায় এক কিলোমিটার এগোলে হদরার মোড় । সেখান থেকে বাঁ দিকের ৬ কিলোমিটার গেলে পৌঁছে যাওয়া যাবে গাড়রাসিনি পাহাড় ।

আরও পড়ুন: পশ্চিমবঙ্গে অ্যাডভেঞ্চার ভ্রমণ

5. ইয়েলবং রিভার ক্যানিয়ন ট্রেক

ইয়েলবং রিভার ক্যানিয়ন ট্রেক

ইয়েলবং কালিম্পং জেলার একটি ছোট গ্রামের নাম যেখানে কেবল ১৫ থেকে ২০ টি পরিবারের বসোবাস। শিলিগুড়ি থেকে দুই কিংবা আড়াই ঘন্টার মাঝে পৌঁছে যাওয়া যায় এই স্বর্গরাজ্যে। ইয়েলবং গ্রাম থেকে রিভার ক্যানিয়ন কেভের দুরত্ব বলতে প্রায় ৩-৪ ঘণ্টার ট্রেকিং যা Robber’s Cave নামেও পরিচিত। রুমটি নদীর ধার বরাবর পাথরের উপর দিয়ে হাঁটা বেশ রোমাঞ্চকর। আশাকরি বহু এডভেঞ্চারপ্রেমী মানুষ এটি উপভোগ করবেন।

প্রায় ২ কিলোমিটার বিস্তৃত নদীর পাড় ঘেঁষে ট্রেকের পথ, যার শেষে রয়েছে একটি গুহা। পাহাড়ী নদী তার আপন ছন্দে কখনো উত্তাল কখনো নিস্তরঙ্গ ঝিরিঝিরি হয়ে বয়ে চলেছে গুহার বুক চিরে। তবে এতোটুকু বলা যেতেই পারে যে গুহায় প্রবেশ করার পর মনে হবে আপনি অন্য জগতে রয়েছেন। গুহ বা কেভের রাস্তা বেশ রোমাঞ্চকর বটে। নিজেকে মেন্টালি ও ফিজিক্যালি সক্ষম রাখা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এছাড়া ইয়েলবং ক্যানিয়ন কেভের পাশে র‍্যাপলিং করা বা শেখার সুযোগ দুইই আছে। এডভেঞ্চার প্রেমীদের জন্য সত্যই উপযোগী জায়গা। অনেক অজানা ফলসের সাথে পরিচয় হওয়ার সুযোগ রয়েছে, যেমন রেইনবো ফলস। ফলস আবার তার উপর রেইনবো।

ইয়েলবং’এ আগে এই পুরো রিভার বেড টাই কয়লার খনি ছিল তবে ১৯৬২ সালের দিকে ধস নেমে খননকার্য বন্ধ হয়ে যায়। পুরো ট্রেক টাই বেশ রোমহর্ষক এবং খুব সোজা মোটেই নয়। প্রথমে গ্রাম থেকে ট্রেক করে ৫ কিলোমিটার এর মতো নামতে হবে রিভার বেডে। এরপর ক্যানিয়নে জল, পাথর ডিঙিয়ে এগিয়ে চলতে হবে পুরোটা দেখতে। পুরো ব্যাপার টাই বেশ থ্রিলিং এবং অনবদ্য।

ইয়েলবং রিভার ক্যানিয়ন ট্রেকিং খরচ

এই রিভার ক্যানিয়ন ট্রেকিং এবং ক্যাম্পিং করার জন্য হোমস্টে মালিকরা প্যাকেজ হিসাবে দিয়ে থাকেন। যার মধ্যে থাকা খাওয়া, রিভার ক্যানিয়ন ট্রেকিং ও গাইড সমস্ত কিছু অন্তর্ভুক্ত থাকে। এই প্যাকেজে খরচ হয় মাঠপিছু প্রায় ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা ।

ইয়েলবং ভ্রমণের সেরা সময় কখন?

রিভার ক্যানিয়ন ট্রেক করতে চাইলে গ্রীষ্মকালে ভ্রমণ করাটা সব থেকে ভালো হবে, কারন রিভার ক্যানিয়ন এর ভেতরে নদীর জলের তাপমাত্রা কম থাকে ফলে গরমকালে এটা বেশ আরামদায়ক হবে।

কিভাবে যাবেন ইয়েলবং

ইয়েলবং ভ্রমণ

প্রথমে ট্রেনে করে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন, তারপর ওখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে ইয়েলবং, খরচ পরবে আনুমানিক ২৫০০-৩০০০ টাকা। গাড়ি বাগরাকোট স্টেশন থেকে ইয়েলবং এর দিকে যাবে। গোটা রাস্তা ৩০ কিলোমিটার মতো, তবে সময় লাগবে ৩ ঘন্টার মতো। গাড়ি একদম গ্রামের ভিতর এর রাস্তায় না যেতে চাইলে অগত্যা ৪ কিলোমিটার মতো পায়ে হাঁটাই ভরসা।

এছাড়াও শিলিগুড়ি থেকে বাস/শেয়ার গাড়ি করে বাগ্রাকোট এবং সেখান থেকে ইয়েলবং এর জন্য গাড়ি ভাড়া করে নিতে পারেন। অপর রাস্তাটি হল নিউ মাল জংশনে নেমে সেখান থেকে সরাসরি গাড়ি ভাড়া করে নেওয়া, এক্ষেত্রে ভাড়া পরবে প্রায় ১৫০০ টাকা ও সময় লাগবে প্রায় এক থেকে দেড় ঘণ্টা।

কোথায় থাকবেন?

ইয়েলবং একটি ইকো ফ্রেন্ডলি গ্রাম। ইয়েলবং রিভার ক্যানিয়ন প্রকৃতির এক বিরল সৃষ্টি । এখানে এখন বেশ কিছু হোম স্টে চালু হয়েছে। তাছাড়া, খোলা আকাশের নিচে জংগলের মাঝে পাহাড়ি নদীর আওয়াজ শুনতে শুনতে টেন্টেও কাটিয়ে দিতে পারেন।

Leave a Comment