গোপালপুর ভ্রমণের কথা মানেই সুনির্মল সমুদ্র সাথে পরিচ্ছন্ন সৈকত, অবসর যাপনের এক্কেবারে আদর্শ স্থান। গোপালপুর হল ওডিশা বা উড়িষ্যার দক্ষিণ অংশে গঞ্জাম জেলার বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থিত একটি শহর। তীরভাঙ্গা সমুদ্রের ঢেউয়ের গর্জন এবং মনোমুগ্ধকর সৈকত গোপালপুর-অন-সিকে ওডিশার একটি ব্যাস্ত পর্যটন গন্তব্যে পরিণত করেছে। এখানে দেখার মতো অসংখ্য জায়গা বা করার মতো জিনিস রয়েছে, তবে গোপালপুর গোপালপুর ভ্রমণের আরেকটি বড় পাওনা হবে যদি সঠিক মরসুমে সমুদ্র সৈকতে প্রজননে আগত পরিযায়ী অলিভ রিডলি কচ্ছপ দেখার অভাবনীয় সুযোগ পেতে পারেন। ব্রহ্মপুর বা বেরহামপুর এলাকার তৈরি আচার এবং হাতে বোনা তসর সিল্কের শাড়ির জন্য পরিচিত শহর।
কিভাবে যাবেন গোপালপুর?
হাওড়া থেকে দক্ষিণ ভারতগামী যে কোন ট্রেনের প্রায় সবকটিই থামে ব্রহ্মপুর বা Berhampur স্টেশনে। হাওড়া-যশবন্তপুর এক্সপ্রেস্ ধরলে ভোর ৬ টা নাগাদ পৌঁছে যাবেন। বেরহামপুর থেকে গোপালপুরের দূরত্ব ১৬ কিলোমিটার। পৌঁছানোর জন্য অটোরিকশা নিয়ে যেতে পারেন। নিকটতম বিমানবন্দর হল বিজু পট্টনায়ক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর যা গোপালপুর থেকে প্রায় ১৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
থাকার জন্য অসংখ্য ছোট-বড় হোটেল গোপালপুরেই পেয়ে যাবেন এছাড়া ওটিডিসি-র পান্থনিবাসও আছে এখানে কিন্তু সেটি সমুদ্র থেকে বেশ একটু দূরে।
গোপালপুর ভ্রমণ সঙ্গে যে ১০টি স্থান দেখতেই হবে
তপ্তপানি
তপ্তপানি হট সালফার স্প্রিংস গোপালপুর থেকে প্রায় ৬৭ কিমি দূরে সবুজ পরিবেশে অবস্থিত এবং এর প্রস্রবনের জলে ঔষধি গুণ রয়েছে বলে জানা যায়। উষ্ণ প্রস্রবণ সংলগ্ন সৃষ্ট পুকুরে স্নান করছেন বেশ কিছু পর্যটক। চারপাশের সবুজ অরণ্য বেশ একটি মনোরম পরিবেশ তৈরি করে। শহরের ব্যস্ত ভিড় থেকে দূরে এই নির্মলতা পরিবেশের অনুভুতি সত্যই স্বর্গীয়।
তারাতারিণী মন্দির
ঋষিকুল্যা নদীর তীরে কুমারী পাহাড়ে অবস্থিত, তারা তারিণী শক্তিপীঠ হল এতদ অঞ্চলের প্রাচীনতম তীর্থস্থানগুলির মধ্যে একটি। এটি ভক্তি এবং আদিশক্তির প্রকাশের একটি বিখ্যাত শ্রদ্ধেয় কেন্দ্র। পাহাড়ের মাথায় অবস্থিত এই মন্দির দর্শনের সাথে চারিদিকের দৃশ্য আপনার গোপালপুর ভ্রমণ সার্থক করে তুলবে।
মহুরী কালুয়া
মহুরীর রাজার কুল দেবতা মহুরী কালুয়ার নামানুসারে স্থানটির নামকরণ করা হয়েছে। পাহাড় আর আশেপাশের ঘন জঙ্গল এই জায়গাটিকে আকর্ষণীয় করে তোলে। একটি কিংবদন্তি অনুযায়ি, যে গুহার ভিতরে দেবী বিরাজমান আছেন সেই গুহায় রাজা ছাড়া আর কেউ পৌঁছাতে পারে না।
জাউগড়
জাউগড় জায়গাটি গঞ্জাম জেলার ঋষিকুল্যা নদীর তীরে অবস্থিত। এখানে সম্রাট অশোকের একটি শিলালিপি পাওয়া যায়। বেরহামপুর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত, এই জায়গায় ধ্বংসপ্রাপ্ত দুর্গটি অবশ্যই দেখতে হবে। স্থানটি একসময় পূর্ববর্তী কলিঙ্গের রাজ্যের সুরক্ষিত রাজধানী ছিল এবং সম্রাট অশোকের সময় থেকে পাথর কাটা নির্দেশের জন্য পরিচিত।
রম্ভা ও চিলিকা হ্রদ
রম্ভার সুন্দর শহরটি বিখ্যাত চিলিকা হ্রদের প্রবেশদ্বার হিসাবে কাজ করে, এটি ভারতের বৃহত্তম অভ্যন্তরীণ নোনা জলের লেগুন এবং বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম। হ্রদে বেশ কয়েকটি দ্বীপ রয়েছে যেখানে পর্যটকরা এই জায়গাগুলিতে নৌকা ভ্রমণ উপভোগ করতে পারে। এবং বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখি দেখতে পারে। ব্রেকফাস্ট দ্বীপ, বার্ডস দ্বীপ এবং বেকন দ্বীপে পর্যটকদের কাছে বেশি আকর্ষনিয়। যারা সবেমাত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন হানিমুন দ্বীপের নির্মলতা তাদের জন্য আদর্শ ।
ঘোড়াহাদা বাঁধ
দিগাপাহান্ডি নদীতে ঘোড়াহাদা বাঁধটি ওডিশার গঞ্জাম জেলায় অবস্থিত এবং সেচের উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে, তবে একটি পিকনিক স্পট হিসাবে আরও বেশি জনপ্রিয়। চারিদিকে পাহাড় ঘেরা এই ড্যাম এককথায় অসাধারন। পাহাড়ের ঢাল বেয়ে সুর্য্য যখন অস্ত যায় সেই দৃশ্য মনিকোঠায় বন্দী করে রাখার মত। গোপালপুর গেলে অবশ্যই একবার ঘোড়াহাদা যাবেন সুর্য্যাস্তের সময়, কথা দিচ্ছি মুগ্ধ হয়ে যাবেন, আপনার গোপালপুর ভ্রমণ স্মরনিয় থাকবে অনেকদিন ।
ঋষিকুল্যা মোহনা
এটি সেই জায়গা যেখানে রুশিকুল্যা নদী সমুদ্রের সাথে মিলিত হয়েছে আর এটি অলিভ রিডলি কচ্ছপের বিশ্রামের স্থান হিসাবে বিবেচিত হয়। সমুদ্রের জলে প্রায় ৫০ মিটার দূরে সরে যাওয়া ছোট বাচ্চাদের প্রাকৃতিক ঘটনাটি উপভোগ করার মতো একটি দৃশ্য।
তামপাড়া লেক
এই নির্মল তামপাড়া হ্রদটি নৌবিহারের জন্য আদর্শ এবং চারপাশের সবুজ ময়তা আপনার অভিজ্ঞতাকে আরও মনোরম করে তোলে।
আর্যপল্লী সৈকত
আর্যপল্লীর অত্যাশ্চর্য, বালুকাময় সৈকত অবশ্যই গোপালপুর ভ্রমণের সময় আপনার ভ্রমণপথে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
পাতি সোনাপুর
এটি একটি সুন্দর এবং নির্জন পর্যটন গন্তব্য যেখানে আপনি সুন্দর শহর গোপালপুর ভ্রমণের সময় উপভোগ করতে পারেন।
গোপালপুরের কাছাকাছি দেখার জন্য এই সমস্ত জায়গাগুলির সাথে, আপনি এই অঞ্চলের বিভিন্ন ট্যুর অপারেটরের কাছ থেকে ক্যাবের ব্যবস্থা করতে পারেন এবং এই গন্তব্যে ভ্রমণকে আনন্দদায়ক করে তুলতে পারেন৷
আপনার গোপালপুর ভ্রমণ পড়ে যদি ভালো লাগে একবার কাছেই বালেশ্বর বা বালাসোরের আশেপাশে ঘোরার জায়গা
সংক্ষেপে গোপালপুর ভ্রমণ
বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থিত, গোপালপুর ওডিশার অত্যন্ত জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান হিসাবে পরিচিত। এই স্থানটি তার আচার এবং বোনা তসার সিল্কের জন্য পরিচিত, যা বিশ্বব্যাপী বিখ্যাত। কিন্তু বস্তুগত আনন্দ ছাড়াও, এই জায়গাটিতে কিছু প্রতিশ্রুতিশীল পর্যটন আকর্ষণের জায়গা রয়েছে যা বিবেচনা করার মতো। সুতরাং গোপালপুর ভ্রমণ আরও আনন্দময় করে তুলতে ভ্রমণ তালিকায় এই এলাকাগুলি যোগ করতে ভুলবেন না। এর মধ্যে কয়েকটি হল তপ্তপানি, তারাতারিণী মন্দির, মহুরী কালুয়া, জাউগড়, রম্ভা এবং চিলিকা হ্রদ, ঘোদাহদা বাঁধ, ঋষিকুল্যা মোহনা, তামপাড়া হ্রদ, আর্যপল্লী সমুদ্র সৈকত এবং পাতিসোনাপুর। আগে টিকিটের জন্য বুক করতে ভুলবেন না কারণ এই জায়গাটি সর্বদা পর্যটকদের দ্বারা পরিপূর্ণ।
গোপালপুর কেন বিখ্যাত?
গোপালপুর সৈকত শুধুমাত্র পরিচ্ছন্ন ও সুনীল সমুদ্র নয়, এই সইকতের খুব কাছেই হাজার হাজার অলিভ রিডলি কচ্ছপ প্রতি বছর ডিম পাড়তে এখানে আসে এবং কিছু দিন পরই শিশু কচ্ছপগুলি আবার সমুদ্রে ফিরে যায়। এই ঘটনা প্রত্যক্ষ করাই এক বিরল অভিজ্ঞতা ।
গোপালপুর সমুদ্র সৈকত কি নিরাপদ?
গোপালপুরের সমুদ্র সৈকত সাঁতারের জন্য নিরাপদ নয় তবে পর্যটকদের জন্য সকালে সূর্যোদয়ের বা সুর্যাস্তের সময় অল্প জলে হাঁটার জন্য দারুন একটি জায়গা।
উড়িষ্যার গোপালপুর দর্শনীয় স্থান কি কি?
গোপালপুরের কাছে তপ্তপানি, তারাতারিণী মন্দির, মহুরী কালুয়া মন্দির, জাউগড়, রম্ভা ও চিলিকা হ্রদ, ঘোড়াহাদা বাঁধ, ঋষিকুল্যা নদীর মোহনা, তামপাড়া লেক, আর্যপল্লী সৈকত, পাতি সোনাপুর ইত্যাদি মুখ্য দর্শনীয় স্থান।
প্রতীক দত্তগুপ্ত, থাকেন কলকাতায়, কাজ বাদে বেড়ানোই যার প্রথম ভালবাসা। এই কয়েক বছর হল বেড়ানোর সাথে কলমও ধরেছেন । তিনি শুধুমাত্র যে জায়গাগুলি পরিদর্শন করেছেন সেগুলি সম্পর্কেই ব্লগ করেন না, তবে তিনি তার অনুগামীদের জন্য টিপস, কৌশল এবং নির্দেশিকাগুলি সম্পর্কেও পোস্ট করেন৷